গ্লাসগোর ডায়েরি–৩
সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টার সিটিতে অবস্থিত পৃথিবী বিখ্যাত ন্যাশনাল গ্যালারি ১৩ শতক থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত চিত্রিত প্রায় আড়াই হাজার পেইন্টিংয়ের আশ্রয়কেন্দ্র। কথিত আছে, ব্রিটিশ সরকার ১৮২৪ সালে মাত্র ৩৮টি পেইন্টিং ক্রয় করে এই সংগ্রহশালা শুভ উন্মোচন করে। এটি মূলত পাশ্চাত্য শিল্পীদের ক্রমবিকাশকে ধারণ করেছে। মনে হলো, মধ্যযুগ থেকে আধুনিক সময়ের পূ্র্বপর্যন্ত রূপান্তরিত ইউরোপের উপাখ্যান এই গ্যালারি। চার্চের আধিপত্য, সামন্তবাদ আর যন্ত্রশিল্পের পদধ্বনির মধ্যেও অমন ঘনশ্যাম ‘ইখোয়িং গ্রিন’ প্রকৃতির দেখা মেলে যে মন ফিরে যেতে চায় সুদূর অতীতে।
গ্যালারিতে প্রবেশ করতেই শিল্পসাম্রাজ্যের যাবতীয় বই। একটির পর একটি পাতা ওলটাচ্ছি, টিভির রিমোটের মতো কোথাও থামার জো পাচ্ছি না। বিশাল বিশাল ভলিউম। মনে হচ্ছে, এই শিল্প জাদুঘর পরিদর্শন না করে ২–৪টা ভলিউম খরিদ করতে পারলে মন্দ হতো না। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, ক্রমাগত মিকেল এনজেলো, লেওনার্দো দা ভিঞ্চি, মানে, আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী ভ্যান গঘের দেখা পেলাম। গঘের আত্মপ্রতিকৃতির সামনে অনেকটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এই শিল্পী নিজের কান কেটে প্রিয়তমাকে উপহার দিয়েছিলেন, অবশ্য প্রিয় নারীর মন তিনি জয় করতে পারেননি। মধ্যগগনের সূর্যকে সাক্ষী রেখে গমখেতে শুয়ে পিস্তলের একটিমাত্র গুলি খরচ করে তিনি জীবনের যবনিকা টেনেছিলেন। জীবদ্দশায় তাঁর একটি ছবিও বিক্রি যায়নি, অথচ কোটি মুদ্রা তো বটেই, এখন তাঁর নামে মিথ্যা চিত্রকর্মও প্রদর্শিত হয়। শিল্পী যে জরাজীর্ণ চেয়ারে বসে ছবি আঁকতেন, সেটিরও একটি পেইন্টিং দেখে অবাক হয়েছি। এর শানে–নজুল হলো কোনো বড়/ মহান কর্মযজ্ঞের জন্য সিংহাসন প্রয়োজন পড়ে না। গ্যালারির একটি কক্ষে শিশু-কিশোরদের পেইন্টিং শেখানো হচ্ছে। রং, তুলি, ইজেল—সব রেডি। কিন্তু অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দুইটায় আসতে হবে, আইমান আদিবার মন খারাপ হলো সেই সুযোগ করা গেল না বলে।
গ্যালারি থেকে বের হয়ে সামনেই ট্রাফালগার স্কোয়ার। ১৮০৫ সালে ব্রিটিশ নৌবাহিনী কর্তৃক ট্রাফালগার বন্দরে স্পেন ও নেপোলিয়নশাসিত ফ্রান্সকে হারানোর মহানন্দকে সমুজ্জ্বল রাখার জন্য এই স্কোয়ারের নামকরণ। এটি আমাদের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ বা হালের শাহবাগ মোড়—বর্তমানে লন্ডনবাসীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন ও উৎসব-উদ্দীপনার মিলনস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুনে ভালো লাগল, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে বাংলা নববর্ষ ও ঈদ উদ্যাপন করেন।
