সাত অঙ্গরাজ্যর ৯৩ ইলেকটোরাল ভোটই হতে পারে নির্ধারক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসফাইল ছবি: রয়টার্স ও এএফপি

বাংলাদেশ সময় আর কিছুক্ষণ পরেই নির্বাচন। একটা পরিবর্তন! সেই আশাতেই সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস। সেটা নির্ধারণ করবেন আমেরিকার ভোটাররা। এবারের নির্বাচন বিগত দিনের যেকোনো নির্বাচনের থেকে ভিন্ন। ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে যিনি ২৭০টি ভোট পাবেন, তিনিই হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যিনি আগামী চার বছরের জন্য হবেন হোয়াইট হাউসের অধিকর্তা।

ট্রাম্পের সমর্থকেরা মনে করেন, ট্রাম্প জিতলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের গণহত্যা বন্ধ হবে, গত টার্মে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন সারা বিশ্বে কোনো যুদ্ধ ছিল না, যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছেন। সে সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভালো, কাজকর্মের সংস্থান ছিল, সীমান্ত নিরাপদ ছিল, অবৈধ অভিবাসী আসা সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল, দেশের বেকারের সংখ্যা ন্যূনতম ছিল।

যাঁরা কমলাকে ভোট দেবেন, তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, ডেমোক্রেটরা সব সময়ই অভিবাসীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও কল্যাণমুখী কাজে অবদান রাখে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির কল্যাণে ভূমিকা রাখে তা ছাড়া জলবায়ুসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজে অংশগ্রহণ করে। তাই তাঁরা কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। তাঁদের বিশ্বাস, আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন কমলা হ্যারিস, তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব এক নতুন আমেরিকা দেখতে পাবে।

তবে সাধারণ ভোটাররা এবার নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সেগুলো হচ্ছে, অর্থনীতি, অভিবাসন, গণতন্ত্রের হুমকি, স্বাস্থ্য, হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ, গর্ভপাতবিষয়ক আইন। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও ভোটাররা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো জয়–পরাজয় নির্ধারণ করবে, সে অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে মিশিগান, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নাভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। এই ৭টি রাজ্যে রয়েছে ৯৩টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এই সাতটি রাজ্যে যিনি জিতবেন, তিনিই হবেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। এবার চলুন দেখি এই সাতটি অঙ্গরাজ্যের সর্বশেষ নির্বাচন পরিস্থিতি।

গতকাল রোববার (৩ নভেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কর্তৃক জরিপে দেখা যায়, দুজন প্রার্থীই ন্যূনতম ব্যবধানে কোথাও এগিয়ে বা পিছিয়ে রয়েছেন। অ্যারিজোনায় ৩ নভেম্বরের জনমত জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প ১.৬ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন। এখানে ১১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। ৩ নভেম্বরের জনমত জরিপে জর্জিয়ায় ট্রাম্প ১.২ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন। এখানে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। একই জরিপে দেখা যায়, মিশিগানে কমলা হ্যারিস ১.৫ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন। এখানে ১৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। ৩ নভেম্বরের সর্বশেষ জনমত জরিপে নেভাডায় ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন ০.৬ শতাংশ, এখানে ৬টি ইলেকটরাল কলেজ ভোট রয়েছে। নর্থ ক্যারোলাইনায় ১.২ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প, এখানে ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় ৩ নভেম্বরের সর্বশেষ জনমত জরিপে ০.১ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প, এখানে ১৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। উইসকনসিনে ০.৮ শতাংশ এগিয়ে রয়েছেন কমলা। এখানে ১০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে।

অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর চেয়ে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো জয়–পরাজয় নির্ধারণ করবে বলে প্রার্থীরা এসব অঙ্গরাজ্যে একাধিকবার সভা–সমাবেশ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। রোববার ৩ নভেম্বর কমলা হ্যারিস মিশিগানের ডেট্রয়েট, পন্টিয়াক ও ইস্ট ল্যান্সিংয়ে সভা–সমাবেশ করেছেন। ইস্ট ল্যান্সিংয়ের সমাবেশে তিনি আরব–আমেরিকানদের উদ্দেশে গাজায় যুদ্ধে মানবিক বিপর্যয়ের কথা বলেন এবং তিনি বিজয়ী হলে যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আজ সোমবার ট্রাম্প মিশিগানে আসছেন। তিনি আজ রাতে গ্র্যান্ড র‍্যাপিডের সমাবেশ ভাষণ দেবেন। এর আগেও তিনি এখানে একাধিকবার এসে নির্বাচনী সমাবেশ করে গেছেন।

আরও পড়ুন

এই প্রথমবার মিশিগানে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, নির্বাচনের ৯ দিন আগ থেকেই ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন, জানা গেছে এ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় ১০ লাখ ২৫ হাজার ৪ জন মিশিগানের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে ১৯ লাখের বেশি ভোটার এবসেন্টি ব্যালেটের মাধ্যমে ভোট দেবেন বলে তাঁদের এবসেন্টি ব্যালেট পূরণ করেছেন বলে জানা গেছে। মিশিগান ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের মিশিগান ভোটিং ড্যাশবোর্ড থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪০ জন ভোটার এবসেন্টি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে স্থানীয় ভোটিং ক্লার্কের কাছে তাঁদের ব্যালেট জমা দিয়েছেন। মিশিগানে আনুমানিক ৭২ লাখ সক্রিয় রেজিস্টার্ড ভোটার রয়েছেন। তবে ৭৯ লাখ মানুষ রয়েছেন, যাঁরা ভোট দেওয়ার বয়স রয়েছে। এদিকে সিএনএনের এক সংবাদ থেকে জানা যায়, সারা আমেরিকায় এ পর্যন্ত ৭ কোটি ৫০ লাখ ভোটার ইতিমধ্যেই তাঁদের ভোট দিয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন