ছলনাময়ী-৮
আমি আলোকে পাখি বলেছি। আলোও সেটা বুঝতে পেরেছে। আর তাই তার জবাবটা নিমেষেই দিয়ে দিয়েছে। আমি বললাম, এটা ঠিক বলেছ।
আচ্ছা চলো, কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি।
আমি তোমার কাছাকাছি খুব বেশি সময় থাকতে চাই না।
কিন্তু আমি যে একটু বেশি সময় থাকতে চাই তোমার সঙ্গে।
ঢাকাতে ইলেকট্রিসিটি আলোয় পুরো শহর আলোকিত। এখানে ঘড়ির দিকে না তাকালে বোঝাই যায় না সন্ধ্যা হয়ে এল। এই এক আজব শহর ঢাকা। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রো—এমন ছোট যানবাহনের কোনো কমতি নেই। এই আসে, এই যায়। একবার যদি ভাবা হয়, এই যে লাল নীল সাদা রঙের মাইক্রোগুলো দিয়ে যারা আসছে যাচ্ছে, তারা কারা? তারা আমাদের সমাজের একজন। পার্থক্য শুধু, তারা হলেন ওপর তলার মানুষ আর আমরা হলেম নিচুতলার মানুষ। তাদের ইচ্ছার ডানা আছে। আমাদের ইচ্ছার ডানা থাকলেও ডানাতে শক্তি নেই। হাঁটতে হাঁটতে টিএসসির অতি নিকটে চলে এলাম। অনেক মানুষ। ফুচকাওয়ালা ফুচকা বানাচ্ছেন, চটপটি বানাচ্ছেন, মানুষজন বসে বসে খাচ্ছে। সবাই খাচ্ছেন না। কেউ কেউ খাচ্ছে। অনেকে কথোপকথনে মেতে আছে। আমি ঠিক ওই জায়গাতেই দাঁড়ালাম, যেখানে দাঁড়িয়ে জীবনের প্রথম আলোর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সেদিন বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা হয়েছিল। আজ জানি না ভাগ্যে কী আছে। কিন্তু সে তো বলেছিল সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে? এখন তো দেখছি আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি। ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গেল না! পাব কি সেই লাস্যময়ীর দেখা। একটু চোখ বুজে ওপরে তাকালাম, অমনি আলোর কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
এই মুরাদ, এদিকে এসো।
এটা কী হলো। আলো চলে এল না তো! নাকি আমার মনের ভাবনা। আমি চোখ বুজেই আছি। এটা আমার মনের ভুলও হতে পারে। কারণ, আলো হলো একজন ছলনাময়ী। আর ছলনাময়ীরা কথা দিয়ে কথা রাখে না। যদিও মাঝেমধ্যে রাখে, তাহলেও আসে অনেক দেরি করে। আবারও আলোর ডাক শুনতে পেলাম। তার মানে কী আলো নামের সেই সুন্দরী মেয়েটি সত্যি সত্যি আমার কাছে চলে এসেছে। নাকি এটাও আমার মনের ভুল। ইশ্! আলোর ডাকটা কত না মধুর। মনে হচ্ছে তাকালে এই ডাকটা আর শুনতে পাব না। তাই চোখ বুজে থাকাই ভালো। চোখ বুজিলে দুনিয়া অন্ধকার। অন্ধকারে আলোর কদর বেশি। আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা...। কে যেন আমাকে ধাক্কা দিল। তারপরও আমি চোখ বুজে আছি। চোখ বুজে আলোকে ভাবছি। আবার ধাক্কা! এই ধাক্কাতে মনে হয় আমি পড়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পড়া আর হলো না। কেউ একজন আমাকে ধরে ফেলেছে। আমি তাকাতেই দেখি সে আর কেউ নয়, সে আলো। আহা! কী প্রশান্তি। যেন স্বর্গের সুখকেও হার মানায়। বেশ কয়েকজনের দৃষ্টি ছিল আমার দিকে। এক–দুজন হাসছে। আবার এক–দুজন ঠোঁট বাঁকাচ্ছে। কে কী করল, তাতে আমার কিছু আসে–যায় না। তবে আমাকে ঘিরে আলোও কিছুটা লজ্জিত।
আমি দাঁড়ালাম। আলো আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কী করছিলে? আমার ডাকে সাড়া দাওনি কেন? আমি না ধরলে তো পড়েই যেতে।
তেমন কিছু না, একটি পাখির কথা ভাবছিলাম। যে পাখিটা শুধু উড়ে বেড়ায়।
আর?
