পিনাং থেকে ঢাকার বদলে কলকাতা: পর্ব-৪
৪ পর্বে লেখা আমার মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনির আজ শেষ পর্ব।
১৯৯০–পরবর্তী মালয়েশিয়া ছিল ঋণের ভারে জর্জরিত। ব্যাংকঋণ আর বিদেশি ঋণ নিয়ে বড় বড় বিনিয়োগ করে দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মাথাপিছু ঋণ ছিল বিস্তর। ফলে ডলারের বিপরীতে রিংগিতের মূল্য পড়ে গিয়েছিল তলানিতে। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়া একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মাহাথির বিন মোহাম্মাদ তখন আইএমএফ-এর শর্ত মেনে বড় কোনো ঋণ নেননি, দেশকে তিনি ঋণের ভারে জর্জরিত দেখতে চাননি, অথচ তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সেই ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছিল। আমার মনে হয়, সেই স্বনির্ভরতার কঠিন সিদ্ধান্ত আজ মালয়েশিয়াকে গোটা বিশ্বের কাছে প্রবল সমীহের এক সুউচ্চ অবস্থানে নিয়ে গেছে। সপ্তাহখানেক ধরে দেশটাকে দেখে বারবার এটাই মনে হচ্ছিল, আহা! আমরা যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ পেতাম, যিনি পরের প্রজন্মের চোখের স্বপ্ন নিজের চোখে দেখতে পেতেন, যিনি পরের প্রজন্মের ভাষা বুঝতেন…। বাংলাদেশের তথাকথিত উন্নয়ন একদিন কণ্ঠহারের পরিবর্তে কণ্টকমালার মতো গলায় ফুটবে, এ আমি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছিলাম। মালয়েশিয়া সরকার তার তরুণ প্রজন্মের সুশিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করেছে, পেট্রোলিয়ামের পাশাপাশি কৃষিকে রপ্তানি খাতে ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুগ্ধতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সে জন্যই বাংলাদেশ থেকে আজ আমি সপরিবার এখানে ছুটে এসেছি। কুয়ালালামপুর থেকে লাংকাউই ঘুরে মে মাসের ৪ তারিখ রাতে আমরা অবতরণ করলাম পিনাং দ্বীপে। বিমান থেকেই চোখে ঝলক লাগছিল এর উঁচু আর ঝলমলে অট্টালিকাগুলো।
পিনাং দ্বীপটাকে আমার বেশ ছিমছাম, শান্তই মনে হলো। যেহেতু কুয়ালালামপুর আর লাংকাউই—এই দুই বিপরীতধর্মী শহর দেখে এখানে এলাম, তাই এখানে বিস্ময় বা মুগ্ধতা সেই মাত্রায় অনুভব করলাম না। মনে হলো এর চেয়ে রেদাং আইল্যান্ড গেলে বালি দ্বীপের মজা পেতাম, অথবা ক্যামেরন হাইল্যান্ড গেলে দার্জিলিংয়ের অনুভব পাওয়া যেত। আমরা অবশ্য পিনাংয়ের মূল ভূখণ্ডে যাইনি। মালাক্কা প্রণালিতে সাগরের বুকে সেতু গড়ে দ্বীপটি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেদিকে যাওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না। অন্যদিকে অনেকেই দেখলাম গাড়ি বা বাসে করে কুয়ালালামপুর থেকে পিনাং দ্বীপে চলে এসেছে। ওরা বরং আমার চেয়ে মালয়শিয়াকে বেশি দেখতে পেরেছে।
এ বছর (২০২৪) জানুয়ারিতে যখন মালয়েশিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলাম, তখন ইচ্ছা ছিল লাংকাউই থেকে পিনাং সমুদ্রপথে যাব। কিন্তু বাংলাদেশে বসে অনলাইনে কোনো ফেরি বুক করতে পারছিলাম না। বরং কোনো কোনো ব্লগে লেখা ছিল কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। তাই বাধ্য হয়ে আকাশপথে যাব ঠিক করলাম, এয়ার এশিয়ার টিকিট কাটা হলো। পরে লাংকাউইতে যখন দেখলাম ফেরি চলছে, ভীষণ মন খারাপ হলো। একটা চমৎকার সফর হতে পারত লাংকাউই-পিনাং ফেরিভ্রমণ।
