শহরের দেয়াল যেন গ্রাফিতির ক্যানভাস: পর্ব ১
গত বছরের ঠিক জুলাইয়ের মাঝামাঝি। বিষণ্নতায় ঢাকা পড়ে দেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভয়াবহতায় রূপ নেয়। প্রায় প্রতিদিন রক্ত ঝরে, মৃত্যু হয়। ছাত্র–জনতার আন্দোলন তীব্র থেকে আরও তীব্র হয়। দিনে দিনে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামে মানুষ। দুর্নিবার শক্তির সামনে হার মানে অন্যায়। জুলাইয়ের প্রায় প্রতিটি দিনই ছিল বিবর্ণ। একাত্তরে দেশ স্বাধীনের পর এমন জুলাই আর কোনো দিন আসেনি।
সেই চলমান আন্দোলনে একদিন ঘোষণা হয় গ্রাফিতি কর্মসূচির। দেয়াললিখন ও দেয়ালচিত্র হলো গ্রাফিতি। এর এক অদৃশ্য শক্তি আছে। গ্রাফিতিকে অনেক সময় সাধারণ কিছু মনে হয়। কিন্তু এর পেছনে থাকে এক গভীর বোধ, থাকে জীবন ও সমাজের দর্শন। এটা মানুষের অভিমতের বহিঃপ্রকাশ। এতে সূক্ষ্মভাবে সমাজের পচন, পরিণতি ও পরিত্রাণের প্রকাশ থাকে। অন্যায়, অত্যাচার ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা ঘটনা এর বিষয়।
গ্রাফিতি একধরনের বিপ্লবের প্রতীক। অবিচার ও অনিয়মের ব্যঙ্গাত্মক প্রকাশের মধ্য দিয়ে শাসককে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। কর্তৃপক্ষ যদি এসব থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা না করে, তাহলে এর প্রভাব একসময় পতনের দিকে নিয়ে যায়।
এটা যেমন নীতিনির্ধারকদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তেমনি নেতাদের গুণকীর্তনও হতে পারে। আবার কারও একান্ত কষ্টের কথাও হতে পারে।
মানুষ নানাভাবে তার ভালো লাগা ও খারাপ লাগা, অনাস্থা ও আপত্তি জানাতে চায়। তাই শিল্পী নান্দনিক আর্টের বাইরে গিয়ে নিভৃতে মনের কথা লেখেন। এটাই হলো গ্রাফিতি। গ্রাফিতির আর্ট হওয়ার দায় নেই। এটা শাসককে ধাক্কা দেয়। মানুষকে ভাবায়।
জগতের প্রায় সব দেয়ালই একজন গ্রাফিতিশিল্পীর ক্যানভাস হতে পারে।
গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশের দেয়াল হয়ে গেল শিক্ষার্থীদের গ্রাফিতির ক্যানভাস। তারা সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। কী এক অপার আনন্দে বিভোর। নিজেরা টাকা জোগাড় করছে। রংতুলি কিনছে। রং মেশাচ্ছে। দেয়াল পরিষ্কার করছে।
তারপর যা হলো, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কয়েক দিন ধরে দেশের দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আঁকতে থাকেন গ্রাফিতি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো দেশে এত গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে বলে জানা নেই। তা–ও এত অল্প সময়ে। চলবে...
*লেখক: সংগঠক ও সাংবাদিক