বিয়ের পাত্রী-১ম পর্ব
এ পর্যন্ত আমি আমার বিয়ের জন্য ছয়টি পাত্রী দেখেছি। কিন্তু ছয়জনই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আমাকে বাতিল করে দিয়েছে। কাল আমি সপ্তমবারের মতো বিয়ের পাত্রী দেখতে যাচ্ছি।
এই সপ্তম পাত্রীর বিষয়ে আমার পরিবার খুবই সিরিয়াস। তাদের ধারণা, দুনিয়ায় এর চেয়ে ভালো পাত্রী আর নেই। আর সে কারণেই তারা চাইছে না, কোনোভাবেই এই পাত্রী তাদের হাতছাড়া হয়ে যাক।
সাধারণত ছেলেদের বিয়ের আগে দুলাভাই, বড় ভাই এবং বন্ধু–জাতীয় পুরুষেরা বুদ্ধি, পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমার বিয়ের ব্যাপারে বাবা, মামা, চাচা, খালু, দুলাভাই, বড় ভাই, বন্ধু—কেউই বাদ যাচ্ছে না। যখনই যাঁর সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তখনই তিনি পাত্রীর সামনে গিয়ে আমি কীভাবে কথা বলব, কতটুকু কথা বলব, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন। খুবই বিব্রতকর এক অবস্থা।
এখন রাত আটটা। এ মুহূর্তে আমাদের বাসার ছাদে আমাকে নিয়ে মিটিং হচ্ছে। মিটিংয়ের উপস্থিত আছেন আমার চাচা, মামা, খালু, বড় ভাই ও দুলাভাই। মিটিংয়ের অ্যাজেন্ডা—‘পাত্রীর সামনে নিজেকে যোগ্য পাত্র হিসেবে উপস্থাপন।’
মিটিংয়ে উপস্থিত প্রত্যেকের উপদেশের অত্যাচারে মনে হচ্ছে ছাদ থেকে দৌড়ে চলে যাই। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কারণ, ছাদের দরজা বাবা লক করে নিচে চলে গেছেন। মিটিং শেষ হলে চাচা ফোন করে বাবাকে সবুজ সংকেত দেবেন, তখন বাবা এসে দরজা খুলে দেবেন। যার কারণে মিটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
আলোচনা শুরু করলেন আমার চাচা রফিক সাহেব। তিনি প্রচণ্ড রাগী মানুষ। আমাদের পরিবারের আমরা সবাই তাঁকে যমের মতো ভয় পাই। উনি সাধারণত আমাকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করেন। তবে মিটিং বলে কি না জানি না, উনি আজ আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে বক্তব্য শুরু করলেন। উনি আমার দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বললেন,
–ছেলেমেয়ে বড় হলে তারা মা–বাবার বন্ধু হয়ে যায়। সেই হিসেবে তুমি এখন আমাদের তোমার বন্ধু মনে করতে পারো। আমরা এখন এখানে বন্ধুর মতো সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, তুমি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পাবে না।
-বলেন কী, আপনারা সবাই এখন আমার বন্ধু?
-হু।
-ভেরি গুড। রফিক, একটা সিগারেট ধরা। আয় দুই বন্ধু মিলে দুইটা সুখটান দিই।
-থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত ফেলে দেব?
-আরে আপনি রাগ করছেন কেন? আপনিই না বললেন আমরা বন্ধু?
