বাচাল ছেলে: ৬ষ্ঠ পর্ব
আমি ধানমন্ডিতে একটি ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর একটু পরপর নোভাকে কল করছি।
প্রথমবার কল করার পর নোভা আমাকে একটি মেসেজ পাঠিয়েছে। ‘প্রচুর কাজের চাপ। এখন কথা বলতে পারব না।’
কিন্তু তারপরও আমি অনবরত কল করে যাচ্ছি। কিন্তু সে কল ধরছে না।
আমি যে নোভার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সেটা সে এখনো জানে না। আসলে নোভা ওর ব্যাংকের সামনে আমার আসা বা দাঁড়িয়ে থাকা কোনোটাই পছন্দ করে না। তাই আমিও সাধারণত নোভা না বললে ওর ব্যাংকের আশেপাশে আসি না। কিন্তু আজ একটা বিশেষ আনন্দময় ঘটনার কারণে আমি আমার আবেগকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। তাই ওর ব্যাংকের সামনে চলে এসেছি। নোভার বক্তব্য হচ্ছে, আমি একজন অপরিপক্ব আবেগি যুবক। আমার বেশিরভাগ আবেগই নাকি ছেলেমানুষীতে ভরা। আর সেই অপরিপক্ব আবেগের কাছে পরাজিত হয়েই ব্যাংকের ভেতর ঢুকে গেলাম।
এই ব্যাংকে আমি এর আগে তিনবার এসেছি। তাই ব্যাংকের সবাই মোটামুটি আমাকে চেনেন। তবে তারা আমাকে নোভার বন্ধু হিসেবেই চেনে। কেউ আমাদের প্রেমের বিষয়টি জানে না। আমি ভেতরে ঢুকে দেখলাম, নোভা আসলেই ব্যস্ত। আমি নোভার সামনে না গিয়ে কৌশলে ব্যাংকের ম্যানেজারের রুমে চলে গেলাম। ব্যাংকের ম্যানেজার খুবই ভালো মানুষ। উনাকে ভুলভাল বুঝিয়ে নোভাকে নিয়ে যাবার অনুমতি আদায় করলাম। তারপর নোভার টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলাম। ও কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি নরম স্বরে বললাম, আপা আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ওয়া বারাকাতু।
:এই তুই এখানে কী করিস? তোরে না বলছি তুই আমার অফিসে আসবি না।
:আফা আগে সালামের উত্তর দেন। পরে রাগ করেন।
নোভা দাত কটমট করে বলল, ওলাইকুম আস সালাম।
:ধন্যবাদ। শুন চেতিস না। আমি তোর কাছে আসিনি। আমি একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে এসেছি।
:ফাজলামি করিস? তোর পকেটে তো আমারে এক কাপ চা খাওয়ানোর টাকাই থাকে না। তুই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে কী করবি? কয়েন জমা রাখার জন্য অ্যাকাউন্ট খুলবি? তুই বরং নিউমার্কেট গিয়ে একটা মাটির ব্যাংক কিনে আন।
:অপমান করতেছিস? কর, কোনো সমস্যা নাই। এখন ওঠ।
:ওঠ মানে?
:তোর ম্যানেজারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি। বাইরে চল, কথা আছে।
:কিসের ছুটি? চাপা মারবি না।
:আরে বাবা, বিশ্বাস না হলে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আয়।
নোভা গটগট করে ম্যানেজারের রুমে গেল। একটুপর তারচেয়ে দ্রুত গতিতে গটগট করে ফিরে এল। নিজের চেয়ারে বসে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থেকে বলল, ধানমন্ডি লেকের পাড়ে আমাকে দেখতে ছেলেপক্ষ এসে বসে আছে? আমাকে নিতে তোকে আমার মা পাঠিয়েছে? তুই চোখেমুখে এত মিথ্যা কথা বলিস কেমনে?
:শোন উগান্ডার কবি হুনিলু সুদিবা বলেছেন, যুদ্ধে ও প্রেমে সব জায়েজ।
নোভা হি হি করে হাসতে হাসতে বলল, একথা উগান্ডার কোনো কবি বলেনি। এটা বলেছেন ব্রিটিশ কবি জন লিলি। আর হুনিলু না কি নাম বললি? আমি শিওর এই নামে উগান্ডার কোনো কবিও নাই। তাই না?
