বিয়ের চাপ-৮ম পর্ব
কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশে যাত্রার জন্য গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের গাড়িতে আমার বসার জন্য আর কোনো জায়গা নেই। সেখানে মলিদের অন্য আত্মীয়রা উঠে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে আমাকে অপর একটি গাড়িতে গিয়ে উঠতে হলো। আমি যে গাড়িতে উঠেছি, সে গাড়ির অন্য যাত্রীদের কাউকেই আমি চিনি না। গাড়ি রওনা হবে, ঠিক সে মুহূর্তে মলির বোন এসে বলল, মলি আমাকে ডাকছে।
আমি গাড়ি থেকে নেমে মলিকে বহনকারী গাড়ির সামনে যেতেই মলি আমাকে গাড়িতে ঢুকতে ইশারা করল। দেখলাম, গাড়িতে ড্রাইভারের পাশের সিটে দুলাভাই আর পেছনের সিটে আমার খালা বসে আছেন। আমি এই গাড়িতে উনাদের দুজনকে দেখে একটু অবাক হলেও কোনো প্রশ্ন করলাম না। আমি চুপচাপ পেছনের সিটে বসে পড়লাম। খালা আমার আর মলির মাঝে বসেছেন। গাড়িতে বসতেই মলি ড্রাইভারকে বলল,
-আবুল ভাই, গাড়ি ছাড়ুন।
আবুল সাহেব গাড়ি ছাড়তেই মলি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-আপনাকে কেন এই গাড়িতে ডেকে ওঠালাম তা কি আপনি জানতে চান?
-না চাই না।
-কেন? আপনার কি একটুও কৌতূহল হচ্ছে না?
-না। কারণ, আল্লাহ আমার ভেতর কৌতূহলের অ্যাপসটি ইনস্টল করেননি। যার কারণে আমার কৌতূহল কম। তবে আপনি চাইলে বলতে পারেন।
-আচ্ছা, কারণ বলার আগে আপনাদের তিনজনকেই একটা প্রশ্ন করি। আচ্ছা বলেন তো, এই শেষ বেলা এসে আপনারা কেন এমন পাগলামি করছেন?
-বুঝলাম না, আমরা আবার কী করলাম?
-গাড়িতে ওঠার একটু আগে আপনার দুলাভাই আর খালা মিলে আমাকে বিয়ে ভাঙার জন্য অনুরোধ করেছেন। আমি রাজি হইনি দেখে তাঁরা আমাকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন।
-বলেন কী! কী হুমকি দিয়েছে?
-উনারা বলেছেন, আমি বিয়ে ভাঙতে রাজি না হলে, উনারা আমাকে তুলে নিয়ে যাবেন। অথবা আমার হবু হাজব্যান্ডকে গুম করে ফেলবেন। বলেন, এটা কোনো কথা? এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? দেখুন, এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের কাউকে আমি এ সবকিছু বলিনি। বললে কী হবে, তা কি আপনারা বুঝতে পারছেন? আমার বাবা এ কথা শোনার সাথে সাথে পুলিশ ডাকবেন।
আমি মলির কথা শুনে, অবাক হয়ে খালার দিকে তাকালাম। দেখলাম, খালা আমার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। আমি দুলাভাইকে ডাকলাম, কিন্তু তিনিও পেছনে তাকালেন না। আমি মলিকে লজ্জিত হয়ে বললাম,
-আমি সরি। এই দুই পাগলরে নিয়ে যে কী করি, আমি বুঝতেছি না।
-আপনাকে আমার গাড়িতে এনে ওঠানোর এটাই প্রধান কারণ। আমার ধারণা, আপনি সাথে থাকলে আমাকে উনারা কিডন্যাপ করতে পারবেন না। এ ছাড়া আরেকটি কারণও আছে। আসলে এখন আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে। আপনি এখন আমাকে ফুচকা খাওয়াবেন।
-ফুচকা তো আপনি যে কারও সাথে গিয়ে খেতে পারতেন।
-না, পারতাম না। কারণ, আমার সাথে এ গাড়িতে আপু আর আমার বান্ধবীরা উঠেছিল। তারা বলেছে, এ পোশাকে আর এত গয়না পরা আমাকে নিয়ে তারা কিছুতেই ফুচকার দোকানে যাবে না। জানেন, সামনের একটা মার্কেটের ভেতরে ফুচকা-চটপটির একটি ফাটাফাটি দোকান আছে। আমি ওদের নিয়মিত কাস্টমার। ঢাকায় থাকলে প্রতিদিন বিকেলে আমি ওদের দোকানে ফুচকা খেতে যাই। অথচ আজ আমাকে কেউ যেতে দিতে চাচ্ছে না। আচ্ছা বলেন তো, বিয়ের পোশাকে দোকানে গিয়ে ফুচকা খাওয়া কি অন্যায়?