যে পাখিটির নীড়ের অভাব নেই। কিন্তু মুক্ত গগনতলে সেই পাখিটি কতটুকু স্বাধীন সেটাই ভাবার বিষয়!
মোটেও সেই পাখিটি স্বাধীন নয়। কেননা, প্রকৃতির তৈরি ঝড়–বাদল মানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পাখিটাকে ভালো থাকতে দেয় না।
আমি আলোকে পাখি বলেছি। আলোও সেটা বুঝতে পেরেছে। আর তাই তার জবাবটা নিমেষেই দিয়ে দিয়েছে। আমি বললাম, এটা ঠিক বলেছ।
আচ্ছা চলো, কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি।
আমি তোমার কাছাকাছি খুব বেশি সময় থাকতে চাই না।
কিন্তু আমি যে একটু বেশি সময় থাকতে চাই তোমার সঙ্গে।
আমার ভালো লাগে না।
কেন?
কারণ, তোমার মতো অপরূপ সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। আচ্ছা, আলো তুমি এত সুন্দর কেন?
জানি না।
আমি এখন চলে যাব।
আমার চলে যাওয়ার কথা শোনে আলোর সুন্দর মুখটা মলিন হয়ে যায়। আলো বলে, তোমাকে আটকানোর শক্তি আমার নেই। তবে এইটুকু অনুরোধ রাখো আমার, আর কিছুক্ষণ থাকো।
ভুল বললে হে প্রিয়তমা, তুমি যদি চোখে চোখ রেখে একবার বলো, তুমি কোথাও যেতে পারবে না। যে কথা উপেক্ষা করে এই পৃথিবীর যেতে পারবে না।
আলো আমার মাথার দুই পাশে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে আমার চোখে চোখ রেখে বলে, প্লিজ মুরাদ, তুমি কোথাও যাবে না এখন।
আলো চোখে জল টলমল করছে। আমি হেসে উঠে বলি, প্লিজ আলো, তোমার সেই মায়া সুতোয় আমাকে বেঁধো না।
আমি জানি, তোমাকে জোর করে আটকানো যাবে না। আমার ডাকে এসেছ, এতেই আমি চাঁদ হাতে পেয়েছি। তুমি এখন যেতে পারো?
আমি নির্বাক। কোনো কিছু বলতে পারছি না। আমার ভাষা হারিয়ে গেছে। এদিকে আলোর চোখে জল। চলে যাব, সেই শক্তিও পাচ্ছি না। প্রকৃতি হয়তো আমার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। মনটাও আলোর জন্য ব্যাকুল। আমি দাঁড়িয়ে আছি। আলো আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, কী হলো, যাচ্ছ না কেন?
যাব তো বটেই, একবার আমার দিকে তাকাও।
তোমার দিকে তাকাতে ইচ্ছা হচ্ছে না।
প্লিজ, একবার আমার দিকে তাকাও।
আমার কথা অগ্রাহ্য করার শক্তি আলোর নেই। সে আমার দিকে তাকাল। কী চাহনি! জগতের সবটুকু মায়া আলোর চোখে। এই চোখ ও চোখের পানির কাছে হার মেনে, একগাল হেসে বলি, মহারানি, আদেশ করুন, আমাকে কী করতে হবে?
আলোর চোখের টলমল পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। এর মধ্যে বলে উঠল, কী বলছ?
মানে আমি কোথাও যাচ্ছি না। এবার বলো আমায় কী করতে হবে?
আলোর মুখে হাসি। যে হাসি দেখলে চাঁদ লুকাতে বাধ্য। তাহলে চলো।
আলো হাঁটছে। আমিও হাঁটছি। জানি না আজ কী হয়। হাঁটতে হাঁটতে টিএসসি থেকে অনেকটা দূরে চলে এলাম। জনমানবহীন পরিবেশ। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে। মাঝেমধ্যে দু–একটা রিকশার দেখা মেলে। আমি আজ নিজেকে সঁপে দিয়েছি ছলনাময়ীর কাছে। দেখি সে আজ আমাকে নিয়ে কোথায় যায়। আসলে সে কোথাও যাচ্ছে না। মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, কী দেখো রূপসী!
আলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। আমি বুঝতে পারছি মেয়েটি আজ আমাকে শেষ না করে ছাড়বে না। ওর হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পাই! আমি আবার বললাম, ও রূপসী, এভাবে আর তাকিয়ো না আমার পানে। আমি যে মরি লজ্জায়।
এবার আলো হেসে দিল। আমি বললাম, তোমার রাঙা ঠোঁটের হাসি দিয়ে প্লিজ আমাকে মেরো না।
মুরাদ তুমি কি সত্যি সত্যি আমার পাশে আছ?