আমাদের হোটেলটা সাগরের কাছে নিতে চেয়েছিলাম। হোটেল বুক করার সময় ‘গুগল মামা’ একটু ঘোল খাওয়াল। একটা সৈকতের পাশেই বড় বড় সব পাঁচ তারা হোটেল, সেটা ঠিক। তবে সেই বিচ আসলে একটা উপসাগরের এক মৃতপ্রায় উপকূল, নাম গার্নি। এখানে না আছে ঢেউ, না আছে সৈকত। উপকূল তো নয়, যেন খালের পাড়। তবে এই গার্নি উপকূলে চমৎকার একটা পার্ক আছে। আবালবৃদ্ধবনিতা সেই পার্ক উপভোগ করতে পারেন। সকালে দেখলাম, সেখানে কেউ যোগাসন করছেন, কেউ সাইক্লিং, কেউ জগিং। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিশুরা খেলে Slider আর See-Saw তে।
পরদিন সকালে বাতু ফিরিঙ্গী সৈকতে যখন একটা চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসেছি, দেখি চেয়ার ভাড়া দিতে এগিয়ে এসেছে দুই বাংলাদেশি তরুণ। তারা বোটিং, প্যারাসেইলিং ইত্যাদি অফার করে আমাদের কান ঝালাপালা করে দিল। আমরা কেবল নিরিবিলি একটু পারিবারিক সময় কাটাতে চাই, অ্যাডভেঞ্চার না। তাই ওদের ফিরিয়ে দিয়ে সমুদ্রের দিকে মন দিলাম। কিন্তু সাগরের জল বা সৈকতের সৌন্দর্য—কোনোটাই আমাদের মনে ধরল না। এর চেয়ে কক্সবাজার, পতেঙ্গা বা কুয়াকাটা ঢের ভালো। মনে হচ্ছে গাঁটের টাকাগুলো গচ্চাই গেল। তবু এত পথ এত খরচ করে এলাম, একটু সাঁতার কাটব না?
আধঘণ্টা পার হয়নি, হঠাৎ আমার পুত্র ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল। তার হাতে কিছু একটা কামড় দিয়েছে। সমুদ্রে সাপ নেই তো? ওর কনুইয়ের নিচে কয়েক বর্গসেন্টিমিটার ফুলে উঠেছে, অবশ্য সাপের দাঁতের কোনো চিহ্ন নেই। ডাকলাম সেই দুই দেশি ভাইদের। ওরা বলল, জেলিফিশ। এখানে প্রায়ই নাকি জেলিফিশের আক্রমণ হয়। ক্ষতস্থানে ঠান্ডা কোক ঢালতে হয়। আমার সঙ্গে ঠান্ডা পানি ছিল, তাই ঢাললাম। ওর ব্যথা কমতে শুরু করলে একটু পর আবারও আমরা জলে নামলাম। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রী চিৎকার দিয়ে উঠল। তার আঙুলেও হুল ফুটিয়েছে জেলিফিশ। সেখানে আবার পানি ঢালা হলো। (ঢাকায় ফেরার পর প্রায় ২ সপ্তাহ আঙুল ফুলে ছিল এবং ত্বকের একটা স্থায়ী ক্ষতি রয়ে গেল।)
আমরা আর জলে নামার সাহস পেলাম না। বিচে বিশাল এক কাঠবাদামগাছ পেয়ে সেটার ছায়ায় বসলাম। দেখলাম স্থানীয় অনেকেই এখানে বেড়াতে আসে সপরিবার। তারা চাদর পেতে বসেছে, সঙ্গে রান্না করে আনা খাবার, একটা ফ্যামিলি ডে আউট জাতীয় আয়োজন। ভারতীয় পর্যটকদের অধিকাংশই বোটিং বা প্যারাসেইলিং করছে। সাঁতার কাটছে খুব কম মানুষ। কারণটা বুঝতে এত সময় লেগে গেল আমাদের। বিচ ধরে উল্টো দিকে হাঁটছিলাম। অদূরেই একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল এবার। তাতে লেখা ‘Beware of Jelly FIsh’...এটা আগে দেখিনি কেন? নিজেকে কষে ধমক লাগালাম মনে মনে। একটু গুগল করে জানতে পারলাম, কিছু বিশেষ জেলিফিসের হুলে যে বিষ থাকে, তাতে কোনো কোনো মানুষের মৃত্যুও ঘটে!