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম। আসলে কেন জানি এখন আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। খালা আর দুলাভাইয়ের কারণে নিজেকে মলির কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
আমাদের বহনকারী গাড়িটি শপিং মলের সামনে যেতেই মলি বললেন,
-আপনি আর দুলাভাই গিয়ে আমাদের সবার জন্য ফুচকা নিয়ে আসেন। মার্কেটের দোতলায় ডান পাশের সারির পেছনের দিকে গেলেই দোকানটি পেয়ে যাবেন।
-দোকানের নাম কী?
-‘খায়া যা, নইলে খবর আছে।’
-ফাজলামি করছেন?
-আরে ফাজলামি করব কেন? আসলে শুনতে উদ্ভট লাগলেও, এটাই দোকানের নাম। শোনেন, এ যুগে উদ্ভট নাম দিলে সেই দোকান ভালো ব্যবসা করে।
দুলাভাইকে নিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকে গেলাম। দোকানটি খুঁজে পেতে বেশি কষ্ট হয়নি। দোকানটিতে যথেষ্ট ভিড় দেখলাম। আমাদের আগে আরও বেশ কিছু মানুষ ফুচকার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছেন। উনাদের অর্ডার শেষ করার পর আমাদের অর্ডার তৈরি করে দিলেন। ড্রাইভারসহ আমাদের পাঁচজনের জন্য আমি পাঁচ প্লেট ফুচকা নিলাম। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট কেটে গেছে। ফুচকা নিয়ে নিচে এসে দেখি, গাড়িটি যেখানে ছিল, সেখানে আর নেই। ভাবলাম, হয়তো অন্য কোথাও পার্ক করেছে। কিন্তু অনেক খুঁজেও আশপাশে কোথাও গাড়িটি দেখতে পেলাম না। বাধ্য হয়ে মলির ফোনে ফোন দিলাম।
-হ্যালো, আপনারা কোথায়? গাড়ি তো দেখছি না।
-দেখবেন কী করে, আমরা তো ওখান থেকে চলে এসেছি।
-মানে কী!
-মানে কী বোঝেন না? ফুচকা আনতে এতক্ষণ লাগে? শোনেন, আমি তো আপনাদের জন্য নিজের বিয়েতে দেরি করে যেতে পারি না, তাই না? আপনাদের দেরি দেখে তাই রওনা দিয়ে দিয়েছি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে যাব। এক কাজ করেন, আপনারা একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসেন।
-ফুচকাগুলো কী করব?
-খেয়ে ফেলেন বা অন্য কাউকে দিয়ে দেন।
বলেই মলি লাইন কেটে দিলেন।
দুলাভাই ফুচকাগুলো অন্য কাউকে দিতে রাজি নন। উনি সব ফুচকা নিয়ে শপিং মলের সামনের ফুটপাতেই বসেই খেতে লাগলেন। আমার কেন জানি এখন আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই আমি দুলাভাই বলার পরও একটিও মুখে দিলাম না। দুলাভাই দেখলাম বেশ মজা করেই খাচ্ছেন। খেতে খেতে বললেন,
-দিপু, তুমি কি জানো, ফুচকা নামটা কীভাবে এসেছে?
-না জানি না।
-এটা কী বললা? তোমরা এ যুগের ছেলেদের আইকিউ পাওয়ার এত কম কেন? তুমি একটা জিনিস খাবা, অথচ সেটা সম্পর্কে কিছু জানবে না? এটা কেমন কথা? এ জন্যই কবি বলেছেন,
রাতের সব তারা আছে
দিনের গভীরে,
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখব তোকে সেখানে,
তুই কি আমার হবি রে?