-তাই বলে তুই আমার কাছে সিগারেট চাইবি? তুই বলে সম্বোধন করবি? বেয়াদবির একটা সীমা থাকা উচিত।
-চাচা, আপনি ভালো করেই জানেন, আমি ধূমপান করি না। এমনি মজা করে বললাম।
-আজাইরা মজা করবা না। তুমি কমেডিয়ান না। একটা কথা মনে রাখবা, মেয়েরা জোকার বন্ধু পছন্দ করে, কিন্তু জোকার স্বামী পছন্দ করে না। শোনো, পাগলামি আর জোকরি করলে কখনো স্ত্রী থাকবে না।
চাচার কথা শেষ হতেই মামা বাঁকা চোখে চাচার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ভাইজান কি কথাটা আমাকে খোঁচা মেরে বললেন? আমি খেয়াল করে দেখেছি, আপনি সব সময় আমাকে খোঁচা মারার চেষ্টা করেন। এটা কিন্তু ঠিক নয়। আমার স্ত্রী আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে সেটা সত্য। কিন্তু কারণটা কী, সেটা সে কাউকে বলেনি।
তাহলে আপনি কীভাবে জানলেন সে আমার পাগলামির কারণে চলে গেছে? সে আমাকে কারণটা না বললেও আমি বুঝি কেন সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। সে চলে গেছে তার প্রতি আমার অধিক ভালোবাসার কারণে। সে আসলে আমার এই অতিরিক্ত ভালোবাসার লোডটা নিতে পারছিল না। কবির ভাষায় বললে বলতে হয়, ‘বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।’
চাচা মামার কথার কোনো উত্তর দিলেন না। তিনি আমাকে বললেন,
-তুমি ফরসা লম্বা একটা ছেলে। নায়কের মতন চেহারা। অথচ এর আগের ছয়টি মেয়ের কেউই তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তুমি জানো এর কারণ কী?
-না চাচা, আমি জানি না। তারা কেউ আমাকে কোনো কারণ বলেনি। শুধু বলছে আপনি বাতিল।
আমার কথা শেষ না হতেই মামা বললেন,
-শেষ দেখা মেয়েটি আবার এ কথা বাংলা ভাষায় বলেনি। সে ইংরেজি ভাষায় বলেছে। সে ইংরেজিতে বলেছে, ইউ আর রিজেক্টেড। কী অপমান, কী অপমান। আমি হলে তো লজ্জায় ‘কাইফা হালুকা’, মানে আত্মহত্যা করতাম।
মামা বাক্য শেষ করেই দেখলেন, চাচা তার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে আছেন। তিনি ভুরু কুঁচকে মামাকে বললেন,
-কাইফা হালুকা মানে আত্মহত্যা করা? গাধামির একটা সীমা থাকা উচিত।
চাচার কথায় মামা চুপসে গেলেন। এরপর চাচা আমার দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বললেন,
-শোনো, এখন যুগ পাল্টে গেছে। মেয়েরা এখন শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে মজে যায় না। তারা পাত্রের মাঝে আরও কিছু বিষয় দেখতে চায়। সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ?
-জি, চাচা।
এবার মামা আমাকে উপদেশের সুরে বললেন,
-রাজু শোন, তোকে মেয়েদের মন জয় করার একটা টেকনিক শিখিয়ে দেই। তুই আগামীকাল মেয়ের সামনে স্টাইল করে টেনে টেনে কথা বলবি। দেখবি তোর কথা বলার স্টাইল দেখে মেয়ে পাগল হয়ে যাবে।
-মামা, আমি বুঝিনি। টেনে টেনে কথা বলব মানে কী?
-যাত্রা দেখিসনি? যাত্রায় যেভাবে টেনে টেনে সুর করে ডায়ালগ বলে সেভাবে। দাঁড়া, আমি তোকে অভিনয় করে দেখাচ্ছি।
এ কথা বলেই মামা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর ঠিক যাত্রাপালায় যেভাবে অভিনেতারা কথা বলে, সেভাবে বললেন,
-না না না সেনাপতি, আমি কিছুতেই ওই ডাকু মর্জিনার কাছে আত্মসমর্পণ করব না। এতে যদি আমার জীবনও চলে যায় যাক। যদি রাজ্যই না থাকে, তাহলে আমি এই জীবন দিয়ে কী করব? আমি কি বাকি জীবন শুধু আলুর শিঙারা বানাব? না না না...তা হবে না। যতক্ষণ আমার জীবন আছে, আমি লড়াই করব। হু হা হা হা হু হা হা হা...
