বাচাল ছেলে: ৫ম পর্ব
স্নেহাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ পথে পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটলাম। এখন থেকে নোভা আর আমার কেউ না, এ কথা ভাবতেই মনে কষ্ট লাগছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, কেন জানি এই কষ্টের ছাপটা আমার মুখে পড়ছে না। একটু আগে রাস্তার পাশে একটি সেলুনে ঢুকে আয়নায় নিজের মুখটা খুব গভীরভাবে পরীক্ষা করলাম। দেখলাম, আমার মুখে একটা হাসি হাসি ভাব লেগে আছে। এটা দেখে খানিকটা মেজাজ গরম হয়ে গেল। আরে ব্যাটা, তোর প্রেমিকা চলে যাচ্ছে, তোর চোখেমুখে এখন থাকবে কান্নার ছাপ। তা না, তোর মুখ হাসি হাসি। আয়নায় তাকিয়ে মুখটাকে করুণ করে একটা কান্না কান্না ভাব আনতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না। উল্টো চেহারাটা দেখতে এমন হলো যে নিজেরই হাসি পেয়ে গেল।
রাত একটার দিকে বাসায় ফিরলাম। মা দরজা খুলে দিলেন। মুখটাকে যথাসাধ্য করুণ করে ঘরে ঢুকলাম। ঘরে ঢুকেই মায়ের হাত ধরে মাকে বললাম,
মা, আমার মুখের দিকে তাকাও। দেখো তো মুখে কি কষ্টের ছাপ বোঝা যায়?
বাবা শোন, এখন রাত একটা বাজে। আমাকে সেই ভোরবেলায় উঠতে হবে। খামাকা উল্টাসিধা কথা বলে আমারে আটকায় রাখিস না। আমার হাত ছাড়।
পৃথিবীর সব মায়েরা সন্তানের কথা শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। আর তুমি?
শোন, ওই সন্তানেরা তোর মতো বেহুদা কথা বলে না। তুই যদি দুনিয়ার বাকি সব সন্তানের মতো দরকারি কথা বলতি এবং কম কথা বলতি, তাহলে আমিও তোর কথা শুনতে ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। কিন্তু তুই তো কম কথা বলার মানুষ না।
ছি ছি ছি, নিজের গর্ভধারিণী মা নিজের সন্তান সম্পর্কে এমন কথা বলে? তুমি কেমন মা?
বাবারে, আমি খুব খারাপ মা। আমার সাথে তাহলে তুই কথা বলিস না।
এ কথা বললে তো হবে না মা। তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে। খুবই দরকারি কথা।
শোন, তোকে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। এর মধ্যে কথা শেষ করবি। তোর কথা শেষ হোক বা না হোক, ঠিক পাঁচ মিনিট শেষ হলেই আমি চলে যাব। এখন হাত ছাড়।
মায়ের এমন কথা শুনে আমি মায়ের হাত ছেড়ে দিলাম। তারপর মুখটা যথাসম্ভব করুণ করে কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকালাম। মা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
অভিনয় করে সময় নষ্ট করিস না। অলরেডি ৪০ সেকেন্ড শেষ। কী বলবি বল।
সন্তানের আবেগকে অভিনয় বলছ? তোমার মতো মা যেন দুনিয়ায় আর কারও না হয়।
তোর মতো সন্তানও যেন দুনিয়ার আর কারও না হয়। সেই জন্মের পর থেকে আজাইরা কথা বলে বলে আমার কান নষ্ট করে দিছিস। ভাবছিলাম, আস্তে আস্তে বড় হবি, তোর কথা কমবে। কিন্তু হইছে তার বিপরীত। তোর এই উল্টাপাল্টা কথার ভয়ে তোর বাবা প্রতিদিন তুই বাসায় আসার আগেই ঘুমায় পড়ে। এখন কী বলবি, তাড়াতাড়ি বল।
মা, আমি ঠিক করেছি, এখন থেকে আমি সারা দিন বাসায় থাকব। টিউশনি করাতে যাব না। কোথাও ঘুরতেও যাব না।
কারণ কী?
আমার মনে অনেক কষ্ট, মা। আজ আমি ১ হাজার ৫০০ টাকার বিনিময়ে নোভাকে বেচে দিয়েছি।
বাবারে, এই মধ্যরাতে কেন এসব আবোলতাবোল কথা বলিস?