এবার কিছুক্ষণ হাঁটি। পুরো লন্ডনই একটি পর্যটন নগরী, এ কথা কেউ কোনো দিন আমাকে বলেনি! হাজারো তরুণ–বৃদ্ধ–আবাল–বনিতা হেঁটে চলছে। হাঁটতে হাঁটতে নব্বই দশকে বাংলা ছবির দর্শকদের সিনেমা হলের সামনে লাইনের মতো মনে হলো। ভিড় ঠেলে (ঠেলা তো আর যায় না, রয়ে সয়ে আরকি!) সামনে এগিয়ে দেখি, এর নাম ব্রিটিশ মিউজিয়াম। মাফ চাই! এর বর্ণনা আমার দ্বারা এ মুহূর্তে অসম্ভব। সারা দিন কাটিয়ে তিন ভাগের এক ভাগও দেখতে পারিনি, বড়ই আফসোসের বিষয়! পুরো বিশ্ব ইতিহাসকে ব্রিটিশ মিউজিয়াম বন্দী করে রেখেছে। গ্রিক, রোমান, পারস্য, মিসরীয়, সিন্ধু, হরপ্পা মহেঞ্জোদারো। সবকিছু। পুরো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নাম–নিশানা মুছে গেলেও যদি ব্রিটিশ মিউজিয়াম টিকে থাকে, তাহলেও ‘ব্রিটিশ’ হারাবে না। আমাদের সব বিদ্যার অর্ধেকটাই যেন ধারণ করে এটি।
হাজারো ছবি, মূর্তি, তৈজস, অ্যান্টিক, শিলালিপি, মমি, প্রাচীর, ফটক ইত্যাদি দেখে চোখ যখন ক্লান্ত, তখন আমরা বেরিয়ে পড়েছি টাওয়ার ব্রিজের উদ্দেশে। শীত যথারীতি কামড় বসাচ্ছে, সঙ্গে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আদিবার মন বিগড়ে গেছে—আর ভাল্লাগছে না!
১৮৮৬ সালে নির্মিত এই টাওয়ার ব্রিজ পূর্ব লন্ডনবাসীদের যাতায়াতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ভাগ্য মন্দ, কোনো জাহাজ এই সময়ের মধ্যে আসেনি, তাই টাওয়ার ব্রিজ কীভাবে মাঝখানে দ্বিখণ্ডিত হয়ে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়, তা দেখা হলো না। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লোক ৮০০ ফুট লম্বা এই ব্রিজ পায়ে হেঁটে পার হয়। ব্রিজের গায়ে খোদাই করা আছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশলী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম।
ইফতারের সময় আর বেশি বাকি নেই। এদিকে ঘন ঘন ফোন আসছে স্ত্রীর মোবাইলে হোস্টের তরফ থেকে। ভুল ট্রেনে চেপে বসেছিলাম, কেঁচে গণ্ডূষ করতে হলো। ইফতারের সময় শেষ। ট্রেন থেকে নেমে দেখি, স্ত্রীর বান্ধবীর হাজব্যান্ড সাদাত ভাই গাড়ি নিয়ে হাজির।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে কর্মরত এই ভদ্রলোক ৩ বছর নিজ দেশে পরবাসী হয়েছিলেন, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে পোস্টিং পেয়ে! প্রটোকল মাড়িয়ে কোভিডের শেষ দিকে আমাদের কুমিল্লার বাসায় এসেছিলেন ২ বান্ধবীর কোলাকুলির ব্যবস্থা করার জন্য। তাঁর বাসায় ঢুকে দেখি, ইফতারের প্লেট সাজানোই আছে। বোনাস হিসেবে আখনি (বিরিয়ানি?), মাংসের আইটেম, ফল, পিঠা, মিষ্টি ইত্যাদি। বান্ধবীর ছেলে–মেয়ে দুজন বড় হয়ে গেছে, মাশা আল্লাহ। নিজেদের হাতে আঁকা ছবি আমাদের দেখাল, ‘ওয়াও, অ্যামাজিং!’ ‘মুনতাহা সুইট সিলটি মাত মাতইন। মুনতাসীর মে নট স্পিক সিলটি আইদার।’ রাত ১১টা নাগাদ জমিয়ে আড্ডা মেরে, ক্লিক ক্লিক শেষ করে আমরা উঠলাম।
দুই বান্ধবীর চোখ যখন আর্দ্র, আইমান-আদিবার কী আনন্দ! বিদেশে থেকেও দেশি নতুন জামা-কাপড়ে ঈদ করা যাবে। বান্ধবী আয়শা সুলতানা লাকির (হার এক্সিল্যান্সি!) তরফ থেকে পুরো পরিবারের জন্য ঈদ প্যাকেজ! সাদাত ভাই যখন আমাদের স্টেশনে ড্রপ দিলেন, তখনই ট্রেন এসে আমাদের ছোঁ মেরে তোলে নিয়ে গেল, ঝিক্...ঝিক্...ঝক্...ঝক্...ঝক্ত ঝক্!