আলোর কাছে আমি সেই আরাধনা, যাকে আলো মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। সেটা আমি জানি। মেয়েটা বড্ড লক্ষ্মী। বড্ড বেশি মায়াবতী। যে মায়া থেকে বেরিয়ে আসা বড়ই কঠিন। আমার মাঝে তেমন কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। তারপরও এই মায়াবতী আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এতটা কাছে আছি আমি, তারপরও সে ভাবছে, এটা কল্পনার জগৎ। ইচ্ছা করছে আলোকে ছুঁয়ে দিতে। একটু আলতো করে ধরে কপালে চুমু এঁটে দিলে কেমন হয়। না, সেটা করা যাবে না। আজ আলো এত সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছে, যা দেখে নিজেকে ঠিক রাখা দায়। চুলে শ্যাম্পু করেছে। হালকা বাতাসে চুলগুলো উড়ছে। চোখে কাজল পরেছে। কান্নার কারণে খানিকটা কাজল গালে এসেছে। ফরসা গালে কাজলে কালো দাগ এঁটে আছে। এতে যেন আলোকে আরও বেশি সুন্দরী লাগছে। শুনেছি চাঁদেরও নাকি কলঙ্ক আছে। ঠিক আলোর গালে হালকা কালো দাগ চাঁদের মতো মনে হচ্ছে, যা দেখে মুখমণ্ডলের সৌন্দর্যের বিন্দুমাত্র কমতি মনে হচ্ছে না। ঠোঁটে লিপস্টিক তেমন নেই। গলাতে একটা স্বর্ণের হার আছে। তারও নিচে এক সাগর ভালোবাসার ঘরবাড়ি, যা সুতো দিয়ে বুনন করা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকা। একেবারে নিচে পদতলে আছে এক জোড়া চামড়াশিল্পের তৈরি করা জুতো। সেই জুতোর কী ভাগ্য, প্রতিনিয়ত একজন মায়াবতীকে বহন করে চলে! আলো যথেষ্ট লম্বাও বটে। আমার চেয়ে লম্বা না হলেও কম হবে বলে মনে হয় না। আমার আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না। ইচ্ছা হচ্ছে আজ রাতটা আলোর সঙ্গে কাটিয়ে দিতে। আজ জোছনা নেই। তাতে কী! জোছনা ছাড়াও আমরা রজনীকে উপভোগ করতে পারি। আলোকে বললাম, আজ রাতটা চলো দুজনে একসঙ্গে কাটিয়ে দিই।
আলো হাঁ করে তাকিয়ে আছে। আমার কথাগুলো মেনে নিতে পারছে না। আমিও ভাবলাম, যা হওয়ার হবে। আলো বলে, তোমার যা ইচ্ছা হয়, তা–ই করো?
তাহলে চলো বুড়িগঙ্গা নদীতে।
আমার খিদে পেয়েছে।
চলো সামনে একটা হোটেলে খেয়ে নিই। আমার কাছে পঁচিশ টাকা ব্যালেন্স আছে।
আমার কথা শুনে আলোর পার্সটা এগিয়ে দিল। ইশারা করে জানাল, যত লাগে নিয়ে নাও। আমি পার্স ব্যাগটা ওপেন করি। পাঁচ শ ও এক হাজার টাকার নোট অনেকগুলো। আমি বললাম, ছোট নোট নেই?
আছে, তবে তুমি এখান থেকেই নাও। খুচরো করে নিয়ো।
ফুলবাড়িয়া গুলিস্তানের মোড়ে পূর্বপরিচিত একটা হোটেলে ঢুকলাম। সঙ্গে আলো। এই হোটেলে একটা ছেলে থাকে। বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে ছেলেটার সঙ্গে। নাম সাগর। সাগরকে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও দেখছি না। একজনকে বললাম, সাগর আছে?
লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বলে, সাগর কেটা?
এই হোটেলে কাজ করে।
পিচ্চির কথা কন নাই তো?
বলতে বলতে সাগর চলে এসেছে। আমাকে দেখে হাসিমুখে বলে, ভাইজান আপনি! কেমন আছেন?
