বিয়ের চাপ-পর্ব ৬
রামগড় থেকে ফিরে আসার পর প্রায় দুই মাস কেটে গেছে। ওখান থেকে আসার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি ধীরে ধীরে নিজেকে বদলে ফেলার। এর মধ্যে একটা চাকরিতেও ঢুকে পড়েছি। চাকরি পেতে তেমন কোনো কষ্টই হয়নি। কারণ, খালা আমাকে চাকরি দিয়েছেন। উনি খালুকে বলে ওনাদের বায়িং হাউজে আমাকে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তবে চাকরি নেওয়ার পর একটা সমস্যা হয়ে গেছে। এখন চাইলেও আর খালার ভুলভাল হিন্দি কথার সমালোচনা করতে পারি না। কারণ, খালা হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তাহলে নাকি আমার চাকরি থাকবে না। বাবা এদিকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ওনার শরীরের বাঁ দিকটা যে অবশ হয়ে গিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে কর্মক্ষম হতে শুরু করেছে।
অফিস শেষে বাসায় ফিরে বিছানায় শুয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। এ সময় আপা এসে একটা খাম দিয়ে গেলেন। খুলে দেখলাম মলি আর জয়ের বিয়ের কার্ড। আমাদের পুরো পরিবারকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কার্ডটা দেখেই বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠল। বুকে একটু একটু ব্যথাও অনুভব করলাম। আচ্ছা এটা কি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, নাকি মলির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে জন্য কষ্টের ব্যথা?
মনের কষ্টে অনেক রাত পর্যন্ত চোখে ঘুম এল না। ভোররাতের দিকে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারব না। আজ অফিস বন্ধ বলে কেউ আর আমার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেনি। ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলাম আমার ফোনটি বাজছে। অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম, খালার ফোন। এ মুহূর্তে ফোন ধরতে একদম ইচ্ছে করছে না। তাই ফোন ধরলাম না। কিন্তু এই মহিলাও নাছোড় বান্দা। অনবরত ফোন করেই যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে ফোনই বন্ধ করে দিলাম।
ঘণ্টা দুয়েক পর খালা বাসায় এসে ঘুমন্ত আমার ওপর এক বালতি পানি ঢেলে দিলেন। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। আমি উঠে বসতেই, খালা চিৎকার করে বললেন,
—বল, তু কিউ মেরা ফোন নেহি ধরতা হে। তেরা ইতনা ভাব কিউ হ্যায়? তোরে মলি বাতিল করে দিছে, তারপরও তোর ভাব নেহি যাতা?
—খালা তুমি যে আমারে পানি দিয়া এভাবে ভিজাইলা, এটা কি ঠিক করলা? তুমি তো আমার ভাবি না, তুমি আমার খালা। তুমি মুরুব্বি, মুরুব্বির মতন থাকবা।
—খবরদার বদমাশ, আমারে উপদেশ দিবি না। তাহলে তোর চাকরি খেয়ে ফেলব।
—আচ্ছা দিলাম না। কিন্তু তুমি যে আমার পুরা বিছানাই ভিজাই দিলা। আমি এখন কীভাবে এই বিছানায় ঘুমাব?
—আজকে বাদ তু নেহি ঘুমায়েগি।
—কেন!
—মলির ইতনা অপমান কি বাদ, তু ক্যায়সে ঘুমায় গা? আগার মে তেরে জাগামে হোতা, তো গলে মে দড়ি লাগাকে জান দিয়া দিতাম।
এ কথা বলেই খালা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
ঘণ্টাখানেক পর খালার উদ্যোগে আপার রুমে একটি জরুরি বৈঠকে বসলাম। বৈঠকে মা, খালা, দুলাভাই ও আপা উপস্থিত হলেন। বাবা যাতে শুনতে না পান, সে জন্য রুমের দরজা বন্ধ করে রাখা হলো। প্রথমেই খালা সরাসরি আপাকে চার্জ করে বললেন,
—মলি ইতনা সাহস কোথা থেকে পাইছে? ও মেরা দীপুকে রিজেক্ট করকে অন্য বেটারে শাদি করতেছে। শোন, মে ওই লাড়কি কো নেহি ছোরেঙ্গা।
দুলাভাই খালার কথায় উৎসাহ পেয়ে বললেন,
—খালা তাহলে এক কাজ করি, মলিকে উঠায় নিয়া আসি?
—কে উঠায় নিয়ে আয়েগা, তু? তেরা হিম্মত হ্যায়?
