লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিয়ে-১ম পর্ব

আমাকে বুঝিয়ে বল, ওই গাধা কীভাবে তোর পরীক্ষার উত্তর দিল।
-বাবা, দুলাভাই বলেছিলেন, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর বাথরুমে গিয়ে দুলাভাইকে ফোন করতে। আমি বাথরুমে গিয়ে ফোন করেছিলাম। দুলাভাই ফোনে আমাকে উত্তর কী লিখতে হবে, তা বলে দিয়েছেন।
বাবা এবার ভুরু কুঁচকে আমাকে বললেন,
-তুই এই গাধার বুদ্ধিতে উত্তর দিয়েছিস! আরে ওর তো মাথায় সমস্যা আছে।
আমি বাবার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। উত্তর দিলেন দুলাভাই।
-আব্বা, ডোন্ট ওয়ারি। আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। তবে আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমি যে উত্তর বলে দিয়েছি, ইমু পরীক্ষায় এক শতে এক শ পাবে।
অলংকরণ: আরাফাত করিম

সম্ভবত এ দুনিয়ায় আমিই প্রথম পুরুষ, বিয়ে করার জন্য যাকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার পরে ব্যবহারিক বা মৌখিক আর কোনো পরীক্ষা দিতে হবে কি না, সেটা অবশ্য এখনো আমি জানি না। এটা নির্ভর করছে পাত্রীর মেজাজ-মর্জির ওপর। পরীক্ষা নিয়ে পাত্র নির্বাচনের এই বুদ্ধি অবশ্য পাত্রীর নয়, পাত্রীর ছোট বোনের। সে কিছুটা বিচ্ছু ধরনের মেয়ে। সে সবাইকে বলে বেড়ায়, সে নাকি দুনিয়ায় এসেছে ছেলেদের নাজেহাল করতে।

যে মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা চলছে, তার নাম লিমা। সে আমেরিকায় থাকে। ওখানে লেখাপড়া শেষ করে এক বছর হলো নিউইয়র্ক সিটিতে পুলিশ অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছে।

তিন দিন আগে লিমার পুরো পরিবার আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছে। পরিবারের ইচ্ছা, সাত দিনের মধ্যে লিমার বিয়ে দেবে। বিয়ের পর লিমা আমেরিকায় চলে যাবে। তারপর কাগজপত্র ঠিক করে স্বামীকেও আমেরিকায় নিয়ে যাবে। লিমার আত্মীয়-স্বজন সময় বাঁচানোর জন্য আগেই বেশ কিছু ছেলের বায়োডাটা আর ছবি আমেরিকায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। লিমার পরিবার সেখান থেকে দশজনকে বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় এক নম্বর নামটি আমার। সিরিয়াল নম্বর এক হওয়ার কারণে আমার পরীক্ষা প্রথমে হবে। যদি আমি পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আমার পরে সিরিয়ালে থাকা অন্যান্য পাত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে। দুটি কারণে আমার নামটি এক নম্বরে স্থান পেয়েছে। প্রথম কারণটি আমার খালা। উনি হলেন লিমার মায়ের কলেজের বান্ধবী। বন্ধুত্বের কারণেই লিমার মা বান্ধবীর ভাগনেকে সুযোগটা দিয়েছেন। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে আমার বেকারত্ব। লিমার মা-বাবা লিমার জন্য বেকার ছেলেই খুঁজছেন। তাঁদের বিশ্বাস, ছেলে বেকার হলে, তাঁদের মেয়ে নাকি ছেলেকে হাতের মুঠোয় রাখতে পারবে।
আমি অবশ্য এখন বিয়ে করতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু পরিবারের সবার চাপে আমাকে ‘হ্যাঁ’ বলতে হয়েছে। পরিবারের সবার ধারণা, আমার মতো গুড ফর নাথিং, ফালতু, বেকার ছেলেকে খামাখা বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। আমার খালার ধারণা, আমার চেহারার মধ্যে একটা ইভটিজার ইভটিজার ভাব আছে। তাই যত তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দেওয়া যায়, সেটাই নাকি সবার জন্য মঙ্গল। বাবা সরাসরি বলে দিয়েছেন, হয় এই বিয়েতে রাজি হতে হবে, নতুবা তিনি আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন। আসলে বেকার ছেলের জন্য আমেরিকার সিটিজেন মেয়ে পাওয়ার এই সুযোগ আমার পরিবার কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমাকে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে এবং পরীক্ষার জন্য তৈরি করতে দায়িত্ব নিয়েছেন আমার একমাত্র দুলাভাই। এই দায়িত্ব কেউ তাঁকে দেয়নি, তিনি নিজেই এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। যে কারণে এক মাস ধরে তিনি সস্ত্রীক আমাদের বাসায় অবস্থান করছেন। উনি ঠিক করেছেন, আমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত উনি এই বাসায় অবস্থান করবেন। আমার ধারণা, আমার দুলাভাইয়ের মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে। আমার মা-বাবার ধারণাও তা-ই। যার কারণে দুলাভাইয়ের কথায় সাধারণত আমরা কেউ ততটা গুরুত্ব দিই না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার বোনকে নিয়ে। তার ধারণা, তার স্বামী দুনিয়ার সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। সে তার স্বামীর অন্ধ ভক্ত এবং স্বামীকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। সে যদি কোনোভাবে বুঝতে পারে, কেউ তার স্বামীকে অবমূল্যায়ন করেছে, তাহলে তার খবর আছে। একেবারে আগুন লাগিয়ে দেবে। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের পরিবারের সবাইকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও দুলাভাইয়ের কথা শুনতে ও মানতে হয়।

