অসহ্য–৩য় পর্ব

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

দ্বিতীয় পর্বের ধারাবাহিকতায়...

নিতু বাসা ছেড়ে চলে গেছে আজ তিন দিন। এই তিন দিন খাওয়াদাওয়া নিয়ে অনেক সমস্যায় আছি। কারণ, আমি রান্না করতে পারি না। অবশ্য একদম পারি না বললেও ভুল হবে। আমি শুধু একটা রান্নাই পারি। দুই মিনিটের নুডলস রান্না। খুবই সহজ কাজ। গরম পানিতে নুডলস আর মসলা ছেড়ে দিয়ে, দুই মিনিট পর নামিয়ে ফেলি। কিন্তু গত তিন দিন তিনবেলা নুডলস খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি। এখন নুডলস দেখলেই কেমন জানি ভয় লাগছে। হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমার অ্যাসিডিটি আছে।

নিতু বাসা থেকে রাগ করে চলে গেলে সাধারণত আমিই গিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু এবার যেতে পারছি না। কারণ, সে আমাকে ফোনে হুমকি দিয়ে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। বলেছে আমাকে তার বাসার এক কিলোমিটারের মধ্যে দেখলে সে আমাকে বটি দিয়ে কোপ দেবে। না, এটা কথার কথা নয়। সে যখন বলেছে, তখন সে আমাকে সামনে পেলে অবশ্যই কোপ দেবে। এতে আমি শতভাগ নিশ্চিত। তাই ঝুঁকি না নিয়ে তাকে নিজে থেকেই বাসায় ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু বাসায় ফিরে আসা তো দূরের কথা, সে এখন আমার ফোনই আর ধরছে না। কল করলেই বারবার কেটে দিচ্ছে। ঠিক করলাম, পাশের ফ্ল্যাটের নীলা ভাবির বাসা থেকে ফোন করব। ভাবির বাসার দরজায় নক করার কিছুক্ষণ পর নীলা ভাবি দরজা খুলে দিলেন। তিনি একটা নীল শাড়ি পরেছেন।
—ভাবি কেমন আছেন? আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে নীল পরি।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

—তা–ই? তা আপনি কীভাবে বুঝলেন যে আমাকে নীল পরির মতো লাগছে? আপনি কি কখনো পরি দেখেছেন? হি হি হি….

—জি দেখেছি।

—তা–ই নাকি? কোথায়? হি হি হি...

—আমার স্বপ্নে। আমার স্বপ্নে প্রায়ই এক নীল পরি আসে। নীল শাড়ি আর এক পায়ে রুপার নোলক পরে আসে।

—হি হি হি.... . নোলক পায়ে না, নাকে পরে। পায়ে যেটা পরে, সেটাকে পায়েল বলে। হি হি....

—ও, তাহলে ভুল বলেছি। পরি নোলক না, পায়েল পরে আসে।

—তো পরি আসার পর কী করেন আপনারা? গল্প করেন নাকি অন্য কিছু?

বলেই ভাবি চোখ দিয়ে অদ্ভুত এক ইশারা করলেন।

—না ভাবি। আমরা শুধু কুতকুত খেলি।

—কী খেলেন?

—কুতকুত।

—মানুষ স্বপ্নে কত মজার মজার জিনিস করে, আর আপনি পরির সাথে কুতকুত খেলেন?
—জি। কারণ, কুতকুত একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলা। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি এই খেলা অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্ত করতাম। জানেন, পরি যখন দুহাতে তার শাড়িটি ধরে কুতকুত খেলতে থাকে, তখন পায়েল থেকে ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ বের হয়। আর সে সময় তার পায়েল পরা পা দেখতে খুব মিষ্টি লাগে।

—হি হি হি.....

—হাসছেন কেন?