—অবশ্যই হ্যায়।
—তো উঠায় লেআ। যা টাকা লাগে আমি দুঙ্গা।
—ওকে খালা। কাজ হো যায়েগা।
—কামাল মিয়া তুমি কি আমাকে ভ্যাঙাচ্ছ?
—ছি ছি খালা এটা কী বললেন? আসলে জোসে হিন্দি বইলা ফেলছি। কিছু মনে কইরেন না।
—ওকে মনে করলাম না। যাও তুমি কাম শুরু কইরা দাও।
—খালা আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না। আপনি শুধু বসে বসে দেখেন, আমি কী করি। আমি মলিকে বুঝিয়ে দেব, আমার কেনা হলুদ গায়ে দিয়ে অন্য কারও বউ হওয়া সম্ভব না। মলি তুমি ঘুঘু দেখছ, ফাঁদ দেখোনি। তুমি দুলাভাইকে দেখেছ, দুলাভাইয়ের রাগ দেখোনি।
—আচ্ছা কামাল মিয়া, সাচ্চি সাচ্চি তুম মলি কো উঠায় আনতে পারবা?
—খালা যে কী বলেন! হু হা হা…
বলেই দুলাভাই বাংলা সিনেমার ভিলেনের মতো হেসে উঠলেন। আমরা সবাই ভুরু কুঁচকে দুলাভাইয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমি বুঝতে পারছি না, খালা ও দুলাভাই এই দুই পাগলকে আমার কী বলা উচিত। আসলে এরা দুজনই আমাকে খুব বেশি ভালোবাসেন। তাই মলির এভাবে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা এরা মানতে পারছে না। আমি সাহস করে খালাকে বললাম,
—খালা, মলি বিয়ে করছে। এটা তো কোনো অন্যায় না। তুমি কেন তাকে তুলে আনবে?
—খামোস। তু কুছ নেহি বলেগা। আগার কুছ বলা তো, তোরে আমি চাকরি থেকে বাহির করে দুঙ্গা।
আমি চুপ করে গেলাম। মা এবার খালাকে বললেন,
—বুবু, আমি জানি আপনি দীপুকে অনেক ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি রাগের মাথায় যা বলছেন, সেটা ঠিক বলছেন না। মলির তো এখানে কোনো দোষ নেই। ওর জীবন, সে–ই সিদ্ধান্ত নেবে কাকে বিয়ে করবে কাকে করবে না। এখানে তো আমরা ওকে জোর করতে পারি না, তাই না?
খালা কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে মাকে বললেন,
—তু কিসকা সাইড মে? তু মা হয়ে বেটেকা দুখ নেহি দেখতাহে? ঠিক হ্যায়, মে মলির ব্যাপারে কুছ নেহি বলুঙ্গা। মাগার আমি দীপুকে মলির বিয়ের আগেই বিয়ে দুঙ্গা। তব যা কে মেরে দিল মে শান্তি আসবে।
বুঝলাম, খালারে কোনো কিছু বলে লাভ হবে না। আমাকে উনি বিয়ে করায়েই ছাড়বেন। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—ঠিক আছে, তোমাদের যেটা ইচ্ছে হয় করো। তবে আমার বিয়ে কিন্তু হবে একদম ঘরোয়াভাবে। কোনো অনুষ্ঠান করতে পারবে না।
মা-খালা দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।
আমার ধারণা ছিল, এত অল্প সময়ের মধ্যে আমার জন্য খালা মেয়ে খুঁজে পাবেন না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আপা আর খালা একদিনের মধ্যেই আমার বিয়ের জন্য কনে ঠিক করে ফেললেন। মেয়ের নাম কলি। কলি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কলি হচ্ছে খালার বান্ধবীর মেয়ে।
দুই পরিবার একমত হয়েছে, এখন একদম ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হবে। পরে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করা হবে।
আমি কলিকে এখনো দেখিনি। এবং তাকে দেখার কোনো আগ্রহও আমার নাই। কারণ পিচ্চি একটি মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছি, ভাবতেই মনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে। একবার ভেবেছিলাম প্রতিবাদ করব। কিন্তু সাহস হয়নি। আসলে পরিবারকে আর কোনো সমস্যায় বা বিপদে ফেলতে চাচ্ছি না। আমার জন্য তারা এমনিতেই অনেক অপমানিত হয়েছেন।
আমাদের যার যার বাসায় একদম ঘরোয়াভাবে গায়েহলুদ হয়ে গেল। এবার গায়েহলুদে আমাকে মিষ্টিই খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু কেন জানি ওই তিতা শরবতের গায়েহলুদটাই এখন বারবার মনে পড়ছে।
মলিকে বিশেষভাবে দাওয়াত দেওয়া হলেও সে আমার গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে আসেনি। আমার ধারণা, সে আমার বিয়ের অনুষ্ঠানেও আসবে না।
এখন মধ্যরাত। আগামীকাল আমার বিয়ে। কেন জানি হঠাৎ করেই মলির সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে হলো। মলিকে ফোন দিলাম। মলি ফোন ধরতেই কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
—কেমন আছেন?
