অসহ্য–৪র্থ পর্ব
তৃতীয় পর্বের ধারাবাহিকতায়...
আমি দীর্ঘক্ষণ ড্রয়িংরুমে একাকী বসে আছি। শপিং থেকে ফিরে আসার পর আমার শাশুড়ি ছাড়া আর কেউই আমার সামনে আসেননি। তবে উনি এখন রান্নাঘরে রাতের খাবার তৈরি করায় ব্যস্ত। শ্বশুরমশাই আমার উল্টাপাল্টা কথার মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে বেডরুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। আমি একবার উনার দরজায় টোকা দিয়েছিলাম। উনি ভেতর থেকে চিৎকার করে বললেন,
—তুই দরজা ভাইঙা ফেললেও আমি দরজা খুলব না।
একবার ভেবেছিলাম নিতুর রুমে যাই। কিন্তু পরে আর সাহস হয়নি। তবে আমি না গেলেও, ভেবেছিলাম নিতু একবার হলেও এসে আমার খোঁজখবর নেবে। কিন্তু সে আসেনি। বুঝতে পারছি নিতু এবার ভালোই রাগ করেছে। সে সম্ভবত এবার আর বাসায় ফিরবে না।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো এভাবে বসে থেকে কোনো লাভ হবে না। তার চেয়ে বরং কাউকে কিছু না বলে চলে যাই। সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। দরজার দিকে পা বাড়াব ঠিক তখনই জুলেখা বেগম ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন।
—ভাইজান চলেন, নিতু খালা আপনারে ডাকতাছে।
—সে কোথায়?
—উনার রুমে। সঙ্গে মিতু খালাও আছে। চলেন।
—আচ্ছা খালা বাসার দা-বঁটিগুলো কোথায়?
—ক্যান, ওগুলা তো রান্নাঘরে। দা-বঁটি দিয়া আপনি কী করবেন?
—আমি আর কী করব? আমি আসলে বোঝার চেষ্টা করছি, নিতুর কাছে দা-বঁটিজাতীয় কিছু আছে কি না।
—হের কাছে দাও-বঁটি থাকব ক্যান? হেই কি রান্না করে? রান্না করি আমি। দা-বঁটি থাকব আমার কাছে।
—খালা শোনেন, তাহলে আপনাকে আসল কথাটা খুলে বলি। নিতু বাসা থেকে আসার পর আমাকে ফোন করে জানাইছে, আমি যদি তার সামনে আসি, তাহলে সে আমারে বঁটি দিয়া কোপ দেবে। তাই এই বিষয় নিয়ে আমি খুবই টেনশনে আছি। আমি শিওর সে এরইমধ্যে দা-বঁটি কিছু একটা এনে রুমে লুকিয়ে রেখেছে। আমি ওই রুমে যাওয়া মাত্রই সে আমাকে কোপানি শুরু করবে। এই মেয়ের মাথায় সিট আছে।
—কথা সত্য। নিতু খালা কোপ দেওয়ার মতো মাইয়া। আমি এমন রাগী মাইয়া আর দেহি নাই। তয় নিতু খালার মাথায় কুনু সমস্যা নাই। সমস্যা হচ্ছে বড়টার মাথায়।
—আপনি কি মিতু আপার কথা বলতেছেন?
—হ। হেই তো সারাক্ষণ নিতু খালারে উল্টাপাল্টা বুদ্ধি দেয়। যখনই নিতু খালা আমনের সঙ্গে রাগ করে এ বাসায় আহে। ঠিক তখনই মিতু আপাও চইলা আসে। আসার পর থেকে আমনেরে কেমনে চিপা মাইর দেওন যায়, হারাক্ষণ নিতু খালারে হেই বুদ্ধি দেয়।
—আমারও তাই ধারণা। খালা শোনেন, যতই ডাকুক আমি ওই রুমে একাকী যাব না।
—চলেন কুনু সমস্যা নাই। আমি আমনের লগে আছি। আমি আমনের বুডি গার্ড।
—আপনি আমার বডিগার্ড? খালা, আপনার এই হালকাপাতলা শরীর নিয়া আপনি কীভাবে আমাকে রক্ষা করবেন?
—ভাইজান আমনে দুই মিনিট বহেন। আমি একটু আইতাছি।
এ কথা বলে জুলেখা খালা দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। ঠিক ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের মাথায় একটা রড আর একটা বাঁশ নিয়ে তিনি রুমে ঢুকলেন। রুমে ঢুকেই আমাকে বাঁশ আর রডটি দেখায়ে বললেন,
—ভাইজান চলেন। আর ভয় নাই। মাল লইয়া আইছি। এখন কন আমনে কোনটা নিবেন?