টানা ৫ দিনের ঝটিকা সফরে সবাইকে খুবই ক্লান্ত-শ্রান্ত মনে হচ্ছে, তবু মনের জোরে ছুটে চলছি। গত রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে টিকিট কনফার্ম করে রেখেছিলাম। এই প্রথম স্টেশনে এসে মনে হলো, জনারণ্য। ট্রেনে ওঠে দেখি, এ যেন আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন। তবে ট্রেনের চেহারা–ছবি মাশা আল্লাহ, ভালোই আছে। অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে রেজিস্ট্রেশন করলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিমের সঙ্গে, যারা আমাদের গাইড হিসেবে কাজ করবে।
Dominus Illuminatio Mea—Universitas Oxoniensis. প্রতিপালকই আমার আলো—এই হলো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মোরাল। ১০৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২ হাজার (প্রায়) শিক্ষক ও ২৫ হাজার (প্রায়) শিক্ষার্থী জ্ঞানের চাষ করেন। গাইড হিসেবে পেলাম অক্সফোর্ড থেকেই মনোবিজ্ঞানে সদ্য স্নাতকোত্তর এক তরুণকে। পুরো ৪ ঘণ্টার ট্যুরে চমৎকার ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন এখানকার সবকিছু। অক্সফোর্ডে ভর্তি হওয়ার দিন পর্যন্তই আনন্দ থাকে, পরদিন থেকে আর কোনো আনন্দ নেই—পরীক্ষাপদ্ধতি, অ্যাসেসমেন্ট, টিউটর একসেস, ফান্ড, ডোনেশন, আবাসন, লাইব্রেরি/ ল্যাব ওয়ার্ক ইত্যাদি ইত্যাদি। একটি চার্চকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যযুগ পর্যন্ত শিক্ষকেরা বিবাহ করতে পারতেন না (সেইন্ট হিসেবে নয় কিন্তু)। ফলে শিক্ষকেরা যে বেতন/ সম্মানী পেতেন, তা খরচ করার কোনো উপায় থাকত না। উপরন্তু তাঁরা মৃত্যুর পূর্বে সব সম্পত্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে উইল করে যেতেন। বিনিময়ে সম্মানস্বরূপ তাঁদের দেহাবশেষ বিশ্ববিদ্যালয়েই রক্ষিত হতো।
ক্রমে গাইড আমাদের অক্সফোর্ড লারনার্স ডিকশনারি যেখান থেকে সম্পাদনা করা হয়, সেই ভবনের সামনে নিয়ে গেলেন। ইস্ট–ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের অফিসারদের যে ভবনে প্রশিক্ষণ প্রদান করত (গাইডের ভাষ্যমতে, একই জায়গায় প্রথম দিকে আইসিএস অফিসারদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো) সেখানে গেলাম। আমাদের টিমে নানা দেশের শতাধিক পরিদর্শক। গাইড বেচারার উচ্চমার্গের সেন্স অব হিউমার। অবশ্য তাঁর অঙ্গভঙ্গির কারণে ছোটরাও সব কথা বুঝতে পেরেছে। বেশির ভাগের কাছে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করা জায়গাগুলো। অবশ্য আমার কাছে চমকপ্রদ মনে হয়েছে কনভোকেশন স্থল ও এর দুই পাশের দুটি ভবনকে। ভিসি মহোদয় সমাবর্তন বক্তৃতায় প্রথামত লাতিন ভাষায় যে বক্তব্য হাজির করেন, তা প্রায় সব স্নাতকেরই অজানা—এ কথা শুনে হাসি পেল। রেডক্লিফ ক্যামেরা নামে (মনে হলো কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি) বিশাল ভবনের সামনে ছবি তুললাম। চার্চেও প্রবেশ করা গেল। ঝুম করে একপশলা বৃষ্টি নামল। ট্যুর গাইড তার কর্তব্য শেষে বিনিময় নিয়ে বাই বাই বলল। আর বলে গেল, বোডলিয়ান লাইব্রেরিতে (মূলত ১৩ মিলিয়ন বইয়ের সংগ্রহশালা) এবং পানশালায় একটু ঢোঁ মারতে। কোনোটাই করা হলো না, দুটির কথা শুনেই ভয় পেয়েছি।
