বাচাল ছেলে: ১ম পর্ব
স্নেহা দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত ছয় মাস আগে আমি ওর গৃহশিক্ষক হিসেবে পড়ানো শুরু করেছি। সপ্তাহে চার দিন আমি স্নেহাকে পড়াতে আসি। আমি মূলত এই একটিই টিউশনি করি। একটির বেশি টিউশনি না করার প্রথম কারণ হলো, আমি একটু অলস টাইপের মানুষ। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, আমার অর্থের চাহিদা খুবই কম। আমার কাছে মনে হয়, ছোট্ট এই জীবনে এত টাকাপয়সার কোনো দরকার নেই।
আমি স্নেহাকে মনোযোগ দিয়ে জটিল কিছু অঙ্ক করাচ্ছিলাম। ঠিক সে সময় আমার ফোনটি বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম, নোভা ফোন করছে। কিন্তু আমার কলটি রিসিভ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। যদিও আমি প্রচুর কথা বলি। আমার পরিচিতজনেরা বলেন, আমি নাকি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাচাল। কিন্তু কেন জানি ফোনে কথা বলতে আমার খুব একটা ভালো লাগে না।
নোভাও নাছোড়বান্দা। সে বারবার ফোন করেই যাচ্ছে। আমি কল রিসিভ না করে মেসেজ পাঠালাম—
‘শোন, আমি এখন অফিসে ভীষণ ব্যস্ত। অনেকক্ষণ থেকে অনুভব করছি নাক চুলকানো দরকার। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য সেটাও করতে পারছি না। ব্যস্ততা কমলে প্রথমে ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড নাক চুলকাব। তারপর তোকে কল দেব।’
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল,
‘ফোন ধর। না হলে ইট দিয়ে তোর নাক ভোঁতা করে দেব। তখন আর চুলকানোর জন্য নাক খুঁজে পাবি না।’
মেসেজ পড়া শেষ হতে না হতেই আবার নোভার ফোন এল। এবার নাক হারানোর ভয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ফোন ধরলাম। সত্যি বলতে কি, আমি ওকে একটু একটু ভয় পাই। কারণ, নোভা অসম্ভব রকমের রাগী একরোখা একটা মেয়ে। তবে রাগী হলেও ওর মনটা আবার মায়ায় ভরা। ফোন ধরতেই ধমক দিয়ে বলল,
‘এই তুই কি আমার সঙ্গে ফাজলামি করিস? এই রাত আটটায় তুই কোন অফিসে মরতে গেছিস?’
‘কেন, আমার অফিসে।’
‘তোর অফিস মানে! তুই বেকার মানুষ, তুই অফিস পাইলি কোথায়? করিস তো একটা মাত্র টিউশনি।’
‘আমার টিউশনিই আমার অফিস। আর আমি এখন সেখানে।’
‘আজকে তো তোর টিউশনি থাকার কথা নয়। তুই ওই বাসায় আজকে কী করিস?’
‘আরে সামনে ছাত্রীর পরীক্ষা। ওর মা–বাবা জোর করে ধরল কয়েকটি স্পেশাল ক্লাস করানোর জন্য। তুই তো জানিস, আমার আবার দয়ার শরীর। আমি মানুষকে না বলতে পারি না। তাই এখন স্পেশাল ক্লাস নিচ্ছি।’
‘তা তোর এই স্পেশাল ক্লাস কখন শেষ হবে?’
‘আর ঘণ্টাখানেক আছি।’
‘বের হয়ে ফোন দিস। জরুরি কথা আছে।’
‘আবার ফোন দিতে হবে কেন? তুই জানিস আমার ফোনে কথা বলতে ভালো লাগে না। তোকে অনেকবার বলেছি, মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার ভালো নয়। শোন, অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে গ্লাইওমা ও অ্যাকুইস্টিক নিউরোমা টিউমার হয়। থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যানসার হয়। এ ছাড়া ঘুমের সমস্যা হয়, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, হৃদ্রোগের আশঙ্কা থাকে। শুধু কি তা–ই? শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। আর্থ্রাইটিস, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ও ত্বকের সমস্যাও হতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। এর থেকেও আরেকটা ভয়াবহ ব্যাপার আছে। অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহারে পুরুষের বন্ধ্যত্ব হতে পারে। এটা জানার পর থেকে আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছি। কারণ, আমার বাবা হওয়ার খুব শখ।’
‘মাই গড, একটা মানুষ এত কথা কেমনে বলে!’
‘কেমনে বলি মানে? মুখ দিয়ে বলি। আচ্ছা, এখন তোর জরুরি কথাটা বল।’
‘না, এখন বলা যাবে না। সঙ্গে মা আছে।’
‘তা তুই তোর রুমে গিয়ে কথা বল।’
‘আরে গাধা, আমি বাসার বাইরে। আমি মাকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম।’
‘ডাক্তারের কাছে কেন? খালাম্মা কি অসুস্থ?’
