ব্যাকবেঞ্চার: সফলতার মূলমন্ত্র

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) ক্লাসে শিক্ষার্থীরাফাইল ছবি: রয়টার্স

শিরোনাম দেখে চমকে উঠেছেন অনেকেই। কিন্তু আপনি যদি ক্লাস টপার হয়ে থাকেন, তবে দেখবেন আর্থিক দিক দিয়ে আপনার চেয়ে ব্যাকবেঞ্চাররা সফল। যাঁরা এসএসসি ফেল করেছেন, তাঁরা বেশি সফল! যাঁরা ইন্টার ফেল করেছেন, তাঁদের সফলতার হারও মন্দ নয়। কিন্তু যাঁরা হায়দার আলী খান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বা বিভিন্ন সাবজেক্টে অনার্স পাস করেছেন, তাঁদের সফলতার হার অনেক কম। এ জন্য দায়ী আমাদের দেশের পরিকল্পনাহীন শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের একটা মন্ত্রণালয় আছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এরা রাষ্ট্রের কী কী বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করে, তা আমার জানা নেই।

বাংলাদেশের পরিপেক্ষিতে যদি চিন্তা করি তাহলে এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী বিষয় পড়ানো উচিত, তার একটা ফ্রেমওয়ার্ক করা যেতে পারে। আমাদের দেশ কোন কোন খাতে উন্নত, তার একটা তালিকা করা যাক। যেমন: পোশাক শিল্প, কৃষি খাত, জাহাজ নির্মাণশিল্প, প্রবাসী খাত, চা শিল্প, পাট শিল্প, এ রকম যেসব বিষয়ে আমাদের দেশ এগিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সে ধরনের সেক্টরভিত্তিক সাবজেক্ট খোলা উচিত। প্রতিটি থানা শহরে একটা ভাষা ইনস্টিটিউট করা উচিত। এখানে ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ, আরবি, মান্দারিন, জাপানিজ, মালয়সহ বিভিন্ন ভাষার কোর্স থাকা উচিত।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো পড়াশোনা নেই। পড়াশোনা আছে নীলক্ষেতে কিংবা পাবলিক লাইব্রেরিতে। যেখানে এমপি থ্রি মুখস্থ করা হয় এবং বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় যিনি যত জোরে বমি করে পরীক্ষার খাতায় ফেলতে পারেন, বমির মাত্রা অনুযায়ী তিনি তত ভালো চাকরি পান। কয়েকজন সরকারি কেরানি উৎপাদন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করে। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমন অনেক সাবজেক্ট আছে, যার আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিভিন্ন অখ্যাত সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে দিনশেষে দেখেন তাঁদের বেলা নেই। তাঁর যে বন্ধু এসএসসি ফেল করে মন খারাপ করে বিদেশ চলে গিয়েছিলেন, মুদির দোকান দিয়েছিলেন, মোটর গ্যারেজে কাজ শিখেছিলেন কিংবা কোনো ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তিনি এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিয়ে এখন দাদা হওয়ার পথে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ক্লাস টপার ব্যতিক্রম বাদে পনেরো হাজার টাকায় বিড়ি কোম্পানিতে সেলসম্যান পদে ভাইবা দিচ্ছেন! কেউ চক্ষু লজ্জায় ঘরে দরজা আটকিয়ে বসে জীবন নিয়ে দিনাতিপাত করছেন!

আরও পড়ুন

আর যাঁরা চাকরিতে ঢুকেছেন, ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগেরই কায়দা করে বাঁচতে হচ্ছে। খেয়েপরে কোনোক্রমে কেটে যাচ্ছে। শিক্ষা অর্জন করে যিনি বেকার, তিনি তো বেকারই। আর যিনি চাকরিজীবী, ব্যতিক্রম বাদে তিনি হচ্ছে ছদ্মবেশী বেকার! অর্থাৎ চাকরির টাকায় সংসার চলে না। একটা জরিপ করলে দেখা যাবে, যাঁদের পয়সা আছে, তাঁদের নিরানব্বই শতাংশ অশিক্ষিত কিংবা কম শিক্ষিত। উচ্চশিক্ষিত কিন্তু স্বাভাবিক পথে পয়সাওয়ালা, তাঁদের সংখ্যা অতি সামান্য। এখানে শিক্ষার কোনো দোষ নেই। দোষ শিক্ষাব্যবস্থার। শিক্ষা নিয়ে যথাযথ গবেষণা না হওয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বা যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার যথাযথ সংস্কার না করা। তাই আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়—

‘পরীক্ষায় ফেল করে যে

উড়োপ্লেনে চড়ে সে

পরীক্ষায় পাস করে যে

হতাশায় মরে সে!’

*লেখক: সুলতান মাহমুদ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শরীয়তপুর

আরও পড়ুন