বাচাল ছেলে: ৩য় পর্ব
প্রায় এক ঘণ্টা হলো আমি বাথরুমে। নোভা আর ওর বাবা-মা দীর্ঘক্ষণ আমার অপেক্ষায় ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। নোভার মায়ের চেহারা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবেন, তিনি খুবই বিরক্ত। তিনি আগেই শুনেছেন, আমি বেকার এবং অলস। এই মধ্যরাতে তাঁদের বাসায় আসায় তিনি এখন শিওর হয়েছেন, আমি শুধু বেকার আর অলসই না, আমি চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন একজন পুরুষও।
আমি হাতমুখ ধোয়ার উদ্দেশে ঢুকলেও কী এক খেয়ালে গোসল করে ফেললাম। গোসল শেষে বাথরুমে থাকা বডি লোশন মাথাসহ পুরো শরীরে লাগালাম। লোশন লাগানোর ফলে মাথাটা পুরাই চকচক করছে। লাইটের আলো মাথার চকচক ভাবটা আরও জাগিয়ে তুলেছে। আমি বাথরুমে যাওয়ার সময় টি–টেবিলের ওপর ক্যাপটি রেখে এসেছিলাম। যার কারণে বাথরুম থেকে মাথা না ঢেকেই বের হতে হলো। আমার বেল মাথা দেখে নোভা আর তার বাবা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর নোভার মা চোখ-মুখ-ভুরু কুঁচকে অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমি উচ্চ স্বরে উনাদের সালাম দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম। নোভার মা, নোভার দিকে তাকিয়ে বললেন,
ছেলের মাথায় যে চুল নাই, সেটা তো তুই আমাকে আগে বলিসনি।
উনার এ কথার উত্তরে নোভা চুপ করে থাকলেও আমি বললাম,
আম্মাজান, আপনি ভুল বুঝেছেন। আমার মাথা ভর্তি চুল। সমস্যা হচ্ছে, গরমে মাঝে মাঝে মাথা গরম হয়ে যায়। তখন সব আউলাঝাউলা লাগে। তাই আজ সকালে ফেলে দিছি। আমার মতে, গরমকালে পুরুষ–মহিলা সবারই চুল ফেলে দিয়ে বেলমাথা হওয়া উচিত। আপনিও ট্রাই করতে পারেন। আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, রাতে ভালো ঘুম হবে।
এ কথা বলে আমি নোভার পাশে গিয়ে বসলাম। নোভা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
কুত্তা, তুই হবু শ্বশুর–শাশুড়ির সাথে প্রথমবার সাক্ষাতের সময় মাথা বেল করে আসলি? সিরিয়াসলি? এখন আবার বলছিস পুরুষ–মহিলা সবারই চুল ফেলে দেওয়া উচিত?
আমি নোভার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
সমস্যা কী? আমি তো চুল ফেলে দিয়েছি, কাউকে খুন তো করিনি।
তুই যে আমাকে বিব্রত করতে এসব করেছিস, সেটা আমি বুঝি।
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। নোভা আমাকে ওর বাবা-মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি বসা থেকে উঠে নোভার মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর হাত তুলে আশীর্বাদ দেওয়ার মতো করে বললাম,
বিবাহবার্ষিকীতে দোয়া করছি মা। পরিবার নিয়ে সুখে থাকেন।
আমার কথা বলার মধ্যে কিছুটা যাত্রাপালার মতো সুর ছিল। যে কারণে নোভার বাবা-মা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। খেয়াল করলাম, নোভা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। আমি এসব গায়ে না মেখে আবারও মুখ খুললাম।
মা জননী, আপনার এই শুভ দিনে আমি আপনার জন্য একটা অসাধারণ উপহার এনেছি। যদি উপহারটা গ্রহণ করেন, তবে আমি খুশি হবো। আমি শিওর, উপহারটা দেখে আপনি চমকিত হবেন। প্লিজ প্যাকেটটা খুলুন।
নোভার মা বিরক্তি মুখে প্যাকেটটা খোলা শুরু করলেন। একটু খুলতেই প্যাকেট থেকে কেমন জানি একটা পচা গন্ধ বের হয়ে আসতে লাগল। পচা গন্ধটি ছড়িয়ে পড়ল ঘরজুড়ে। খেয়াল করলাম, নোভা হাঁ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। নোভার মা হাত দিয়ে নাক চেপে বললেন,
এই ছেলে, এর মধ্যে কী?
