অসহ্য-১ম পর্ব
আমার স্ত্রী আমাকে নিয়ে খুবই ঝামেলার মধ্যে আছে। তার দৃষ্টিতে আমি একজন অসহ্য টাইপের মানুষ। সে বলেই নাকি এখনো আমার সঙ্গে সংসার করে যাচ্ছে। অন্য কোনো মেয়ে হলে অনেক আগেই আমাকে ফেলে চলে যেত। তবে সে আমাকে ফেলে একেবারে চলে না গেলেও প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইবার রাগ করে বাবার বাসায় চলে যায়। আর প্রতিবারই আমি গিয়ে, সরি বলে নাকে খত দিয়ে তাকে নিয়ে আসি।
নিতুর সঙ্গে আমার বিয়ের বয়স মাত্র ৯ মাস। বাসর রাতেই নাকি সে বুঝে গেছে আমার মধ্যে ভালো কোনো গুণ নেই, যা আছে সবই বদ গুণ। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপটি হচ্ছে, আমি নাকি অতিরিক্ত কথা বলি। সহজ বাংলায় যাকে বলা হয় বাচাল। তার ধারণা, আমি বুঝে-শুনে-মেপে কথা বলতে পারি না। কোথায় কী বলতে হবে, তা নাকি আমি বুঝি না। তার মতে আমি শুধু বাচালই না, আমার মাথায়ও নাকি একটু সমস্যা আছে। যার কারণে আমি নাকি গঠনমূলক কোনো চিন্তা করতে পারি না। সে প্রায় বলে, বিয়ের আগে যদি সে এটা জানত, তাহলে নাকি সে আমাকে বিয়েই করত না। তবে আমি মনে করি আমি একজন সহজ-সরল মানুষ। যার কারণে মেপে কথা বলতে পারি না। যা মনে আসে তাই বলে দিই।
রাত একটা। শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রী নিতু আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠাল। আমি চোখ না খুলেই টেনে টেনে বললাম,
—কী হ-ই-ছে?
—উঠে বসো।
আমি চোখ বন্ধ করে একই সুরে সুরে টেনে টেনে বললাম,
—সম্ভব না। আমি এখন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ করতেছি। একটু আগে বিপক্ষের এক সৈনিক বন্দুক দিয়ে আমারে একটা গুঁতা মারছে। আমি এখন ওরে ঘুষাইতেছি। ওই বেটার নাক না ফাটায়ে আমি আজ উঠব না। কত বড় সাহস আমারে গুঁতা মারে। বদমাশ তোর হাতে বন্দুক আছে তুই গুলি কর। তুই গুঁতা মারবি ক্যান। এটা কোন ধরনের ফাজলামি?
নিতু ডান হাতের তালু দিয়ে নিজের কপালে বাড়ি মেরে বলল,
—হায় আল্লাহ, এ আমি কারে বিয়া করছি। এ তো দেখি ঘুমের মধ্যেও উল্টাপাল্টা কথা বলে।
এরপর নিতু আমার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে বলল,
—তুমি কি উঠবা নাকি আমি তোমার গায়ে পানি ঢেলে দেব?
আমি ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠে বসলাম।
—আমি তো কাহিনি বুঝলাম না। এত দরকারি স্বপ্নের মাঝ থেকে আমারে উঠিয়ে আনার কারণ কী?
—ফালতু কথা বলবা না। তোমার সঙ্গে আমার খুবই জরুরি একটি বিষয় নিয়ে কথা আছে।
—শোনো নিতু, স্বপ্নে আমি যেটা করছিলাম, সেটাও কম জরুরি না। তুমি কি বুঝতে পারছ, কতটা অপমান সে আমারে করেছে? তার হাতে বন্দুক, অথচ সে আমারে গুলি করতেছে না। সে আমারে বন্দুক দিয়ে খোঁচা মারতেছে। ভাই তুই তো যুদ্ধ করতে আসছিস।
ফাজলামি করতে তো আর আসিস নাই, তাই না? তাহলে তুই যুদ্ধ কর। তুই আমারে গুলি কর। তুই আমারে গুলি কইরা মাইরা ফেলা।
—খবরদার। বানায়ে বানায়ে উল্টাপাল্টা ফালতু কথা তুমি আমারে বলবা না। দুনিয়ার সব মেয়েরা বিয়া করে স্বামী আনে, আর আমি বিয়া করে জোকার আনছি। এটারে আমি পাগল বলব না জোকার বলব, সেটা নিয়েও আমি কনফিউজড।
—আরে তোমার কথা বাদ দাও, আমি তো নিজেই নিজেকে নিয়ে কনফিউজড। তবে একটা কথা কি জানো, আমি কিন্তু বিয়ের আগে এমন ছিলাম না। বিয়ের পর থেকে আমি কেমন জানি একটু আলাভোলা হয়ে গেছি। সম্ভবত বৈবাহিক প্রেশারটা আমি নিতে পারতেছি না। তুমি কিন্তু আমারে অনেক প্রেশারে রাখছ।
নিতু চোখ-মুখ কটমট করে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—তুমি কী বললা? আমি তোমারে প্রেশারে রাখছি? নাকি তুমি উল্টাপাল্টা কাজ করে আমারে প্রেশারে রাখছ?