অগত্যা কিছু ছবি তুললাম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯টি কলেজের সমাহার। বিশ্বনন্দিত ট্রিনিটি কলেজে প্রবেশ করলাম, স্বল্প সময়ের মুসাফির—আগামাথা কিছুই বোঝার জো নেই। সত্যি বলতে, ভয়ংকর আশাহত হয়েছি। কারণ, যে অক্সফোর্ডকে এত দিন কল্পনায় এঁকেছি, তা খুঁজে পেলাম না। ইংরেজি সাহিত্যের ইউনিভার্সিটি উইটদের, স্কলার জিপসিকে, সাহিত্যে পাওয়া অক্সফোর্ডের প্রকৃতিকে খুঁজে পেলাম না। অবশ্য পুরো অক্সফোর্ড শহরেই আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা শুধু এর হেড অর হার্টে পা ফেলেছি। কিছুই বোঝার পারি না।
দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
ফিরতি ট্রেনের সময় হয়ে এল। এতো কিছুর মধ্যেও অক্সফোর্ড মিউজিয়াম দেখা হলো। এবার ট্রেনে ওঠার সময় দেশের ফ্ল্যাভার পেলাম, ৪ জন কোনোমতে সিট নিয়ে বসতে পারলাম। শাটল ট্রেনের মতো অনেকেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এবার বাইরের প্রকৃতি দেখি—ভেড়া আর ভেড়া, জনমানবের চিহ্ন নেই। প্রকৃতি তথৈবচ। তাকিয়ে দেখি, আমার সহযাত্রী তিনজনই নেতিয়ে পড়েছে, যেন জলসরোবরে ভেসে থাকা বাসি রক্তজবার সারি।
ট্রেন ছাড়ার পর মনটা একটু স্থির হলো। ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের ভ্রমণ, প্রায় ১৫ হাজার টাকা গচ্চা! বাংলাদেশের প্রবাসীরা যে দেশেই থাকুক, সে দেশের মুদ্রাকে ‘টাকা’ বলে থাকে। ১০০ পাউন্ডকে ১০০ টাকা, ৫০০ রিয়ালকে ৫০০ টাকা। আমার হয়েছে সমস্যা, আমি পাউন্ডকে বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করে হিসাব মিলাই। হয়তো দেশের টাকা খরচ করে চলি বিধায়। টাকার ডিভেল্যুয়েশনের কারণে এমনিতেই বড় রকমের ধরা খেয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ২৭ লাখ টাকা টিউশিন ফি দেওয়ার পরও বিনিময় হারের অবনতির কারণে আমাকে আরও প্রায় ৪ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। লিভিং কস্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ ফেলোশিপের ২৩ লাখ টাকা দেশের ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল হিসেবে রক্ষিত ছিল। সেপ্টেম্বর ২২-এ যখন এলাম, পরিবারসহ প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা খরচ হলো। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় অঙ্কের টাকা ডিসেম্বরেও আনা যায়নি। স্টুডেন্টশিপ/ ফেলোশিপের ক্ষেত্রেও এ আদেশ বর্তায় কি না, আমার জানা নেই। এপ্রিলে এসে পাউন্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাওয়া হয়ে গেল! টাকার দরপতনের খেসারত ৫০ লাখের মধ্যে প্রায় ৫ লোখ ৬০ হাজার টাকা, তা–ও এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে।
এই যা! পার্টনার এসে মুখ ভেংচি দিয়ে গেল। ইউরোপে সত্যি সত্যি ওয়াইফ/ হাজব্যান্ডের জায়গাগুলো পার্টনারই দখল করে ফেলেছে। সেদিন মেয়ের এক সহপাঠীর মা এলেন, পোলিশ ভদ্রমহিলা। আমোদ করে বললেন, স্কটিশ পার্টনারের সঙ্গে তাঁর দিনকাল এত ভালো কাটছে যে পোল্যান্ডে ব্যাক করার কথা কল্পনাও করেন না। নোবেলজয়ী উইস্লওয়া সিমবোরস্কাকে নিয়ে দু–চার কথা বলতেই বললেন, ‘ইউ নো বেটার দেন মি অ্যাবাউট হার, আই শোড বি এসেইমড অব। মাই গুডনেস!’ তা হতে যাবে কেন? আমি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের একটু–আধটু খোঁজখবর নিতে পারি না? কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ছোট্ট দীর্ঘনিশ্বাস(!) ছেড়ে তিনি জানালেন, তাঁর প্রাক্তন স্বামীও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। হায়রে ভবিতব্য!