—ভালো। আপনি এত রাতে ফোন করেছেন কেন? কোনো সমস্যা? বাবা ভালো আছেন তো?
—সবাই ভালো আছেন। আপনি তো হলুদের অনুষ্ঠানে এলেন না। তা আগামীকাল আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছেন তো?
মলি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলেন। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বললাম,
—চুপ করে আছেন যে?
—সরি। আমার মনে হয়, আপনার বিয়েতে আমার যাওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ বিষয়টা আমার-আপনার দুজনের জন্যই বিব্রতকর। এনিওয়ে আপনাকে বিয়ের জন্য অভিনন্দন।
—আর অভিনন্দন। বিয়ে নিয়ে খুবই ভয়ে আছি।
—কিসের ভয়?
—আপনি জানেন না, খালা আমার জন্য পিচ্চি একটা মেয়েকে ঠিক করেছেন? মেয়ে মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।
—তা তে সমস্যা কী? শোনেন পিচ্চি মেয়েরা কিন্তু লক্ষ্মী হয়।
—ভুল বললেন, এরা খুব চঞ্চল হয়। সেই সাথে একটু আউলা–ঝাউলাও হয়।
—ওসব কোনো সমস্যা না। বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
—হলে ভালো।
—কই বললেন না তো, হঠাৎ করে কেন ফোন করলেন?
—কেন জানি এই বিয়েতে মন একেবারেই সায় দিচ্ছে না। এই কথা যে কাউকে বলব, সে সাহসও পাচ্ছি না। ভাবলাম আপনাকে জানাই, তাহলে হয়তো মনটা একটু হালকা হবে। সে জন্যই ফোন করেছি।
—আপনি আবার পালানোর চিন্তা করছেন না তো?
—বিশ্বাস করেন ও রকমই ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাবার কথা চিন্তা করে করতে পারছি না।
—ওসব বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমান। আর কাল বাধ্য ছেলের মতো বিয়েটা করে ফেলেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
—আপনি কি আসলেই আসবেন না?
—না আসব না।
বলেই মলি লাইন কেটে দিল। মলির সঙ্গে কথা শেষ করে দুলাভাইকে আমার রুমে ডেকে আনলাম। দুলাভাই এসে ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বললেন,
—কী ব্যাপার কোনো সমস্যা?
—না সমস্যা না। কেন জানি বাসার মধ্যে ভালো লাগছে না। চলেন না বাইরে থেকে দুজনে একটু হেঁটে আসি।
—খবরদার তুমি আমারে ফালতু বুদ্ধি দিবা না। আজ রাতে আমি তোমার সঙ্গে কোথাও যাব না। গতবার বাইরে হাঁটার কথা বলে তুমি পালাইছ। তোমার পালানোর পর বাসার সবাই মিলে আমারে ধোলাই করছে। তোমারে বিশ্বাস করে আমি ঠকেছি। আমি আর ঠকতে চাই না। তাই কবির ভাষায় বলতে চাই,
তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে
ফুল নিতে আসতে,
জানি না তুমি ফুল না
আমাকেই বেশি ভালোবাসতে...
—দুলাভাই শোনেন….
—আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। সকালে দেখা হবে। বাইদা ওয়ে তোমার বোন অলরেডি মেইন গেটে তালা দিয়ে চাবি লুকিয়ে ফেলেছে। অতএব ওইসব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমাও।
আজ আমার বিয়ের দিন। একদম ঘরোয়াভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। কোনো লাইটিং নেই, বাদ্য নেই। একেবারে সাদামাটা বিবাহ। আমি পরিপূর্ণ রেডি হয়ে বসে আছি। একে একে বরযাত্রী সবাই আমাদের বাসায় এসে উপস্থিত হচ্ছেন। আমরা মোট ১৫ জন বরযাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। সবার আসা শেষ হলেই আমরা একসাথে রওনা দেব। সবাই মিলে বসে আছি, সেই সময় দুলাভাইয়ের ফোনে একটা ফোন এল। দুলাভাই ফোনে কথা শেষ করে মুখ কালো করে বললেন,
—দীপু একটা খারাপ খবর আছে।
—কী?
