দেয়ালচিত্রে আবু বকর, আবরার, এহসান রফিক ও বাংলাদেশে চিকা মারা: পর্ব ৪
সেটা ছিল ২০১০ সালের এক ঘটনা। সে সময় ‘আবু বকর’ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন স্যার এফ রহমান হলে। সে বছরের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় দুই পক্ষের গোলাগুলি। তখন আবু বকর মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তারপর ৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে তাঁর গ্রাফিতি দেখা যায়।
২০১৮ সালে আবার এক ঘটনা ঘটে। তখন সলিমুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী ছিলেন ‘এহসান রফিক’। তাঁকে নির্যাতনের মাধ্যমে চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৯ সালে বুয়েটে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে রফিকের নির্যাতন ও আবরারের মৃত্যুর প্রতিবাদ দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শামসুন নাহার হলের নির্যাতন’ নিয়ে আঁকা ড্রাগন গ্রাফিতি প্রশংসা পায়। ষাটের দশকে হেলাল হাফিজের ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় কবিতা’র বিখ্যাত পঙ্ক্তি ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়...।’ প্রায় দশকের পর দশক জনপ্রিয় ছিল।
চিকা মারা: ছুঁচো প্রাণীটিকে চিকা বলে। তবে দেয়াললিখনকেও চিকা মারা বলা হয়। কিন্তু দেয়াললিখনকে কেন চিকা মারা বলা হয়, সে এক রহস্য। এ জন্য ফিরে যেতে হবে গত শতাব্দীর দেশভাগের সময়। তখন ১৯৪৭ সাল। সে বছর দেশভাগের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় পাকিস্তান। পূর্ব বাংলায় ভাষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকারের ছিল সীমাহীন বৈষম্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন জিগাগাছের ডালের আগা থেঁতলে ব্রাশ বানাত। ব্রাশের আগায় আলকাতরা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখত।
এ সময় হঠাৎ হঠাৎ টহল পুলিশ চলে আসত। তখন তারা ব্রাশ দিয়ে ঝোপঝাড়ে আঘাত করত। তখন পুলিশ জানতে চাইত যে তারা কী করছে। শিক্ষার্থীরা বলত যে হলে চিকার যন্ত্রণায় তারা থাকতে পারে না। তাই চিকা মারছে। তখন পুলিশের ব্যারাকেও চিকার উপদ্রব ছিল। তাই পুলিশ বরং ছাত্রদের চিকা মারায় খুশি হয়।
এর পর থেকে দেয়ালে কিছু লিখতে গেলেই শিক্ষার্থীরা বলত যে চিকা মারতে যাচ্ছে। এভাবে সেই পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশে চিকা মারা শব্দটি ব্যবহার হয়।