এই সাগরকে হোটেলের সবাই পিচ্চি বলে ডাকে। বুঝতে পারছি খুব ছোট সময় থেকে এই হোটেলে কাজ করে সাগর। তাই পিচ্চি ডাকতে ডাকতে নামটাই পিচ্চি হয়ে গেছে।
ভালো আছি। দে কী আছে। আগে খেতে হবে। সাগর আলোর দিকে তাকিয়ে বলে, ইনি বুঝি ভাবিজান। কত সুন্দর মানুষ।
পাকনামি করতে হবে না। যা, তাড়াতাড়ি খাবার দে।
হরেক রকমের ভর্তা, ডাল ও গরম ভাত চলে এল। আলো আমার দিকে তাকিয়ে বলে, এইগুলো বুঝি তোমার প্রিয় খাবার।
হ্যাঁ।
আমি খাচ্ছি। আলোও খাচ্ছে। সাগর আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সাগরকে বললাম, কিরে, নদীর খবর কী?
সাগর একটু হাসি দিয়ে মুখ লুকাতে চায়। আলো বলে, নদী কে?
সাগর দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। সাগরের মহাজন সাগরকে ডাকছে। সাগর তবু সাড়া দিচ্ছে না। ছেলেটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে। আমি বললাম, সাগর, তোর মহাজন তোকে ডাকছে!
সাগর মহাজনের কাছে চলে যায়। আলো আমার দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে। আমিও আলোর দিকে তাকিয়ে আছি। একফাঁকে আলো বলে, আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।
পৃথিবীটাই তো একটা স্বপ্নের অংশ। তোমার স্বপ্ন, আমার স্বপ্ন, সাগরের স্বপ্ন—মূল কথা হলো মানুষ বাঁচেই স্বপ্নকে ঘিরে।
কথা ঘোরাবে না। সোজাসাপটা কথা বলবে।
খাবার শেষ করে বসে আছি। সাগর এসে বলল, ভাইজান, আজকের খাবারের টাকা দিতে হবে না। আমি দিয়ে দেব।
আলো বলল, না না, তা হয় না। তুমি দেবে কেন?
আমি বললাম, আচ্ছা রাখো, আগে সাগরের কথা শুনে নিই, হঠাৎ তুই বিল দিতে চাচ্ছিস কেন?
আমার ইচ্ছা ছিল আপনাকে এক বেলা খাওয়ানোর, তাই...।
আচ্ছা ঠিক আছে, বিল তুই দিস। এখন বল, খাবার কত হয়েছে?
এক শ ত্রিশ টাকা।
এত টাকা তোর কাছে আছে?
আমার কাছে নাই, তয় মহাজনরে বললে আমার বেতন থেকে কেটে রাখবে।
কেন যে এত মায়াজালে আমাকে ফাঁসাতে চাস, আমি বুঝি না। এই দেখ এক মায়াবতী আমার সঙ্গী। ওর জাল থেকে যে কীভাবে...।
একদম চুপ! আমার বিষয় নিয়ে হোটেলে বসে কোনো কথা বলা যাবে না।
সবই বুঝলাম। ঠিক আছে, সাগর, বিল তুই পরিশোধ করিস। আচ্ছা শোন, তুই কি এখন আমার সঙ্গে যেতে পারবি?
আলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাগর তার মহাজনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছে। আলোর মুঠোফোনে কল আসে। ডায়না অ্যাকসিডেন্ট করেছে। তার এখনই যেতে হবে। আলো আর দেরি করেনি। সোজা বাসে উঠে গেল। আমাকে বলেছিল যাওয়ার জন্য। আমি যাইনি। আলো চলে গেছে। আমি আর সাগর আছি। আলো তাড়াহুড়ো করে পার্সটা রেখে গেছে। আমি কল করলে আলো বলে পার্সটা আমার কাছে রাখার জন্য।
আমি আর সাগর হাঁটছি শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া রাস্তা ধরে। আমি সাগরকে বললাম, কিরে সাগর, হোটেলের চাকরি কেমন লাগছে?
ভালোই লাগছে।
সত্যি সত্যি ভালো, নাকি কোনো সমস্যা আছে?