—রানা ভাই, আপনি এত কনফিউজড কেন? ঝুমুর ঝুমুর আওয়াজ করে যেটা বাজে, সেটা পায়েল নয়। ওটাকে ঘুঙুর বলে। সাধারণত মানুষ নাচার সময় ওগুলো পরে থাকে।
—ও সরি। তাহলে পরি পায়েল না, ঘুঙুর পরে আসে।

—আচ্ছা আপনি তো আমাকে নীল পরি বললেন। তা আপনার কি এখন আমার সাথে কুতকুত খেলতে ইচ্ছা করছে? করলে আসেন, দুজন মিলে কুতকুত খেলি। হি হি হি...
—তা অবশ্য খেলা যায়। যান ঘুঙুর পরে আসেন।

—কিন্তু আমার কাছে তো ঘুঙুর নেই।

—তাহলে আজ থাক। আপনি আগে ঘুঙুরের ব্যবস্থা করেন, তারপর আমরা কুতকুত খেলব। ভাবি, আসলে আমি একটা বিশেষ প্রয়োজনে আপনার কাছে এসেছি। আমি কি আপনার ফোনটা একটু ব্যবহার করতে পারি?

—অবশ্যই। কিন্তু আপনার ফোন কোথায়? খুঁজে পাচ্ছেন না?

—না, ফোন পকেটেই আছে। আসলে নিতু তিন দিন আগে রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে। এখন আমার ফোন ধরছে না। অফিস থেকে ফোন করেছিলাম, ধরেনি। ফোন–ফ্যাক্সের দোকান থেকেও ফোন করেছিলাম, ধরেনি। ও আসলে সাধারণত অপরিচিত ফোন ধরে না। তবে আপনার ফোন ঠিকই ধরবে। তাই ভাবলাম, আপনার ফোন থেকে ফোন করি।

—কোনটা ব্যবহার করবেন? ল্যান্ডফোন নাকি সেলফোন?

—সেলফোন দিন। আমার ধারণা আপনার সেলফোনের নম্বর তার ফোনে সেভ করা আছে।

নীলা ভাবি নিজেই স্পিকার অন করে নিতুকে ফোন করলেন। দুইবার রিং হওয়ার পর নিতু কল রিসিভ করল। নিতু হ্যালো বলতেই নীলা ভাবি গলার স্বরে মাদকতা এনে টেনে টেনে বললেন,
—ভাবি, আমি নীলা। চিনতে পারছেন? আপনার পাশের ফ্লাটে থাকি।

—চিনব না কেন ভাবি? তা কেমন আছেন আপনি?

—আমি সব সময় ভালো থাকি ভাবি। ভাবি জানেন, কী হয়েছে! আজ আমি একটা নীল শাড়ি পরেছি। রানা ভাই তো আমাকে দেখে টাসকি খেয়ে গেছে। জানেন আমাকে দেখে কী বলে? বলে, ভাবি আপনাকে না নীল পরির মতো সুন্দর লাগছে। জানেন ভাবি, আমি কী যে লজ্জা পেয়েছি! এভাবে কেউ বলে নাকি বলেন! কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে না! তবে লজ্জা পেলেও রানা ভাইয়ের মুখে নীল পরি ডাক শুনে ভালো লেগেছে। আমার স্বামী কখনো এমন করে আমাকে বলে না। আমি যে সুন্দর, সেটা রানা ভাই ঠিকই বুঝতে পেরেছে।

আসলে রূপের কদর সবাই করতে পারে না ভাবি। ও, আরেকটা কথা, রানা ভাই বলেছে, উনি নাকি আমার সাথে কুতকুত খেলবে।

—কী খেলবে!

—কুতকুত।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

—তা–ই নাকি? ঠিক আছে আপনারা কুতকুত খেলেন। কোনো সমস্যা নেই। তা, রানার সাথে আপনার কখন দেখা হলো?

নিতুর গলার স্বরে বুঝতে পারছি, সে প্রচণ্ড রেগে গেছে।

—রানা ভাই তো এখন আমার বাসায়। বলেন তো, এখন ভাইকে কী খেতে দিই। বাসায় কেউ নেই, আমি একদম একা। আপনার ভাই অফিসে। সে বাসায় থাকলে দোকানে পাঠিয়ে কিছু আনিয়ে নিতাম।

—রানা এখন আপনার বাসায়?