আম্মাজান, আমি...
খবরদার, তুমি আমাকে আম্মা, মা, মা জননী—এসব কোনো কিছু বলেই সম্বোধন করবে না। আমি তোমার আম্মা না। নোভার কাছে শুনেছি, তুমি সব সময় ফান করো। বড়–ছোট সবার সাথে মজা করো। তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমার সাথে সেই রকম মজা করার চেষ্টা করবে না। আমি ফান পছন্দ করি না।
কেন আপনি ফান পছন্দ করেন না? আমি শুনেছি, আপনি নাকি কারও সাথে মিষ্টি করে কথা বলেন না। সব সময় সবাইকে ঝাড়ির ওপর রাখেন? এটা তো ঠিক না। আপনার এই বদগুণটি নোভাও পেয়েছে। সে–ও আমাকে সব সময় ঝাড়ির ওপর রাখে।
তোমার কাছ থেকে এখন আমাকে ব্যবহার শিখতে হবে? শোনো, শুধু নোভার কারণে এখনো চুপ করে আছি। না হলে...এখন বলো এর মধ্যে কী আছে?
মলাঢেলা মাছ।
মানে কী!
মানে খুবই সিম্পল। আমি আপনার বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে গিফট হিসেবে মলাঢেলা মাছ এনেছি।
তুমি আমার বিবাহবার্ষিকীতে মলাঢেলা মাছ এনেছ, ফাজলামি করো?
জি না। ফাজলামি করব কেন? আসলে গতকাল নোভার কাছে শুনেছি, ইদানীং আপনি নাকি চোখে একটু কম দেখছেন। তাই আপনার চোখের উপকারের জন্য আমি নদীর ঘাটে গিয়ে ছয় কেজি মালাঢেলা মাছ কিনে এনেছি। ছোট মাছ চোখের জন্য খুবই উপকারী। মাছগুলো তাজাই ছিল। তবে গন্ধ শুঁকে মনে হচ্ছে অতি গরমে একটু নরম হয়ে গেছে। তবে সমস্যা নেই। আপনি যদি প্রচুর রসুন দিয়ে রান্না করতে পারেন, তাহলে গন্ধ কম লাগবে। খেতেও মজা পাবেন।
এ কথা বলে আমি নোভার বাবার দিকে তাকালাম। দেখলাম, আমার কথা শুনে উনি মুখ টিপে হাসছেন। নোভার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, বিস্ময়ে ওর মুখ হাঁ হয়ে আছে। নোভার মা দাঁত কটমট করে বললেন,
এই ছেলে, তুমি কি আমাকে এখন মাছ রান্নাও শেখাবে?
না না না। তা কেন? আমি নোভার কাছে শুনেছি, আপনি খুব ভালো রান্না করেন। তবে আমি শিওর, আপনার পচা মাছ রান্নার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই হয়তো জানেন না কীভাবে রান্না করতে হয়। আপনি বললে আমি আপনাকে এখন রান্না করে হাতে–কলমে শিখিয়ে দিতে পারি। পচা মাছ রান্না করাও একটা আর্ট। চলেন, রান্নাঘরে যাই। আমরা রান্না করি। বাসায় কি পর্যাপ্ত রসুনবাটা আছে? অবশ্য না থাকলেও সমস্যা নাই। আমি বেটে নেব। চলেন, আমরা রান্নাঘরে যাই।
নোভার মা নোভার দিকে তাকিয়ে বলল,
এটা তুই কি পছন্দ করেছিস? এ তো দেখি পুরাই ফালতু একটা ছেলে। এর মাথায় তো আসলেই সমস্যা আছে। ওকে যেতে বল। শোন, ওর সাথে আমি তোকে কিছুতেই বিয়ে দেব না।
এ কথা বলেই নোভার মা গটগট করে ভেতরের রুমের দিকে চলে গেলেন। নোভা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
কুত্তা, আমি যেন ফিরে এসে তোর মুখ এই বাসায় আর না দেখি।
এ কথা বলে মায়ের রাগ ভাঙাতে সে–ও মায়ের পিছু নিল।
ওরা চলে যেতেই নোভার বাবা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে হাত বাড়ালাম। উনি হ্যান্ডসেক করে বললেন,
ওয়েলডান বাচ্চা। তুমিই পারবে এই মহিলাকে সোজা করতে। পুরা বাসার সবাই আমরা খুব কষ্টে আছি। জানো, সারাক্ষণ খবরদারি করে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। বলো, কত সহ্য হয়? ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। আমার ধারণা, আল্লাহ তোমাকে আমার সংসারে উদ্ধারকর্তা হিসেবে পাঠিয়েছেন।
এ কথা বলে তিনিও ভেতরের রুমের দিকে চলে গেলেন।
আমি আর জয়নব ড্রয়িংরুমে চুপচাপ বসে আছি। নোভার মা-বাবা বা নোভা কারও দেখা নেই। জয়নবের কাছে শুনলাম, তাঁরা বেডরুমে আমাকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করছেন। একটু পর জয়নব বলল,
ভাইজান, আমনেরে আমার সেই রকম পছন্দ হইছে।
তাই নাকি? কেন বলেন তো?
