কাকে বেছে নেবে আমেরিকা
সব কথার শেষ কথা—কে হাসবেন শেষ হাসি। কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো ব্যতিক্রম। নারী-পুরুষের ভেদাভেদহীন সমাজনির্ভর রাষ্ট্রের কান্ডারি কে হবেন। শ্বেত-শুভ্র দালানে (হোয়াইট হাউস) চার বছর কে শাসন করবেন। সবাই অপেক্ষা করছেন ভোট গণনা দিনের জন্য। এখন সব পথ মিশেছে এক পথে—৫ নভেম্বরে। বৈশ্বিক শক্তিগুলো তাদের বিদেশনীতি নিয়ে হোমওয়ার্ক শেষ করেছে। এদিকে অপেক্ষার পাশাপাশি সহিংসার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের দিন এবং সম্ভাব্য অনিশ্চিত পরিণতিতে সহিংসতা এবং অন্য দুঃস্বপ্নের পরিস্থিতি প্রতিরোধে, মূল ভোট গণনা সদর দপ্তরের ছাদে স্নাইপার পরিকল্পনাসহ অভূতপূর্ব নিরাপত্তার কথা বলেছেন। শেষ দিন (সোমবার) একাধিক গণমাধ্যমে দোদুল্যমান বিভিন্ন রাজ্যের কাউন্টি ট্যাবুলেশন এবং নির্বাচনকেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা ক্যামেরা, বেড়া এবং সুরক্ষিত দেয়ালের ফটোসহ নিউজ ছাপা হয়েছে।
আজ থেকে এক যুগ আগে যখন আমেরিকার মাঠিতে পা রাখি, তখন মনে হয়েছিল, এ বুঝি স্বপ্নের দেশে এসে গেলাম। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি স্বপ্ন ভঙ্গ হলো—ভোটের সঙ্গে সম্পর্কিত ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার ‘স্টপ দ্য স্টিল’ ডাকে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল এবং গণতন্ত্রের প্রতীক ‘ক্যাপিটল হিলে’ হামলা করেছিল। সেই থেকে নির্বাচনী ফল না মানার সংস্কৃতি চালু করেন। সম্প্রতি ট্রাম্প এক নির্বাচনী সমাবেশে এদিনকে (৬ জানুয়ারি) গুড ডে হিসেবে অভিহিত করেন। প্রচারের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস রিপাবলিকানদের জন্য প্রশ্ন ছুড়ে দেন—যাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। কিন্তু তাঁরা কি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য ভোট দিতে পারেন? রাত পোহালে মঙ্গলবার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আমেরিকান ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সর্বশেষ প্রায় ৭৫ মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যেই তাঁদের ব্যালট দিয়েছেন; যা ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়া মোট সংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১৬১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত ৪৯.১ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-২৪ হবে নতুন ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে বিশ্বখ্যাতি রয়েছে। যার ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে এসেও যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিকের সমান মর্যদায় নিজের ভোটের অধিকার পেয়েছি। এ নিয়ে দুবার ভোট দিতে যাচ্ছি ৫ নভেম্বর। রেডন্যাক নামে পরিচিত কানসাস রাজ্যের বড় শহর উচিটায় ভোট দেব। এ শহরের একমাত্র বাঙালি রেস্টুরেন্ট ‘দেশিকারি’তে নির্বাচনী আড্ডায় উঠে আসে আসিফ চাচার মনে দাগ কাটার মতো সব বর্ণবাদী ট্রাম্প সমর্থক কিন্তু সব সমর্থক বর্ণবাদী নয়। দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবনের অন্তরঙ্গ বন্ধু জেরির সাফকথা, সপ্তাহ শেষে ফ্রিজে খাবার ভর্তি, ছেলেমেয়ে স্কুলে যাবে, মাস শেষে বিল পে করব। এতে আমি খুশি। এসব মানুষের সংখ্যা ৫৫ শতাংশের বেশি। ভোটের হাওয়া তাঁদের গায়ে লাগে না। এঁদের মনে দারুণ বিশ্বাস—রাষ্ট্র আমাদের ঠকাবে না। গণতন্ত্রের এ বোধশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে এক করে রেখেছে।