দুলাভাই আমাকে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আমেরিকার ইতিহাস এবং বিসিএস সাধারণ জ্ঞানের কিছু বই পড়তে দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে আমার ক্লাস নিচ্ছেন। প্রথম দিনের ক্লাসের শুরুতেই বিয়ে কেন জরুরি এবং বর্তমানের আধুনিক মেয়েরা কোন ধরনের ছেলে চায়, সে বিষয়ে একটা দীর্ঘ ভাষণও দিয়েছেন। ভাষণের শুরুতেই তিনি বেশ ভরাট কণ্ঠে বললেন,
-শোনো, বিয়ে একটি অতীব জরুরি কর্ম। জীবনকে মধুর করতে বিয়ের বিকল্প আর কিছু নেই।
-কিন্তু দুলাভাই, আমার কাছে তো বিয়েকে দরকারি মনে হয় না। মনে হয় এটা একটা ফালতু জিনিস।
-তা তো মনে হবেই! কারণ, তোমার মতো ফালতু ছেলের কাছে শুধু বিয়ে নয়, দুনিয়ার সবকিছুই ফালতু। তোমার মতো ছেলেরা দুনিয়ায় আসে দুটি কারণে। এক খাওয়া আর দুই ঘুম। শোনো, আমি তোমার বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে তোমার দায়িত্ব নিয়েছি। তোমাকে যেভাবে হোক, এই পরীক্ষায় পাস করাব। তোমাকে কিছুই করতে হবে না, তুমি শুধু আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। বাকি কাজ আমার।
-ঠিক আছে, দুলাভাই। আমি কথা দিলাম, আপনার সব কথা মেনে চলব।
-ভেরি গুড। এবার আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো। তুমি এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছ, যে আমেরিকায় থাকে। ওখানকার ছেলেমেয়েরা সাধারণত স্মার্ট হয়। এখন তোমাকেও ওদের পর্যায়ে আসতে হবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, তুমি নিজেকে স্মার্ট ছেলে হিসেবে পাত্রীর কাছে তুলে ধরবে। যেন সে বোঝে, তুমি আলট্রা মডার্ন এবং সুপার ফাস্ট ছেলে।
-সেটা কীভাবে?
-একটা উদাহরণ দিই, তাহলেই বুঝতে পারবে। ধরো, মেয়ে তোমাকে প্রশ্ন করল, তোমার গার্লফ্রেন্ড কতজন? তুমি কী বলবে?
-বলব, আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।
-অপদার্থের মতো কথা বলবে না। তুমি মেয়েকে বলবে, তোমার পাঁচটি গার্লফ্রেন্ড আছে।
-দুলাভাই, আপনি এটা কী বললেন! আমার তো অতীত, বর্তমান কোনোকালেই কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল না।
-তোমার মতো অপদার্থদের গার্লফ্রেন্ড থাকবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। একটা মেয়ের ভালোবাসা পেতে গেলে যে যোগ্যতা লাগে, তোমার তো তা নেই।
-দুলাভাই, আপনি কিন্তু সত্য বলেছেন। আচ্ছা দুলাভাই, আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিল?
-না, ছিল না। কারণ, আমিও তোমার মতো একটা অপদার্থ ছিলাম। তবে আমার একটা গুণ ছিল, আমি ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবী ছিলাম। তোমার তো সেই গুণও নেই। আমার প্রসঙ্গ থাক। আমি কী বলি, মন দিয়ে শোনো। তোমার যে গার্লফ্রেন্ড ছিল না, সেটা তুমি জানো, আমি জানি। কিন্তু লিমা জানে না। সুতরাং তুমি তাকে মিথ্যা বলবে।
-মিথ্যা বলাটা কি ঠিক হবে? মিথ্যা দিয়ে জীবন শুরু করাটা তো অন্যায়।
-যে মিথ্যা বললে কারও ক্ষতি হয় না, সেটা বলা যায়। শোনো, এ যুগের একটা ছেলের কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই, এ কথা শুনলে যেকোনো মেয়ে ভাববে, ছেলের কোনো শারীরিক সমস্যা আছে।
-ঠিক আছে, তাইলে একটা বলি। পাঁচটা একটু বেশি হয়ে যায় না? তখন হয়তো ভাববে আমার চরিত্রই খারাপ।
-শোনো, যারা আমেরিকায় থাকে, তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। আধুনিক জমানায় যে যত খারাপ, সে তত স্মার্ট। তাই আমি চাই, তুমি লিমার কাছে নিজেকে ব্যাডবয় হিসেবে উপস্থাপন করো।
-দুলাভাই, আমার মনে হয়, আপনি আমাকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছেন। এ যুগের মেয়েরা খারাপ ছেলেকে স্মার্ট ভাবে, এটা আপনার ভুল ধারণা।
-শোনো, মাতব্বরি করবে না। আমি মেয়েদের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। তুমি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো।
আসলে এই মাথামোটা লোকের সঙ্গে তর্ক করে কোনো লাভ নেই। সে যেটা বোঝে, সেটাই ঠিক। এর থেকে তাকে একচুলও নড়ানো যাবে না। তাই এ ব্যাপারে আর কথা বাড়ালাম না।

