গ্লাসগোর ডায়েরি-২

সপরিবারে লেখকছবি: লেখকের পাঠানো

গ্লাসগো নগরীতে আমাদের অনেক দিন পেরিয়ে গেছে। ২০২৩ সালের সেই যে শীতের মাঝে এসে পড়লাম, এখনো শীত যাওয়ার নাম নেই। দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি এই শীতের ভয়েই। আজ থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্লাস বাচ্চাদের স্কুল টানা দুই সপ্তাহের ভেকেশনে গেল। ইউরোপের মাটিতে বাংলাদেশি টাকায় ঘুরতে যাওয়াও চরম বিলাসিতা। এক হাজার পাউন্ডের (এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা) একটা বাজেট করলাম, যদিও এখন দেখছি ১ হাজার ২০০–এর নিচে শেষ করতে পারব না। কিন্তু একদম কিছু না দেখে চলে আসব তাতেও মন সায় দিচ্ছে না। তাই এবারকার মতো লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। উই আর ফোর পিপল—এ দেশের ভাষায়। চারজনের পরিবার। হুট করে কারও দরজায় কড়া নাড়তে পারি না। তাই এক মাস আগেই হোটেল বুক করলাম।

স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকের অনুযোগ ছবি শেয়ার করি না কেন; গ্লাসগোর ডায়েরি নিয়মিত লিখি না কেন? আসলে আমি কোনোদিনই–বা কি এমন শেয়ার করেছি! গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডিগ্রিটি নিতে আশাতীত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময় অনলাইনে কাটালেও সামাজিক যোাগাযোগমাধ্যমে তেমন থাকি না। রাত এখন কোয়ার্টার টু ওয়ান—কুমিল্লা সরকারি কলেজের একদম শেষের কয়েক দিন উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাসে সময় বলা শিখিয়ে বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম। ডাবল ডেকার নাইটকোচ এগিয়ে চলছে। গন্তব্য ভিক্টোরিয়া কোচস্টেশন, লন্ডন। যাত্রীরা কেউ নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে, কেউ ল্যাপটপে বা ট্যাবে অফিসের দরকারি কাজ সেরে নিচ্ছে, আবার কেউ পছন্দের ছবি দেখছে। আমার নবকিশোর ছেলের সিট পড়েছে শেতাঙ্গী এক তরুণীর সঙ্গে। তরুণী যদিও বারবার আশ্বাস দিল—নো ওরিজ, ইটস ওখে; আমার ছেলের চোখে নিদ্রা দেবী ভর করলেই হয়! তবে আমার চোখে ঘুম নেই। ভাবছি ঘণ্টা দুই পরে সাহ্‌রি খেয়ে নেব। আদিবা তার আম্মুর কোলে মাথা রেখে দিব্যি ঘুমোচ্ছে, মাশাল্লাহ। ছেলেটা ইদানীং একটু ভাবুক প্রকৃতির হয়েছে, আর মেয়েটা নো ওরিজ গোত্রের, থোরাই কেয়ার। চলনে–বলনে মনে হয় বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকা কোনো ব্যাপারই না!

ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে সেটেল্ড হওয়া বা দীর্ঘদিন বসবাস করার কথা আমি ভাবতেও পারি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনগুলোতে দুর্নিবার আগ্রহ জেগেছিল উন্নত বিশ্বের শিক্ষা–দীক্ষার সঙ্গে পরিচয় হতে। সেই শখ পূরণের সুযোগ হলো আল্লাহর রহমতে সরকার বাহাদুরের সদিচ্ছায়। ভিক্টোরিয়া কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আম্মা নিজের জমানো টাকা থেকে আমাকে অতিরিক্ত কিছু হাতখরচা দিতেন যাতে আমি স্বচ্ছন্দে চলতে পারি। আমি কুমিল্লায় ফিরে মনে মনে শপথ করতাম এর বিনিময়ে আব্বা-আম্মার মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আড়াই দশক পরে আজও সেই অনুভূতি মা আর মাতৃভূমিকে নিয়েই।