মুখ ভেংচির প্রতিক্রিয়ায় স্ত্রীকে বললাম, হিসাবটা নিজের জন্যই লিখে রাখা। শতভাগ ডিজিটাল সিস্টেমে থেকে এইটুকু ডিজিটাল না হলে কি চলে? ট্রেনের কামরাটি বেশ বড়, ব্যবস্থাপনাও খুবই উন্নত। আমাদের অপজিটে ফরাসি কাপল বসেছেন, ফিসফিস শুনতে শুনতে ট্রেন এগিয়ে যায়। কারণ, ট্রেনের নিজস্ব আওয়াজ তেমন নেই। বাইরে তাকিয়ে থাকি। দিগন্তজুড়ে খোলা মাঠ, সকালের আপেল রং আলো এসে ঠিকরে পড়ছে আমাদের কোলে। দলে দলে ভেড়া নিশ্চুপ ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। আকাশটা আজ অসম্ভব রকমের সফেদ। পরিযায়ী পাখির মতো মন উড়ে যেতে চায় কোনো এক সুদূর অতীতে।
এইসব নিত্যনগণ্য ভাবনার ছেদ পড়ে ওয়েভারলি স্টেশন দেখতে পেয়ে। এডিনবোরার স্টেশনটি অনেকটা এয়ারপোর্টের বৈশিষ্ট্যধারী। স্টেশন অতিক্রম করে সিটিম্যাপে চোখ রাখলাম, টিএলএস কন্টাক্ট সেন্টার মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটাপথ। খানিকটা হাঁটতেই স্যার ওয়াল্টার স্কটের সাক্ষাৎ পেলাম। স্কট মনুমেন্ট: ২০৬ ফুট উচ্চতার এই সৌধ পৃথিবীর কোনো লেখকের সম্মানে নির্মিত দ্বিতীয় বৃহত্তম মনুমেন্ট। এটি স্যার ওয়াল্টার স্কটের (১৭৭১—১৮৩২) স্মৃতিতে ১৮৪৪ সালে গড়া হয়। স্কট একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও ইতিহাসবিদ ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের অনেকেই স্কটকে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করে থাকবেন উভয়ের ঐতিহাসিক উপন্যাসের জন্য। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি স্কটের রোমান্টিক ন্যারাটিভ পছন্দ করি। আমার কাছে বুদ্ধদেব বসুর রোমান্টিক বর্ণনাগুলো স্কটের প্রভাবজাত মনে হয়েছে। তবে অমিতাচারী এই লেখকের পরিণতিও অনেকটা মধু কবির মতো হয়েছিল। সাহিত্য রচনা ও প্রকাশনীর ব্যবসা করে রাজার হালে জীবন যাপন করেও শেষ বয়সে ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে তাঁকে ভবলীলা সাঙ্গ করতে হয়েছিল।
গুলশানের ভিএফএস অফিসের মতো এডিনবোরার টিএলএস সেন্টার জনাকীর্ণ নয়। পরিচয় জেনে ফ্রন্ট টেবিলের কর্তব্যধারী জানালেন, ‘ইয়েস, ইউ আর ইন রাইট প্লেস, প্লিজ জাস্ট ফলো মি।’ চায়নিজ ভদ্রমহিলা ৪ জনের বিশাল পরিবারের ভিসা-প্রক্রিয়ার কাজ করতে পেরে যারপরনাই আনন্দিত। সহকর্মীদের ৪টি পাসপোর্ট দেখিয়ে হেসেই কুটিকুটি, অন্যদের উক্তি—এনজয়! বুঝলাম, এ অফিসে ৪ জনের পরিবার কদাচিৎ আসে। পরিবার ভাঙতে ভাঙতে সব শেষ, ভাঙচুরের আর বাকি নেই কিছু।