:কথা সত্য। আমি তো শুধু তোকে হাসাতে ঐ মিথ্যাটুকু বলেছি। নামটা এখনই বানালাম। শোন, আমি জানি এই কথাটি কবি জন লিলি ১৫৭৮ সালে তার লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘ইউফুয়েজ’–এ বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অল ইজ ফেয়ার ইন লাভ অ্যান্ড ওয়ার।’ এখন চল তোর জন্য সারপ্রাইজ গুড নিউজ আছে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে এলাম। রাস্তায় আমি আমার গুড নিউজটা বললাম না। আমার ইচ্ছে লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে বসে নোভাকে গুড নিউজটি দেব। আপনারা হয়তো ভাবছেন আমি না বললেও হেঁটে আসার এই সময়ে নোভা আমাকে গুড নিউজটি কি সেটা জানতে প্রশ্ন করেছিলো কি না? উত্তর হচ্ছে, ‘না’। এই মেয়েটি আজব এক মেয়ে। সে তার কৌতূহলকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আমরা প্যাডেল বোটে লেকের পানিতে ভাসছি। এ সময় আমি বললাম, শুন আজ বিসিএস রেজাল্ট দিয়েছে। আমার প্রশাসন ক্যাডারে হয়ে গেছে।
:অভিনন্দন। এ জন্য তুই আমাকে অফিস থেকে নিয়ে আসছিস!
:তুই খুশি হোসনি?
:হয়েছি। তবে এ নিউজটা তুই পরেও দিতে পারতি। অথবা টেক্সট মেসেজও দিতে পারতি।
: তুই জানি দিনকে দিন কেমন কাঠখোট্টা হয়ে যাচ্ছিস।
: যে মেয়ের মাথার ওপর থেকে হঠাৎ বাবার ছায়া উঠে যায়, তাকে তুই কী করতে বলিস? কথায় কথায় গান ছেড়ে নাচতে বলিস?
:শোন আঙ্কেলের হঠাৎ চলে যাওয়াটা অবশ্যই কষ্টের। তবে তোকে প্রতিষ্ঠিত দেখে গেছেন। এটা ভেবে তো সান্ত্বনা পেতে পারিস। আচ্ছা শোন, ভাবছি মা-বাবাকে তোদের বাসায় পাঠাব।
:কেন?
:কেন মানে? বিয়ের জন্য। তোর মা বলেছিলো বিসিএস না হলে বিয়ের অনুমতি দেবে না। এখন তো বিসিএস হয়ে গেছে। এখন তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে তোদের বাসায় বাবা-মাকে পাঠাতেই পারি, তাই না?
:দেখ ৯ মাস হলো বাবা মারা গেছে। বাবা মারা যাওয়ার আগের আমি আর বর্তমানের আমি কিন্তু এক না।
:সেটা আমি বুঝি।কিন্তু জীবন তো এ জন্য থেমে থাকবে না। আর তোর বাবাও নিশ্চয় তোর একটা সংসার হলে খুশি হবেন?
:সেটা ঠিক আছে। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখিস, আমি ছাড়া মাকে দেখার আর কেউ নাই।
:আরে তোর বাবা অনেক সম্পদ রেখে গেছেন। সুতরাং তার অর্থ কষ্টের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। আর উনি একা হচ্ছেন কোথায়? উনার এখন একটা সন্তান। তোকে বিয়ে দিয়ে উনি আরেকটা সন্তান পাচ্ছেন।
:শোন এতো সুন্দর সুন্দর কথা বলিস না। তোর কথাগুলো চাপাবাজি মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফুসলিয়েফাসলিয়ে আমাকে বিয়ে করার চেষ্টা করছিস। হি হি হি...
:আমাকে তুই চাপাবাজ বললি?
:চাপাবাজই তো। চাপাবাজি করেই তো অফিস থেকে লেকের পানিতে নিয়ে আসলি। হি হি হি...
: তুই না পরিদের মতো হাসছিস।
:তুই কীভাবে জানলি আমার হাসি পরিদের মতো হবে। তুই কি পরি দেখেছিস?