সাগর চুপ। কিছু বলছে না। কেন জানি বিষয়টা আমি আগে আঁচ করতে পারছিলাম। সাগর সব খুলে বলল। ওর মহাজন গত এক বছর বেতন দেয় না। ওর ইচ্ছা নিজেদের এলাকায় গিয়ে একটা হোটেল দেবে। বাবা নেই, মা আছে। ছোট একটা বোন আছে। বোনটা সেভেনে পড়ে। সবকিছু চলে সাগরের রোজগারের টাকা দিয়ে। হোটেল থেকে মাসে বেতন পায় তিন হাজার টাকা। বকশিশ পায় দুই হাজারের মতো। সব মিলিয়ে চার–পাঁচ হাজার বাড়িতে পাঠাতে পারে। সেটাও এখন দিতে পারে না হোটেলমালিক বেতন আটকানোর জন্য। আমি সাগরকে বললাম, হোটেল দিতে কত টাকা লাগতে পারে? গ্রামের বাজারে বেশি টাকা লাগবে না। ৪০–৫০ হাজার টাকা অ্যাডভান্স দিতে পারলে একটা দোকানঘর ভাড়া নেওয়া যাবে। বুড়িগঙ্গা নদীতে আর যাওয়া হয়নি। আমরা হাঁটছি জিরো পয়েন্টের এদিকে। কিশোর সাগরকে বেশ বড় লাগছে। দেখতেও হিরোদের মতো। আমাকে ছেলেটা বড্ড বেশি ভালোবাসে। ওর জন্য কিছু করতে পারলে মন্দ হতো না। অনেকটা পথ হেঁটেছি। আমি সাগরকে বললাম, কিরে, তুই তো কিছু বলছিস না।
সাগর আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে, মুরাদ ভাই, আপনি হলেন একজন চমৎকার মানুষ। আপনাকে দেখলে আমার কষ্ট কমে যায়।
আরে, বলিস কী! তুই যা ভাবছিস, আমি কিন্তু তা নই। আমাকে বড় করে কিছু বলিস না, বুঝলি?
আপনি ভালো মানুষ।
মানুষকে তুই কতটুকু চিনিস, তা আমি বুঝতে পারি। তুই তো হোটেলে কাজ করিস, যার জন্য অনেক ভালো–মন্দ মানুষের দেখা পাস।
ঠিক বলছেন, মুরাদ ভাই। গত কিছুদিন আগে এক আপা আমাদের হোটেলে এসে বলল, সে ভাত খাবে?
আমি বললাম, খাবেন আসেন। এই কথা বলার পর আপা বলল, ওনার কাছে কোনো টাকা নাই। তারপর আমি আপারে বসাইয়া খাবার দিলাম। খাবার শেষে তাকে আমি পঞ্চাশটা টাকাও দিলাম। তারপর আপা কী বলল জানেন?
কী বলল?
যে কথা বলছে, আমি বলতে পারব না।
আমি চুপ করে সাগরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। সাগরের চোখটা পানিতে টলমল করছে। কী অদ্ভুত দৃশ্য, যে ছেলেটা আনন্দিত মনে হাসিমাখা মুখে গল্প শুরু করল, সেই গল্পের শেষটা কিনা বেদনায় ভর করল। আসলে অচেনা মেয়েটি সাগরকে কী বলেছিল? এটা জানার খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলেও বিষয়টাতে একটা রহস্য আছে। আমি সাগরকে বললাম, কী বলেছিল, বলবি কি?
না, কথাটা বলার মতো না। খারাপ কথা!
তাহলে থাক, বলার দরকার নেই। আচ্ছা শোন, আমাকে যে তুই ভালো বলিস, তাহলে দেখ আমি কতটা ভালো, রহিম মিয়া নামের এক মুরব্বির সঙ্গে আমার দেখা। লোকটা একটু ঘাড়ত্যাড়া টাইপের মানুষ। মন্ত্রীর অফিসে সিকিউরিটির চাকরি করে। আমার সঙ্গে একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। তারপর আমি সিকিউরিটি বড় অফিসারকে বললাম, রহিম মিয়া আমার কাছ থেকে দুই শ টাকা ঘুষ চাইছে। আমার কথা শুনে রহিম রেগে যায়। আমি ভেতরে চলে যাই। এই নিয়ে দুই সিকিউরিটি ঝগড়া লেগে যায়। কিছুটা সময় পর আমি রহিম মিয়াকে বলি, কী চাচা, আমাকে চেনেন? রহিম মিয়া না–বোধক মাথা নাড়ায়। যখন বললাম, অনেক আগে আপনাকে দুই শ টাকা ঘুষ দিছিলাম। তারপর রহিম মিয়ার আবার চূড়ান্ত পর্যায়ে রেগে যায়!
সাগর হাসছে। আমি তার হাসি থামালাম না। একটু আগে সে কাঁদছিল। এখন সে হাসছে। আমি একটু চুপ করলাম। অমনি সাগর বলে ওঠে, তারপর কী হলো?