মা, আমি সত্য বলছি।
তা নোভারে কিনছে কেডা?
ওর মা।
মা আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আমার মাথায় কোমল হাতের পরশ দিয়ে বললেন,
তোরে কত বললাম, চল তোরে একজন ভালো ডাক্তার দেখাই।
মা, প্লিজ। এসব বলে আমার কষ্টকে অপমান করো না। মা শোনো, একটু আগে আমি আমার ফোন বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ বাসার ফোনে ফোন করে আমাকে চাইলে বলবা, আমি ঢাকাতে নাই। আমি মহেশখালী চলে গেছি।
মহেশখালী কেন?
শুনেছি, ওখানে নাকি ভালো মানের পানচাষ হয়। আমি ওই পানের বরজে চাকরি নেব। যেহেতু তুমি সারাক্ষণ পান খাও, তাই পানখেতে কাজ করে তোমার দুগ্ধপানের ঋণ আমি শোধ করব।
মা আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। আমি সেই চাহনি উপেক্ষা করে বললাম,
মা, আমি ভাবছি দাড়ি–গোঁফ লম্বা করব। তারপর সেলুনে গিয়ে দাড়ি–গোঁফে সাদা রং করব। যাতে চেহারার মধ্যে একটা বুড়ো দেবদাস দেবদাস ভাব ফুটে ওঠে। আচ্ছা মা, তোমার জানাশোনা কোনো মেয়ে আছে, যার নাম চন্দ্রমুখী। থাকলে তার ঠিকানা দাও। আমি তার বাসায় গিয়ে মদ খাব। আর তার নাচ দেখব।
হা রা-ম-জাদা, একটাও কাজের কথা বলবে না। সারাক্ষণ উল্টাপাল্টা বকবে। শুন, তুই যদি সারা দিন বাসায় থেকে এভাবে বকবক করে আমার মাথা নষ্ট করিস, তাহলে আমি এই বাসায় থাকব না। আমি তোর নানার বাসায় চলে যাব। যখন তুই আবার বাইরে যাওয়া শুরু করবি, তখন ফিরব।
এ কথা বলে মা গটগট করে চলে গেল। আমি পেছন থেকে চিৎকার করে বললাম,
মা, পাঁচ মিনিট তো এখনো শেষ হয় নাই। চলে যাচ্ছ কেন?
গত চার দিন আমি বাসা থেকে বের হইনি। টিউশনিতেও যাইনি। সারা দিন ঘুমাই। আর সুযোগ পেলেই মাকে বিরক্ত করি। আজ দুপুর ১২টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে মায়ের খোঁজ করতে করতে মাকে গিয়ে রান্নাঘরে পেলাম। মাকে গিয়ে যাত্রার ঢংয়ে বললাম,
জননী, জননী, মা জননী। কেমন আছ? সম্রাট রাসেলের জন্য কি কোনো খাবারের আয়োজন আছে?