আমি ঝগড়া হওয়ার ভয়ে বললাম,
—সরি। প্রেশার নিয়ে আলোচনা আমরা পরে করব। এখন তুমি তোমার জরুরি কথাটা বলে ফেলো। আমার ঘুমাতে হবে।
—ওকে। বিষয়টি আমার বান্ধবী কলিকে নিয়ে। একটু আগে...
—বিশ্বাস করো, তোমার ওই সুন্দরী বান্ধবীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি তার ফোন নম্বরও জানি না।
—আগ বাড়ায় কথা না বললে হয় না? মানুষ এত বাচাল হয় কেমনে? আগে আমি কী বলি, সেটা তো শুনবা।
—আচ্ছা বলো।
—একটু আগে ও আমাকে ফোন করে একটা পরামর্শ চেয়েছে। কিন্তু আমি ওকে কী পরামর্শ দেব, ভেবে পাচ্ছি না। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তোমার কাছ থেকে একটা ভালো পরামর্শ নিই।
আমার মাথা থেকে সব সময় ফালতু বুদ্ধি বের হয় বলে, নিতু সাধারণত আমার কাছে কখনো কোনো বিষয়ে বুদ্ধি–পরামর্শ চায় না। সেই নিতু আমার কাছ থেকে বুদ্ধি–পরামর্শ নেবে শুনেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি অতি উৎসাহে আবেগে গদগদ হয়ে বললাম,
—তুমি আমাকে এই যে সম্মান দিলা, তার মর্যাদা আমি রাখব। আমি আমার মাথার গুরুমস্তিষ্ক তথা Cerebrum–এর সব কটি কোষকে এবং মাথার প্রতিটি অংশকে কাজে লাগিয়ে তোমার বান্ধবীর জন্য মানসম্পন্ন পরামর্শ বের করব। যে পরামর্শ শুনে তুমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে আমি শতভাগ নিশ্চিত।
—তোমাকে কি আমি একটা অনুরোধ করতে পারি?
—না, পারো না।
—কী বললা?
—আরে তুমি আমার স্ত্রী। তুমি আমাকে অনুরোধ করবা কেন? তুমি আমাকে আদেশ করবা।
—না, তোমারে আমি অনুরোধই করি। শোনো আমি এখন তোমাকে যা বলব, সেটা মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শুনবা। কোনো আজাইরা প্যাচাল পাড়বা না। উল্টাপাল্টা যুক্তি দিবা না। সব শুনে তারপর ভালো একটা পরামর্শ দিবা।
—অবশ্যই। আমি তোমাকে গঠনমূলক পরামর্শই দেব। আমার পরামর্শ শুনে তোমার মনে হবে, বিশিষ্ট কোনো দার্শনিক তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছে। এই লেভেলের পরামর্শ তুমি জীবনেও পাওনি। আমার সব পরামর্শ…
—তোমাকে আমি কম কথা বলতে বলেছি।
—সরি।
—আজ আমার বান্ধবী কলির জন্মদিন ছিল। কিন্তু ওর স্বামী কেক-টেক আনা তো দূরের কথা, জন্মদিনে উইশও করেনি। কলি এতক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে বসে ভাবছিল হয়তো ওর স্বামী হুট করে সারপ্রাইজ দিয়ে জন্মদিনের জন্য কিছু করবে। কিন্তু রাত ১২টা বাজার পরও তেমন কিছু না ঘটার কারণে কলি পুরাই হতাশ।
—এখানে হতাশার কী আছে তা তো বুঝলাম না। সে কি পোলাপাইন, যে জন্মদিনের কেক খাওয়ার জন্য ছটফট করছে?
নিতু ভুরু কুঁচকে বলল,
—কী বললা তুমি?
—সরি। হতাশ তো হবেই। জন্মদিন বলে কথা। ফাইজলামি নাকি?