শ্রোতার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। এটাই নিয়ম মাঝেমধ্যে গল্পের ভেতর ইন্টারভেল দিতে হয়। এতে শ্রোতার মনোযোগ সম্পর্কে জানা যায়। সাগর শ্রোতা হিসেবে চমৎকার। আবার সাগর বলে, কী, বলবা না?
আমি চোখ বড় করে মুরব্বিকে দিলাম একটা ঝাড়ি! শেষে লোকটার কাছ থেকে উল্টো ত্রিশ টাকা নিয়ে চলে আসি। এবার বল, আমি ভালো না মন্দ?
ভালো।
সাগরের সঙ্গে তর্কে গেলাম না। হাঁটতেও ভালো লাগছে না। আমার হাতে আলোর রেখে যাওয়া পার্সটা সাগরের হাতে দিয়ে বললাম, এটা তোর কাছে রেখে দে।
এটা তো আলো আপুর। এটা আমি নিতে পারব না।
পাকামো করবে না বলে দিচ্ছি।
আমি একটা বাসে উঠে গেলাম। সাগর দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতে চাইলেও দেখতে পারছে না। কারণ, আমি চলতি বাসে উঠে গেছি।
রুমে তালা ঝুলছে। বুঝতে পারছি এটা ঝিলমিলের কাজ। দাঁড়িয়ে আছি রুমের সামনে। কাজের মেয়েটাকেও দেখছি না। কারও রুমে উঁকি দিতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তাহলে করবটা কী? ভাবনার ঘরে সাতপাঁচ। ঝিলমিল চলে এসেছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। মানুষকে বুঝতে হলে তার চোখের দিকে তাকাতে হয়। কারণ, চোখের মাঝে মনের ভাব প্রকাশ হয়। ঝিলমিলের চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে নরমাল মুডে আছে। তবে কেন জানি আমার মনে হচ্ছে উল্টো কিছু হতে পারে। অতি সাধারণই কিন্তু অসাধারণ হয়। সে ক্ষেত্রে ঝিলমিলের বেলায় গ্রহণীয় হতে পারে। বাড়ির ভেতর আছি। আকাশ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে আকাশ দেখতে পারলে ভালো লাগত। পৃথিবীর মানুষগুলোর মাঝে রহস্য থাকে। আকাশের মাঝে রহস্য থাকে না। ঝিলমিল বলে উঠল, কেমন আছ?
তুমি কেমন আছ?
আমি ভালো আছি। বাংলাদেশে এলাম অক্সিজেন নিতে। অক্সিজেন আর নিতে পারলাম কই! সারা দিন বাড়ির ভেতরেই কাটিয়ে দিলাম।
যতটা ভেবেছিলাম, ততটা নয়। ঝিলমিল দেখতে যেমন মিষ্টি একটা মেয়ে, ঠিক মনটাও তার অসাধারণ। ভেবেছিলাম আমার সঙ্গে রাগারাগি করবে। সেটা সে করেনি। আমি বললাম, সরি ঝিলমিল, আমার একটা কাজ ছিল। তাই ঘুম থেকে উঠে চলে গিয়েছিলাম।
ঝিলমিল ডান হাতের পাঁচটা আঙুল, বাঁ হাতের আঙুলের ফাঁকে ঢুকিয়ে দুই কদম হেঁটে দেয়ালে হেলান দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, কাজ ছিল! কিন্তু আমি যতটুকু জানি তুমি কোনো কাজ করো না। আচ্ছা, তোমার কাজটা কী, বলা যাবে?
অবশ্যই বলা যাবে। আমি সবই বলব, তার আগে তালাটা খুলে দাও না, প্লিজ। আমার বড্ড খিদে পেয়েছে। আগে গোসল করব, তারপর খেতে খেতে তোমার সঙ্গে কথা বলব, কেমন?
না, আগে আমার সঙ্গে কথা বলবে, তারপর গোসল, তারপর খাওয়া।
এবার বোঝা যাচ্ছে মহারানির মেজাজ। আর কথা ঘোরানো ঠিক হবে না। সোজা রাজি হয়ে গেলাম। ঝিলমিল আমাকে নিয়ে ছাদের ওপর চলে এল। রাত বাজে ১০টা। পুরো ঢাকার শহর লাল–নীল আলোতে ঝলমল করছে। ওপর থেকে সেই দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগছে। ঝিলমিল রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু ঝিলমিল কিছুই বলছে না। ভাব দেখে মনে হয়েছিল, আজ আমি শেষ। কিন্তু মেয়েটি তেমন কোনো কথাই বলছে না। তার মানে কি ঝিলমিলের ভেতর কোনো এক কষ্ট বাসা বেঁধেছে! আমি তাকে কিছু বলব। না থাক। নৈশব্দে দুটি প্রাণ দাঁড়িয়ে আছি কত শত মানুষের ওপরে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি এল বলে। ঝিলমিল দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, ঝিলমিল, তুমি ঠিক আছ তো?