খেয়াল করে দেখলাম, উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে মামার দিকে তাকিয়ে আছেন। আর চাচা মামার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে, রাগে চাচার চোখের মণি বের হয়ে আসবে। মামা ভয় পেয়ে চাচাকে যাত্রার ঢঙেই বললেন,
-না না না রফিক ভাই, আপনি এমন করে আমার দিকে তাকাবেন না। আপনার ওই চোখ দেখলে আমার ডর করে, ডর করে, ডর করে।
চাচা মামার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-ঠিক এ কারণেই আপনার বউ আপনারে ডিভোর্স দিয়া চলে গেছে। শোনেন, পাগলামিরও একটা লেভেল থাকে। মাঝেমধ্যে আপনি সে লেভেলও অতিক্রম করে ফেলেন। পারলে মানুষকে ভালো পরামর্শ দিন, আর না পারলে চুপ থাকেন। প্লিজ কাউকে উল্টাপাল্টা বুদ্ধিপরামর্শ দেবেন না।
চাচার কথা শুনে মামা এবার চেহারার মধ্যে একটা গম্ভীর ভাব এনে আমাকে পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন,
-শোন, স্ত্রীকে কখনোই কষ্ট দেওয়া যাবে না। ওরা যা–ই বলবে, সেটাকেই সঠিক হিসেবে ধরে নিতে হবে। কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। তাহলে দেখবি তোদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে সিমেন্টের পিলারের মতো শক্ত। হাতুড়ি দিয়াও কেউ সেটা ভাঙতে পারবে না। কেউ যদি ভাঙার জন্য হাতুড়ি দিয়া বাড়িও দেয়, তবে সে শুধু ঢং ঢং আওয়াজই শুনবে, কিন্তু ভাঙতে পারবে না।
-তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু মামা, পাত্রী যদি ভুল বলে, তা–ও কি মেনে নেব? ধরেন, মেয়ে বলল, কাঁঠালগাছ লাগাতে হবে ধানগাছের মত চার আঙুল ফাঁক রেখে রেখে। আমি কি এখন তাকে বলব, তুমি ঠিক কথাই বলেছ?
এ কথা শুনেই আমার খালু আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
-বললে তোর সমস্যা কী? তুই কি দেশের কৃষিমন্ত্রী? ব্যাটা ফাজিল, কাঁঠালগাছ-ধানগাছ নিয়ে তোর চিন্তা করার কী দরকার? তুই কি কাঁঠাল ব্যবসায়ী?
আমি খালুর কথায় উত্তর দিলাম না। বড় ভাই বললেন,
-শোন, তোকে নারীর সাইকোলজি বুঝতে হবে। মেয়েরা চায় তার স্বামী হবে বীরপুরুষ। তবে সেটা হবে অন্য মানুষের সঙ্গে। স্ত্রীর সঙ্গে নয়। স্ত্রীর সামনে সে হবে চাবি দেওয়া পুতুল। যতটুকু চাবি দেবে, ততটুকু চলবে, ততটুকু কথা বলবে। দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী ভুল-সঠিক যা–ই করুক, প্রতিবাদ করা যাবে না। স্ত্রী অন্যায় করলেও তা মেনে নিতে হবে।
-বুঝেছি। মানে তোমার মতো হতে হবে। কিন্তু ভাইয়া, এটা তো ঠিক নয়। স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর কথার মূল্য দিতে হবে। কিন্তু স্ত্রী যদি অন্যায় করে বা ভুল বলে, তাকে তো সেটা ধরিয়ে দিতে হবে, বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে সে ভবিষ্যতে সংশোধন হতে পরে। ভাইয়া শোনো, আমি কোনো অন্যায়-অপরাধ মেনে নিতে পারব না।
আমার কথা শেষ হতেই খালু ভুরু কুঁচকে বললেন,
-কেন মানতে পারবি না? তুই কি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? দেশের ন্যায়-অন্যায় দেখার দায়িত্ব কি প্রধানমন্ত্রী তোকে দিছে?