—আমি কোনটা নেব মানে? এগুলো আপনি কই পাইলেন? আর এগুলা দিয়া কী করবেন?
—এগুলা নিচে আমাগো ড্রাইভার কামাইল্লার রুম থেকে আনছি। আর এগুলো দিয়া কী করমু? হুনেন যদি হেরা দুই বোনে আমনের ওপর কিছু করতে চায়। তাহলে আমি আর আমনে হেগো ওপর এই দুইটা নিয়া ঝাঁপায়ে পড়ুম।
—জুলেখা খালা, আমার জন্য আপনার ভালোবাসা দেখে আমার চোখে জল চলে আসছে। ইচ্ছে হচ্ছে আপনারে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করি।
—মনে যখন চাইছে অবশ্যই কানবেন। তবে তার আগে চলেন দুইটারে একটু মাইরা আহি। এহন কন কোনটা নেবেন। রড না বাঁশ? এক কাজ করেন আমনে রড নেন। আমি বাঁশ নিমু। বাঁশ দিয়ে মাথায় বাড়ি মারার মজাই আলাদা।
এ কথা বলে জুলেখা খালা আমার হাতে রড ধরায়ে দিলেন। আমরা দুজন একসঙ্গে নিতুর রুমে ঢুকলাম। দুই বোন বিছানায় বসে কথা বলছিল। আমাদের ওই অবস্থায় দেখে নিতু ভুরু কুঁচকে বলল,
—ঘটনা কী? তোমার হাতে রড কেন?
আমি কী বলব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভয়ে থতমত খেয়ে বললাম,
—ভাবছি এখন থেকে সব সময় একটা লোহার রড সঙ্গে রাখব।
—কেন!
—কারণ, লোহা খুবই দরকারি জিনিস। লৌহ আকরিক পৃথিবীর ভূত্বকের চতুর্থ সর্বাধিক সাধারণ উপাদান। লোহা ইস্পাত উৎপাদনে অপরিহার্য। লোহা ছাড়া আধুনিক বিশ্ব কল্পনাও করা যায় না। মানবদেহের জন্যও লোহা দরকারি। এটার অভাবে মানুষের শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রতিটা মানুষের সঙ্গে একটা করে লোহার রড রাখা দরকার।
নিতু-মিতু দুই বোনই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। এরপর আমি খালার দিকে তাকিয়ে বললাম,
—খালা এবার আপনি আপনার বাঁশের উপকারিতা বলেন।
খালা দুই বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—বাঁশ খুবই দরকারি জিনিস। মানুষের মাথায় বাড়ি মারোনের জন্য বাঁশের ওপরে আর কোনো জিনিস নাই।
এরপর খালা আমার দিকে তাকায়ে বলল,
—ভাইজান আপনি ডরান ক্যান? রড দিয়া আমনে কী করবেন, সেই আসল কথা হেগোরে কইয়া দেন।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে জুলেখা খালা নিজে থেকেই বলা শুরু করলেন,
—শোনেন খালারা, আমি এহন ভাইজানের বুডিগার্ড। তাই আমনেরা সাবধান। যদি কেউ ভাইজানের গায়ে হাত দেন। তাইলে আমনেগো রক্ষা নাই। আমি ভাইজানের ইশারার অপেক্ষায় আছি। ভাইজান আমারে ইশারা দেওনের সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশ দিয়া আমি আমনেদের দুজনের মাথায় বাড়ি মারুম।
দুই বোন খালার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ড পর মিতু আপা নিতুকে বলল,
—তোর জামাইয়ের মাথা তো আগের থেকেই খারাপ, এখন তো দেখি খালার মাথাও নষ্ট করে ফেলছে।
নিতু খালার দিকে তাকিয়ে বলল,
—খালা আপনি বাঁশ নিয়ে আপনার রুমে চলে যান।
—আমি তো আমনের কথায় যামু না। ভাইজান আমার ওস্তাদ। আমি উনার হুকুম ছাড়া এক পাও নড়ুম না।
নিতু এবার আমার দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,
—তুমি তোমার দেহরক্ষীকে রুম থেকে যেতে বলো।
—উনি থাক না। সমস্যা কি?
—রানা, আমি তোমাকে বলেছি উনাকে যেতে বলতে।
আমি খালাকে বললাম।
—খালা আপনি যান।
—জি ওস্তাদ।
খালা বের হয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে নিতু খালাকে ডেকে বলল,
—খালা আপনার ওস্তাদের কাছ থেকে রডটাও নিয়া যান।
খালা আমার হাত থেকে রড নিয়ে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। খালা চলে যেতেই মিতু আপা বলল,
—তোমারে না নিতু এই বাসায় আসতে মানা করছে? তাও তুমি কেন আসছ?