ঝিলমিল কোনো কথাই বলছে না। আমি আবার বললাম, ঝিলমিল, এখনই বৃষ্টি আসবে। চলো নিচে যাই।
না, আমি যাব না। আমি বৃষ্টিতে ভিজব।
হঠাৎ এত রাতে তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে?
হ্যাঁ, ভিজব।
তাহলে আমি চলে যাই।
অবশ্যই তুমি চলে যাবে। এখনো তো বৃষ্টি পড়ছে না। তাহলে আর একটু সময় থাকো না।
না, আমি চলে যাব।
কেউ চলে গেলে তাকে তো আর আটকানো যায় না। এই নাও তোমার রুমের চাবি।
আমি চাবি নিয়ে চলে এলাম রুমে। গোসলের পর্ব শেষ করে খাটে শুয়ে আছি। বাইরে অঝোরে পড়ছে বৃষ্টি। ঝিলমিল ভিজছে বৃষ্টিতে। বৃষ্টিতে স্নান করা শরীর ও মন—এই দুইয়ের জন্য ভালো। ভেতরে পাপ থাকলে সেটা মোচন হয়। ঝিলমিল বড়লোকের মেয়ে। অর্থবিত্তের অভাব নেই। তাকে নিয়ে ভাবান্বিত হওয়ার কোনো মানে হয় না।
মুঠোফোনে আলোর ফোন। রিসিভ করে বললাম, কী খবর?
ভালো না! আচ্ছা, তুমি এখন কী করছ?
তোমাকে ভাবছি!
মানে কী?
তুমি যে ছলনা করে আমার কাছ থেকে চলে গেলে, সেটাই ভাবছি। আসলে ডায়নার কোনো বিপদ হয়নি।
তুমি কি ডায়নাকে ফোন করেছিলে?
না।
তোমার কি সত্যি মন খারাপ?
আমি মিথ্যা বলি না। আমি তো ছলনাময়ী না।
বুঝতে পারছি তুমি আমার ওপর রেগে আছ। আচ্ছা বলো, কী করলে তোমার রাগ ভাঙবে।
তুমি যদি আজকের রাতটা আমার সঙ্গে থাকতে তাহলে আমার ভীষণ ভালো লাগত।
ভুল বললে মুরাদ, আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি। তোমার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর এক–দুবারের বেশি দেখা হয়নি। আজকের দিনটা আমার জন্য একটা বিশেষ দিন। কারণ, তুমি আজ আমাকে সময় দিয়েছ। আমার সঙ্গে হেঁটেছ। অল্প হলেও তোমাকে আমি স্পর্শ করেছি। তোমার সঙ্গে বসে এক বেলা খেয়েছি। আমার যে কত ভালো লাগছে।
আরও কিছুক্ষণ থাকতে, আরও ভালো লাগত।
সেই সুযোগ তুমিই দিতে না। কেননা, তুমি নিজেই চলে যেতে। তখন আমার মনটা বিষাদে ছুঁয়ে যেত।
আমি রীতিমতো অবাক হচ্ছিলাম। আমি এমনটাই করি। আলো হয়তো সত্যি বলছে। কিন্তু আমারও তো ভালো লেগেছিল আলোকে কাছে পেয়ে, সেটা তাকে কী করে বোঝাই! থাক সব কথা বোঝাতে নেই। এটা প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দিলাম। আলো যতটা সুন্দরী, তার চেয়ে অধিক বুদ্ধিমতী। তার মতো মেয়েকে অনায়াসে বলা যায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ফোনের ওপাশ থেকে আলোর কণ্ঠ ভেসে আসছে, কী হলো, কী ভাবছ?
তেমন কিছু না।
প্লিজ, একটা সত্য কথা বলবে?
আমি বোধ হয় বুঝতে পারছি, আলো এখন জানতে চাইবে ঠিক এখন আমি কী ভাবছিলাম। সেটা বলা যাবে না। এখন তো আমি আলোকে ভালোবাসি, এটাই ভাবছিলাম। আর এটা যদি আলোকে বলি, তাহলে বেশি আনন্দিত হবে। সেই আনন্দের শেষটা আলোর চোখের পানি। এমনিতে মেয়েটার চোখে পানির কমতি নেই। তাই আমি বললাম, না, বলব না!