আমি খালুর কথা এবারও গায়ে মাখলাম না এবং কোনো উত্তর দিলাম না। দুলাভাই বললেন,
-রাজু শোনো, পাত্রীর পছন্দই হবে তোমার পছন্দ। সে তার যা যা পছন্দ বলবে, তুমিও সেটাই পছন্দ করবে।
-এটা কোনো কথা, দুলাভাই? ধরেন পাত্রী বলল, তার পছন্দের পাখি হচ্ছে কাক। তাহলে এখন কি আমাকে কাক পছন্দ করতে হবে? না দুলাভাই, এটা আমি মানতে পারব না।
খালু এবার আরও জোর গলায় বললেন,
-কেন মানবি না? তুই কি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী? কাউয়া নিয়ে তোর সমস্যা কী? কাউয়া কি তোর মাথায় হাগু করছে?
আমি এবারও খালুকে কিছু বললাম না। দুলাভাই বললেন,
-ধরো মেয়ে তোমাকে বলল, আমি হানিমুনে বিদেশ যেতে চাই। তখন তুমি কী বলবে?
-আমি বলব, আমার ইচ্ছা দেশের মধ্যে কোথাও যাওয়া। যেমন খাগড়াছড়ি। শুনেছি সেখানকার প্রকৃতি অনেক সুন্দর। আর তা ছাড়া দেশের মধ্যে গেলে আমাদের পর্যটনশিল্পও সমৃদ্ধ হবে।
খালু আবারও ধমক দিয়ে বললেন,
-ওই, তুই কি দেশের পর্যটনমন্ত্রী? দেশের পর্যটনশিল্প সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব কি তোর? আর তুই যে খাগড়াছড়ির এত প্রশংসা করছিস, তুই কি খাগড়াছড়ি বানান জানিস?
আমি খালুর কথা এবারও গায়ে মাখলাম না। ভাইয়া বলল,
-বিদেশে গেলে তোর সমস্যা কী?
-কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমি দেশের অর্থ বিদেশে গিয়ে কেন খরচ করব? এভাবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমানো তো ঠিক না।
খালু একইভাবে ধমক দিয়ে বললেন,
-ওই, তুই কি দেশের অর্থমন্ত্রী? দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখার দায়িত্ব কি তোর? তোরে টাকা দেবে তোর বাপে। তাহলে তোর বিদেশে গেলে সমস্যা কী?
আমি অনেক কষ্টে এবার নিজেকে কুল রাখলাম। খালুর কথা গায়ে মাখলাম না।
মামা বললেন,
-ধর, মেয়ে বলল, সে অনেকগুলো বাচ্চা নেবে। তুই কী বলবি?
-সঙ্গে সঙ্গে ‘না’ বলব। আমি দুটোর বেশি বাচ্চা নেব না।
খালু ভুরু কুঁচকে বললেন,
-কেন নিবি না? তুই কি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী? জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা কি তোর দায়িত্ব? তোর প্রতিবছর বাচ্চা নিতে সমস্যা কী? তুই দরকার হলে প্রতিবছর একটা করে বাচ্চা নিবি।
এতক্ষণ সহ্য করলেও আর পারলাম না। আমি খালুকে বললাম,
-খালু, আমি বুঝলাম না। আপনার সমস্যা কী? তখন থেকে আমি যা–ই বলছি, আপনি তাতেই বলছেন আমি কি অমুক মন্ত্রী নাকি তমুক মন্ত্রী। আমি বুঝলাম না, আপনি খামাখা আমাকে ধমকাচ্ছেন কেন?
এই পর্যায়ে চাচা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
-বেয়াদবি করবি না। তোর বিয়ে, তুই কেন এত কথা বলছিস? শোন, আমরা সবাই তোকে সাহায্য করতে চাইছি। কারণ, তোর বিয়ের পূর্বাভিজ্ঞতা নেই। জীবনে প্রেমও করিসনি যে মেয়েদের মনমানসিকতা বুঝবি। আমরা এখানে সবাই বিবাহিত। আমরা আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তোকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে আগামীকাল তোকে মেয়ে রিজেক্ট করতে না পারে। বারবার তোকে মেয়েরা বিয়ে করতে রিজেক্ট করছে, এটা যে কতটা অপমানজনক, সেটা কি তুই বুঝিস?