এই যে আমনে আমারে পরি কইলেন। আবার সম্মান দিয়া আপনি আপনি কইরা কথা বলতাছেন। এমুন সম্মান তো আমারে কেহ দেয় না। সবাই তুই–তুকারি করে।
এরপর জয়নব ফিসফিস করে বলল,
আরেকটা কারণে আমনেরে আমার ভালা লাগছে।
কী সেটা?
এই যে আমনে খালাম্মারে উল্টাপাল্টা কথা কইয়া একটা শিক্ষা দিলেন। আমনে জানেন, উনার যন্ত্রণায় আমি আর খালু অস্থির থাহি।
তাই নাকি? আর নোভা?
হে তো হের মায়ের সখী। দুজনের মধ্যে অনেক মিল।
জয়নব পরি, আমার তো অনেক খিদা লাগছে। কিন্তু বাসার যে পরিস্থিতি দেখছি, তাতে তো আমার মনে হয় না তারা আমারে আজ খাবার দেবে।
হেরা খাবার দেওনের কে? আমি আমনেরে খাবার দেব। আমনে হইলেন এই বাসার জামাই। আমনের সম্মান ওপরে। আমার লগে টেবিলে আহেন।
আমি জয়নবের সাথে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলাম। জয়নব আমাকে খাবার উঠিয়ে দিল। আমি বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলাম। আসলেই আমার হবু শাশুড়ি ভালো রান্না করেন। দুই লোকমা খাবার খেতেই নোভা এল। আমাকে খেতে দেখে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বাঁধভাঙা হাসিতে ফেটে পড়ল। আমি খাওয়া বাদ দিয়ে ওর হাসি দেখতে লাগলাম। এমন সুন্দর হাসি দেখাটাও আনন্দের। নোভা হাসতে হাসতেই বলল,
আল্লাহ তোরে কী দিয়া বানাইছে ক তো আমারে। তোর গায়ে তো দেখি কিছুই লাগে না। আম্মা তোর সাথে কত খারাপ ব্যবহার করল। তোর সাথে ঠিকমতো কথাও বলল না। তার ওপর তোর মাথামুথা খারাপ বলে গালিও দিয়া গেল। আমি তো ভাবলাম, এই অপমানে তুই বাসা থেকে চলে যাবি। অথচ তুই কী করলি? তুই তা না করে নিজে নিজে খাবার নিয়া বেহায়ার মতো খাচ্ছিস?
শোন, হবু শাশুড়ি আর মা তো একই জিনিস। উনার কথায় আমি রাগ করব কেন?
দেখলাম নোভা এখনো হাসছে। নোভার হাসিতে একটু লজ্জা পেলাম। আমি লজ্জিত ভঙ্গিতে বললাম,
বুঝতে পারছি, এভাবে খেতে বসাটা একদম উচিত হয়নি। বিষয়টা একটু বেহায়ার মতো হয়ে গেছে, তাই না? আসলে যে খিদা লাগছে, সহ্য করতে পারছিলাম না। অবশ্য বেশি খাইনি। মাত্র দুই লোকমা খেয়েছি। এখন তুই যদি বলিস তাহলে খাওয়া বন্ধ করে চলে যেতে পারি। কি চলে যাব?
চুপচাপ বসে খা।
সত্যি খাব?