‘না, তেমন কিছু নয়। মাকে একটু চোখের ডাক্তার দেখালাম। রিডিংয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তার চশমা নিতে বলেছেন।’
‘খালাম্মার চোখে সমস্যা? আগে বলবি তো। শোন, ওনাকে বেশি করে মলা ও ঢেলা মাছ আর মিষ্টিকুমড়া খেতে বল। আর খেয়াল রাখবি ওনার প্রতিদিনের খাবারে যেন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার থাকে। ওনাকে বলবি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সবুজ গাছপালার দিকে ১৫ মিনিট তাকিয়ে থাকতে। পারলে ঘরের দেয়ালে সবুজ পেইন্ট লাগিয়ে পুরো ঘর সবুজ করে ফেল। এমনকি বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, দরজা–জানালার পর্দা সব সবুজ করে ফেল। টয়লেটের বদনাটাও হবে সবুজ রঙের। ওনাকে রাত জাগতে মানা করবি। প্রয়োজন না থাকলে সারা দিন চোখ বন্ধ করে থাকতে বলবি। ধর, তোদের বাসায় মেহমান এসেছে। উনি মেহমানদের সঙ্গে কথা বলছেন। এখানে চোখ খোলা রাখার কোনো দরকার নেই। চোখ বন্ধ করেই উনি মেহমানদের সঙ্গে কথা বলবেন। এমনকি তোদের সঙ্গেও একই পদ্ধতিতে কথা বলবেন। প্রয়োজনে টিভি দেখবেন চোখ বন্ধ করে। ভাত খাবেন চোখ বন্ধ করে। আর একটা কথা...’
‘ওই ফালতু, তুই চুপ করবি? তোর কাছে কি আমি কোনো পরামর্শ চাইছি?’
‘তা চাসনি, তবে দায়িত্ব বলে একটা কথা আছে না? আর একটা কথা, ওনাকে ধূমপানমুক্ত জীবন যাপন করতে বলবি। আর এখনই তুই খালাম্মার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নে। আজকালকার ছেলেমেয়েগুলোর কী যে হলো, সারাক্ষণ ফোনে তাকিয়ে থাকে আর উল্টাপাল্টা জিনিস দেখে। এতে তো চোখে সমস্যা হবেই।’
‘আমার মা আজকালকার ছেলেমেয়ে? আমার মা ধূমপান করে? আচ্ছা তুই সারা দিন এত উল্টাপাল্টা কথা কেন বলিস?’
‘আরে রাগ করিস ক্যান? তোর আম্মা চোখ নষ্ট করে ফেলছে, তাই ওনার উপকারের জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছি।’
‘বাবারে আমি তো তোর কাছে কোনো পরামর্শ চাইনি। তা হলে তুই কেন দিচ্ছিস?’
‘না চাইলেও আমরা যারা বুদ্ধিমান, পরামর্শ দেওয়া তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর রাগ করছিস কেন, আমি তো তোকে ভালো পরামর্শ দিচ্ছি। শোন, চোখ বলে কথা। চোখ নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। একটা বাংলা সিনেমার গান আছে না, “চোখের নজর এমনি কইরা একদিন খইয়া যাবে, জোয়ার-ভাটায় পইড়া দুই চোখ নদী হইয়া যাবে, পোড়া চোখে যা দেখিলাম তাই রইয়া যাবে। হো ও ও ও ও...।” একটা কথা এখানে কিন্তু হো ও ও টা লম্বা করে গাইতে হবে।’
‘চুপ থাক, পাগলের গুষ্টি পাগল।’
বলেই নোভা লাইন কেটে দিল।
ফোন রেখে খেয়াল করলাম, স্নেহা অঙ্ক না করে আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েকে নিয়ে পড়েছি এক ঝামেলায়। সেই প্রথম দিন থেকেই দেখছি কেমন জানি হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। বিষয়টি বড়ই অস্বস্তিকর। আমি মৃদু ধমক দিয়ে বললাম,
‘তুমি অঙ্ক করা বাদ দিয়ে এভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছ কেন? মুখ বন্ধ করো। তোমার তো আলজিব দেখা যাচ্ছে। শোনো, আলজিব খুবই দরকারি ও মূল্যবান একটা জিনিস। এটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রাখাই উত্তম। বিনা কারণে মানুষকে তোমার আলজিব দেখাবে না।’
‘স্যার, আপনি এত উল্টাপাল্টা কথা কেমনে বলেন? আমি আপনারে আমার আলজিব কখন দেখালাম? আপনি আমার আলজিব কই দেখলেন বলেন তো?’
‘তোমার মুখের ভেতর।’
‘স্যার, অনুমতি দিলে একটা কথা বলি?’
‘না। অনুমতি দিলাম না। তুমি অঙ্ক করো।’
‘না, স্যার বলি।’
‘অনুমতি না দিলেও যখন বলবা, তাহলে অনুমতি চাও কেন? ফাজলামি করো? শিক্ষক কি ফাজলামির জিনিস?’
‘স্যার, আপনি কি জানেন, আপনি যখন কথা বলেন, তখন আপনার চোখ দুটিও মুচকি মুচকি হাসে? ইসসস আপনাকে যে তখন কত কিউট লাগে।’
‘স্নেহা শোনো, তুমি ভুল দেখেছ। আমার শুধু চোখ না, আমার নাক, কান, গলা, চুল, কপাল, হাত, পা সবই হাসে। আর তারা মুচকি হাসে না। তারা অট্টহাসি হাসে। হু হা হা হা, হু হা হা হা, হু হা হা হা, হু হা হা হা। এভাবে সিনেমার ভিলেনদের মতো হাসে। তুমি ভালোভাবে খেয়াল করলেই সেই হাসি শুনতে পেতে। সম্ভবত তোমার কানে ময়লা হয়েছে। সে জন্য আমার শরীরের বিভিন্ন অংশের হাসি তুমি শুনতে পাওনা। শোনো, তুমি আজকেই তোমার কানের ময়লা পরিষ্কার করবে। কানে ময়লা নিয়ে তুমি ঘুমাও কেমনে? ছি।’
স্নেহা কথা শুনে কিছুক্ষণ আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
‘স্যার, আপনি এমন ক্যান? আপনারে এক লাইন বললে, আপনি এক শ লাইন উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে দেন।’
‘এতই যখন বোঝো, তাহলে আমারে এক লাইন কথা বলতে আসো কেন? আমার চোখ হাসে না কাশে তোমারে কি আমি সেটা বলতে বলছি? আল্লাহ হাসার জন্য মুখ দিছে, সেটা দিয়াই ঠিকমতো হাসি না, আর তুমি বলতেছ আমার চোখ হাসে। শিক্ষকের সঙ্গে মশকরা করো? খবরদার শিক্ষকের সঙ্গে মশকরা করবা না। মশকরা করার শখ হইলে দুলাভাইয়ের সঙ্গে করবা। ও তোমার তো আবার বোন নেই। তুমি দুলাভাই পাবে কোথায়? এক কাজ করতে পারো। আমি যখন বিয়ে করব, তখন তুমি আমার স্ত্রীকে বোন ডাকবে। সে হিসেবে তখন আমি হব তোমার দুলাভাই। তখন যত খুশি মশকরা করবা। আমি তোমারে তখন মানা করব না। আমিও তোমার সঙ্গে তখন মশকরা করব। কিন্তু খবরদার এখন এসব করবা না।’
‘স্যার, আপনি আমার রোমান্টিক অনুভূতিকে নিয়ে এমন টিটকারি করতে পারলেন? আপনি এত পাষাণ কেন?’
‘পাকনামি না করে এখন অঙ্কটা শেষ করো। আমি পাষাণ না মোম, সেটা নিয়ে তোমার গবেষণা করতে হবে না। ইঁচড়ে পাকা মেয়ে। তুমি তো দেখতেছি একেবারে মহিলা দেবদাস।’
দেখলাম স্নেহার চোখ টলমল করছে। স্নেহাকে নিয়ে খুবই বেকায়দায় আছি। মেয়েটি বড়লোক মা–বাবার আদরের সন্তান। বেশি আদরে থাকতে থাকতে এমন আদুরী স্বভাবের হয়েছে যে জোরে ধমকও দিতে পারি না। চোখ দিয়ে বর্ষা নামে। ওকে বলেছি, আমি একটা রিলেশনে আছি। তাই তুমি আমাকে নিয়ে এসব ভেবে জীবনটাকে জটিলতার মধ্যে নিয়ো না। তারপরও মেয়েটি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ফাজিল মেয়ে।
একবার ভেবেছিলাম টিউশনিটি ছেড়ে দেব। কিন্তু নোভার জন্য তা–ও পারছি না। ও এক অদ্ভুত যুক্তি দিয়ে আমাকে এ টিউশনিটি করতে বাধ্য করছে।
ওহ, নোভা কে, তা তো বলা হলো না। নোভা আমার প্রেমিকা। অবশ্য নোভাকে আমার প্রেমিকা বলা কতটুকু যৌক্তিক হবে, তা নিয়ে আমি একটু দ্বিধান্বিত। কারণ, আসলে ও আমার বন্ধু। মানে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাবজেক্টে ও একই ইয়ারে ছিলাম। সহজ কথায়, নোভা আমার সহপাঠী ছিল। আমাদের দুজনের মধ্যে প্রেমিক–প্রেমিকা–জাতীয় কোনো বিষয় নেই। পুরোটাই তুই–তুকারি সম্পর্ক। শুধু তা–ই নয়, ও রেগে গেলে আমার ওপর হাত–পা দুটিই চালায়। এমন একটি মেয়েকে প্রেমিকা বলা যায় কি না, সেটা একটা প্রশ্ন।