ভালো করে খেয়াল করে দেখ, এখানে কবি কী বলেছেন? কবি এখানে বলেছেন, মনের মধ্যে, বুকের মধ্যে আস্তে আস্তে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। কোনো কিছু না জানলে প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে।
-দুলাভাই ঠিক আছে, তাহলে আপনিই বলে দিন ফুচকা নামটা কীভাবে এসেছে।
-দিপু, আমি তোমার মুরব্বি। তুমি তো বেয়াদবের মতো মুরব্বিকে প্রশ্ন করতে পারো না।
আমি কিছু না বলে দুলাভাইয়ের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম।
ফুচকাগুলো শেষ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ করে দুলাভাইয়ের পেট খারাপ হয়ে গেল। সম্ভবত এতগুলো ঝাল ফুচকা উনার পেট নিতে পারেনি। যার কারণে পেট বেসামাল হয়ে গেছে। মার্কেটের মধ্যেই দুলাভাই কয়েকবার টয়লেটে গেলেন। ফার্মেসি থেকে উনাকে ওষুধ কিনে খাওয়ালাম। টয়লেট করতে করতে উনার অবস্থা পুরাই কাহিল। দুলাভাই ক্লান্ত স্বরে আস্তে আস্তে বললেন,
-দিপু, তুমি কেমন ভাই? বোনের জামাইরে এতগুলা ফুচকা খাওয়াইলা?
-দুলাভাই, আমি খাওয়াইলাম, নাকি আপনি জোর করে খাইলেন?
-তুমি আমারে বাধা দিবা না? শালার দায়িত্ব কী? শালার দায়িত্ব হচ্ছে দুলাভাইকে বাধা দেওয়া। দিপু, তোমার আপাকে একটা ফোন দাও তো। স্ত্রীর কাছ থেকে শেষ বিদায়টা নিয়া নেই। স্ত্রী যে কী সম্পদ, সেটা তো তুমি বুঝবা না।
-দুলাভাই, আমার ফোনে কোনো চার্জ নাই। আপনি আপনার ফোন থেকে ফোন দেন।
-ভাই রে, ভুলে আমার ফোন তোমার বোনের কাছে রেখে এসেছি।
-বেশ করেছেন। এখন চুপ করে থাকেন।
রাস্তায় প্রচুর জ্যামের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছালাম। দুলাভাই এখন কিছুটা সুস্থ। কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যেতেই দেখলাম, পুলিশের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম না বিয়ের অনুষ্ঠানে পুলিশ কী করছে। কমিউনিটি সেন্টারের গেটের কাছেই দেখলাম জয় সাহেব পায়চারি করছেন। আমরা ঢুকতেই উনি ভুরু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকালেন। আমি উনার সামনে গিয়ে বললাম,
-ভাই অভিনন্দন। বিয়ের কাজ তো শেষ তাই না? খাবার কি কিছু হবে, নাকি তা-ও শেষ?
উনি কোনো কথা না বলে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলেন। ঠিক যেভাবে দৌড়ে গেলেন, ঠিক সেভাবেই আবার দৌড়ে ফিরে এলেন। উনার পেছন পেছন চারজন পুলিশ কনস্টেবলও দৌড়ে এল। জয় সাহেব আমাদের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে পুলিশকে বললেন,
-এই দুইটা।
জয় সাহেবের কথা কিছুই বুঝলাম না। দুলাভাই জয় সাহেবকে বললেন,
-এতটুকু দৌড়েই আপনি হাঁপাচ্ছেন? আপনার তো স্ট্যামিনা খুবই খারাপ। আপনি বিয়া করতে গেলেন ক্যান?
জয় সাহেব কিছু বললেন না। চারজন পুলিশ আমাদের দুজনকে ধরে ফেলল। আমি বললাম,
-আপনারা আমাদের ধরলেন কেন?
