১.
কেবল চোখই নয়, কফি হাউসের দেয়ালের ম্যুরালটা যেন আমার পা–ও আটকে দেয়। ধক করে রায়পুরা বাজারের (নরসিংদীর একটি উপজেলা) কৃষ্ণার চায়ের দোকানের কথা মনে পড়ে যায়। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছুটিতে বাড়ি এলে, পরবর্তী সময়ে চাকরিজীবনে ঢাকা থেকে গ্রামে গেলেই সন্ধ্যায় কৃষ্ণার দোকানের চা খাওয়াটা যেন অপরিহার্য ছিল। একপাশে কাঠের চুলা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে, বড় কেটলিতে পানি গরম হচ্ছে, পাশাপাশি রাখা অনেকগুলো কাপে চা ঢেলে দিচ্ছে কৃষ্ণা।
–‘বসেন সাগর ভাই’—স্বপন ভাইয়ের ডাক আবার ইয়েল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনে। সবার সঙ্গে চেয়ার টেনে বসে যাই। ছোট্ট ছিমছাম একটা কফি হাউস, বেশ কিছু তরুণ–তরুণী বিকেলের স্ন্যাকস আর কফি নিয়ে বসে আছে। কারও কারও সামনে বই-খাতা, বোঝা যায় সবাই ইয়েলের শিক্ষার্থী।
আবার দেয়ালজুড়ে থাকা ম্যুরালটার দিকে তাকাই। একটা লোক মাটির কাপে বড় কেটলি থেকে চা ঢালছে। পাশে চুলায় কেটলিতে পানি গরম হচ্ছে। খানিকটা দূরে একটা ট্রাক, যেন ট্রাকের কোনো এক ড্রাইভার ট্রাক থামিয়ে চা খেয়ে খানিকটা বিশ্রামের কাজ সেরে নিচ্ছে। ইয়েল ক্যাম্পাসের কফি হাউসের দেয়ালে এমন একটা ম্যুরাল! বলতে গেলে প্রায় পুরোটা দেয়ালজুড়ে এমন দৃশ্যমান করে ম্যুরালটা আঁকা—মনে হয় একেবারেই জীবন্ত একটা দৃশ্য। এখনই লোকটা মাটির কাপে চা ঢালা থামিয়ে জানতে চাইবে, চায়ে চিনি হবে কি না!
-কোন দেশি অরিজিনের এই দোকানটা?—রিফাতকে প্রশ্ন করি।
- মুসলিম কফি হাউস। রিফাতের উত্তর।
রিফাতের উত্তর শুনে খানিকটা হেসে দিই। পশ্চিমের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় হালাল খাবার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়ার প্রবণতাটাও প্রবল। এটা ঠিক ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বতার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমের তরুণদের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি একটা সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। কিছুদিন আগে এই ইয়েল ক্যাম্পাসই তো আন্তর্জাতিক খবরের শিরোনাম হয়েছিল। ইসরায়েলি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ক্যাম্পাসের ভেতর তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। আবার ইহুদি শিক্ষার্থীরা পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে। এ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা। ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে পাশের একটা মাঠ দেখিয়ে স্বপন ভাই বলছিলেন, ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এই মাঠে কানেটিকাটের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছিল। তবে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে ইহুদি শিক্ষার্থীদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। এ রকম একটি স্থানে মুসলিম কফি হাউস! এই প্রথম কফি হাউসটির নাম জানার আগ্রহ হলো।
MOTW কফি অ্যান্ড প্যাস্ট্রিস দোকানটার নাম। MOTW–এর মানে ‘মুসলিম অব দ্য ওয়ার্ল্ড।’ এটি এখন একটি ব্র্যান্ড নেইম। এর চমৎকার একটি হিস্ট্রি আছে। গুগল করলেই মিলবে।
-MOTW কফি অ্যান্ড প্যাস্ট্রিস—দোকানটার নাম। MOTW–এর মানে কী? রিফাতের কাছে জানতে চাই।
- ‘মুসলিম অব দ্য ওয়ার্ল্ড।’ এটি এখন একটি ব্র্যান্ড নেম। এর চমৎকার একটি হিস্ট্রি আছে। তুমি গুগল করলেই পেয়ে যাবে।—আমার কৌতূহলী দৃষ্টি দেখে রিফাত বুঝতে পারে ব্যাপারটা আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে।