—কেন ভাবি, বিশ্বাস হচ্ছে না? নিন, রানা ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।

বলে নীলা ভাবি আমার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলেন। আমি ফোন হাতে নিয়ে মনে মনে বললাম, কথা আর কী বলব। আপনি যা বলেছেন, তাতে আমার ডিভোর্স কনফার্ম। আমি ফোন কানে ধরে হ্যালো বলতেই। নিতু মিষ্টি গলায় বলল,
—ফোনের স্পিকার অফ করে নাও।

আমি ফোনের স্পিকার অফ করে নিলাম। নিতু কীভাবে বুঝল স্পিকার অন? আসলেই নিতু জিনিয়াস। শুধু নিতু না, মেয়েরা সবাই জিনিয়াস। আমি ফোনের স্পিকার অফ করতেই নিতু চিৎকার করে বলল,
—ওই, তুই ওই বাসায় কী করিস?

—তুমি তো আমার ফোন ধরছ না। তাই বুদ্ধি করে ভাবির বাসায় এসে তার ফোন থেকে তোমাকে ফোন করলাম।

—ভাবির হাসব্যান্ড নাকি বাসায় নাই?

—হুঁ, ঘটনা সত্য।

—ওই লুইচ্চার ঘরের লুইচ্চা, করিম ভাই বাসায় নাই, তাহলে তুই ওই বাসায় কী করছ?
—বললাম না, ফোন করতে আসছি।

—তুই কি ঘরের ভেতর?

—হ্যাঁ, আমি ড্রইংরুমে বসে আছি। ভাবি আমার পাশেই বসে আছেন। আর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি করে হাসছেন।

—লুইচ্চা, তোরে আমি সত্যি সত্যি ডিভোর্স দেব।

—জান, তুমি এগুলা কী বলো?

—চুপ কর বদমাশ।

—আমার কথাটা আগে শোনো। তারপর তোমার যা ইচ্ছা, তা–ই করবে।

—শোন, তোর সাথে এত কথার কোনো দরকার নাই। তুই ডিভোর্স লেটারে সই করার জন্য কলম খুলে অপেক্ষা কর।

বলেই নিতু ফোন কেটে দিল। আমি ভাবির দিকে তাকিয়ে বললাম,
—রাগ করে লাইন কেটে দিয়েছে।

—কেন?

—এই যে বললাম আপনি আমার পাশে সোফায় বসে আছেন। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছেন। এ কারণেই হয়তো বা।

—আহা রে। আমি যে আপনার পাশে বসে আছি, তা বলতে গেলেন কেন? উনি কি আমি কোথায় বসেছি, তা জিজ্ঞেস করেছিলেন?

মনে মনে বললাম, সব তো আপনিই বলে দিলেন। আমি আর কী বললাম! আপনি তো দেখি আমার চেয়ে বড় বাচাল। কিন্তু মুখে বললাম,
—না, তা করেনি। নিজে থেকেই বললাম। আসলে আমি একটু বাচাল আছি। খামাকা বেশি কথা বলি আর বিপদে পড়ি।

—তা–ই তো দেখছি। রাগ ভাঙাতে গিয়ে আরও বেশি রাগিয়ে দিলেন। তা এখন কী করবেন? এক কাজ করেন, আপনি বরং ভাবির কাছে চলে যান। গিয়ে ভাবিকে নিয়ে আসেন। কয়েক দিন পর তো কোরবানির ঈদ।

—তা–ই যাব ভাবছি।

বিকেলে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম। বেল বাজানোর একটু পরই বাসার সাহায্যকারী জুলেখা বেগম দরজা খুলে দিলেন। আমি মধুর কণ্ঠে বললাম,
—কেমন আছেন জরিনা বেগম?