আমি মিতু আপার কথার কোনো জবাব না দিয়ে নিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—নিতু আমি কি তোমার সঙ্গে একা একটু কথা বলতে পারি?
—নিতুর সঙ্গে তোমার গোপন কি এমন কথা, যেটা আমার সামনে বলা যাবে না? যা বলবা আমার সামনে বলো।
—আপা আসলে নিতুর রাগ ভাঙানোর জন্য গত রাতে আমি ইউটিউব থেকে একটা বেলি ড্যান্স শেখেছি। ভাবছিলাম সেই নাচটা এখন নিতুকে একটু নেচে দেখিয়ে রাগ ভাঙাব। কিন্তু আপনি সামনে থাকলে তো নাচটা দেখাতে পারব না। আমার আবার শরমটা একটু বেশি।
—নিতু তুই দেখলি? আমি তোর বড় বোন। অথচ তোর জামাই আমার সামনে কীসব অশ্লীল কথা বলছে।
নিতু কিছু বলতে যাবো, এ সময় আমার শাশুড়ি রুমে প্রবেশ করলেন। আমাকে বললেন,
—বাবা আসো, তোমার শ্বশুর সবাইকে ডিনার খেতে ডাকছে।
এ কথা বলে, উনি আমাকে সঙ্গে করেই রুম থেকে বের হয়ে এলেন। রুম থেকে বের হয়েই ফিসফিস করে বললেন,
—জুলেখা গিয়ে আমাকে বলল, দুই বোন মিলে নাকি তোমারে কুচি কুচি করে কাটতেছে। তাই তোমারে ওই দুই বিচ্ছুর কাছ থেকে কৌশলে বাঁচায়ে নিয়া আসলাম।
বলেই উনি মুখ চেপে হাসতে লাগলেন। উনার কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম, তুমি আমার খালা নও, তুমি আমার শাশুড়ি নও। তুমি আমার মা।
ইতিমধ্যে দুলাভাই মানে মিতু আপার জামাই বাসায় চলে এসেছেন। আমরা সবাই মিলে ডিনারের জন্য খাবার টেবিলে বসলাম। তিন দিন বিরতিহীনভাবে নুডুলস খাওয়ার পর টেবিলভর্তি আমার প্রিয় সব খাবার দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। মনে মনে বললাম, আজ পেট ফাটায়ে খাব।
শাশুড়ি আম্মা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন। ঠিক সে সময় নিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—তাড়াতাড়ি খেয়ে বাসায় যাও। রাত অনেক হয়ে গেছে।
—ঠিক আছে যাচ্ছি।
শাশুড়ি আম্মা বলে উঠলেন,
—এত রাতে ও কোথাও যাবে না। ও এখানেই থাকবে।
এবার নিতু খুব দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
—মা শোনো, আমি তোমাকে সাফ সাফ একটা কথা বলি। আমি আর ওই সংসারে ফিরছি না। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, এই রকম পাগলের সঙ্গে সারাজীবন থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বিয়ে করতে চাইনি, তুমি জোর করে বিয়ে দিয়েছো। মেনে নিয়েছি। গত ৯ মাস সংসার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি আর এই পাগলের ভার আমার মাথায় নিতে পারছি না।
—নিতু তোমার মাথায় আমার ভার নিতে পারছ না মানে? এটা তুমি কী বললা? আমি তো জীবনেও তোমার মাথায় বসিনি।
—দেখলা মা, কোন কথার কোন অর্থ করল। এরপরও বলবা সে সুস্থ?
সবাই চুপ করে রইল। এ সময় আমি নিতুর দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে বললাম,
—নিতু দেখ, এই দুনিয়ায় আমার কেহ নাই। আমি একজন এতিম মানুষ।
—শোনো বারবার এ কই কথা বলে আমাকে ব্লাকমেইল করবা না। এবার আর কোনো ব্লাকমেইলে কাজ হবে না।
—আমি তোমাকে ব্লাকমেইল করছি না। আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করছি। বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে আজ প্রায় ২০ বছর। একটা মাত্র বোন সেও থাকে আমেরিকায়। সে আমাকে বারবার তার কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। অথচ আমি যাচ্ছি না শুধু তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য আমি এই দেশে পড়ে আছি।
আমি করুন স্বরে কথাগুলো বলে সবার দিকে তাকালাম। ভাবলাম আবেগে হয়তো সবার চোখ জলে ভিজে যাবে। কিন্তু তাকিয়ে দেখলাম কারও চোখে পানি নাই। সবাই হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
—আপনারা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকায়ে আছেন কেন?
মিতু আপা বলল,
—মা শুনছ, তোমার বোনের ছেলের কথা শুনছ? এই পাগলে এসব কী বলে?