:তা দেখিনি। তবে আমি শিওর তারা তোর থেকে কম সুন্দর হবে।
:তেল কম মার। শোন, তোর বাবা-মাকে এখন আমাদের বাসায় পাঠাইছ না। তুই জানিস, মা তোকে সহ্য করতে পারে না। তুই বরং কাল বাসায় আয়। আগে তুই মায়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে কথা বল। তোদের দুজনের মত এক হলে তারপর তোর বাবা-মাকে আসতে বলিস।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
একটু আগে আমি নোভাদের বাসায় এসেছি। আজ আসার সময় উদ্ভট কিছু আনিনি। কিছু মিষ্টি, কিছু ফল এবং তিনটি ফুলের তোড়া এনেছি।
আমি বেল বাজাতেই জয়নব দরজা খুলে দিল। আমি জয়নবের দিকে একটা ফুলের তোড়া বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, জয়নব পরি, এটা আপনার জন্য।
জয়নব লজ্জা পেয়ে বলল, না ভাইজান আমি এটা নিমু না। আমার লজ্জা করে।
আমি অবাক হয়ে বললাম, ফুল নিতে লজ্জা করবে কেন?
:হুনছি, মানুষ প্রেম করলে ফুল দেয়। তাই লজ্জা পাইতেছি।
:হ্যাঁ, আপনি ঠিক শুনেছেন। মানুষ প্রেম করলেই ফুল দেয়। কিন্তু প্রেম তো অনেক ধরনের হয়। আমার আপনার প্রেম হচ্ছে ভাই–বোনের প্রেম। আমি আপনার ভাই, আর আপনি আমার ছোট বোন। সে হিসেব আমি আপনাকে ফুল দিলাম।
একথা বলতেই জয়নব আমার পা ধরে সালাম করতে বসল। আমি দ্রুত সরে গেলাম। বললাম, জয়নব পরি, কখনো কারো পা ধরে সালাম দেবেন না। সালাম সব সময় মুখে দেবেন।
:ভাইজান সালামালাইকুম।
জয়নব ফুলের তোড়াটি নিয়ে নোভাকে ডাকতে ভেতরের রুমে চলে গেল। একটু পর নোভা এলে তাকেও একটি ফুলের তোড়া দিলাম।
আমি, নোভা এবং নোভার মা আমরা ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছি। জয়নব আমার সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ দেখে মনে হলো, সে এখন আমার ছোট বোনের দায়িত্ব পালন করছে।
নোভার মা মুখটাকে গম্ভীর করে রেখেছেন। উনাকে দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে যে, উনি ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে বসে আছেন। আসলে উনি এখনো আমাকে মেনে নিতে পারছেন না।
আমরা সবাই চুপচাপ বসে আছি। কেউ কোনো কথা বলছি না। নোভার মা স্মার্ট ফোনো কিছু একটা দেখছেন। নোভা আমাকে কথা শুরু করতে চোখ দিয়ে ইশারা করল। আমি ঢোক গিলে নোভার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, ম্যাডাম, আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?
উনি ফোন থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন, তুমি অলরেডি আমাকে দুবার সালাম দিয়েছ। এটা তৃতীয়।
:ম্যাডাম সালাম দেওয়া তো ভালো। সোয়াবের কাজ। আমার তো মন চাচ্ছে আপনাকে ননস্টপ সালাম দিই।
:শোনো, অতিভক্তি চোরের লক্ষণ। অতো ভনিতা না করে কী বলবে, বলে ফেল।
মনে মনে বললাম, আপনি আর ভালো হবেন না। ওকে আপনি যখন লড়াই চালিয়ে যাবার পণ করেছেন তাহলে আমিও রেডি। দেখা যাক কে জিতে কে হারে।
আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর শেষ ফুলের তোড়াটি নিয়ে নোভার মা যে সোফায় বসে আছে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ফুলের তোড়াটি সামনে বাড়িয়ে বললাম, আপনি কি আমার শাশুড়ি হবেন? আমি কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে ওর বাবা যেভাবে আগলে রাখত, আমিও সেভাবে সব বিপদ থেকে তাকে আগলে রাখব। প্রমিজ।
উনি আমার হাত থেকে তোড়াটি নিলেন। কিন্তু কিছু বললেন না। তবে জয়নব বাচ্চাদের মতো হাতে তালি দিলো। উনি জয়নবের দিকে কঠিন চোখে তাকালেন। জয়নব ভয় পেয়ে হাত তালি বন্ধ করে দিল। আমি উঠে এসে আবার নিজের আসনে বসলাম। এরপর নোভার মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, নোভার কাছে শুনলাম তুমি বিসিএস পাস করেছ। যেহেতু নোভার বাবা কথা দিয়েছেন তুমি বিসিএস পাস করলে তোমাদের বিয়ে দেবেন। সেহেতু আমি তার কথা রাখব। তবে আমার কিছু শর্ত আছে।
:আবার শর্ত!