পুরো স্কটল্যান্ডে, বিশেষ করে রাজধানী এডিনবোরায় আছে শত শত বীরের মূর্তি আর নামফলক। স্কটিশরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তাদের আত্মত্যাগের বদৌলতেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এত শক্তিশালী ও সুবিলম্বিত হতে পেরেছে। তাই অহংবোধের তাড়নায় তারা নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় উপলব্ধি করে। ছেলের সহপাঠী বন্ধু প্রায়ই বলে, ‘আই হেট ইংল্যান্ড অ্যান্ড দ্য ইংলিশ।’ ছেলের প্রশ্ন, ‘বাবা, কেন?’ যে বলেছে তার কাছেই জানা উচিত নয় কি? পরদিন সহপাঠীর জবাব: বিকজ আই অ্যাম স্কটিশ! কয়েক বছর আগে ইউকেতে থাকা না–থাকা নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল, মাত্র কয়েক পার্সেন্টের ব্যবধানে টিকে গেছে। শুনছি, এই ইস্যুতে শিগগিরই ভোট হবে। আশঙ্কা করি, ভাঙন চলতেই থাকবে। আর তাহলে মাত্র ৪৯ লাখ জন–অধ্যুষিত স্কটল্যান্ড সুইজারল্যান্ডের পরই এককভাবে সবচেয়ে সুন্দর দেশের তকমা ধারণ করতে পারবে।
ভিসা অফিসের কাজ শেষ করে প্রিন্সেস গার্ডেনে টিউলিপ ও চেরির সঙ্গে মোলাকাত। চেরি ফুল বাংলাদেশের লিচুর সিজনের মতো, অল্প কদিনেই হারিয়ে যায়। বিস্তর ছবি তুললাম। পাশেই রয়েছে মধ্যযুগের দুর্গখ্যাত এডিনবোরা ক্যাসল। কিন্তু আমরা স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘর আগে দেখতে চাইলাম। এ যে দেখছি আরেক ব্রিটিশ মিউজিয়াম! কী দেখব আর কী ছাড়ব, কূল–কিনারা করতে পারছি না। শিল্পবিপ্লব, জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার, জন লগি বেয়ার্ডের টিভি আবিষ্কার, (উভয়ে স্কটিশ এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র) রেললাইন ও ট্রেন ডেভেলপমেন্ট, কারখানায় রোবটের ব্যবহার ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করলাম। মজার বিষয় হলো, একটুকরো বাংলাদেশেকেও খুঁজে পেলাম এখানে। অনেক জাদুঘরে বাংলার অনেক নিদর্শন ঢাকা পড়ে গেছে ইন্ডিয়া নামের আড়ালে। যেমন বুদ্ধমূর্তি, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, গাজী পীর, রয়াল বেঙ্গল টাইগার, আরেও অনেক কিছু। হয়তো ব্রিটিশ আমলে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হয়েছিল বলে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে ২০১০ পর্যন্ত সম্ভবত বাংলাদেশে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনের দোকান ছিল। পল্লী ফোন নামের সাইনবোর্ডটি সংরক্ষণ করে বাংলার সেই স্মৃতিকে অমলিন করে রেখেছে স্কটল্যান্ড ন্যাশনাল মিউজিয়াম।
জাদুঘর থেকে বেরিয়ে ক্যাসলের উদ্দেশে হাঁটছি। স্কটিশ হুইস্কি পৃথিবী বিখ্যাত, দলে দলে লোক বেরুচ্ছে ওয়াইনের ডিপো থেকে র স্বাদ আস্বাদন করে। মেয়ে টানাটানি করে সেদিকে নিতে চায়, বোশেখ মাসের ফসলি পতঙ্গ যেমন না বুঝে অগ্নিতে আত্মাহুতি দিতে আসে! কিন্তু বিধি বাম, দুর্গে ঢোকা গেল না, টাইম ওভার! তো বহিরাগতের মতো বহিরাবরণ দেখেই তুষ্ট থাকার চেষ্টায় মগ্ন হয়ে ক্লিক...ক্লিক। অকস্মাৎ পেছন থেকে মধুর ভাষাযোগে সংবিৎ ফিরে পেলাম। ‘না কিচ্ছু না, ইগু আমার সিলহটি বইন। আফনে কিতা ফয়লা বার আইলানি ওবায়? হ বইন, আলহামদুলিল্লাহ। ’