প্লিজ, বলো না, এখন কী ভাবছিলে?
সেটা বলা যাবে না।
আচ্ছা, আমার পার্সটা আছে তো?
হ্যাঁ আছে, যেখানে আছে, ভালো আছে।
কোথায় আছে?
সাগরকে দিয়েছি। আচ্ছা বলো তো তোমার পার্সে কত টাকা থাকতে পারে?
বলো কী! পার্সে তো অনেক টাকা আছে!
অনেক টাকা! ভালো তো। আচ্ছা, কত হবে?
আলোর মধ্যে একটা চিন্তিত ভাব চলে এল। আমি বললাম, হিসাবটা জানা প্রয়োজন ছিল। পঞ্চাশ হাজার হবে তো?
পার্সের এক পকেটে পঞ্চাশ হাজার। আরেক পকেটে ত্রিশ হাজার আছে।
ওয়াও, ভেরি গুড। তাহলে তো আরও ভালো হলো। সাগর ছেলেটার ৭০–৮০ হাজার টাকার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। সে নিজের এলাকাতে গিয়ে একটা খাবারের হোটেল দেবে। মা–বোনদের সঙ্গে থাকবে। এই শহরে থেকে মালিক বকাঝকা আর খেতে হবে না।
ও আচ্ছা।
তুমি জানো না আলো, ওরে যখন পার্সটা দিই, সে নিতে চায়নি। সে বলে, এটা আলো আপার পার্স। এটা আমি নিতে পারব না। আমি কোনো কথা না বলে বাসে উঠে ওর কাছ থেকে চলে এলাম। তুমি তো ভাগ্যবতী। সাগরের মতো একটা ভাই পেয়েছ। তুমি যখন তার কাছে যাবে, তার সঙ্গে কথা বলবে, সেই সময় বুঝবে সে একটা চমৎকার ছেলে। তখন তুমি সাগরের মতো ছেলের বোন হওয়ার আনন্দ নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। এমনটাও ভাবতে পারবে।
আমি বুঝতে পারছি।
কী বুঝতে পারছ?
কেন তোমার কাছে টাকা থাকে না।
আমাকে আবার মহামানব ভেবে বোসো না।
মুরাদ তোমার মতো একজন মানুষকে আমি ভালোবেসেছি, এটা ভেবেও আমি সারা জীবন আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারব।
তুমি আমাকে ভালোবাসো?
আলো চুপ করে বসে আছে। শুধু ফোনটা কানে ধরে আছে। তার নৈশব্দ প্রমাণ করছে, সে লজ্জা পাচ্ছে। আমি বললাম, তোমাকে বড্ড বেশি কাছে পেতে ইচ্ছা করছে।
কাছে থাকলে কী করতে?
কী করতাম জানি না। তবে সিনেমাতে তো ভালোবাসি শব্দটা বলার পর নায়ক–নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে।
তুমি কি আমাকে জড়িয়ে ধরতে?
গল্প, উপন্যাস, সিনেমা—এসব তো আর বাস্তব নয়। তবে তোমাকে সামনে পেলে জড়িয়ে না ধরলেও তোমার দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম এই চোখে কতটা প্রেম আছে।
আমার যে তোমার কাছে এখনই চলে আসতে ইচ্ছা হচ্ছে।
রাত একটা বাজে। এখন ফোনটা রেখে ঘুমাও।
কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও আর কথা বললাম না। ফোনটা রেখে দিলাম। জানালার পাশে এসে দাঁড়ালাম। মধ্যরজনীতে ঢাকার শহরে একটা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, পাখিদের মতো করে মানুষেরা নিজ গৃহে ছুটে চলে। শহরে দ্বৈত পায়ের সংখ্যা কমতে থাকে। শহরটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তখন এই খালি রাস্তায় দিকে তাকালে ভাবনাতে আসে, সারাটা দিন এই পথ কত সহস্র প্রাণকে বহন করে। কত আনন্দ, কত স্বপ্ন ছুটে চলে। কত দুঃখ, বেদনা হেঁটে যায়। পথ বুঝি মানুষের পদধূলি ধুলোকে শুধায়, সবাই নিদ্রায় যায়, আমাদের নিদ্রা নাই। আহা, পথের বুঝি দুঃখের অন্ত নেই। বড় কষ্ট হয় পথের জন্য।
লেখক: এম হৃদয়, সিঙ্গাপুর