বিশ্ব ইতিহাসে গ্রাফিতি: শেষ পর্ব
গ্রাফিতির ইতিহাস অনেক পুরোনো। ঠিক কবে, কখন এর শুরু, তা বলা কঠিন। অনেকে মনে করেন পশুর হাড় দিয়ে গুহায় খোদাই করেই প্রথম গ্রাফিতি আঁকা হয়। তবে ইতালির প্রাচীন রোমে সমাধির দেয়াল, সিরিয়া, জর্ডান ও সৌদি আরবে গ্রাফিতি দেখা যায়। সে সময়ও গ্রাফিতি বেশ অর্থপূর্ণ ছিল। সেখানে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনা থাকত। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের তরুণেরা দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি গ্রাফিতি দেখা যায়। তখন আমেরিকার দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেল টেকো মাথার এক লোক দেয়াল ধরে বসে আছে। সেখানে লেখা ছিল ‘KilRoy Was HERE’। তখন আবার আমেরিকার এক জাহাজ জার্মানদের হাতে ধরা পড়ে। তাই হিটলার ভাবলেন, এটা নিশ্চয়ই আমেরিকানদের কোনো হাই ইন্টেলিজেন্সের কোড নেম। অথচ আজও অজানা এই কিলরয়ের রহস্য।
১৯৬৮ সালের এক ঘটনা। ফ্রান্সে তখন শিক্ষা ক্ষেত্রে সীমাহীন বৈষম্য। সে বছরের মে মাসের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন। শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। তারা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। বিপ্লব আরও দ্বিগুণ হয়। শিক্ষার্থীরা জীবন দেন। কিন্তু অন্দোলন থেকে ফেরেন না। একসময় সরকারের পতন হয়। দুনিয়াজুড়ে সেদিনের সফলতা ছড়িয়ে পড়ে।
এরিক ক্ল্যাপটন তখন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রক গিটারিস্ট, গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। তাঁকে মনে করা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গিটারিস্টদের একজন। সেটা ছিল ১৯৬৭ সাল। তখন লন্ডনের ইসলিংটন স্টেশনের দেয়ালে ‘ক্ল্যাপটন ইজ গড’ নামে এক গ্রাফিতি দেখা যায়। বিংশ শতাব্দীতে সেটিই ছিল নাকি বিশ্বের সেরা গ্রাফিতি।
গ্রাফিতি শিল্পীরা সাধারণত পরিচয় গোপন রাখেন। তাঁরা হলেন অন্তর্মুখী শিল্পী। ইংল্যান্ডের বাংসি ছিলেন একজন বিখ্যাত পথ গ্রাফিতিশিল্পী। তিনি রাজনৈতিক ও যুদ্ধবিরোধী গ্রাফিতির জন্য বিখ্যাত। লস অ্যাঞ্জেলস থেকে প্যালেস্টাইন পর্যন্ত তাঁর গ্রাফিতি দেখা যেত। ইসরাইলের বিতর্কিত পশ্চিম তীর নিয়ে তিনি বিদ্রুপমূলক গ্রাফিতি তৈরি করেছেন। অনেক মূল্যে তাঁর গ্রাফিতি বিক্রি হয়েছে।
গ্রাফিতি নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন, অন্যের বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে গ্রাফিতি দিয়ে সৌন্দর্য নষ্টের অধিকার কারও নেই। আবার কখনো পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়। কখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও গ্রাফিতির মাধ্যমে জানান দেয়। নেতা-নেত্রীর বন্দনায় দেয়াল ভরে ফেলে।
কলকাতার লেখক বীরেন দাশ শর্মা তাঁর ‘গ্রাফিতি এক অবৈধ শিল্প’ গ্রন্থে গ্রাফিতি নিয়ে লিখেছেন, এক অর্থে গ্রাফিতি সাহিত্য না হয়েও লেখার শিল্প, চিত্রকলা না হয়েও অঙ্কনশিল্প।
লেখক: সংগঠক ও সাংবাদিক