স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনের অপেক্ষা করছি। জীবনটাই একটা স্টেশন, আছে কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম; অচল হয়েও সচল থাকে নানা ঘটনায়, নানা গমনাগমনে।
তুষারপাত
Wow, snowing! Wow, it's snowing! Oh snow! Look, it's snowing! Finally, snow! Oh, the first snow! ইত্যকার অব্যয়—ইন্টারজেকশনের দারুণ ব্যবহার শুনে আমোদিত হলাম। মিউজিক শো শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচ আগে ওয়াশরুমে যাব বলে বেরিয়ে এসেছিলাম। এক্সিট পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মানুষের অভিব্যক্তি অবলোকনের চেষ্টা। প্রায় প্রত্যেক দর্শনার্থী সমোচ্চারিত ধ্বনিতে তাদের মনোভঙ্গি ব্যক্ত করে চলছে। দীর্ঘ ৩–৪ ঘণ্টা বদ্ধ হলরুমে কাটিয়ে বাইরে বেরোতেই যদি বছরের প্রথম তুষারপাতের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, তাহলে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মাত্রা একটু বেশি হওয়ারই কথা।
এদিকে বছরের শেষ দিনগুলো দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এবার হোয়াইট ক্রিসমাস হবে। বরফে আবৃত বড়দিন—এটিও কম উপভোগ্য নয় পশ্চিমাদের কাছে। উপভোগ্য এ জন্য যে তারা যেমন মর্ডানিজমকে এনেছে, পোস্টমর্ডানিজমকেও জায়গা করে দিতে কসুর করেনি। আর তাদের তো ঈদগাহে গিয়ে কোলাকুলি করার বাহানা নেই।
দেশ ছাড়ার আগে শীতবস্ত্র ও জুতসই জুতা/ কেডস কেনার জন্য কুমিল্লা ও ঢাকার মার্কেটে ঢুঁ মেরেছিলাম। যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানগুলোতে শীতের দেশের উপযোগী সামগ্রী কিনতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া। শপ অ্যাসিস্ট্যান্ট জানালেন, একই জিনিস বিদেশে কিনতে গেলে কয়েক গুণ টাকা গুনতে হবে। অগত্যা অত্যাবশ্যক বিবেচনা করে পরিবারের প্রত্যেকের জন্য ১ জোড়া করে কেডস, ১–২টি করে শীতবস্ত্র ও প্রচুর হাতমোজা ও পামোজা সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু গ্লাসগোতে এসে দেখলাম, এখানকার শীত ও সার্বিক আবহাওয়ার কাছে আমাদের সমুদয় সংগ্রহ নস্যি। উইন্ডি, স্নোয়ি, রেইনি, ফগি—ভিন্ন ভিন্ন ওয়েদারের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তুতি আমার ইঁদুর কপালে কী করে সম্ভব! উপায়ন্তর না দেখে চ্যারিটি শপ (সেকেন্ড হ্যান্ড দোকান) থেকে কিছু আঞ্জাম দেওয়া গেল!