বাংলাদেশ সরকার শিক্ষায় ও প্রশিক্ষণে যে বিনিয়োগ করে তার আউটপুট কী—এই নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। যদি সরকারের প্রজেক্টগুলো ফলপ্রসূ না হয়, তার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সেবায় কীভাবে কার্যকরভাবে নিয়োজিত করা যায়, তা নিয়ে ভাবা উচিত এখনই।

আরও পড়ুন

লন্ডন ট্যুর, প্রথম দিন: ২ এপ্রিল ২০২৩

দূরপাল্লার মেগা বাস ভোরের হিমশীতল আলো ভেদ করে যখন লন্ডন শহরের উপকণ্ঠে হাজির তখনই চোখ মেলে অন্য রকম অনুভূতি খেলে গেল মনে। গ্লাসগো নগরী কিছুটা আদিম কিসিমের, উঁচু দালানকোঠা তেমন একটা নেই। কিন্তু লন্ডন ব্যতিক্রম, ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় করে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে যেন। ভিক্টোরিয়া স্টেশনে নেমে যখন লাগেজ হাতে নিয়েছি, একটি অপরিচিত হাত আমার দিকে এগিয়ে এলো—আপনারা গাড়িতে বসুন! অবাক করে দিয়ে তিনি একে একে সব লাগেজ গাড়িতে উঠিয়ে আমাদের নিয়ে ছুটলেন ইস্ট লন্ডনের উদ্দেশে। বাচ্চারা মা’সহ পেছনের সিটে, আমি সামনে তার পাশে। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে দেখিয়ে দিলেন এখানকার কোন রাস্তায় কত বেগে চালানো যাবে, কী করলে ট্রাফিক টিকিট খাওয়া লাগবে, টাওয়ার ব্রিজ পার হওয়ার সময় রানির বাড়ি দেখিয়ে বললেন, এই প্রাসাদেই নাকি ভারতবর্ষের মূল্যবান কোহিনূর সংরক্ষিত আছে, কোথায় বাংলাদেশের তাজা শাকসবজি আর মাছ পাওয়া যায় ইত্যাদি।

ছবি: লেখকের পাঠানো
ব্যস্ত যাত্রীদের কারও হাতে সকালের নাশতা উইথ কফি কাপ। কিছু সিনিয়র সিটিজেনের হাতে আজকের দৈনিক কিংবা কোনো ক্লাসিক বই চোখে পড়ে। ষাটোর্ধ্ব নারীর হাতে ডিএইচ লরেন্সের সনস অ্যান্ড লাভারস উপন্যাসটি দেখে আমার তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়।

আমরা লন্ডনের নিকটবর্তী ক্রয়ডনে এয়ার বিএনবি। ঠিক করেছিলাম। মাহিন ভাই সেটি বাতিল করে ইস্ট লন্ডনের বাঙালি পাড়ায় বাসা ঠিক করে দিলেন। চাবি দিয়ে বললেন আপনারা ফ্রেশ হয়ে আমাকে কল করবেন, আজকের দিনটি আপনাদের জন্য। আলহামদুলিল্লাহ। আমার বলার ভাষা নেই।

বাংলাদেশে যেমন এককালে  প্রচলিত ‘ঢাকা শহর আইসা আমার পরাণ জুড়াইছে’, ব্রিটিশদের কাছেও কি লন্ডন নিয়ে এমন অতিশয়োক্তি আছে? থাকলেও থাকতে পারে!

Pussycat pussycat where have you been?
I have been to London to visit the queen
Pussycat  pussycat what did you do there?
I killed a little mouse under her chair

বেলা ১১টায় মাহিন ভাই আমাদের নিয়ে চললেন গ্রিনিচ মান মন্দিরের উদ্দেশে। গাড়ি থেকে নেমে টেমস নদীর নিচ দিয়ে সুদীর্ঘ টানেল হেঁটে পার হলাম, যেটি নির্মিত হয়েছিল সেই ১৮৯০ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোম্বিং করে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল টানেলটি। পরবর্তী সময়ে মেরামত করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য, আমরা সেখানে ছবি তুললাম। দর্শনার্থী বা পথচারীদের আপ-ডাউন করার জন্য একটি প্রমাণ সাইজের কক্ষের সমানুপাতিক লিফট দেখে অবাক হলাম। সম্পূর্ণ নদীর তলদেশ দিয়ে এত আগে কী প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই টানেল নির্মিত হয়েছে আল্লাহ মালুম।