প্রচণ্ড রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম। এই হোটেলের সুইমিংপুলটা খোলা আকাশের নিচে। আকাশ মেঘলা। সপরিবার বেশ ভালো সময় কাটল। ইচ্ছা ছিল বিকেলে George Town বা Penang Hill Railway Station যাব। পাহাড়ের ওপর দিয়ে ট্রেনে চড়ার মজাই আলাদা। পিনাংয়ের মূল পর্যটন স্পট এই দুটো। ব্রিটিশ উপনিবেশের এই নিদর্শন এখন পিনাংকে দিচ্ছে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কিছু প্যাকেজ। আমরা অবশ্য সেসবে আর গেলাম না, বিকেল কাটল গার্নি বিচে। বিচ থেকে হোটেল পাড়ায় চোখ যেতেই সবিস্ময়ে লক্ষ করলাম ভবনগুলোর অপার সৌন্দর্য! ‘Building made of glass and light’, স্কুলজীবনে পড়া Newyork কবিতার এই লাইনটাই মাথায় ঘুরতে লাগল।
সন্ধ্যাবেলায় আমার লাগেজ নিয়ে বিপাকে পড়লাম। কম্বিনেশন লক কাজ করছে না। হোটেল রিসিপশন কোনো সাহায্য করতে পারল না। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করে হার মানলাম। পরে অবশ্য ইউটিউব দেখে শিখলাম কীভাবে নাম্বার ভুলে গেলে বা নাম্বার কাজ না করলে লক বন্ধ অবস্থায় Reset করা যায়। এই শিক্ষাটা পরে এয়াপোর্টে একজন প্রবাসী বাংলাদেশিকে সাহায্য করতে কাজে লেগেছিল।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আমাদের দেশে ফেরার ফ্লাইট হঠাৎ করে এগিয়ে দিয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। কারণ ব্যাখ্যা না করে শুধু নতুন সময়সূচি জানিয়ে ই-মেইল করেছিল এক দিন আগে। মধ্যরাতের ফ্লাইট এনেছে সন্ধ্যায়। পরে সংবাদপত্র থেকে জানা গেল, ঢাকার বিমানবন্দর রানওয়ের সংস্কারকাজের কারণে তিন দিনের জন্য রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব বিমান ওঠানামা বন্ধ করেছে আমাদের ফ্লাইট এগিয়ে আনা হয়েছে। সেটা জানানো হলো ফ্লাইটের আগের দিন। ভাগ্যিস ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেইল চেক করা আমার এক বাজে অভ্যাস (আমার স্ত্রীর ভাষায়)। নইলে কী হতো এ যাত্রায় কে জানে?
আমাদের ঢাকায় ফেরার ফ্লাইটের নতুন সময় রাত ৮টায়। আমরা বিকেল ৪টায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখি চেক-ইন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা ভাই-বোনেরা বড় বড় লাগেজ, কার্টন, কম্বলের প্যাকেট ইত্যাদি বুকিং দিচ্ছেন। আমরা অনলাইনে যে বোর্ডিং পাস পেয়েছিলাম, এরা দেখি সেটা বদলে দিল। সিট নাম্বার দেখে পুত্র হতাশ। একটাও উইন্ডো সিট (Window Seat) নেই। বলে রাখি, এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ বেশি দামে বেচবে বলে যে সিটগুলো চিহ্নিত করে রেখেছিল, সেগুলো কেউ কেনেনি। ভাগ্যগুণে তারই একটা ফাঁকা সিটে পুত্রকে বসার ব্যবস্থা করে দিলাম। আমার পাশের যাত্রীটিও অন্য ফাঁকা সিটে গিয়ে বসে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুম দিলেন। ফলে আমি স্ত্রীকে তিন সিট দিয়ে এক প্রান্তে বসলাম। তিনি তিন সিটজুড়ে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। সিটবেল্ট বাঁধা অবস্থাতেই!
গোটা আকাশ ভ্রমণ আমি সিটের সঙ্গে লাগোয়া স্ক্রিনে বিমানের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে কাটালাম। সেই সঙ্গে পেছনের সারিতে বসা অস্ট্রেলিয়াফেরত বাংলাদেশি পরিবারটির কলকাকলিতে কান ঝালাপালা হচ্ছিল। তাদের সঙ্গে ছিল এক দুরন্ত শিশু। শিশুটি ঘুমিয়ে পড়লে বিমানে শান্তি ফিরে এল, যেন ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’….