মা চুলায় বসানো তরকারি নাড়তে নাড়তে বললেন,
টেবিলে খিচুড়ি রাখা আছে গরম করে খা। আর খাবার আগে নোভাকে ফোন দে। ও একটু আগে ফোন করেছিল।
আমি আবারও যাত্রার ঢংয়ে বললাম,
নোভা কে মা? তুমি কোন নোভার কথা বলছ? আমি তো কোনো নোভাকে চিনি না।
খুন্তি দিয়া মাথায় এক বাড়ি দেব। ঠিকভাবে কথা বল।
সরি, মা। তোমাকে না বললাম কেউ ফোন করলে বলবা আমি মহেশখালী চলে গেছি।
বলেছি। আমি বলেছি, তুই মহেশখালী গিয়ে পানের বরজে চাকরি নিয়েছিস। এ কথা শুনে ও বলেছে, মহেশখালী গেছে সমস্যা নাই, ফোন করতে বলবেন।
আমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে নোভাকে ফোন দিলাম। হ্যালো বলতেই ঠান্ডা গলায় বলল,
ঠিক ছয়টায় আমার ব্যাংকের সামনে থাকবি। খবরদার ব্যাংকে ঢুকবি না।
আমি তো এখন মহেশখালীতে। পানের বরজে কাজ করছি।
সমস্যা নাই কাজ কর। তবে ছয়টায় ব্যাংকের সামনে থাকলেই চলবে।
বলেই লাইন কেটে দিল। এই মেয়েকে নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। মাঝে মাঝে এমন টোনে কথা বলে যে আমি আসলেই ভয় পেয়ে যাই।
আমি আর নোভা রিকশা করে টিএসসি যাচ্ছি। ব্যাংক থেকে বের হয়ে শুধু একবার কেমন আছিস জিজ্ঞেস করেছে। এ ছাড়া আর কোনো কথা বলেনি। রিকশায় উঠার পর রিকশাওয়ালা মামাকে বলল, রিকশার হুড উঠাতে। মামা হুড উঠিয়ে রিকশা টান দিলেন। সাধারণত আমরা রিকশায় হুড উঠাই না। এর দুটি কারণ। এক, আমি লম্বা হওয়ার কারণে হুড উঠালে ঘাড় বাঁকা করে রাখতে হয়। আর দ্বিতীয় কারণ, নোভার মতে, রিকশার হুড উঠালে নাকি রিকশার মধ্যে একটা রোমান্টিক রোমান্টিক আবহ তৈরি হয়। ওর কথা, বিয়ের আগে এত রোমান্টিক হওয়ার কোনো দরকার নেই। রিকশা রওনা দিতেই নোভা আমার একটি হাত ধরল। তারপর তার মাথাটা বাঁকা করে আমার কাঁধে রেখে বলল,
সরি রাসেল, মা তোকে এতটা অপমান করবে আমার জানা ছিল না। আমি সরি।
নোভার কণ্ঠ শুনেই বুঝলাম, ও কাঁদছে। এই মায়াবতী মেয়েটা আমার মতো একটা অপদার্থকে কেন এত ভালোবাসে, বুঝি না। আমি এত কথা বলি, কিন্তু আমার জন্য যখন কেউ কান্না করে, তখন কেন জানি আমি কথা বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পাই না। এখন নোভাকে কী বলব, বুঝতে পারছি না। তাই চুপ করে রইলাম।
টিএসসিতে নেমে ঘাসের ওপর মুখোমুখি বসলাম। নোভা কিছুক্ষণ সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
এখন কোনো কথা বলবি না। এখন শুধু আমি বলব তুই শুনবি।
ওকে।
বললাম না কোনো কথা বলবি না। শুন, মা তোর সাথে যে আচরণ করেছে, সে জন্য আমি দুঃখিত। তবে মা এমন আচরণ করার জন্য তুই নিজে দায়ী। তুই সব সময় ফান করিস ঠিক আছে। তাই বলে মুরব্বিদের সাথেও করবি। আজ সকালে খালাম্মা বলল, তুই নাকি তারেও সারাক্ষণ জ্বালাস। এসব ছাড়। আচ্ছা আরেকটা কথা, তুই আমারে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকায় বেচে দিলি? আমার মূল্য এত কম? হি হি হি....
নোভা কিছুক্ষণ থামল। তারপর আবার বলা শুরু করতে যাবে, এ সময় নোভার ফোনে একটা ফোন এল। নোভার বাবা ফোন করেছে। নোভা ফোন রিসিভ করে ওর বাবাকে টিএসসির ভেতর আসতে বলল। তারপর ফোন রেখে আমাকে বলল,
বাবা এখন এখানে তোর সাথে কথা বলতে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে আজকের এই মিটিং বাবারই পরিকল্পনা। ওদিন মায়ের সাথে তোর কী কী হয়েছে, সেটা বাবাই আমাকে বলেছেন। বাবার কাছে সব শুনে আমি গত চার দিন মায়ের সাথে যুদ্ধ করেছি। বাবা এ যুদ্ধে আমার সাথে ছিলেন। যেকোনো কারণেই হোক, বাবা তোকে খুব পছন্দ করেন।
নোভার বাবা এসে আমাদের সাথে ঘাসের ওপর বসলেন। বসেই বললেন,
ইয়ংম্যান, কেমন আছ? সরি, ওই দিনের জন্য। আমি সাধারণত নোভার মায়ের কথার ওপর কথা বলি না। তাই সেদিন চুপ করে ছিলাম। তবে গত তিন–চার দিন আমি আর নোভা মিলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সে তোমাকে মেনে নিয়েছে, তা বলব না। তবে সে একটা শর্ত দিয়েছে। এটা তুমি ফুলফিল করতে পারলে সে হয়তো তোমার কথা ভাবতে পারে।
কী সেটা?