কনস্টেবল রাজা মিয়া বললেন,
-চল, স্যারের সামনে চল, তাহলেই বুঝবি তোদের দুইটারে কেন ধরছি।
ওরা আমাদের একপ্রকার ঠেলতে ঠেলতে ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরের এক কোনায় আমাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফ্লোরের ওপর বসিয়ে দিল।
আমরা চুপ করে চোরের মতো বসে আছি। আর সবাই আমাদের ঘিরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে আমার মা আর বোনও ছিল। কিন্তু বুঝলাম না, আমাদের এই করুণ অবস্থা দেখেও মা আর আপাকে অবাক হতে বা কষ্ট পেতে দেখলাম না। উপস্থিত সবাই চুপ করে আছে। পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর করিম সাহেব কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর চোখ দুটো বড় বড় করে প্রশ্ন করলেন,
-বিয়ের কনে কোথায়?
আমি উল্টো প্রশ্ন করলাম,
-আপনি কার কথা বলছেন?
-প্লিজ, পুলিশের সাথে চালাকি করবেন না। বলেন, ম্যাডাম মলি কোথায়?
-কোথায় মানে? উনি এখানে নাই?
-না, উনি এখনো এখানে এসে পৌঁছাননি।
-বলেন কী!
-আচ্ছা, ম্যাডামের গাড়িতে আপনারা দুজনও তো ছিলেন, তাই না?
-জি ছিলাম।
-ভেরি গুড। তাহলে এখন বলেন উনি কোথায়?
-দেখুন, উনি প্রায় চার ঘণ্টা আগে আমাদের রাস্তায় রেখে চলে এসেছেন।
-শোনেন, অভিনয় করবেন না। সরাসরি বলেন, উনি এখন কোথায়?
-আমরা কী করে বলব?
এই পর্যায় কনস্টেবল রাজা আমাকে বললেন,
-তুই বলতে চাস তুই ম্যাডামকে গুম করিসনি?
-কেন গুম করব? আচ্ছা রাজা সাহেব, আমার চেহারা দেখে কি আমাকে কিডন্যাপার মনে হয়?
-অবশ্যই মনে হয়। শুধু কিডন্যাপার না, তোরে দেখে তো মনে হচ্ছে তুই মানুষও খুন করোস।
এবার দুলাভাই রাজা মিয়াকে বললেন,
-স্যার, আমাকে দেখে কি আপনার কিডন্যাপার মনে হয়?
-না, তোরে দেখে কিডন্যাপার মনে হয় না। তবে তোর চেহারার মধ্যে পকেটমারের একটা ভাব আছে।
-ধন্যবাদ স্যার। আপনার জহুরির চোখ। আসলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব না। তাই তো কবি পুলিশ সম্পর্কে বলেছেন,
জনি জনি, ইয়েস পাপ্পা
ইটিং সুগার? নো পাপ্পা,
টেলিং লাইস? নো পাপ্পা।
ওপেন ইউর মাউথ
হা হা হা…. ।
সাব ইন্সপেক্টর করিম সাহেব কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-মাইগড, কবি পুলিশকে নিয়ে এই কবিতাটা লিখেছেন, তা তো আমি জানতাম না!
এরপর করিম সাহেব কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন,
-ধরে নিলাম আপনারা কিডন্যাপ করেননি। তাহলে এতক্ষণ আপনারা কোথায় ছিলেন?
আমি পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। ফুচকা খেয়ে দুলাভাই এর পেট খারাপের কথাও বললাম। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করল বলে মনে হলো না। করিম সাহেব এবার আমাকে প্রশ্ন করলেন,
-আপনি যদি নির্দোষ হবেন, তাহলে আপনার ফোন বন্ধ করে রাখছেন কেন?
-ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
-ম্যাডামের ফোন বন্ধ কেন? আপনার খালার ফোন বন্ধ কেন?