টানেল পার হয়ে খানিকটা হেঁটে ইউনিভার্সিটি অব গ্রিনিচের কিয়দংশ দেখা গেল। সামনেই মেরিন মিউজিয়াম, তার বিশাল মাঠে প্রচুর ভূগোলক বসিয়ে তার গায়ে বর্ণবাদবিরোধী স্লোগান ও নানা শিল্পকর্ম। মূলত কলোনিয়াল রোলাররা যে আফ্রিকা থেকে মানুষ ধরে জাহাজ ভর্তি করে এনে ইউরোপের নগর সভ্যতা গড়ার জন্য শ্রমদাসে রূপান্তরিত করেছিল, তার জন্য সম্বিত ফিরে পাওয়া মহৎপ্রাণ ইংরেজরা যেন আজ ব্যথিত! মিউজিয়ামে ঢুকেই বিশাল আকারের বিশ্বমানচিত্র একটি বেদিতে বিছানো দেখতে পেলাম। কন্যা অনেক কষ্ট করে বাংলাদেশ খুঁজে নিয়ে তার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিল। শিশুদের জন্য মহাসাগরের বুকে নৌকো/জাহাজ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিম্ভূতকিমাকার মূর্তি দেখতে পেলাম, ধারণা হয় বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত সাগরের দেব-দেবী হবে। একটি সচল জাহাজের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দেখানো হচ্ছে এক জায়গায়। বলে রাখা ভালো, ওদের জাদুঘরগুলো প্রকৃত অর্থেই শিক্ষার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। সময়ে সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন জাদুঘর পরিদর্শন করা হয় যাতে প্রত্যক্ষ বিদ্যালাভ সুগম হয়। একটি কক্ষে ধারাবর্ণনাসহ বিভিন্ন নাবিকের দুঃসাহসিক সমুদ্রাভিজান ভিডিও আকারে দেখানো হচ্ছে, অনেকটা আমাদের নভোথিয়েটারের সায়েন্টিফিক গ্যালারির মতো।

সময়ের বিশ্বনিয়ন্ত্রক গ্রিনিচ মান মন্দিরে ওঠার জন্য সুবিশাল পার্ক বা মাঠ পাড়ি দিতে হলো। লন্ডনের পার্কগুলোতে ঢুকলে মনেই হবে না যে ইট-পাথরের দেয়াল বেষ্টিত কোনো রাজধানী শহরে আছি, মনে হবে যেন দূর দেশের কোনো উপদ্বীপে এসে তরি ঠেকল বুঝি! ধারণা করলাম বেশ কিছু ইংরেজি ছবি/সায়েন্স ফিকশন এই গ্রিনিচে ধারণ করা হয়েছে। চূড়ায় দুরবিন বসানো আছে, ছিদ্র দিয়ে কয়েন দিলে সচল হয়! ফেরার পথে কন্যার আবদার মেরি গো রাউন্ডে চড়তে হবে। দেশে তো কত রকম ঘোড়াতেই চড়েছো। নৌ, দিস ইজ ইউনিকর্ন। অতএব ইউটার্ন নিয়ে তার আশাপূরণ।

টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র লুৎফর রহমানের সঙ্গে লেখক
ছবি: লেখকের পাঠানো

লন্ডন–ইস্ট লন্ডন–টাওয়ার হ্যামলেট–বাংলা টাউন

মাহিন ভাই আস্তে আস্তে গাড়ি ড্রাইভ করে দেখাতে লাগলেন। গ্লাস নামালেই শোনা যাচ্ছে—ওবা ওবায়দি আও, আফনে কিতা বালায় নি বা, হুনুক্কা তে...
পুরাই সিলেট, একটুকরা বাংলাদেশ। রাস্তার এক জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য দেখা গেল, গাড়ি পার্কিং করার সুযোগ পাওয়া গেল না। অসংখ্য বাংলাদেশি দোকান, বাংলা টাউনে ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী। এখানে পান পাওয়া যায়, স্বজনদের কাছে বিকাশে টাকা পাঠান এখান থেকে ইত্যাদি লেখা দেখলাম অনেক দোকানে। হুবহু বাংলাদেশের স্টাইলে নানা বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের দোকান। আমাদের গাড়ি থামিয়ে, বাংলাদেশ থাকিয়া সরকারি মেহমান আইছুইন তার দোকান ভিজিট করতা। হুলুস্থুল কাণ্ড। রাজমহলের বাপ্পী ভাই সত্যি দিলদার মানুষ। কত জাতের মিষ্টি যে দিতে চাইলেন প্যাকেট পুরে। একটা টাকাও (থুক্কু পাউন্ড) তাঁর পকেটে গোঁজা গেল না।

