আইজুদ্দিন, সুবোধ ফিরে এস: পর্ব ৩
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ হয়ে আসছে। সে সময় কামরুল হাসান এ ধারা শুরু করেন। তারপর নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন পর্যন্ত শিল্পীরা গ্রাফিতি এঁকেছেন। দেশের যেকোনো আন্দোলনে গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা। দেয়ালে কিছু উপস্থাপন করলে মানুষকে সেটা আকর্ষণ করে। তাই প্রতিবাদের একটা অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গ্রাফিতি।
সেটা ছিল গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক। তখন ‘কষ্টে আছি আইজুদ্দিন’ শিরোনামে এক আলোচিত গ্রাফিতি ছিল। কিন্তু আজ হয়তো অনেকেই সেই আইজুদ্দিনকে ভুলে গেছে। সে সময় পুরান ঢাকার দেয়ালে, নীলক্ষেত, দোয়েল চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সীমানাপ্রাচীরসহ বিভিন্ন জায়গায় ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দিন’ দেখা যেত। অন্য জেলায়ও আইজুদ্দিনের কষ্ট ছড়িয়ে ছিল।
এখনো পার্কের বেঞ্চে, গাছের গায়ে লেখা থাকে ‘অমুক+অমুক। অথবা টাকার ওপর লেখা থাকে ‘তোমারে ভুলি নাই’। এই সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় তিন দশকের বেশি আগে কষ্টে জীবন কাটানো আইজুদ্দিনদের কষ্ট বোঝা কঠিন। অনেকে খোঁজ করেছেন কে এই আইজুদ্দিন? কেন তিনি কষ্টে আছেন? তাঁর কিসের কষ্ট? খাওয়ার, অর্থের, বেকারত্বের, নাকি প্রিয়জন ছেড়ে যাওয়ার? নাকি তিনি একজন কষ্টবিলাসী শিল্পী! গ্রাফিতি শিল্পীরা রহস্যময়। তাঁদের প্রায় কোনো কিছুই জানা যায় না।
এরপর চলে যায় অনেক অনেক দিন। সেটা ২০১৭ সালের কথা। তখন একদিন মিরপুরের দেয়ালে দেয়ালে ‘সুবোধ’ নামে একের পর এক গ্রাফিতি দেখা যায়। অনেকে মনে করেন সুবোধই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রাফিতি। এটা এত জনপ্রিয় হয় যে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সুবোধের গ্রাফিতি দেখা যায়। অনেকের প্রোফাইল ও গেঞ্জিতেও ‘সুবোধ’ ছিল। এর ভাষা ছিল, ‘সুবোধ ভোর হবে কবে’। ‘সুবোধ তুই পালিয়ে, যা এখন সময় পক্ষে না। তোর ভাগ্যে কিছু নেই’। ‘মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে’। ‘সুবোধ এখন জেলে’ ইত্যাদি।
আজও কেউ জানে না কে বা কারা এটা এঁকেছিল। তবে সুবোধ মানুষের ভাবনার জগতে আলোড়ন তোলে। মানুষ ভাবে, কে এই সুবোধ। কেন সে পালিয়ে বেড়ায়। পালালেও নগরের দেয়ালে রেখে যায় চিহ্ন। কেন তাকে কেউ ভালো বাসে না। এত সব প্রশ্ন কে তাকে করছে। অনেকেই এর অঙ্কনশিল্পীর পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু অজানাই থেকে যায় তার পরিচিতি। গ্রাফিতি এমনই হয়। প্রশ্ন ছুড়ে দেয় বাতাসে। আর থেকে যায় মানুষের অন্তরে অগোচরে। চলবে...
*লেখক: সংগঠক ও সাংবাদিক