—একটু আগে কলি বেডরুমে গিয়ে দেখে রফিক ভাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। এটা দেখে ওর মেজাজ আরও গরম হয়ে গেছে।
—আমি বুঝলাম না, তোমার বান্ধবী রফিক সাহবের বেডরুমে ঢুকেছে কেন? শোনো আমি এক শ ভাগ শিওর তোমার বান্ধবীর ভেতরে সমস্যা আছে।
নিতু বেশ কিছুক্ষণ আমার চোখের দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল। তারপর শান্ত কণ্ঠে বলল,
—শুন বদমাশ, ঠিক এই জন্যই আমি তোর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে কখনো আলোচনা করি না। সব সময় ফান করতে হবে কেন? সব সময় ফান করাটাও একটা অসুস্থতা।
—আচ্ছা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। রফিক সাহেব ঘুমাচ্ছেন সেই কারণে কলির মেজাজ গরম, নাকি উনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন, সেই কারণে মেজাজ গরম?
নিতু আবার চোখ গরম করে আমার দিকে তাকাল।
—তুমি এভাবে তাকাচ্ছ কেন? আমি তো সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করছি। সমস্যা না বুঝলে আমি পরামর্শ দেব কীভাবে?
—থাক ভাই, মাফ চাই। তোমার পরামর্শ আমার লাগবে না।
—আরে রাগ করো ক্যান? দাঁড়াও পরামর্শ দিচ্ছি। এক কাজ করো। তোমার বান্ধবীকে বলো, ঘুমন্ত রফিক সাহেবের নাকে জোরে একটা ঘুষি মারতে। যাতে নাক ফেটে রক্ত বের হয়। যদি এক ঘুষিতে রক্ত বের না হয়, তাহলে তারে বলবা রক্ত বের না হওয়া পর্যন্ত বেটারে ঘুষাইতে। বেটা ফাজিল, স্ত্রীর জন্মদিনে ঘুমায়।
নিতু আবারও চোখ-মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি নিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললাম,
—শোনো, আমার ধারণা রফিক সাহেবের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে। যে কারণে স্ত্রীর প্রতি তার টান, মায়া, ভালোবাসা কমে গেছে। আর এই পরকীয়ার কারণেই তিনি স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন।
—ভাই রে আমি তোমার কাছে মাফ চাই। তোমারে ঘুম থেকে ডেকে উঠায়ে আমি চরম অন্যায় করে ফেলছি। তুমি ঘুমাও। তোমার পরামর্শ আমার লাগবে না।
—এভাবে বলছ কেন? বুঝছি ঘুষি মেরে নাক ফাটানোর বুদ্ধি তোমার পছন্দ হয় নাই। কোনো সসস্যা নাই। আমি তোমাকে নতুন একটা পরামর্শ দিচ্ছি। তোমার বান্ধবীকে বলো, ঘুমন্ত রফিক সাহেবকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিতে।
—বিছানা থেকে ফেলে দেবে মানে!
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
—ফেলে দেবে মানে ফেলে দেবে। এমনভাবে ফেলে দেবে, যাতে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড্ডি ভেঙে যায়। শোনো ওই বেটার স্ত্রীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানোর কোনো অধিকার নেই। ও এখন থেকে রান্নাঘরে ঘুমাবে। কী সাহস তার, স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যায়। আমার মাথায় ঢোকে না, এসব মানুষ কেন বিয়ে করে? আরে বাবা, তুই যদি স্ত্রীর জন্মদিন মনে রাখতে না পারিস তাহলে বিয়ে করার কী দরকার?
দেখলাম নিতু কিছু না বলে, একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিতুকে কাঁচুমাচু হয়ে বললাম,
—যদি অনুমতি দাও তো আমি এখন একটু ঘুমাই?
নিতু কিছু না বলে একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি মৌনতা সম্মতির লক্ষণ মনে করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার একটা ভালো দিক হচ্ছে আমি খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারি।
আমি গভীর ঘুমে। এ সময় কে যেন আমাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিল। আমি হতভম্ব হয়ে ফ্লোরে শুয়ে থেকেই বিছানায় বসা নিতুর দিকে তাকালাম। তারপর অবাক কণ্ঠে বললাম,
—এটা কী হলো?
—কেন, তুমিই তো বললা বিছানা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে।
—আমি তো বলছি রফিক সাহেবকে ফেলে দিতে। রফিক সাহেবের অপরাধে তুমি আমারে ফেলে দেবা কেন? আমার অপরাধ কী?
—অপরাধ তোমার না। অপরাধ আমার। না হলে কি তোমার মতো মানুষকে আমি বিয়ে করি?
আমি ফ্লোর থেকে উঠে এসে বিছানায় নিতুর পাশে বসলাম। নিতুর হাত ধরে রোমান্টিকভাবে তার চোখের দিকে তাকালাম। তারপর আবেগমাখা স্বরে বললাম,
—বুঝতে পারছি বান্ধবীর জন্য তোমার মন খুব খারাপ।
আমি নরম স্বরে বললেও সে চিৎকার করে উঠল।
—আমার মন খারাপ না। আমার মনে অনেক আনন্দ। আনন্দে এখন আমার নৃত্য করতে ইচ্ছা হচ্ছে।
—তাই নাকি! এটা তো খুবই ভালো ইচ্ছা। চলো দুজনে মিলে একসঙ্গে নৃত্য করি। দাঁড়াও তার আগে একটা গান ছাড়ি। তা কি গানের সঙ্গে নাচবা? বাংলা, হিন্দি নাকি ইংরেজি? তবে আমার মনে হয় বাংলা গানই ভালো হবে। একটা গান আছে না, ‘ওরে দুষ্টু পোলাপাইন।’ ওই গানটা ছাড়ি?