কফি হাউসেরও ‘হিস্ট্রি’ থাকে—এভাবে ভাবিনি কখনো। কিন্তু এই কফি শপটি ভাবাতে থাকে। আমি এর উৎপত্তির দিকে নজর দিই। MOTW বা ‘মুসলিম অব দ্য ওয়ার্ল্ড’–এর শুরুটা ইনস্টাগ্রামের একটি পেজ হিসেবে। পশ্চিমা দুনিয়ায় মুসলমানদের সম্পর্কে প্রচলিত যে ভুল ধারণা আছে, সেগুলো ভেঙে দিয়ে একেবারে সাদামাটা প্র্যাকটিসিং মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে এই পেজের যাত্রা। তারপর নানা রকম সমাজসেবামূলক সহযোগিতায় পাশে দাঁড়ানো। এ পর্যন্ত সবই ভার্চ্যুয়াল। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজ্জাদ শাহ নামের এক তরুণের এই পেজ স্বল্প সময়েই সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে সাড়া ফেলে। ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা নানা ধরনের কর্মসূচি নিতে থাকেন। এর মধ্যেই তার মনে হয়—‘ফিজিক্যাল এক্সিসটেন্স’ আছে এমন কোনো কিছু একটা করা দরকার। সেই সময়েই তার মাথায় আসে এই কফি হাউসের।
সিনেটর রহমানের পুরো নাম মাসুদুর রহমান, চাঁদপুর থেকে ২৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। স্বপন ভাই বলছিলেন, ডেমোক্র্যাট নেতারা বক্তৃতায় সিনেটর রহমানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন। অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম দিনগুলো কতটা অনটন আর সংগ্রামে কেটেছে, সেখান থেকে তিনি কেবল জনপ্রিয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই হননি, ব্যবসা–বাণিজ্যেও সফল হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীকে ৩৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে কানেটিকাটে ৫০ বছরে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন তিনি।
কফি হাউসই–বা কেন? অন্য কিছু নয় কেন?—তারও উত্তর দিয়েছেন সাজ্জাদ তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। সেই সময়টায় তিনি আর তাঁর ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত স্ত্রী ইজলাল আসলাম ইন্ডিয়ানায় থাকতেন। ইজলাল আসলামের বাবার ছিল চায়ের ব্যবসা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দাদের বিভিন্ন পার্টিতে তিনি চা পরিবেশন করতেন। সেই চা পরিবেশনে সাজ্জাদ এবং স্ত্রী সহযোগিতা করতেন। সেই থেকেই তাঁদের মাথায় কফির চিন্তাটা আসে। স্থাপন করেন MOTW কফি অ্যান্ড প্যাস্ট্রিস। দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায় তাঁর এই উদ্যোগ। সাজ্জাদ এটিকে কেবল কফি স্টোরই করতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন কফির কাপে মুসলিম সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর মুসলমানদের গল্পকে পশ্চিমের সামনে নিয়ে আসতে। ইন্ডিয়ানাপোলিশে চারটি কফি শপের পর তিনি নজর দেন বাইরে। ইয়েল ক্যাম্পাস ছাড়াও শিকাগোতে আছে এই কফি শপ। গত বছরের জানুয়ারিতে ইয়েলে এই কফি হাউসটি শুরু হয়েছে।
কফির অর্ডার দিয়ে চারপাশটা দেখার চেষ্টা করি। দেয়ালজুড়ে জ্যান্ত হয়ে থাকা ম্যুরালের চা–ওয়ালার মতো বড় কেটলিতে এখানে চা হয় না। আর পাঁচটা পশ্চিমা ফ্র্যাঞ্চাইজি কফি স্টোরের মতোই মেশিনে চা তৈরি হয়। পরিবেশন করা হয় কাগজের কাপে। দেয়ালের সেই ম্যুরালটা কেবল স্মৃতিকে উসকে দিয়ে নস্টালিজিক করা। তবু পশ্চিমের তরুণদের কাছে MOTW ও এর কফি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
কফি পর্ব শেষে বেরোনোর পথে আরেকটা দেয়ালে চোখ যায়। সবুজ একখণ্ড ভূমির ওপর সাদা আলোর প্রক্ষেপণে লেখা ‘কফি উইথ আ পারপাস’। নিচে দুই পাশে দুটি চেয়ার মুখোমুখি বসার, মাঝে ছোট একটা টেবিল। ‘কফি উইথ আ পারপাস’ কথাটার মধ্যে কেমন জানি রোমান্টিকতা আছে। এই টেবিলটায় বসে সেরিনের সঙ্গে একটা ছবি তোলার ইচ্ছা হলো। কিন্তু জায়গাটা খালি নয়। একটা মেয়ে সেখানে বসে আছে।
আমরা যখন ঢুকি তখন দুজন ছিল, এখন একটা মেয়ে, সামনে অর্ধেক শেষ করা খাবার। মেয়েটি টেলিফোনে কথা বলছে। তাঁকে অ্যাপ্রোচ করব কীভাবে, সেরিনকে বলতেই সে সোজা মেয়েটির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ‘এক্সকিউজ মি’ বলে ইচ্ছাটা প্রকাশ করে। মেয়েটি মুহূর্তে উঠে গেল। টেবিলটা পরিষ্কার করে নিজে থেকে আমাদের ছবিও তুলে দিল।
একটা অন্য রকম গল্পের স্মৃতি নিয়ে কিংবা সাক্ষী হয়ে আমরা ম্যানচেস্টারের পথে পা বাড়াই। সন্ধ্যায় ব্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের গানের অনুষ্ঠানে যেতে হবে। ব্রিয়াঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রে বড় হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী। তাঁর একক সংগীতানুষ্ঠান। স্বপন ভাই বললেন, মেয়েটি ভালো গায়। কানেটিকাটে বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের ইচ্ছা ব্রিয়াঙ্কার গানের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলে। কানাডার ক্যালগেরি থেকে মাহমুদ হাসান দিপু আসছে কানেটিকাট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালিম আকবর এই শহরেই থাকেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে ব্রিয়াঙ্কার গানের অনুষ্ঠানে।
২.
ব্রিয়াঙ্কার গানের অনুষ্ঠানটা হচ্ছে একটা গির্জায়। অধিকাংশ শহরেই অভিবাসীদের এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো গির্জায় হয়। টরন্টোতেও তাই দেখেছি। টরন্টোয় একসময় নাকি ঈদের নামাজও হতো গির্জায়। এখন অবশ্য গান–বাজনা বা অন্য অনুষ্ঠানের জন্য বিকল্প জায়গার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যয়বহুল বড় অডিটরিয়ামেও টরন্টোর অনুষ্ঠান হয়। তবে অনেক শহরেই এখনো এই গির্জাগুলো স্বল্প ব্যয়ে অভিবাসীদের সামাজিক অনুষ্ঠানের অবলম্বন হয়ে আছে। কানেটিকাটেও তার ব্যতিক্রম নয় বলেই মনে হলো।
স্বপন ভাই আর আমি যখন গির্জাটায় পৌঁছাই ততক্ষণে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। গির্জার অডিটরিয়ামটা প্রায় পূর্ণ। কানেটিকাটে একসঙ্গে এতগুলো বাংলাদেশি মুখ দেখে অন্য রকম একটা ভালো লাগা তৈরি হলো যেন।
আচ্ছা, কানেটিকাটে কী পরিমাণ বাংলাদেশি আছে? তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারল না। অন্য কোনো সূত্র থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। তবে বাংলাদেশি আমেরিকানদের বেশ কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশন আছে এখানে। কানেটিকাট রাজ্য হিসেবে যেমন আছে, আবার বিভিন্ন শহর হিসেবেও আছে। আবার বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শাখাও আছে। বাংলাদেশিরা যেখানে যান, সেখানেই পরিপূর্ণ বাংলাদেশ নিয়েই যেন বসবাস করেন।
এরই মধ্যে হালিমকে বের করে নিয়ে আসেন স্বপন ভাই। ৩৫ বছরের বেশি সময় পর হালিমের সঙ্গে কানেটিকাটে দেখা হলো। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর আর আমাদের দেখা হয়নি। হালিমের সঙ্গে দেখা হলো। দিপু এলে ষোলোকলা পূর্ণ হবে। হালিম জানাল, দিপু নিউইয়র্ক থেকে রওনা হয়েছে দেরিতে, ফলে এই অনুষ্ঠানে তার আসা হবে না। হালিম আমাকে নিয়ে একেবারে সামনের সারিতে তার নিজের জন্য রাখা আসনটিতে বসিয়ে দেয়। পাশের আসনের ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজে আস্তে করে কেটে পড়ে। অনুষ্ঠানে তার অন্য ব্যস্ততা আছে হয়তোবা। হালিম আমাকে যার পাশে বসিয়ে দিয়েছে, তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সিনেটর রহমান।
-আপনি এসেছেন শুনেছি। স্বপন ভাই বলেছেন।—হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে তিনি বললেন।
মনে পড়ল, দুপুরেই আমরা যখন বন্দুকের দোকান আর মার্ক টোয়েনের বাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছি তখন স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে তিনি কথা বলছিলেন। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে দেখা হবে কি না, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন ভাইয়ের কাছ থেকে ইতিমধ্যে সিনেটর রহমান সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা হয়ে গেছে। এখন তাঁর সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ হয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাঁচজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। জর্জিয়ায় চতুর্থবারের মতো সিনেটর হয়েছেন শেখ রহমান। সেখানে প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে সিনেটর হয়েছেন নাবিলা ইসলাম। নিউজার্সিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন নুরুন নবী। কানেকটিকাতে ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মাসুদুর রহমান, এটি তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচিত হওয়া। ২০২২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সিনেটর নির্বাচিত হন। সিনেটর রহমান নামেই পরিচিত। এই চারজনই ডেমোক্র্যাট দলের প্রতিনিধি। অপর দিকে নিউ হ্যাম্পশায়ারে ষষ্ঠবারের মতো সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলের আবুল খান। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে বিভিন্ন স্টেট থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নির্বাচিত পাঁচজনের একজন এই সিনেটর রহমান।
সিনেটর রহমানের পুরো নাম মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশের চাঁদপুর থেকে ২৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। স্বপন ভাই বলছিলেন, ডেমোক্র্যাট নেতারা বক্তৃতায় সিনেটর রহমানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন। অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম দিনগুলো কতটা অনটন আর সংগ্রামে কেটেছে, সেখান থেকে তিনি কেবল জনপ্রিয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই হননি, ব্যবসা–বাণিজ্যেও সফল হয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীকে ৩৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে কানেটিকাটে ৫০ বছরে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছেন তিনি। সিনেটর রহমানের জীবনসংগ্রাম ও সাফল্যকে মূলধারার রাজনীতিকরা অভিবাসীদের সাফল্য হিসেবে দেখাতে পছন্দ করেন।
সিনেটর রহমান নিজে কথা বলার চেয়ে যেন শুনতেই চাইলেন বেশি, বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আগ্রহ আর টানটা চেপে রাখতে পারলেন না। পরের দিন তাঁর বাসায় আমন্ত্রণও জানালেন।
স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সিনেটর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎটা আমার জন্য চমৎকার এক অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও তিনি পশ্চিমা সংস্কৃতির সৌজন্য এবং ভদ্রতা পুরোটাই আয়ত্ত করেছেন, আবার বাঙালিয়ানার একটুও যেন ছাড়েননি। অনুষ্ঠানে আসার পথে স্বপন ভাই একটি ভবনের সামনে গাড়ি থামিয়েছিলেন, সেটি সিনেটর রহমানের কমিউনিটি অফিস—যার নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ভবন। ভবনের ভেতরে একপাশে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন, অপর পাশে কানেটিকাটের রাজ্য সংসদ ভবনের ছবি দিয়ে সাজিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর শেকড় বাংলাদেশকে একসূত্রে গেঁথে রেখেছেন সিনেটর রহমান।
অনুষ্ঠানে তিনি যতক্ষণ ছিলেন, গান শুনতে শুনতে নিচু গলায় আমরা কথা বলেছি, সেই কথাবার্তায় সিনেটর রহমান নিজেকে নয়, আমিই যে গুরুত্বপূর্ণ সেটিই প্রকাশ করেছেন সারাক্ষণ। চলবে....