লেখাপড়া শেষে আমি চাকরি না পেলেও নোভা দেশের নামকরা একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করছে। আর আমি এখনো মধ্যবিত্ত বাবার হোটেলে খাচ্ছি ও ঘুমাচ্ছি। এ জন্য অবশ্য আমার বাবা ও নোভার কাছে আমাকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়। তবে আমি এসব কথা গায়ে মাখি না। কথা কি শর্ষের তেল যে গায়ে মাখব? আমার বাবার বক্তব্য হচ্ছে আমার গায়ের চামড়ার পুরুত্ব নাকি অনেক বেশি। যার কারণে কোনো কটু কথাই আমার গায়ে লাগে না।
তো যা বলছিলাম। নোভাকে যখন ছাত্রীর এই প্রেম প্রেম ভাবের কথা বলে টিউশনি ছাড়ার কথা বললাম, তখন সে প্রথমেই ছাত্রীর ছবি দেখতে চাইল। আমি ফেসবুক থেকে স্নেহার ছবি বের করে নোভাকে দেখালাম। ছবি দেখে বলল,
‘তুই কি ওর ফেসবুক ফ্রেন্ড?’
‘আরে না। আমারে রিকোয়েস্ট পাঠাইছে। আমি অ্যাকসেপ্ট করিনি।’
‘কেন করিসনি? এখনই অ্যাকসেপ্ট কর।’
‘আরে না। ফাজিল টাইপের ইঁচড়ে পাকা একটা মেয়ে। সারাক্ষণ কীভাবে জানি প্রেম প্রেম চোখে তাকিয়ে থাকে। ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলে আরও লাই পেয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে একদিন মায়ের সোনাদানা চুরি করে বলবে, চলেন স্যার পালিয়ে বান্দরবান চলে যাই।’
‘বললে যাবি সমস্যা কি?’
‘বান্দরবানের মশা কতটা ভয়ংকর তোর কোনো ধারণা আছে?’
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে নোভা ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর আমার হাত থেকে ফোনটি নিয়ে অ্যাকসেপ্ট অপশনে চাপ দিল। তারপর বলল,
‘মেয়েটি কিন্তু অসম্ভব রকমের সুন্দরী। আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা, সত্যি করে বলত, তুই কি মেয়েটির রূপ দেখে বা তোর প্রতি মেয়েটির প্রেম দেখে একটু দোটানায় পড়ে গেছিস?’
‘এ কথার মানে তো বুঝলাম না।’
‘মানে, একদম সোজা। তুই হয়তো ভয় পাচ্ছিস, বেশি দিন মেয়েটির পাশে থাকলে তুই হয়তো নিজেকে আর সংযত রাখতে পারবি না, মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাবি, তোর মনের দৃঢ়তা কমে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।’
‘মাই গড বাচ্চা একটা মেয়ে। তাকে নিয়ে তুই এসব কী বলছিস?’
‘মেয়েটি বাচ্চা, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুই তো পাকনা। আর তুই কি জানিস, তোর চেহারার মধ্যে কেমন জানি একটা চোর চোর ভাব আছে? আমি তো তোরে নিয়ে রীতিমতো ভয়ে থাকি।’
‘কিসের ভয়?’
‘কখন কোথায় যে কোন মেয়ের সঙ্গে কোন ঘটনা ঘটাবি, তা আল্লাহ মালুম।’
‘বলিস কী, আমার চরিত্র কি এতই সন্দেহজনক?’
‘অবশ্যই।’
‘সে জন্যই তো বলছি এই টিউশনিটি ছেড়ে দিই।’
‘না, তুই এ টিউশনিটি ছাড়তে পারবি না। আমি দেখতে চাই তুই এমন সুন্দরী মেয়ের প্রেম উপেক্ষা করে নিজেকে কত দিন সংযত রাখতে পারিস। ধরে নে, এটা তোর চারিত্রিক দৃঢ়তার একটা পরীক্ষা। আমার ধারণা, তুই এই পরীক্ষায় শতভাগ ফেল মারবি। আর শোন, তুই যদি এই পরীক্ষায় ফেল করিস। মানে এই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাস, তবুও আমি রাগ করব না।’
নোভার অদ্ভুত কথা শুনে আমি অবাক হয়ে নোভার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। লক্ষ করলাম, নোভা আমার হাঁ করা মুখের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আচ্ছা, নোভা কি এখন আমার আলজিব দেখতে পাচ্ছে? না হলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? চলবে...
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র [email protected]