-চাচা, এখানে অপমানের কী আছে? আমাকে তাদের ভালো লাগেনি, তাই তারা রিজেক্ট করেছে। এটা তো স্বাভাবিক একটা ঘটনা, তাই না?
-থাবড়াইয়া তোর দাঁত ফেলে দেব। খবরদার তর্ক করবি না। আমরা যেভাবে বলছি, তুই সেভাবেই মেপে মেপে কাল মেয়ের সঙ্গে কথা বলবি।
-ঠিক আছে চাচা, মেয়ে কাল যা যা বলবে, আমি সবটাই মেনে নেব। কোনো রাগ করব না। তর্ক করব না। মেয়ের পছন্দই আমার পছন্দ। মেয়ে যদি বলে রাত, আমিও বলব রাত। মেয়ে যদি বলে দিন, আমিও বলব দিন। এখন কি আমি আমার রুমে যেতে পারি?
এ পর্যায় খালু চাচাকে বললেন,
-ভাই, এরে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই। এ ঠিকই কাল উল্টাপাল্টা কিছু বলে রিজেক্ট হয়ে আসবে। আমার একটা পরামর্শ আছে। কাল আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন রাজুর সঙ্গে ওই রেস্টুরেন্টে যাবে এবং রাজুকে সাহায্য করবে।
চাচা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
-উত্তম পরামর্শ।
আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে বললাম,
-চাচা, এসবের মানে কী? মেয়ে তো একা আসবে। তাহলে আপনারা কেন আমার সঙ্গে যাবেন? এটা কেমন কথা?
-মেয়েকে বলে দিচ্ছি, সে–ও সঙ্গে করে কাউকে নিয়ে আসবে।
এরপর চাচা আমার দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-জামাই, তু্মি কাল রাজুর সঙ্গে যাবে।
আমি প্রতিবাদ করে বললাম,
-না চাচা, দুলাভাইকে আমি সঙ্গে নেব না। উনি বাচাল মানুষ। ফাউল কথা বেশি বলেন।
-ছি রাজু ছি। তুই তোর বোনের জামাই সম্পর্কে এমন কথা বলতে পারলি! মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
-চাচা, আমি দুলাভাইকে সম্মান করি এবং ভালোওবাসি। কিন্তু...
-ঠিক আছে, তোর দাবি মেনে নিলাম। তোর দুলাভাই তোর সঙ্গে যাবে না।
-ধন্যবাদ, চাচা।
-তোর সঙ্গে তোর মামা যাবে।
-চাচা, এটা কী বললেন? ওনার সমস্যা তো আরও বেশি। উনি কোথায় কী বলবেন, সেটাই তো বোঝেন না। দেখা যাবে উনি উল্টাপাল্টা কথা বলে মেয়ের সামনে আমাকে পচায়ে গন্ধ ছুটায় দিছে।
-তুই কী বলতে চাস, এই পরিবারের সবাই আউল-ফাউল আর তুই একা জ্ঞানী মানুষ?
-আমি কি তা–ই বলেছি?
-শোন, আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। কাল তোর মামা তোর সঙ্গে যাবে।
আমি মামার দিকে তাকিয়ে হতাশ কণ্ঠে বললাম,
-মামা, আপনি কি আসলেই যাবেন?
-অবশ্যই যাব। শুধু যাবই না, মেয়ের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর আমিই দেব। শোন, মেয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে, সঙ্গে সঙ্গে তুই তার উত্তর দিতে যাবি না। অপেক্ষা করবি। আমি কী বলি, সেটা ফলো করবি। শোন, অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে।
আমি অবাক হয়ে মামার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি শিওর, এই পাগল কাল একটা ভেজাল লাগাবেই। চলবে...
আগামীকাল ২য় পর্ব
লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]