ওই তুই কি আমার সঙ্গে ফাজলামি করোস?
—ফাজলামি করব কেন? আমি সিরিয়াস।
নিতু আমার দিকে আগুন চোখ নিয়ে তাকাল। আমি ভয় পেয়ে বললাম,
—আরে বাবা, রফিক সাহেবের রাগ তুমি আমার ওপর ঝাড়ছ কেন? তোমার ভাবে তো মনে হচ্ছে জন্মদিন তোমার বান্ধবীর না, তোমার।
—হা বদমাশ, জন্মদিন কলির না, জন্মদিন আমার। তোর কত বড় সাহস, তুই আমার জন্মদিন ভুলে গেছিস।
মাই গড, আজ নিতুর জন্মদিন? আর আমি একদম ভুলে বসে আছি? উইশ না করেই ঘুমাচ্ছি? ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম রাত একটা সাত বাজে। ওর রাগ কমানোর জন্য বললাম,
—আরে ভুলিনি। আমার জানের জন্মদিন কি আমি ভুলতে পারি? আমার সব মনে আছে। আসলে তোমাকে রাগানোর জন্য ঘুমের ভান করে এতক্ষণ শুয়ে ছিলাম। দেখলাম তুমি কতটা রি–অ্যাক্ট করো। শোনো তোমার জন্মদিন তো মাত্র শুরু হলো। তুমি শুধু দেইখো কাল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমি আর কী কী করি। কাল সারা দিন এ শহরে শুধু তোমার জন্মদিনের উৎসব চলবে।
এরপর নিতুর দুটো হাত ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে, সুর করে গেয়ে উঠলাম,
—হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার নিতু, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
দেখলাম সে ভুরু কুঁচকে চোখ-মুখ খিঁচে কেমন করে তাকিয়ে আছে। আমি মিনমিন করে বললাম,
—এখনো এভাবে তাকায়ে আছ কেন? আমি তো এইমাত্র তোমাকে বার্থডে উইশ করলাম।
—তোর উইশের গুষ্টি কিলাই। বদমাশ বেটা, আমার জন্মদিন আজ না গতকাল ছিল। রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা শেষ হয়ে গেছে।
—বলো কী! কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। আমি অফিস থেকে এসেছি সেই বিকেল বেলা। এতক্ষণ বলোনি কেন? তাহলে তো সেলিব্রেট করতে পারতাম।
—দেখলাম তুমি কী করো। শোনো একটু আগে না তুমি বললা, যারা স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যায়, তারা আসলে পরকীয়ায় মগ্ন।
—নিতু বিশ্বাস করো পাশের বাসার নিলা ভাবির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।
—এই তুমি নিলা ভাবির কথা তুললা ক্যান? আমি কি একবারও ওনার নাম বলছি?
—না, তা বলোনি। কিন্তু যেহেতু উনি সুন্দরী এবং আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। তাই আমি ভাবলাম তুমি হয়তো তাকে নিয়ে আমাকে সন্দেহ করতে পার।
—শোনো, আগ বাড়িয়ে বলদের মতো কথা বলে নিজের বিপদ ডেকে আনবা না। নিলা ভাবি কেন, কারও সঙ্গে তোমার পরকীয়ার কথা আমার কল্পনাতেও ছিল না। কিন্তু এখন তুমি ওনার কথা বলে আমার মনে একটা সন্দেহ ঢুকাই দিলা।
এরপর নিতু আমার দিকে একটা বালিশ ছুড়ে দিল। আমি সেটা ক্যাচ ধরলাম। তারপর সে দৃঢ়ভাবে বলল,
—যাও রান্নাঘরে গিয়ে ঘুমাও।
—মানে কী!
—কেন, তুমিই তো বললা, যেসব স্বামী স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে যায়, সেই সব স্বামীর স্ত্রীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানোর কোনো অধিকার নেই।
—কিন্তু আমাদের রান্নাঘর তো ছোট।
—তাহলে ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঘুমাও।
—তুমি কি সিরিয়াস!
—অবশ্যই।
আমি আর কিছু না বলে বালিশ নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে রওনা হলাম। চলবে...
**আগামীকাল পড়ুন এর দ্বিতীয় পর্ব
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]