হু। যতক্ষণ তোর খিদা না মেটে ততক্ষণ খাবি।
শেষের দিকে নোভার গলা কিছুটা ধরে এল মনে হলো। কারণ, কণ্ঠটায় কান্নাভেজা সুর ছিল। এই মেয়েটাকে সত্যি আমি বুঝি না। এই বকে তো এই কান্না করে। না, ও সবার জন্য চোখের জল ফেলে না। ওর সব কান্না শুধু আমার জন্য। আমার প্রতি ওর এই ভালোবাসার জন্য আমার হাজার বছর বাঁচতে মন চায়।
খাওয়াদাওয়া শেষে নোভা ভেতরে গিয়ে ওর বাবাকে পাঠালো। উনি এসে বললেন,
রাসেল বাবা, তুমি কিছু মনে করো না। নোভার মা একটু রাগী মানুষ। রাগলে সহজে স্বাভাবিক হতে পারে না। সে তোমার সাথে আজ আর দেখা দেবে না। তুমি বরং আজ চলে যাও। তোমার ফোন নম্বর আমাদের কাছে আছে। পরে তোমাকে ফোন দিয়ে একটা সময় ঠিক করে আমরা কথা বলব। তা তুমি কি এত রাতে যেতে পারবে?
অবশ্যই পারব।
না মানে, রাতে আবার না তোমাকে ছিনতাইকারী ধরে।
আপনি এটা নিয়ে টেনশন করবেন না। ঢাকা শহরের সব ছিনতাইকারী আমারে চেনে। তারা জানে, আমার পকেটে কখনো টাকা থাকে না।
বুঝলাম না। সব ছিনতাইকারী তোমাকে কেন চিনবে? তুমিও কি এই লাইনে আছ?
না। এটা একটা মজার কাহিনি। বিষয়টা খুলে বলি। তাহলেই বুঝবেন। একবার এক মধ্যরাতে আমি একটি টংদোকানের টুলে বসে পাউরুটি আর কলা খাচ্ছিলাম। শীতের রাত। রাস্তায় লোকজনও কম। এ সময় সেখানে এক ছিনতাইকারী এসে আমার পাশে বসল। তারপর তার চাদরের তলা থেকে পিস্তল বের করে আমার পাছায় ধরল। বলল, চুপচাপ ফোন মানিব্যাগ দে, না হলে পাছায় গুলি করে দেব। সে অবশ্য পাছা বলেনি। অন্য একটা শব্দ বলেছিল। আপনি লজ্জা পাবেন বলে ওই শব্দ বললাম না। তার কথা শুনে আমি তাকে সবিনয়ে বললাম, ভাই, গুলি করলে বুকে বা মাথায় করেন। পাছায় করবেন না। কারণ, বুকে গুলি খেয়ে মরলে আগামীকাল পেপারে, টিভিতে নিউজ হবে, ‘বুকে ছিনতাইকারীর গুলি খেয়ে যুবকের মৃত্যু’। এই মরায় আপনারও সম্মান আমারও সম্মান। আর যদি পাছায় গুলি করেন, তাহলে আমি লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারব না। কারণ, কাল নিউজ হবে, পাছায় ছিনতাইকারীর গুলি খেয়ে যুবকের মৃত্যু। পাছায় গুলি খেয়ে মরার মধ্যে কোনো সম্মান নাই ভাই। আর তা ছাড়া তখন মানুষ আপনার চরিত্র নিয়েও আজেবাজে কথা বলবে। মানুষ বলবে, শরীরের এত জায়গা থাকতে সে পাছায় কেন গুলি করল? নিশ্চয় ব্যাটার চরিত্রে কোনো সমস্যা আছে।
নোভার বাবা আগ্রহ নিয়ে আমার কাহিনি শুনছেন। তিনি বললেন,
এরপর কী হলো?
ছিনতাইকারী আমাকে বলল, যা তোরে গুলিই করুম না। তুই তোর মানিব্যাগ আর ফোন দে।
আমি দিলাম। সে আমার ফোন দেখে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম,
ভাইজান, এভাবে তাকায় আছেন ক্যান?
তুই এই ভাঙ্গা ফোন কেমনে ব্যবহার করস? তোর এই আদিম যুগের বাটন ফোন তো কেউ পাঁচ টাকা দিয়েও কিনবে না। ধর তোর ফোন, তুই রাখ। ম্যানিব্যাগ দে।
আমি মানিব্যাগ দিলাম। সে ব্যাগ খুলে টাকা বের করল। তারপর আমার দিকে আবারও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম,
ভাইজান, আবার কী হইল? আপনি আবার আমার দিকে এমন কইরা তাকায় আছেন ক্যান?