—খালু, আমি জরিনা বেগম না, আমি জুলেখা বেগম।

—সরি জুলেখা বেগম। তা আপনি কেমন আছেন? আপনাকে কিন্তু আজ পরির মতো লাগছে। নীল পরি।

—সেইটা আমি জানি ভাইজান। আমারে সব সময় পরির মতোই লাগে। আমার বাবায় কইতো, আমি বহুত সুন্দর। আমার কাছে নাকি পরিও ফেল।

—আপনার বাবা সত্য বলতেন।

—জানেন ভাইজান, যখন আমার বয়স কম ছিল, তখন সবাই কইতো, ‘তুই সিনেমায় নাম।’ কিন্তু তখন আমার অনেক শরম ছিল, তাই সিনেমায় নামি নাই। এখন শরম কমছে। কিন্তু এখন আর বয়স নাই। আফসোস।

—আরে খালা, কী বলেন? আপনি এই বয়সেও অনেক সুন্দর। খালা, নিতু কি বাসায় আছে? থাকলে একটু ডেকে দেন না।

—না ভাইজান। নিতু খালা, মিতু খালা উনাগো মা–বাবার লগে মার্কেটে গেছে। ঈদের কাপড় কিনতে।

জুলেখা বেগম বয়সে বড় হওয়ার কারণে মিতু আপা ও নিতু ওনাকে খালা বলে ডাকে। সে হিসেবে আমিও ওনাকে খালা বলি। আর উনি আমাকে খালু বলে ডাকেন। কিন্তু উনি এখন হঠাৎ করেই আমাকে ভাইজান বলে সম্বোধন করছেন। আমি মনে মনে হাসলাম। সম্ভবত আমি ওনাকে নীল পরি বলার কারণেই উনি এমন করছেন।

প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর, শপিং শেষে আমার শ্বশুর আর শাশুড়ি বাসায় ঢুকলেন। আমি তাঁদের সালাম দিলাম। আমার শাশুড়ি বললেন,
—বাবা কখন আসছ?

—অনেকক্ষণ। দুই ঘণ্টার বেশি তো হবেই।

—আচ্ছা তুমি বসো। ওরা গাড়ি থেকে শপিং ব্যাগ নিয়া আসতেছে।

এরপর আমার শাশুড়ি গৃহকর্মী জুলেখা বেগমকে বললেন, নিচে গিয়ে নিতু ও মিতু আপাকে শপিং ব্যাগ নিয়ে আসতে সাহায্য করতে। জুলেখা বেগম নিচে চলে গেলেন।

আমার শ্বশুর সাধারণত আমার সাথে কথা বলতে চান না। কারণ, তাঁর মতে আমি মুখ খুললেই নাকি আমার মুখ থেকে সব অর্থহীন কথা বের হয়ে আসে। তবে তিনি আমাকে যতই এড়ানোর চেষ্টা করেন, আমি ততই তাঁকে উল্টাপাল্টা কথা বলে বিরক্ত করি। ওনার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটা টম অ্যান্ড জেরির মতো। দেখলাম আমার শ্বশুর আব্বা কিছু না বলেই দ্রুতই বেডরুমের দিকে চলে যাচ্ছেন। আমি পেছন থেকে বললাম,
—আব্বা, কখনো টয়লেট পেলে চেপে রাখবেন না। এতে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। আপনার বয়স হয়েছে। আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ বা অঙ্গ এখন আর আগের মতো বেশি চাপ নিতে পারে না। কথাটা সব সময় মনে রাখবেন।

উনি আমার কথা শেষ হওয়া মাত্রই উল্টো ঘুরে আমার সামনে চলে এলেন।

—তুমি এই কথা কেন বললে? কেন তোমার মনে হলো আমি টয়লেট চেপে রাখছি?
—আপনি যেভাবে আমার সালামের উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, তা দেখে মনে হলো, আপনি হয়তো মার্কেটে দীর্ঘক্ষণ টয়লেট চেপে রেখেছিলেন।

—বেয়াদবের মতো ফালতু কথা বলবে না। আমি তোমার শ্বশুর। আমার সাথে দুলাভাইয়ের মতো ফাজলামি করবে না।