আজ আমার পরীক্ষার দিন। খালার বাসায় পরীক্ষার আয়োজন হয়েছে। পরীক্ষার এই অনুষ্ঠানে আজ আমাদের দুই পরিবারের সবাই উপস্থিত। পরীক্ষায় পাস করলেই আজ এখানেই আলোচনা করে বিয়ের সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। পরীক্ষায় পাসের জন্য একটু আগে দুলাভাইয়ের মাথায় ভয়ংকর এক বুদ্ধি এসেছে। তিনি ঠিক করেছেন, পরীক্ষা শুরুর একটু আগে উনি কোনো এক কাজের অজুহাতে বাসার বাইরে চলে যাবেন। আমি প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর প্রশ্নগুলো পড়ে মাথায় ঢুকিয়ে ফেলব। এরপর ওয়াশরুম ব্যবহার করার কথা বলে আমি ওয়াশরুমে চলে যাব। তারপর দুলাভাইকে ফোন করে প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেব।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

এর আগে লিমাকে আমি ছবিতে দেখেছি। এবারই প্রথম সরাসরি দেখলাম। লিমাকে দেখে আমি অভিভূত। এ তো মেয়ে নয়, পরি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি পরীক্ষায় পাস করলেও এই মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না।

ড্রইংরুমের ঠিক মাঝখানে আমার পরীক্ষার আসন নির্ধারিত। দুই পরিবারের সদস্যরা আমাকে ঘিরে বসে আছেন। একটু আগে আমাকে প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। দুলাভাই যথারীতি অফিসে একটা জরুরি ফোন করতে হবে বলে বাইরে চলে গেলেন। আমি লিমাকে প্রশ্ন করলাম,
-পরীক্ষার সময় কতটুকু? আর পাস মার্ক কত?
লিমা চোখ-মুখ কঠিন করে উত্তর দিল,
-এসব নিয়ে আপনার ভাবার দরকার নেই। আপনি পরীক্ষা শুরু করুন।
বুঝলাম, এ মেয়ে শুধু পোশাকেই পুলিশ নয়, এর মেজাজও পুলিশি। আমি বিসমিল্লাহ বলে প্রশ্ন পড়া শুরু করলাম। প্রশ্ন পড়ে মনে হলো, আসলে পরীক্ষাটরিক্ষা কিছু না, দুষ্টুমি করার জন্য ওরা এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে। কারণ, খুবই সহজ প্রশ্ন। আমি নিজেই এর উত্তর দিতে পারব। দুলাভাইয়ের সাহায্য লাগবে না। কিন্তু তারপরও দুলাভাইকে ফোন দিতে হবে। কারণ, তিনি বারবার বলে দিয়েছেন, তাঁর মতামত ছাড়া উত্তর না দিতে। তাই বাধ্য হয়ে দুলাভাইকে ফোন করতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। দুলাভাইকে ফোন দিয়ে ফিসফিস করে বললাম,
-ভাই, প্রশ্নগুলো খুবই সহজ। আমার ধারণা, মেয়ে ফাজলামি করার জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন করেছে। আমি নিজেই এর উত্তর দিতে পারব। আপনার সাহায্য লাগবে না। আপনি চলে আসেন।
-বেশি মাতব্বরি করবে না। মনে রাখবে, তুমি একটা গাধা। আর গাধা চিরকালই গাধা। তুমি যেটাকে সহজ ভাবছ, সেটা হয়তো সহজ নয়। হয়তো কৌশলে সহজ প্রশ্ন করে তোমাকে বিভ্রান্ত করছে। তুমি প্রশ্নগুলো আমাকে বলো। তারপর আমি যেভাবে বলব, ঠিক সেভাবেই উত্তর লিখবে।
বাধ্য হয়ে দুলাভাইকে একে একে সব প্রশ্ন বললাম। উনি কোনটার উত্তর কী দিতে হবে, আমাকে বলে দিলেন। কিন্তু দুলাভাইয়ের উত্তরগুলো আমার পছন্দ হলো না।
-দুলাভাই, এভাবে উল্টাপাল্টা উত্তর দিলে তো সমস্যা হয়ে যাবে। বিয়ে তো হবেই না, মাঝখান থেকে মান-সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে।