বিখ্যাত মরিয়ম সেন্টার তথা ইস্ট লন্ডন সেন্ট্রাল মস্ক নিকটেই ছিল, দশ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে সালাত আদায় করতে পারেন। জোহর ও আসর আদায় করলাম। ১৯১০ সালে নির্মিত ইউরোপের সর্ববৃহৎ এই মসজিদ আধুনিক ইসলামি স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শনই শুধু নয়, এটি গ্রেট ব্রিটেনে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। এর অজুখানা, ওয়াশরুম, জুতা ও অন্যান্য জিনিস রাখার দৃষ্টিনন্দন ব্যবস্থাপনা মনে রাখার মতো। মাহিন ভাইয়ের কাছেই জানতে পারলাম বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে এর দ্বার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় অমুসলিমদের জন্য, যাতে তারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারে। ফলস্বরূপ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নওমুসলিম যুক্ত হয় ইউরোপের মাটিতে।  

ইফতারের আগে যখন ক্ষণস্থায়ী আলয় ইনডিগো মিউজে ফিরব, সেই সময় বাংলাদেশের মতো পথচারীদের তাড়া দেখলাম। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে হবে যে!

লন্ডন ট্যুর, দ্বিতীয় দিন, ৩ এপ্রিল ২০২৩

সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে প্রস্তুত হয়ে বেরোতেই বাসার পাশের রাস্তায় দেখা মিলল একজন নিপাট ভদ্রলোকের। ইজ দেয়ার এনি ট্রেন স্টেশন অর বাস স্টপেজ নেয়ারবাই?  আফনেরা খই যাইতা?

পাতাল ট্রেন সন্নিকটেই ছিল। লন্ডনের অর্ধেকের বেশি লোক যাতায়াত করে এই পাতাল ট্রেনে। মানে যে সংখ্যক লোক আমরা মাটির ওপরে চলাচল করতে দেখি তার সমানসংখ্যক লোক মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করে। প্রায় ১ কোটি লোকের এই মেগাসিটি বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির শহর, যেটি এককভাবে গ্রেট ব্রিটেনের সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক–তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভীষণ পর্যটনবান্ধব বহুসংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র  পুরো লন্ডনই যেন একটি জাদুঘর। শতভাগ ডিজিটালাইজড চালকবিহীন ট্রেনগুলোতে নিয়মিত ঘোষণা দেয়া হচ্ছে—দিস ট্রেন ইজ ফর...দিস ট্রেন উইল কল অ্যাট...চেঞ্জ দিস ট্রেন ফর...মাইন্ড দ্য গ্যাপ বিটুইন দ্য ট্রেন অ্যান্ড ফ্ল্যাটফর্ম, প্লিজ রিমেম্বার টু টেক ইউর বিলংয়িংস...ইত্যাদি। এসকেলেটরগুলো পাতালের এত নিচে নেমে যায় যে দেখে মাথা ঘুরে যায়।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com

যাহোক আমরা ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে লম্বা টানেল পার হয়ে আবার একটি পাতাল ট্রেনে চড়ে বসলাম। ব্যস্ত যাত্রীদের কারও হাতে সকালের নাশতা উইথ কফি কাপ। কিছু সিনিয়র সিটিজেনের হাতে আজকের দৈনিক কিংবা কোনো ক্ল্যাসিক বই চোখে পড়ে। ষাটোর্ধ্ব নারীর হাতে ডিএইচ লরেন্সের Sons and Lovers উপন্যাসটি দেখে আমার তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। বাকিরা অবশ্য ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিনে চোখ রেখে সময় পার করে দেয়। স্বল্পসংখ্যক যাত্রীকে আলাপচারিতায় মেতে উঠতে দেখা যায়। তবে খুবই নিম্ন কণ্ঠে। হইচইবিহীন গতিময় জনপদে বিচিত্র সাজসজ্জার মানুষ। কিন্তু কেউ কাউকে দেখে ভ্রু কুঁচকাচ্ছে না।