এই তুই তো দেখি পুরাই ফকির। তোর ব্যাগে মাত্র একটা ২০ টাকার নোট। তা–ও আবার ছেঁড়া।
ভাইজান, টেকনিক্যালি এই টাকাও আমার না। এই যে চা আর পাউরুটি খাইলাম, এটার বিল দেব এই টাকা দিয়া। আপনি যদি এখন এই ২০ টাকা নিয়া যান, তাহলে এই গরিব দোকানদারের লস হয়ে যাবে।
তোর কাছে আর কোনো টাকা নাই? মানে অন্য কোনো পকেটে?
না ভাইজান। থাকলে কি শুধু চা দিয়া পাউরুটি খাই? বরং একটা ডিম মামলেট দিয়া পাউরুটি খাইতাম। কারণ, ডিম মামলেট দিয়া পাউরুটি খাবার মজাই আলাদা। এরপর কি হলো জানেন? ছিনতাইকারী আমার জন্য দুইটা ডিমের মামলেটের অর্ডার দিল এবং আমার পুরো বিলটা দিয়া গেল। যাওয়ার সময় আমার ছবি তুলে নিয়ে গেছে। বলেছে, সব ছিনতাইকারীরে আমার ছবি দিয়ে বলবে, আমারে যেন কেহ কখনো না ধরে। আপনাকে আরেকটা কাহিনি বলি। একবার হয়েছে কী...
শোনো, এখন আর কোনো গল্প শুনব না। রাত অনেক হয়েছে। তুমি বরং এখন বাসায় যাও।
জি আচ্ছা।
একটা কথা বলি। তুমি কিন্তু সুন্দর বানিয়ে গল্প বলতে পারো। এই মেধা সবার থাকে না। এই যে বানিয়ে বানিয়ে তুমি যে ছিনতাইকারীর গল্পটা বললে, নোভার কাছ থেকে যদি তোমার সম্পর্কে আগে থেকে আমি না জানতাম, তাহলে এই গল্পটা আমি সত্য বলেই ধরে নিতাম। তুমি বসো, আমি নোভাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাও।
দুদিন পর দুপুরবেলা নোভার মা আমাকে ফোন করলেন। আমি তখন গভীর ঘুমে। ঘুমের মধ্যেই চোখ না খুলে বালিশের পাশে রাখা ফোন কানে ধরে হ্যালো বললাম। ওই পাশ থেকে ভরাট গলায় উত্তর এল,
হ্যালো, আমি মিসেস রফিক বলছি।
আমি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে উত্তর দিলাম,
সরি, আমি রফিক নামের কোনো মহিলাকে চিনি না। তবে আমার রফিক নামের একজন বন্ধু আছে। কিন্তু সে মেয়েলি কণ্ঠে কথা বলতে পারে না।
বলেই লাইন কেটে দিলাম। ফোনটা বালিশের পাশে রাখতেই আবার ফোন এল। আমি আবার চোখ না খুলেই ফোন ধরলাম।
এই ছেলে, তুমি ফোন কাটলে কেন? এটা কোন ধরনের ভদ্রতা?
সরি, আমি ঘুমে থাকলে কোনো পরিচিত মানুষের সাথেই কথা বলি না। আর আপনি তো অপরিচিত। আপনি পরে ফোন করুন।
ফোন রাখতে যাব, তখনই তিনি বলে উঠলেন,
খবরদার, ফোন রাখবে না।
শোনেন, আমি ঘুমে থাকলে মাথা ঠিক থাকে না, আপনি ফোন রাখেন। না হলে এখন কিন্তু আমি গালি দেব। আমার স্টকে অনেক পচা পচা গালি আছে। সহ্য করতে পারবেন না।
বেয়াদব ছেলে, আমি নোভার মা।
আমি ধরফর করে উঠে বসলাম।
সরি ম্যাডাম, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।
আমি আর নোভার বাবা বসুন্ধরা মার্কেটে আছি। তোমার আসতে কতক্ষণ লাগবে?
জি মানে?
তুমি তো কল্যাণপুর থাকো?
জি।
এখন বাজে বেলা দেড়টা। তোমাকে এক ঘণ্টা দিলাম। ফুড কোর্টে এসে ফোন দিবা।
বলেই তিনি লাইন কেটে দিলেন। চলবে....
*ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]