দুলাভাই সুর করে বললেন,
—কবি বলেছেন,
মনের এই ছোট্ট ঘরে
আগুন লেগেছে হায়রে
পানিতে নেভেনারে কী করি উপায়
বেঁচে থাকা হলো দায় সজনী গো
বেঁচে থাকা হলো দায়...
—এর মানে কী দুলাভাই?
—এর মানে তোর বউ পালাইছে?
আমার মামা চোখ বড় বড় করে দুলাভাইকে বললেন,
—কামাল মিয়া সব সময় ফালতু কথা বলবা না। আমরা তোমার মুরুব্বি। আমাদের সামনে ফাজলামি করবা না।
—না মামা, আমি ফাজলামি করছি না। কথা সত্য। মেয়ে পারলার থেকেই তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালাইছে। তাদের নাকি অনেক দিনের প্রেম।
দুলাভাইয়ের কথা শেষ হওয়ামাত্র মামা ভুরু কুঁচকে আমার মাকে বললেন,
—শোন, তোরে একটা কথা সাফ সাফ বলে দিচ্ছি, তোর পোলার বিয়েতে আমারে আর দাওয়াত দিবি না।
—ভাই এটা কী বললেন!
—যা বলছি সঠিক বলছি। শোন, ওর বিয়া খাওন আমাদের কারও কপালে নাই। ও একটা কুফা। একবার ও নিজে পালায়, আর একবার ওর বউ পালায়। ফাজলামি পাইছে? আমাদের সময়ের কি কোনো মূল্য নেই?
দুলাভাই মামাকে বললেন,
—মামা এভাবে বইলেন না। আমাদের সবার এখন দীপুর পাশে দাঁড়ানো উচিত।
বেচারার বউ পালাইছে। এটা অনেক কষ্টের ব্যাপার। তাই তো কবি বলেছেন,
তুনে মারি এন্ট্রিয়া
আর দিলমে বাজি ঘন্টিয়া
আরে ট্যাং ট্যাং ট্যাং আরে ট্যাং ট্যাং ট্যাং…। আচ্ছা মামা, এখানে ট্যাং ট্যাং হবে নাকি ঢ্যাং ঢ্যাং হবে?
মামা দুলাভাই দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বললেন,
—হারামজাদা, শালা পাগলের গুষ্টি পাগল। কীভাবে জানি সব পাগলগুলা আইসা আমার বোনের বাসায় একত্র হইছে।
বলেই মামা রুম থেকে গটগট করে বের হয়ে গেলেন। দুলাভাই অবাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—মামা এভাবে রাগ করে চলে গেলেন কেন? তাকে আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছি। তার জানা থাকলে উনি উত্তর দেবেন। না জানা না থাকলে বলবেন, জানি না। খুবই সিম্পল একটা ব্যাপার।
বুঝলাম না, আমার হবু বউ পালাইছে কিন্তু আমার মনে কেন জানি কোনো কষ্ট অনুভূত হচ্ছে না। কেমন জানি একটু আনন্দ আনন্দ লাগছে। বউ পালাইলে যে আনন্দ লাগে, এটা আমার জানা ছিল না। দেখলাম আমার বাবার মুখেও একটা প্রশান্তির হাসি লেগে আছে। খালা দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—আগামী তিন দিন পর মলির বিয়া। আমরা মলির কাছে হেরে গেলাম রে দীপু, আমরা হেরে গেলাম। আমি ভাবছিলাম তোর বউরে নিয়া ওই শয়তান মেয়ের বিয়েতে গিয়ে ওরে দেখায় দেব আমাদের ছেলের বউ কত সুন্দর। যাতে ও জেলাস ফিল করে কষ্ট পায়। কিন্তু কিছুই তো হইল না।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, খালার চোখে পানি। আরও অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, খালা পুরোটা কথাই বাংলায় বললেন। উনি এখানে একটা হিন্দি শব্দও ব্যবহার করেননি। কিছুক্ষণ পর খালা চোখ মুছে জোরের সঙ্গে বললেন,
—এ বাসা থেকে মলির বিয়েতে আমরা কেউ যাব না।
আমি দৃঢ়কণ্ঠে বললাম,
—তোমরা যাবে কি না, সেটা তোমাদের ব্যাপার। তবে আমি মলির বিয়েতে অবশ্যই যাব।
আমার কথা শুনে রুমে উপস্থিত সবাই আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। চলবে...
* লেখক: [email protected]