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২। দিন গড়িয়ে রাত আসে। গ্লাসগোর রেনফ্রোশায়ার কাউন্সিলের পেইসলি এলাকায় মধ্যরাতের নিস্তব্ধতায় এক অমিয় ঐশী দৃশ্যের অবতারণা ঘটল যেন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে অকস্মাৎ জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, বাইরের পৃথিবীতে আকাশ থেকে নেমে আসছে রাশি রাশি পেঁজা তুলো। যেন অলৌকিক মান্না ও সালাওয়া। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছুক্ষণ।
সঙ্গিনীকে জাগাতেই তিনি বাচ্চাদের ঘুম ভাঙানো যাবে না বলে হুঁশিয়ার করলেন। কাকডাকা ভোরে ওদের স্কুলে ছুটতে হয় কি না। আমরা ভেতরের দরজা খুলে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামি। আমি মূল দরজা খুলতেই একরাশ উড়ন্ত আদিম উদ্দামতার মতো ধবল তোষার দল আমাকে ছুঁয়ে দিল, আমার স্ত্রীকে ছুঁয়ে দিল। আমাদের আঙিনা, ঘর, মন-জানালায় ঠিকরে পড়ছে শতসহস্র, অযুত-নিযুত আনন্দের কোরক। আমাদের অন্তরাত্মাজুড়ে কী অনাবিল খুশির বান ডেকেছে। আমি দরজার বাইরে পা ফেলতেই স্ত্রী চলে গেলেন বাচ্চাদের জাগাতে। পাঁচ মিনিটের মাথায় আমরা চারজন অচিন দেশের মানুষ অচিন ভুবনের বাসিন্দা হয়ে গেলাম।
পেইসলির রাস্তায় কত বাড়িঘর, এই নিশুতি রাতে কেউ কি জেগে নেই? কই, কাউকেই তো চোখে পড়ছে না। শুধু দু–একটা গাড়ি হাই ভলিউম মিউজিকসহ উড়ে যেতে দেখলাম। আইমান আদিবা পাখির মতো উড়ছে, বরফবল বানিয়ে একে অপরের দিকে ছুড়ে মারছে। ছেলেটা হারকিউলিয়ান ভঙ্গিতে বিরাট অ্যাডভেঞ্চারে নেমে পড়েছে, মেয়েটা ময়ূরের মতো পেখম তোলে নাচছে যেন। বাচ্চাদের বাবা-মা ও কিছু রঙ্গরসে আকীর্ণ হলো।
সমুদ্রের কাছে গেলে, বিরাট পাহাড়ের কাছে গেলে, ঘোর বর্ষায় নিমগ্ন হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করা যায় জানতাম; বরফ শীতল পরিবেশে তুষার দল মানবচিত্তের জাগরণ ঘটিয়ে যে শতদলে বিকশিত হতে পারে, জানা ছিল না। গ্লাসগোর এই জনপদ কি আমাদের মনে রাখবে কোনো দিন? জনমানবহীন এই রাতের শহর? কেউ আমাদের চেনে না, আমরাও কাউকে চিনি না। মনে ভয় ছিল যে কিছুক্ষণের মধ্যে ঠান্ডায় জমে যাব। কিন্তু না, তীব্র শীতের সময় সমুদ্রপাড়ে যেমন আলাদা করে বেশি শীত অনুভূত হয় না, তুষারপাতের মধ্যেও তা–ই।
তুষারপাত নিয়ে আমাদের মতো অর্বাচীনের অনুভূতি যা–ই হোক না কেন, সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে এর নেতিবাচকতাকে অস্বীকার করার জো নেই। তদুপরি দীর্ঘ শীতের কারণে পশ্চিমাদের জীবন যে খোলসে বন্দী হয়ে পড়ে, তা থেকে প্রচণ্ড মনোবৈকল্য দেখা দিতে পারে। হতাশা, অবসন্নতা ও বিষণ্নতা অনেকের জীবনে চরম আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্টুডেন্ট ওয়েলবিয়িং সেন্টার (বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে) খোলা রাখে।
২০২১ সালে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গ্লাসগোতে জলবায়ুবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত নানা উদ্বেগের বিষয়ে বিশ্বনেতারা আলোচনা করেন। তারই খবর দিতে গিয়ে প্রথম আলো পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে একটি চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে, যা হুবহু তুলে ধরলাম।
বিশ্বের অনেকে দেশেই তীব্র শীত। এসব দেশে প্রচুর তুষারপাত হয়। এসব অঞ্চলের মানুষ মনে করে, বৈশ্বিক উষ্ণতা কিছুটা বাড়া খারাপ নয়। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। এ বছরের ২০ জানুয়ারি এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, তীব্র শীত প্রমাণ করে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া আশঙ্কাজনক নয়। তীব্র শীতের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প সে সময় এমনও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়লেও তা উদ্বেগজনক নয়। (প্রথম আলো, ১ নভেম্বর ২০২১)
ট্রাম্পের চটকদার মন্তব্যের সত্যতা যা–ই হোক, এমন উক্তি খালাস করার আগে তিনি যে পৃথিবীর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কথা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেননি, তা হলফ করেই বলা যায়। চলবে...