:হু। শর্ত হচ্ছে, বিয়ের পর তোমাকে এই বাসায় এসে উঠতে হবে।
:মানে কি ? আপনি কি আমাকে ঘরজামাই থাকতে বলছেন?
:হু। কারণ, আমার আর কোনো সন্তান নেই। ওর বাবাও নেই। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
:আমি আপনাকে একা থাকতে বলছি না। আপনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। আমাদের বাসায় থাকবেন।
:তুমি কি আমাকে তোমার বাবার বাসায় উঠতে বলছ?
:হ্যাঁ। আমার মা–বাবার সঙ্গে থাকলে আপনার ভালো লাগবে। আমরা সবাই মিলে একটা বড় পরিবার হিসেবে থাকব। আপনিও কথা বলার মানুষ পাবেন।
:এটা সম্ভব না। আমার আত্মীয়–স্বজন আছে। আমি তোমাদের বাসায় উঠলে আমি তাদের কাছে মুখ দেখাতে পারব না। সবাই বলবে আমি মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে উঠেছি।
:মানুষ অনেক কথাই বলে বা বলবে। আমরা কেন ওসব কথা গায়ে মাখব?
:তুমি মাখবে কি মাখবে না, সেটা তোমার ব্যাপার। তবে আমি তোমার বাবার বাসায় উঠছি না।
:ওকে। তাহলে আরেক কাজ করতে পারি। আমি একটা বাসা ভাড়া নেবো। আপনি আমাদের সঙ্গে ওই বাসায় থাকবেন। ওই বাসায় আমার মা–বাবা থাকবেন না। এখন ঠিক আছে?
:আমি তোমার বাসায় উঠব কেন? আমি কি হোমলেস?
:ম্যাডাম বিষয়টি তা না। আপনার একা একা থাকতে কষ্ট হবে। তাই বলছি।
:তোমাকে সরাসরি একটা কথা বলি। তুমি যদি বিয়ের পর এ বাসায় না ওঠো, তাহলে এ বিয়ে হবে না।
:ম্যাডাম দেখুন আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। যার জন্য আপনি বারবার বিভিন্ন ইস্যু তুলে বিয়েটা বন্ধ করতে চাচ্ছেন।
:তোমাকে আমার আর কিছু বলার নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। এখন তুমি কী করবে সেটা তুমি ভেবে দেখো।
একথা বলে তিনি ড্রইংরুম থেকে চলে গেলেন। আমি নোভার দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল।
:আমি কীবলব?
:চল আমরা বিয়ে করে ফেলি।
:আমি মায়ের সম্মতি ছাড়া কিছুই করব না। আমি ছাড়া মায়ের কেউ নেই।
:কথা সত্য। তার মানে তুইও চাস আমি ঘরজামাই থাকি?
:না চাই না। আর আমি তোকে যতটুকু চিনি। তুই কখনোই ঘরজামাই থাকবি না।
:তাহলে সমাধান কী?
:সমাধান হচ্ছে তুই আমাকে ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেল।
:তুই কি সিরিয়াস?
:হু। তুই এক কাজ কর। তুই বরং স্নেহাকে বিয়ে কর। কতো কিউট একটা মেয়ে। ও তো এখন কলেজে পড়ে। ও তো এখন আর ছোটো না।
:হু।
:আর শোন, তোর বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিস। বিয়েবাড়ির মুরগির রোস্ট আমার খুব প্রিয়।
আমি নোভার চোখের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলাম। নোভার চোখে পানি টলমল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পড়বে। নোভা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। জয়নবের দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর দুচোখেও পানি। আমি জয়নবের সামনে গিয়ে বললাম, জয়নব পরি শোনেন, পরিরা কখনো কাঁদে না। তাই কাঁদবেন না।
জয়নব হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছলো। আমি জয়নবের মাথায় হাত দিয়ে বললাম, আর একটা কথা, এই মানুষ দুটোকে আপনি একটু দেখে রাখবেন।
একথা বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। বাহিরে এসে ঘাড় ঘুরিয়ে দোতলার বারান্দায় তাকালাম। দেখলাম দোতলার বারান্দা থেকে নোভা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানি আমি দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়ার পর এ মেয়েটি বুক ভিজিয়ে কাঁদবে। আজব এক মেয়ে। চলবে...
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]