‘আমরা ম্যানেজ করে নেব’
অ্যাপার্টমেন্টে নতুন ভাড়াটে এসেছে। তরুণ–তরুণী। আমার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে যেখানে গাড়ি পার্ক করি, সেটা ট্রাক দিয়ে ব্লক করে মালপত্র আনলোড করছে।
আমার বউ জিজ্ঞাসা করল, ওটা সরবে কতক্ষণে। বলল, পাঁচ মিনিটেই।
আমরা ‘কোন অসুবিধা নেই’ বলে হাসিমুখে অন্য পার্কিংয়ে পার্ক করলাম।
বাজার নিয়ে ফিরছিলাম। বউ কিছু ব্যাগ হাতে নিয়ে আগে আগে ঘরে চলে গেল।
আমি গাড়ি পার্ক করে বাজার নিয়ে আস্তে ধীরে ঘরে ফিরছি।
দেখি, ট্রাক থেকে বিরাট গাবদা সাইজের একটা সোফা নামল। ওটা ঠিক মতো ধরতেই পারছে না মেয়েটা। আমার দিকে করুণ চোখে তাকাল। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সাহায্য লাগবে?’ সে বলল, ‘অনেক উপকার হবে তাহলে!’
বললাম, ‘আসছি।’
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিজের বাজার বাসায় রেখে উপস্থিত হলাম।
ওরা তখনো ঠিক মতো সোফা ধরতে পারেনি। তরুণী বলল, ‘হ্যালো, আমি গ্যাবি!’
গ্যাবি মানে গ্যাব্রিয়েল বা এ–জাতীয় কোনো নাম হবে। আমেরিকানরা নামকে ছোট করে ফেলে।
আমি নিজের নাম বললাম।
‘কবে মুভ করলে?’ সাধারণ ভদ্রতা করে জানতে চাইলাম।
‘আজকেই।’ মেয়েটা উচ্ছ্বসিত উত্তর দিল।
‘ভালো। আমরা শিগগিরই ছেড়ে যাচ্ছি।’
‘তা–ই? ওয়াও, গ্রেট!’
‘হ্যাঁ, আগের বাড়ি ভাড়া দিয়ে এখানে উঠেছিলাম, এখন বাড়ি কিনে চলে যাচ্ছি।’
মেয়েটার সঙ্গের ছেলেটা গম্ভীর মুখে সোফার প্যাকেট ছেঁড়ায় ব্যস্ত। নিজের নাম, হাই, হ্যালো—কিছুই বলছে না। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ব্যাটা মনে মনে ভাবছে যে আমি সুযোগ পেলেই ওর বউ বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পালাব।
মেজাজ খারাপ হলো। আমার চেহারা দেখে কি লুইচ্চা বলে মনে হয়?
প্যাকেট ছিঁড়ে মেয়েটাকে বলল, ‘এখন ধরতে পারবে?’
মেয়েটা দুই হাত দিয়ে তুলল, ‘হ্যাঁ।’
‘গ্রেট!’
দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
আমি বললাম, ‘অ্যাপার্টমেন্টের দরজা দিয়ে এই জিনিস ঢোকাতে পারবে তো?’
ছেলেটা বলল, ‘ওটা আমরা ম্যানেজ করে নেব।’
বলার ভঙ্গি হচ্ছে, ‘এখন বিদায় হ ব্যাটা!’
ওরা সোফা ঢোকাতে পারলে বা না পারলে আমার কী? অফিসের কাজ জমে আছে। চলে এলাম।
নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে যাব, এমন সময়ে দেখি, এক বাচ্চাসহ হাঁটতে বের হওয়া সাউথ ইন্ডিয়ান মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করছেন, ‘তোমাদের সাহায্য লাগবে?’
এইটা এই দেশের সাধারণ ভদ্রতা।
এবার দেখি ছেলেটা বলছে, ‘শিওর!’
কয়েক সেকেন্ডও যায়নি, এরই মধ্যে ‘আমরা ম্যানেজ করে নেব’ গায়েব হয়ে গেল?
আমি মনে মনে গালি দিলাম, ‘শালা!’
দুপুরে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরছি। দেখি আরেকটা ট্রাক থেকে ওয়াশিং মেশিন নামাচ্ছে, বিরাট গাবদা সাইজ। দুই–তিনতলা সিঁড়ি বেয়ে ওঠাতে হবে। বেচারার গার্লফ্রেন্ড নাই পাশে। এবার দেখি পোলা আমার দিকে তাকিয়ে ‘হাই’ দেয়।
আমিও ‘হ্যালো’ বলে বাড়িতে চলে এলাম। জিজ্ঞাসা করলাম না, ‘সাহায্য লাগবে?’ কী দরকার?
বিকেল হয়ে গেল, সন্ধ্যা, দেখি ওয়াশিং মেশিনসহ ট্রাক সেখানেই পড়ে আছে।
তারপর আরও দুই দিন গেল। দেখি মুভিং ট্রাকটা বাড়ির সামনে পার্ক করে রাখা। এখনো নিশ্চয়ই ভেতরে ওয়াশিং মেশিনটা পড়ে আছে। থাকুক। নিজে ম্যানেজ কর তুই ‘একটা বকা’!