আমার শাশুড়ি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন,
—বাবা তোর সমস্যা কী? তুই উল্টাপাল্টা এগুলা কী কস? তোর বোন আমেরিকা থাকে মানে? তোর তো কোনো ভাইবোন নাই। আর তোর মা মরছে কথা সত্য। কিন্তু সেটা তো ২০ বছর আগে না। মাত্র দেড় বছর আগে। আর তোর বাবা থাকে গ্রামে। তুই তারও বললি মৃত। এগুলো কোনো কথা?
—নিতুর মা শোনো, আমার ধারণা নিতু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা কেউ এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। একমাত্র তুমি জোর করে তোমার বোনের মাথামোটা ছেলের সঙ্গে আমার এত সুন্দর মেয়ের বিয়ে দিয়েছ, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি নিতুকে আবার বিয়ে দেব।
—আব্বা শোনেন, আপনার যদি শখ হয় আপনি আবার বিয়া করেন। দরকার পড়লে মিতু আপারে আবার বিয়ে দেন। যদি তারপরও আপনার বিয়ে খাবার শখ না মেটে। তাহলে আপনি আম্মারে বিয়া দেন।
—ওই বেয়াদব, তুই এসব কী বলিস? থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেব।
—মারতে ইচ্ছে হলে মারবেন। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আপনি আমার স্ত্রীকে আবার কেন বিয়ে দেবেন? ফাজলামি পাইছেন?
—দেখো তোমার বোনের ছেলের মুখের ভাষা দেখো। কত বড় বেয়াদ্দব। শ্বশুরের সঙ্গে কেউ এভাবে কথা বলে?
—আব্বা আপনি আমার বউকে আবার বিয়ে দিয়ে দেবেন আর আমি কি আপনার সঙ্গে মধুর ভাষায় কথা বলব? প্রশ্নই আসে না। বউই যদি না থাকে তো আমি শ্বশুর দিয়া কি করব?
এ সময় জুলেখা খালা আমাকে সমর্থন করে বললেন,
—ভাইজান আপনি সঠিক কথা বলছেন? আমি আমনের লগে আছি।
মিতু আপা খালাকে বললেন,
—খালা আপনার একটা জিনিস তো আমি ঠিক বুঝলাম না।
—কী বুঝেন নাই কন, বুঝাইয়া দেই।
—আপনি সব সময় রানাকে খালু খালু বলতেন। খেয়াল করলাম আজ আপনি সেই তখন থেকে ভাইজান ভাইজান করছেন। সমস্যা কী?
—কারণ আছে কওন যাইতো না। আমার শরম করে।
—না বলতে তো আপনাকে হবেই।
এ সময় আমার শ্বশুরমশাই ভরাট গলায় বললেন,
—জুলেখা কাহিনি কি? তুমি ওরে ভাইজান কেন বলতেছ?
—ভাইজান আজকে আমারে নীল পরী কইছে। কইছে আমারে নাকি দেখতে পরীর মতো লাগে। এটা হুনার পর ভাইজানের জন্য মনে একটা জায়গা হইছে।
মিতু আপা বললেন,
—মাইগড! রানা তোমার সমস্যা কী? তোমার চরিত্র তো একেবারে খতম। নিতুর কাছে শুনলাম, তুমি তোমার পাশের ফ্লাটের ভাবিকেও নাকি নীলপরী বলেছ। এখানে আবার জুলেখা খালার মতো বুড়ো একটা মহিলাকে বলতেছ নীল পরী। এসব কথা বলে কি তুমি মেয়েদের হাত করতে চাও। ছি ছি ছি....
আমার শ্বশুর ঘৃণাভরে বললেন,
—ছি ছি ছি রানা। তোমার মাথায় সমস্যা আছে জানতাম। ওটা মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার চরিত্র যে খারাপ, সেটা আমার জানা ছিল না। ছি ছি ছি...। তোমাকে আমার পরিবারের একজন ভাবতেও খারাপ লাগতেছে। রানা শোনো তোমার সঙ্গে একসঙ্গে টেবিলে বসে খেতে আমার এখন ঘৃণা লাগতেছে। প্লিজ তুমি আমার বাসা থেকে চলে যাও।
—আব্বা ভাতটা একটু খেয়ে যাই? গত তিন দিন নুডুলস খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি।
—না। তুমি এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে চলে যাবে।
তাকিয়ে দেখলাম নিতু মাথা নিচু করে বসে আছে। আমাকে সবাই এত অপমান করছে অথচ নিতু কিছুই বলছে না। না এভাবে আর বসে বসে অপমান হওয়ার কোনো মানে হয় না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর অনেক কষ্টে খাবারের লোভ সামলে, খাবার না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। ...চলবে
**আগামীকাল পড়ুন শেষ পর্ব
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]