নোভার কাছে শুনলাম, তুমি নাকি এবার বিসিএস রিটেন দিয়েছ?
জি।
কেমন হয়েছে?
মনে হচ্ছে ভালো হয়েছে।
এ সময় নোভা বলল,
মা একটি শর্ত দিয়েছেন, তুই যদি বিসিএস পাস করতে পারিস, তবেই মা তোকে মেনে নেবেন।
তুই কি ফাজলামি করিস? বিসিএস কি সিনেমার টিকিট? যে কাউন্টারে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালেই পাওয়া যাবে?
তুই তো বললি, তোর রিটেন খুব ভালো হয়েছে।
শোন আমার রিটেন ভালো হয়েছে মানে এই নয় যে অন্য প্রার্থীদের খারাপ হয়েছে। এ বছর সবারই পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
এ সময় নোভার বাবা নোভাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
আচ্ছা বাবা, চেষ্টা করে দেখতে সমস্যা কী? ভাইভাটা ভালো করে দাও। দেখো কী হয়? তোমার তো হয়েও যেতে পারে। তাই না? নোভার জন্য না হোক, এটলিস্ট আমার জন্য চেষ্টা করো।
তা নয় করলাম। কিন্তু আমার ধারণা, আমার বিসিএস হলেও উনি নতুন কোনো আবদার করে বসবেন।
নোভার বাবা মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
সেটার সম্ভাবনাও আছে। তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, এমন কিছু হলে সে ক্ষেত্রে আমি তোমার পক্ষ নেব। প্রয়োজনে তার সম্মতি ছাড়াই আমি তোমাদের বিয়ে দেব। তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রাখো। কি, আমার প্রতি বিশ্বাস আছে?
বাবা, এটা আপনি কি বললেন? বিশ্বাস থাকবে না কেন?
আমার কথা শেষ হতেই নোভা আমাকে গুঁতো দিয়ে বলল,
বাবা! হি হি হি...শোন, এখনো বিয়ে হয়নি যে আমার বাবাকে তোর বাবা ডাকতে হবে। হি হি...
দেখলাম নোভার বাবাও হো হো হো করে হেসে উঠলেন। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, বাবা–মেয়ে দুজনের হাসিই অসাধারণ সুন্দর।
মা, তুই কথা শেষ করে আয়। আমি গাড়িতে আছি।
বলে নোভার বাবা বিদায় নিয়ে উঠে চলে গেলেন। উনি যেতেই নোভা বলল,
কি এবার খুশি তো? শোন, বাবা সাথে থাকলে মা কোনো সমস্যা না।
তা বুঝলাম। তবু বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তোর মায়েরে কোনো বিশ্বাস নাই।
এসব নিয়ে তুই কোনো টেনশন করিস না। এই তুই নাকি ছাত্রীকে পড়াতে যাচ্ছিস না?
হু। আরে এ মেয়ে পুরা লাইলি হয়ে আছে।
হলে হোক। কাল থেকে আবার পড়াতে যাবি। সামনে মেয়েটির পরীক্ষা। এ সময় নাটক করিস না।
শোন, এ মেয়ে মনে মনে অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। তুই কিন্তু খাল কেটে কুমির আনছিস?
হি হি হি...আমার কুমির দেখার খুব শখ।
নোভা আর ওর বাবাকে বিদায় দিয়ে আমি ফুরফুরা মন নিয়ে বাসায় ফিরলাম। খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর পাঁচটার দিকে একটা ফোন এল। ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ পেলাম। ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসে আমি ব্যাকুল হয়ে নোভাকে বললাম,
কী হয়েছে? কাঁদছিস কেন?
নোভা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
রাসেল, বাবা আর নেই রে।
আমি কী বলব, কথা খুঁজে পেলাম না। বোকার মতো সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ড্রিমলাইটের আলোয় দেখলাম, একটা টিকটিকি দেয়ালে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চলবে...
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]