-শোনো, তোমাকে যেটা বলেছি সেটা করো। তুমি এক শতে এক শ পাবে। এটা তোমার জ্ঞানী দুলাভাইয়ের ওয়াদা।
ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে ইচ্ছার বিরুদ্ধেই দুলাভাইয়ের পরামর্শমতো উত্তর দিয়ে পরীক্ষা শেষ করলাম। এর মধ্যে দুলাভাইও ফিরে এসে সোফায় বসলেন। পরীক্ষার উত্তরপত্রটি লিমার হাতে দিলাম। উত্তরপত্র নিয়ে লিমা আর লিমার বোন অন্য ঘরে চলে গেল। আমাদের পুরো পরিবারকে রেখে অন্যরাও রুম থেকে চলে গেলেন। সম্ভবত আমাদের একান্তে কথা বলার সুযোগ দিয়ে গেলেন। সবাই চলে যেতেই আমার মা-বাবা-বোন আমাকে ঘিরে ধরলেন। মা বললেন,
-কী রে, সব ঠিকমতো লিখেছিস তো?
-লিখেছি। দুলাভাই যেভাবে বলেছেন, সেভাবে লিখেছি। এখানে আমি নিজের থেকে কোনো উত্তর দিইনি। সবই দুলাভাইয়ের উত্তর। অতএব তোমরা আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
বাবা অবাক হয়ে বললেন,
-আমি তো তোর কোনো কথাই বুঝলাম না। পরীক্ষা দিলি তুই আর এখন বলছিস ওই গাধার কথায় উত্তর দিয়েছিস!
বাবার কথা শেষ হতেই, আপা বাবাকে বললেন,
-আব্বা, আপনি কিন্তু সারা জীবন আপনার জামাইকে আন্ডার-এস্টিমেট করলেন। ও খুব মেধাবী ছেলে।
-আমি তোর সঙ্গে এ মুহূর্তে তর্ক করতে চাচ্ছি না। তুই নিজেই তো বড় একটা গাধা। না হলে এই ছাগলটাকে তুই বিয়ে করিস!
এরপর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আমাকে বুঝিয়ে বল, ওই গাধা কীভাবে তোর পরীক্ষার উত্তর দিল।
-বাবা, দুলাভাই বলেছিলেন, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর বাথরুমে গিয়ে দুলাভাইকে ফোন করতে। আমি বাথরুমে গিয়ে ফোন করেছিলাম। দুলাভাই ফোনে আমাকে উত্তর কী লিখতে হবে, তা বলে দিয়েছেন।
বাবা এবার ভুরু কুঁচকে আমাকে বললেন,
-তুই এই গাধার বুদ্ধিতে উত্তর দিয়েছিস! আরে ওর তো মাথায় সমস্যা আছে।
আমি বাবার কথার কোনো উত্তর দিলাম না। উত্তর দিলেন দুলাভাই।
-আব্বা, ডোন্ট ওয়ারি। আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না। তবে আমার ওপর বিশ্বাস রাখেন। আমি যে উত্তর বলে দিয়েছি, ইমু পরীক্ষায় এক শতে এক শ পাবে।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

দুলাভাইকে সমর্থন জানিয়ে আমার বোন বলল,
-জি আব্বা, ও সত্য বলেছে। ও খুব জ্ঞানী মানুষ। ইমু যদি আপনার জামাইয়ের কথামতো লিখে থাকে, তাহলে ভয়ের কিছু নেই। ইমু পাস করবেই। আপনার জামাইয়ের মতো এমন মেধাবী ছেলে আমি কোথাও দেখিনি।
বোনের কথা শেষ হতেই বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাকে বললেন,
-ইমুর মা, ভুল করেছ। পাগলটাকে সঙ্গে আনা ঠিক হয়নি।
ঠিক এই সময় লিমা আর লিমার ছোট বোন ঘরে ঢুকল। লিমার হাতে আমার পরীক্ষার উত্তরপত্র। আমি লিমার মুখের দিকে তাকালাম। খেয়াল করে দেখলাম, লিমা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মনে হলো, রাগে তার দুচোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম। (চলবে...)
[email protected]

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন