বিয়ের চাপ-৪র্থ পর্ব

বিয়ে
প্রতীকী ছবি

গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শেষে মলি আমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর পরই আব্বা আমাদের সবাইকে নিয়ে জরুরি মিটিংয়ে বসলেন। হলুদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন নিকট আত্মীয়ও এই মিটিংয়ে অংশ নিলেন। সবাই আসন গ্রহণ করতেই বাবা দুলাভাইকে বললেন,
-কামাল মিয়া, একটু আগে মলি যে আবদারের কথা আমাদের বলেছে, তা সবাইকে একটু খুলে বলো।
দুলাভাই দুইবার খুক খুক করে কেশে বললেন,
-সবাইকে আসসালামু আলাইকুম। আজ দিপুর গায়েহলুদ। আজ আমাদের পরিবারের জন্য অতীব খুশির দিন। আমার শ্বশুর আব্বা আমাকে মলির আবদারের কথাটি আপনাদের সামনে প্রকাশ করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাকে এই সম্মান দেওয়ার জন্য আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে আমি সালাম জানাই। তাঁরা আমার মাথার মণি। আমার জীবনে তাঁদের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য কবির ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়,
আজ পাশা খেলব রে শ্যাম।
আজ পাশা খেলব রে শ্যাম।
ও শ্যাম রে তোমার সনে।
শ্যাম রে তোমার সনে।
একলা পাইয়াছি রে শ্যাম,
এই নিগূঢ় বনে।

আরও পড়ুন


দুলাভাই থামতেই আমার হিন্দি সিরিয়াল–পাগল খালা কিছুক্ষণ দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
-কামাল মিয়া, তুম ইতনা কথা ক্যায়সি বলতা হ্যায়। তুমাহারা মাউথ নেহি ব্যথা করতা? রাত বহুত হইছে। সবাইকে ঘরমে যাতি হোগা, ঘুমাতি হোগা। তুম কথা সংক্ষেপ মে নেহি বোল সাকতা?
-সরি খালা, রাত যে অনেক হয়েছে সেটা খেয়াল করিনি। আপনারা সারা দিন অনেক কষ্ট করেছেন। আপনাদের বিশ্রাম দরকার। এই দিকটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আসলে শ্যালকের বিয়ের আনন্দে মাথাটা একটু আউলায়ে আছে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। তাই তো কবি বলেছেন,
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি।
আমার খালু যেকোনো কারণেই হোক, দুলাভাইকে প্রথম থেকেই দেখতে পারেন না। তিনি আমার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ভাইজান, আপনি আর লোক পাইলেন না। আপনি এত মানুষ থাকতে এই গাধারে দায়িত্ব দিয়েছেন কথা বলার জন্য? এ গাধা তো এখন উল্টাপাল্টা কথা বলে সবার মাথা আউলায়ে দিতেছে।
আব্বা কোনো উত্তর দিলেন না। শুধু একটু মুচকি হাসলেন। দুলাভাই কাঁচুমাচু হয়ে বললেন,
-সরি খালু। ঠিক আছে, আমি এবার কাজের কথায় আসছি। আসলে মলি যাওয়ার আগে আব্বা-আম্মার কাছে এক কঠিন আবদার করেছে। আর আব্বা-আম্মাও তার সেই আবদার গ্রহণ করেছেন। কারণ, তাঁদের দয়ার শরীর। তাই তো কবি বলেছেন,
রেললাইনের ঐ বস্তিতে,
জন্মেছিল একটি ছেলে
মা তার কাঁদে
ছেলেটি মরে গেছে।
হায়রে হায় বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।
মামি আমার বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-পপি, তোরে যে আমি ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে বলছিলাম, সেটা কি তুই নিছিস? শোন, তুই গাধাটারে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখা।
আপা কিছু না বলে শুধু দুলাভাইয়ের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলেন। খালা দুলাভাইকে বললেন,
-জামাই, কবি ক্যায়া বোলা ও হাম জান্না নেহি চাতা হ্যায়। মলি ক্যায়া বলছে ওটা বাতাও। তুমকো আমি আবার বলতেছি। জো তুম বলেগা, সংক্ষেপে বলবা। সামাঝ গেয়া?
-জি খালা, আমি সংক্ষেপেই বলছি। আসলে মলি একটা ভেজাইল্লা অনুরোধ করেছে। মলি বলেছে, তার শখ সে পালকিতে চড়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে।

বিয়ে
ফাইল ছবি

খালু বললেন,
-এটা তো ভালো কথা। এটা আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। তা পালকি কি ঢাকা শহরে ম্যানেজ করা যাবে?
দুলাভাই দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন,
-খালু, আমি পালকি ম্যানেজ করতে পারব। সেটা সমস্যা না।
-তাহলে সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা হচ্ছে অন্যখানে। কবি বলেছেন, যদি তোর…
এ পর্যায় খালু রেগে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বললেন,
-ওই খবরদার, তুই আর কোনো কবির উদাহরণ দিবি না। ব্যাটা বদমাশ। শোন, এই দুনিয়ায় কোনো কবি নাই। আর যদি থেকেও থাকে তারা কোনো কিছু লেখে নাই। আর যদি তারা কিছু লিখেও থাকে, তো তোর কাছ থেকে সেই কথা শোনার কোনো ইচ্ছা আমাদের নাই। আমার কথা কি ক্লিয়ার?
-জি খালু, একদম লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার।
-তাইলে এবার বল সমস্যাটা কোথায়?
-সমস্যা আসলে অন্য জায়গায়। মলি বলেছে, সে নাকি কোনো এক সিনেমায় দেখেছে নায়িকা পালকিতে চড়ে স্বামীর ঘরে যাচ্ছে। আর নায়ক সারা রাস্তা নায়িকার হাত ধরে পালকির পাশে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। নায়কের পরনে রাজার পোশাক। আর হাতে তলোয়ার। মলি চায়, দিপুও ওই পোশাক পরে সারা পথ পালকির পাশে পাশে হেঁটে হেঁটে যাবে।
এই আজব আবদার শোনামাত্র আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। আমি দাঁড়িয়ে বললাম,
-দুলাভাই, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। প্রথম কথা হলো, এইভাবে যাত্রাপালার পোশাক পরে হাতে তলোয়ার নিয়ে আমি ঢাকা শহরে হাঁটতে পারব না। সারা ঢাকা শহরের মানুষ আমাকে নিয়ে হা হা হি হি করবে। আর দ্বিতীয় কথা হলো, মিরপুর থেকে উত্তরা পর্যন্ত এত দূর রাস্তা আমি হেঁটে হেঁটে যাব, আর সে আরাম করে পালকিতে চড়ে যাবে। এটা কোনো ধরনের আবদার! ফাজলামি নাকি?
আপা বললেন,
-দিপু, একটা মেয়ে কি তার বিবাহে, তার একটা শখ পূরণ করতে পারবে না? মানুষ তো বিবাহ বারবার করে না, তাই না?
-আপা শোনো, এটা কোনো শখ না। ও ইচ্ছে করে এসব ফালতু প্ল্যান করতেছে আর আমারে সাইজ করতেছে। আমি এরই মধ্যে তার অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি, আর না। এনাফ ইজ এনাফ।

আরও পড়ুন

আব্বা এতক্ষণ কোনো কথাই বলেননি। চুপচাপ সবার কথা শুনছিলেন। তবে আমার কথা শেষ হওয়ামাত্রই তিনি দুলাভাইকে বললেন,
-কামাল মিয়া, তুমি পালকির ব্যবস্থা করো। আমার মা যা চেয়েছে, তাই হবে। মিটিং শেষ।
বলেই বাবা উঠে চলে গেলেন।
মিটিংয়ের পর থেকেই মেজাজটা গরম হয়ে আছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বের হলাম। দুলাভাই অবশ্য আসতে চাননি। আমিই তাকে একপ্রকার জোর করে নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুলাভাইকে বললাম,
-দুলাভাই, আপনি এবার বাসায় চলে যান।
-কেন, তুমি যাবা না?
-না। আমি এখন ঢাকা ছেড়ে পালাব।
-মানে কি! তুমি কি আমার সঙ্গে ফাজলামি করছ?
-না, আমি আপনার সঙ্গে ফাজলামি করছি না। আমি সিরিয়াস।
-দিপু, তিন দিন পর তোমার বিয়া। আর তুমি এখন পালাবা মানে? এটা কি ফাজলামি পাইছ?
-দুলাভাই শোনেন, এই বিচ্ছু মেয়েকে বিবাহ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি মিরপুর থেকে হেঁটে হেঁটে উত্তরা যেতে পারব না। আবার আব্বাকে বললেও তিনি শুনবেন না। কারণ, মলি তো তাঁর ছেলের বউ না, মলি তাঁর মা। তাই পালানো ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা নেই।
-তুমি পালাবা কি পালাবা না, সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে হাঁটতে বের হয়ে এভাবে পালিয়ে আমাকে বিপদে ফেলতে পার না। বাসার সবাই এখন মনে করবে, আমি তোমাকে পালাতে সাহায্য করেছি। শোনো, আমি খুবই নিরীহ মানুষ। কবির ভাষায় বলতে হয়,
ধিনকা চিকা ধিনকা চিকা
রে এ এএ এ এ
ধিনকা চিকা ধিনকা চিকা
রে এ এএ এ এ
বারা মাহিনে মে
বারা তারিখ ছে
তুজকো পেয়ার জাতাওংগা রে…. .
-দুলাভাই শোনেন, আপনার কবি যাই বলুক, আমার কিছু করার নাই। আমি পালাচ্ছি।
-আচ্ছা তুমি কি একা একা পরে এসে গোপনে পালাইতে পারতা না।
-তা পারতাম। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাসার সবাই দুশ্চিন্তা করত। হাসপাতালে হাসপাতালে খোঁজ নিত। হয়তো পুলিশেও খবর দিত। আর পুলিশও আমারে ঠিকই খুঁজে বের করে আনত। এখন তো সবাই আপনার কাছ থেকেই জানবে আমি পালাইছি, সে ক্ষেত্রে এসব কিছুই হবে না।
-শুধু নিজের বুঝটাই বুঝলা দিপু, আমার দিকটা একটু দেখলা না। আমাকে তো বাসার সবাই এখন দা-বটি নিয়া দৌড়ান দেবে।
-সরি দুলাভাই। শ্যালকের জন্য একটু না হয় দৌড়াইলেন।
-তা তুমি পালায়ে কই যাইবা?
-সেটা বলা যাবে না। তবে একটু জেনে রাখেন ঢাকায় থাকছি না।

বিয়ে
প্রতীকী ছবি

আজ প্রায় সাত দিন হলো আমি কুড়িগ্রামে আছি। উঠেছি আমার এক বন্ধুর বাড়িতে। আমার বন্ধু এলাকার প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। অনেক দিন থেকেই বলছিল কুড়িগ্রামে বেড়াতে আসতে। এত দিন আসি আসি করে আসা হয়নি। এবার যেহেতু পালানোর জন্য একটা নিরাপদ জায়গা দরকার ছিল, তাই এখানে চলে এসেছি।
পালিয়ে আসার পাঁচ দিন পর দুলাভাইয়ের ফোনে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এরপর একে একে আব্বা বাদে বাসার সবার ফোনে ফোন দিয়েছি, কিন্তু কেউ আমার ফোন ধরেনি। ফোনের দোকান থেকেও ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু হ্যালো বলতেই লাইন কেটে দিয়েছে। বুঝতে পারছি, বাসার কেউই আমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে না। বাসায় যে কি হচ্ছে, সেটা জানার কোনো উপায় নেই।
অষ্টম দিনে হঠাৎ করেই মলির ফোন পেলাম। অবাক হয়ে ফোন ধরলাম।
-মলি, আপনি কেমন আছেন?
-ভালো আছি। শোনেন, একটা খারাপ সংবাদ আছে। আপনি যেদিন পালিয়ে গেলেন, সেদিনই আপনার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছেন।
-বলেন কি? আব্বা এখন কেমন আছেন?
-ভালো আছেন। তবে এখনো হাসপাতালে।
-ভালো হলে এখনো হাসপাতালে কেন?
-ডাক্তার বলেছেন বিপদ কেটে গেছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
-কেউ তো আমাকে কিছুই জানায়নি। আমি তো সবার ফোনেই ফোন করলাম, কেউ তো আমার ফোনও ধরল না।
-আপনার বাবাই সবাইকে আপনার ফোন ধরতে মানা করেছেন। আমাকেও মানা করেছিলেন। কিন্তু আমার মনে হলো আপনাকে বিষয়টা জানানো দরকার। আসলে আমার কারণেই তো আপনাদের পরিবারে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সে যাক, আপনার মনে হয় এখন ফেরা উচিত।
মলির ফোনের পরপরই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম। ঢাকায় পৌঁছেই বাসায় গিয়ে দুলাভাইকে নিয়ে হাসপাতালে এলাম। আমি যখন কেবিনে ঢুকলাম, দেখলাম রুমে মা ও মলি বসে আছেন। বাবাকে দেখে মনে হলো এই কয়েক দিনেই মানুষটি আরও বুড়ো হয়ে গেছেন। বাবা ঘুমিয়ে আছেন। মা ইশারা দিয়ে আমাকে কথা বলতে মানা করলেন। এরপর আমাকে নিয়ে মা রুমের বাইরে এলেন। বাইরে আসতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলেন। মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা আমার ছিল না। মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-তুই তো নিজ হাতে তোর বাবাকে পঙ্গু করে দিলি। মানুষটা এখন বাঁ হাত-পা নাড়াতে পারেন না। যতক্ষণ জেগে থাকে সারাক্ষণ নীরবে চোখের পানি ফেলেন। কারও সঙ্গে কথা বলেন না। শুধু মলির সঙ্গেই একটু কথা বলে। তাও সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়ে। মেয়েটা আজ এতটা দিন হাসপাতালেই পড়ে আছে। একবারের জন্যও মেয়েটি বাসায় যায়নি। এমন একটা ভালো মেয়েকে তুই এভাবে অপমান করলি? এভাবে সবার কাছে ওরে লজ্জায় ফেললি?
-মা, আমি আসলে...
-আমি জানি, তুই এত কিছু ভেবে এসব করিসনি। কিন্তু পাগলামি করতে গিয়ে যে তুই দুই পরিবারকে আর মেয়েটিকে হাসির পাত্র করলি, সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস?
-সরি মা।
-সেই ছোটবেলা থেকে শুধু পাগলামি করেই গেলি। মানুষ আর হলি না।
আব্বা আরও দুই দিন হাসপাতালে রয়ে গেলেন। এই দুই দিনও মলি হাসপাতালেই ছিল। তবে আমার সঙ্গে তার কোনো কথা হয়নি। কেন জানি মনে হলো মলি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে না। তাই আমিও নিজ থেকে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে তাকে বিরক্ত করিনি। বাবাও আমার সঙ্গে কথা বললেন না। শুধু একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আব্বাকে বাসায় নিয়ে এলাম। আব্বাকে বাসায় রেখেই মলি চলে গেল। এরপর মলির আর কোনো খোঁজখবর পেলাম না।

আরও পড়ুন

কেন জানি মলির কথা ভুলতে পারছিলাম না। একটা অপরাধ বোধ নিজের মধ্যে কাজ করছিল। খবর নিয়ে জানলাম, মলি রামগড় তার কর্মস্থলে চলে গেছে। মনে হলো মলির কাছে গিয়ে একবার সরি বলা উচিত। তাহলে হয়তো মনটা হালকা হবে। সেই ভাবনা থেকেই দুলাভাইকে নিয়ে রামগড় রওনা হলাম। রামগড়ে পৌঁছে একটা হোটেলে উঠলাম। প্রথম দেখাতেই আমি শহরটির প্রেমে পড়ে গেলাম। শহরটা মলির মতোই সুন্দর। বুঝলাম না, কেন জানি আমার সব ভাবনাতেই ধীরে ধীরে মলি চলে আসতে লাগল। দুলাভাইকে বললাম,
-দুলাভাই, আমি কেন জানি মলিকে মন থেকে সরাতে পারছি না।
-সম্ভবত তুমি মলির প্রেমে পড়ে গেছ। আসলে অনেক সময় কোনো মানুষকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলে সে মানুষটা আরও কাছে এসে পড়ে। তাই তো কবি বলেছেন,
আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।
এই কবিতায় কবি কি বলেছেন জানো? কবি বলেছেন, কারও প্রেমে পড়লে হাঁটু জলে নেমে তাকে বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
হোটেল থেকে ফ্রেশ হয়ে আমরা কলেজের দিকে রওনা দিলাম। রিকশা করে কলেজের সামনে গিয়ে নামতেই অবাক হয়ে দেখলাম, পাহাড়ের বুকের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর কলেজটি। দুলাভাইকে বললাম,
-দুলাভাই, কেন জানি কলেজটাকে খুব আপন মনে হচ্ছে।
-তা তো হবেই, তুমি তো মিয়া প্রেমে পইড়া গেছ। দিপু মিয়া তুমি কট হইয়া গেছ। তাই তো কবি বলেছেন,
খোকন খোকন ডাক পাড়ি,
খোকন মোদের কার বাড়ি?
আয় রে খোকন ঘরে আয়
দুধমাখা ভাত কাকে খায়।
-দুলাভাই, আপনার উদাহরণ কি জীবনেও সঠিক হবে না? আপনি এত পাগলা কেন?
-আরে, এই দুনিয়াটাই তো পাগলের কারবার। পাগল মানুষেরাই জীবনে আনন্দে থাকে। আমাকে দেখে বোঝো না?
বলেই দুলাভাই হো হো করে হাসতে লাগলেন। দুলাভাইকে বললাম,
-দুলাভাই, মলিকে ফোন দেন।
-আমি ফোন দিমু ক্যান? তোমার ফোন থেকে ফোন দাও মিয়া।
-আমি শিওর ও আমার ফোন ধরবে না। আপনি ফোন দেন। স্পিকার অন করে দেন।
দুলাভাই মলিকে ফোন দিলেন। ওপাশে ফোনের রিং বাজছে, আর সেই সঙ্গে এদিকে আমার বুকের মধ্যে ড্রাম বাজছে। ধুঁক ধুঁক, ধুঁক ধুঁক, ধুঁক ধুঁক...
আচ্ছা ও কি ফোন ধরবে? চলবে...
*[email protected]