—শ্বশুর যদি বন্ধুর মতো হয়, তাহলে ফাইজলামি করা সমস্যা না।

—আমি তোমার বন্ধু না। আমি কোনো বলদের সাথে বন্ধুত্ব করি না।

দেখলাম আমার শাশুড়ি মুখ টিপে হাসতে হাসতে বেডরুমের দিকে চলে যাচ্ছেন। বেডরুমে ঢোকার ঠিক আগমুহূর্তে উনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখটিপ মারলেন। যার অর্থ হচ্ছে, চালিয়ে যাও বাবা, আমি তোমার সাথে আছি।

আমার শাশুড়ি আসলে আমার আপন খালা। আমার মা বেঁচে নেই। কিন্তু ওনার কারণে মাকে একদম মিস করি না। কেউ আমাকে বুঝতে না পারলেও উনি আমাকে বুঝতে পারেন। ঠিক যেমন মা বুঝতে পারতেন।

—আচ্ছা আব্বা, একটা কথা বলেন তো। আপনি আমাকে দেখতে পারেন না কেন?
—একই উত্তর আমি তোমাকে বারবার দেব না। ফাজিলের ঘরের ফাজিল।
এ কথা বলেই উনি বেডরুমের দিকে চলে গেলেন।

প্রায় মিনিট পাঁচেক পর দরজা ঠেলে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে জুলেখা বেগম, মিতু আপা এবং এক অপিরিচিত লোক বাসায় ঢুকলেন। লোকটিকে আমি আগে কখনো দেখেছি কি না, মনে করতে পারছি না। তার পরনে জিনসের প্যান্ট এবং টি–শার্ট। চোখে সানগ্লাস, মাথায় নাইকির ক্যাপ। আমি মিতু আপার দিকে তাকিয়ে বললাম,
—মিতু আপা, আসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?

উনি ভুরু কুঁচকে বললেন,
—তুমি এখানে কী করো? তোমাকে না নিতু আসতে মানা করেছে? শোনো, নিতুকে আমরা আবার বিয়ে দেব। তুমি অন্য জায়গায় বিয়ের চেষ্টা করো।

ওনার কথা বলার ভঙ্গি দেখেই বুঝলাম, উনি আমার আসা পছন্দ করেননি।

—আপা, আপনারাই তো আমার আপনজন। যদি নিতুকে আবার বিয়ে দেন, তাহলে আমার জন্যও একটা মেয়ে দেখবেন। আমি আর নিতু একই দিনে একই অনুষ্ঠানে বিয়ে করে একটা ইতিহাস সৃষ্টি করব। হা হা হা...

—ফাজিলের ফাজিল, খবরদার আমার সাথে মশকরা করবি না।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বলেই উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আপাকে বললাম,
—আপা, নিতু কোথায়? আর এই ভাইয়াকে তো চিনলাম না। ইনি কি আপনার দেবর?

আপা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে চোখ কটমট করে তাকালেন। তারপর ঝাঁজের সঙ্গে বললেন,
—পাগলের গুষ্টি পাগল। তুই কখনো ভালো হবি না। তুই কখনোওও ভালো হবি না।
বলেই তিনি গটগট করে চলে গেলেন। আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—আচ্ছা ভাই, মিতু আপা রাগলেন কেন, তা তো বুঝলাম না। আমি তো শুধু বললাম, আপনি ওনার দেবর কি না? এটার জন্য কেন রাগ করবেন? হয় উনি বলবেন, আপনি ওনার দেবর, নতুবা বলবেন, আপনি ওনার দেবর না। ব্যস হয়ে গেল। মামলা ডিসমিস। তা ভাই, আপনি কে? আপনাকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে। এক কাজ করেন, সানগ্লাস আর ক্যাপটা খোলেন। দেখি চেনা যায় কি না।

ভদ্রলোক সানগ্লাসের ভেতর দিয়ে আগুনচোখে আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকালেন। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
—আমার নাম জব্বার।

এ কথা বলে ভদ্রলোক মিতু আপার মতো গটগট করে ভেতরে চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে বোকার মতো তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মাই গড, মানুষে মানুষে এত মিল হয় কেমনে? লোকটার কণ্ঠ একদম আমার স্ত্রী নিতুর মতো।
চলবে...

*আগামীকাল পড়ুন চতুর্থ পর্ব
*লেখক:
ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]