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার পেরিয়ে চট্টগ্রামের আকাশসীমায় বিমান ঢুকতেই মনে এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। নারায়ণগঞ্জের আকাশে পৌঁছে যখন পাইলট জানালেন, ‘আমরা ঢাকায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার পরপরই বাধল বিপত্তি। ঢাকায় প্রচণ্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ বেগতিক। জাহাজের মতো বিশাল বোয়িং বিমান বাতাসের ঢেউয়ে ডিঙির মতো দুলে দুলে উঠছে। সবাই যার যার মতো দোয়া পড়তে শুরু করেছি। রাত তখন প্রায় ১০টা। ঘণ্টাখানেক আমরা ঘুরপাক খেলাম ঢাকার চারপাশের আকাশে। আবহাওয়া প্রতিকূল। ১১টায় পাইলট হাল ছাড়লেন। ঢাকায় নামা নিরাপদ নয়।’
বিমান চলল কলকাতার দিকে। কলকাতায় পৌঁছে সবাই উসখুস করছিল নামার জন্য। সে গুড়ে বালি। সেখানে ২ ঘণ্টা ঠায় বসে থাকতে হলো। আমার ক্লান্ত স্ত্রী ঘুমিয়েই কাটাল পুরোটা সময়। পুত্র সকৌতূহলে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে সর্বক্ষণ। আমি পাশের সিটের দুরন্ত এক বালকের সঙ্গে একটু দস্যিপনা করে কলকাতার ২ ঘণ্টা পার করলাম। বালকটি দেশে ফিরছে তার মায়ের সঙ্গে। বাবা ঢাকাতেই থাকেন। তার মা একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ভেবে অবাক হচ্ছিলাম, জীবিকার জন্য এঁরা কত না ত্যাগ স্বীকার করেন! পরিবার-পরিজন-বন্ধু সবাইকে ছেড়ে বিদেশের মাটিতে শ্রম বিক্রি করতে চলে যান তাঁরা। বছরে একবার হয়তো সপ্তাহ কয়েকের জন্য ছুটি পান। ফিরে পান হারানো স্বাধীনতা। কিছুদিন পর আবার সেই শৃঙ্খল, সেই দাসত্ব…।
যাত্রীরা Cabin Crew-দের কাছে বারবার জানতে চাইছিল কখন আবার উড়াল দেবে এই বিশাল শকট, কিন্তু ঢাকা থেকে অনুমোদন আসছিল না।
কলকাতা থেকে উড়াল দিলাম রাত দুটো নাগাদ। ঢাকায় নিরাপদে নামলাম ঘড়িতে তিনটের কাঁটা ছুঁয়ে। ততক্ষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাতে ঢাকায় শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেল। আমরা অবশ্য আকাশ থেকে কেবল বজ্রের চোখ রাঙানো দেখেছিলাম (তার ভিডিও চিত্রটি আমার মুঠোফোনে রেখে দেব আজীবন)।
লাগেজ বেল্টের সামনে দাঁড়িয়েই আবিষ্কার করলাম, আমার পুত্র তার কিছু নোটপত্র বিমানে ফেলে এসেছে। সামনে তার প্রি-টেস্ট পরীক্ষা, তাই বিমানে একটু পড়ছিল। এয়ারপোর্টের হটলাইনে কল দিয়ে জানিয়ে রাখলাম। (সেটা ৭ দিন অপেক্ষা করার পরও পাইনি। সম্ভবত ক্লিনার সেটা ট্র্যাশ করে ফেলেছিল। তবে আমার তখনই ‘Lost & Found’ শাখায় সশরীর গিয়ে রিপোর্ট করা উচিত ছিল)।
ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বের হতে গিয়ে পড়লাম আরেক ভোগান্তিতে। শত শত প্রবাসীর গ্রাম থেকে নিতে আসা সহস্র আত্মীয় আর তাঁদের ভাড়া করা গাড়ির ভিড়ে আমার গাড়িটা টার্মিনালে আসতেই পারছিল না। টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে আমাদের রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হলো নিজেদের গাড়িটা খুঁজে পেতে। আমার পরিবার বলল, এই প্রথম তাদের মনে হচ্ছে তারা হারিয়ে যাবে! বিদেশের মাটিতে তারা এতটা অনিরাপদ বোধ করেনি।
বাসায় যখন ফিরলাম, তখন ফজরের আজান হচ্ছে। একটা দুর্দান্ত, স্মরণীয় সফর শেষে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নামাজ পড়লাম। সম্পূর্ণ অচেনা একটা দেশে যাওয়া এবং ফেরার পথে প্রতিকূল আবহাওয়ায় কলকাতা ঘুরে হলেও আমরা সর্বদা নিরাপদেই ছিলাম, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।
শুরু হচ্ছে একটা নতুন দিন, তারিখটা ২০২৪ সালের মে মাসের ৬। শুরু হবে আবার সেই যান্ত্রিক জীবন, সেই রুটিন বাঁধা চলাচল। জীবন তবু কী অসীম সুন্দর! সুন্দর এই পৃথিবী আর এর মানুষেরা। শেষ...
লেখক: কাজী মনজুর করিম মিতুল, প্রকৌশলী