গ্রাফিতিতে প্রতিবাদ, দেশপ্রেম, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন: পর্ব ২

ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ (বাংলা) বইয়ে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এই গ্রাফিতি

দেশের দেয়ালজুড়ে আঁকা হচ্ছে আন্দোলনের গ্রাফিতি। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। একে স্মরণীয় রাখতেই শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগ। গ্রাফিতিতে রয়েছে তাদের রক্তের দাগ। বৈষম্যবিরোধী প্রতিবাদ, অভ্যুত্থানের চিত্র। রাষ্ট্র সংস্কারের কথা, বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প। দুর্নীতি, অত্যাচারের অবসান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক বাংলার দৃশ্য, অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যাশাসহ আরও অনেক কিছু। শিক্ষার্থীদের আঁকা শিল্পকর্ম নজর কেড়েছে। প্রায় সবাই এর প্রশংসা করেছে। রক্তাক্ত জুলাইকে তারা গ্রাফিতিতে তুলে এনেছে। শহরের দেয়াল যেন আজ গ্রাফিতির ক্যানভাস।

জুলাইয়ের আন্দোলনে নানা স্লোগান ও নানা চিত্রে ভরে উঠেছিল দেয়াল। ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘পানি লাগবে পানি’, ‘গর্জে উঠেছিলাম বলেই বাংলাদেশে’, ‘বিকল্প কে আমি, তুমি আমরা’, ‘ছিনিয়ে এনেছি বিজয়, শিখিনি পারাজয়’, ‘শোনো ধর্ম আর দেশকে মিলাইতে যেও না’, ‘ফুলের নাম কি দিবা ফাতেমাচূড়া?’, ‘রক্তাক্ত জুলাই’, ‘আপনি প্লিজ উত্তেজিত হবেন না’, ‘আমরা গড়ব আমাদের দেশ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো জুলাই’, ‘নাটক কোরো না পিও’ ইত্যাদি শত শত স্লোগানের গ্রাফিতিতে ছেয়ে যায় বাংলাদেশ।

কেবল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ভবনের দেয়াল নয়, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রোরেল ও উড়ালসড়কের স্তম্ভসহ কোথায় নেই গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতিতে রয়েছে দুই হাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাহসিকতার প্রতীক আবু সাঈদের প্রতিকৃতি। আবু সাঈদের কত যে প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছে, এর যেন শেষ নেই। আছে মুগ্ধর প্রতিকৃতি। ‘মুগ্ধ পানি’র বোতলের গ্রাফিতিও আঁকা হয়েছে। বাংলাদেশের দেয়াল যেন রক্তাক্ত জুলাই।

আন্দোলনে আরও যাঁরা জীবন দিয়েছেন—ফাইয়াজ, তামিম, হৃদয়, ইফাজ, শুভ, শান্ত, রাসেল, সোহাগ, ফয়েজসহ অনেক শিক্ষার্থীর প্রতিকৃতি গ্রাফিতিতে এসেছে। আরও রয়েছে দারুণ সব গান ও কবিতার পঙ্‌ক্তিমালার গ্রাফিতি। ‘বল বীর বল উন্নত মম শির! শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির…’! ‘…আঁধারে ভয় পেয়ো না আলো আছে আড়ালে/ আঁধার কেটে যাবে তুমি উঠে দাঁড়ালে…’। ‘…সব মানুষের স্বপ্ন তোমার, চোখের তারায় সত্যি হোক/ আমার কাছে দেশ মানে, এক লোকের পাশে অন্য লোক…’। এমন আরও অনেক কালজয়ী গান ও পঙ্‌ক্তি।

ছাত্রদের বীরত্বগাথা এই প্রথম নয়, ১৯৫২, ’৬৯, ’৭১, এমনকি ১৯৯০ সালেও তারা প্রমাণ করেছে কীভাবে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে জয়ী হতে হয়। চলবে...

লেখক: সংগঠক ও সাংবাদিক