-তাঁদের ফোন কেন বন্ধ, সেটা আমি কী করে বলব? করিম ভাই, আমার ধারণা উনারা হয়তো কোনো বিপদে পড়েছেন। আপনি আমাদের পেছনে সময় নষ্ট না করে উনাদের খুঁজে বের করুন।
এ সময় জয় সাহেব দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-স্যার, এই ব্যাটারে ধরে মাইর দেন, সব বের হয়ে যাবে। এই লোক আজ সকালেও আমারে ফোন দিয়ে বিয়েতে না আসতে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, সে কিছুতেই মলির সাথে আমার বিয়ে হতে দেবে না। এমনকি সে আমাকে গুম করে ফেলবে বলে হুমকিও দিয়েছে।
এ কথা বলে জয় সাহেব তার ফোনের কল রেকর্ড অ্যাপস থেকে পুরো কথোপকথন সবাইকে শোনালেন। আমি ভুরু কুঁচকে দুলাভাইয়ের দিকে তাকালাম। উনি ফোনে এই সব কথা বলতে পারেন, সেটা আমার ধারণাতেই ছিল না। বিষয়টি জানার পর দুলাভাইয়ের ওপর আমার রাগ করা উচিত। কিন্তু কেন জানি আমি রাগ করতে পারছি না; বরং আমার জন্য এই সহজ-সরল লোকটার ভালোবাসা দেখে মনটা আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল। মনে হলো, দুলাভাইকে একটু বুকে জড়িয়ে ধরি।
করিম সাহেব পুরো কল রেকর্ডটা আবারও শুনলেন। তারপর দুলাভাইকে বললেন,
-এরপরও আপনি অস্বীকার করবেন?
-অবশ্যই করব। স্যার আমরা যা দেখি, যা শুনি, সবই সত্য নয়। সবই মায়া, সবই মরীচিকা। এ জন্যই কবি বলেছেন,
চুরি করেছ আমার মনটা
হায় রে হায় মিস লঙ্কা।
ঝোড়ো হাওয়া যেন যৌবনটা
হায় রে হায় মিস লঙ্কা।
দেখলাম, করিম সাহেব আবার ভুরু কুঁচকে দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। দেখে মনে হলো, তিনি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। এবার কনস্টেবল রাজা মিয়া বললেন,
-স্যার, এই হালায় তো পুরা পাগল। এই বদমাশ তো দেখি কথা কয় একটা, আর উদাহরণ দেয় অন্যটা। আমার তো মনে হয় এ ব্যাটা পুলিশের সাথে মশকরা করতেছে। স্যার এই দুইটাকে থানায় নিয়ে চলেন। পুলিশ যে মশকরার জিনিস না, সেটা ওরে আমি হিসাব করে করে বোঝায় দেব।
দুলাভাই রাজা মিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-রাজা ভাই, আপনার চেহারার মধ্যে একটা চৌধুরী চৌধুরী ভাব আছে। আপনি সৌভাগ্যবান। কারণ, এটা সবার মধ্যে থাকে না। শোনেন, এই ভাবের কারণে আপনি কথা বলবেন এসপির মতন, আপনি কথা বলবেন আইজিপির মতন। কারণ, ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। তাই তো কবি বলেছেন,
আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা,
আমি কি তোর আপন ছিলাম না……
করিম সাহেব এবার লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। দুলাভাইয়ের দিকে শক্তভাবে তাকিয়ে বললেন,
-দাঁড়া, তুই আগে থানায় চল। তোর পাগলামি আমি থানায় নিয়ে ছোটাব? ব্যাটা বদমাশ, তুই উল্টা-পাল্টা উদাহরণ দিয়া আমার মাথা খারাপের ব্যবস্থা করতেছিস না?
এরপর উনি কনস্টেবল রাজা মিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-এই দুইটাকে নিয়ে চলেন। ইন্সপেক্টর স্যার যা পারে করুক। এই দুইটার সাথে আমি আর কোনো কথা বলব না।
উনারা আমাদের দুজনকেই পুলিশের গাড়িতে নিয়ে ওঠালেন। তারপর থানার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে দিলেন। আমি দুলাভাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম,
-দুলাভাই, সত্যি করে বলেন, মলি আর খালারে কোথায় রাখছেন? উনারা কার কাছে আছে?
-আমি কীভাবে জানব? আমি তো মলিকে কিডন্যাপ করিনি।
-তাহলে আপনি জয় সাহেবকে ফোনে ওগুলো কেন বললেন?
-আরে ঝাড়ি মারছি। দিপু, তুমি কি আমারে চেনো না? আমার তো একটা মশা মারারও সাহস নাই। আর আমি করব কিডন্যাপ?
দুলাভাইয়ের কথা শুনে বুঝলাম, উনি সত্য বলছেন। উনি মলিকে কিডন্যাপ করেননি। তাহলে প্রশ্ন, মলি এখন কোথায়? এবার আসলেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। মেয়েটা কি তাহলে কোনো বিপদে পড়ল? আর আমার প্রিয় খালা? উনিইবা কোথায়? চলবে...