ট্রেন ছেড়ে কয়েক মিনিট এগোতেই বাচ্চারা হঠাৎ বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে শূন্যে লাফিয়ে উঠল। তাকিয়ে দেখি বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন। সুকণ্ঠী রিসিপশনিস্ট ভদ্রমহিলার আমন্ত্রণে অতিথিকক্ষে সপরিবারে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতেই আমার ডাক পড়ল ওপরতলায়। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের চৌকস কর্মকর্তা মাহফুজা সুলতানা অতি অল্প সময়ে আমাকে সপরিবারে সেনজেন ভিসার জন্য লেটার অব ইন্ট্রোডাকশনের ব্যবস্থা করে দিলেন। কয়েক দিন আগেই প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট তাঁকে মেইল করেছিলাম। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।

পরিকল্পনামাফিক মিনিট দশেক হেঁটে আমরা ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে পৌঁছালাম। বিরাট কিউ। প্রায়রিটি টিকিটও শেষ। ব্রিটিশরা হলো কিউ-মানা জাতি, জন্মের পরেই এই বিষয়কে তারা ধর্মজ্ঞান করে চলে। আমার কাছে তাই মনে হয়! দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সদর দরজা দিয়ে ঢোকামাত্র কর্তৃপক্ষের দাবি মোতাবেক বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডাইনোসরের দেখা পেলাম।

বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রাকৃতিক তথা খনিজ, বনজ ও জলজ জীবনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। নানা মূল্যবান ধাতু আর মণিমাণিক্যে ঠাসা এই মিউজিয়াম। বিচিত্র পাখপাখালি আর জীব জানোয়ারের দেখা মেলে। শিকারি, অভিযাত্রী, অ্যাডভেঞ্চারার, প্রকৃতি বিশারদ আর ন্যাচারাল সায়েন্টিস্টদের মূর্তি আর সচিত্র জীবনকাহিনি দর্শকের নজর কাড়ে। স্থানে স্থানে আসন পাতা আছে, কেউ যেন ক্লান্ত হলে জিরিয়ে নিতে পারে। একবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে আদিবা ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ায় স্টাফ বেচারার চোখ রাঙানির কথা মনে করে সে ফিক করে হেসে দিল।

ন্যাচারাল হিস্ট্রি থেকে আমরা হিউম্যান হিস্ট্রি প্রত্যক্ষ করার অভিপ্রায়ে ছুটলাম বাকিংহাম প্যালেসের দিকে। নানা দেশের হাজারো পর্যটকের ভিড়ে রাজপ্রাসাদটিকে ম্রিয়মাণ মনে হলো। যেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিদায়ের শোক ভুলে এখনো থিতু হতে পারেনি। তথাপি প্রাসাদের গ্রিল ধরে দর্শনার্থীদের হাহাকার আর খাঁ খাঁ দৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীতে আসলে দুই শ্রেণির মানুষের বাস—রুল্ড অ্যান্ড রুলার। রাজপ্রাসাদের লাল উর্দি পরা ও জমদূতের মতো কালো পেজটুপি মতো পরা রোবট টাইপ প্রহরীরা যেন তামাম দুনিয়ার প্রজাদের ভ্রুকুটি করছিল। পাশেই ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট, মানে প্রধানমন্ত্রীর ভুবন। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর কাম কী?

একটা সমস্যা হলো এখানে চাইলেই রিকশা চড়ে বসা যাচ্ছে না। তবু দুই নাবালক সন্তান নিয়ে অতিকষ্টে হাজির হলাম অন্তত এক হাজার বছরের ইতিহাস ধারণকারী ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। রাজারানি আর জগদ্বিখ্যাত ব্রিটিশদের সমাধিক্ষেত্র ও রাজকীয় অ্যাংলিকান চার্চ। বিকেল ৪টার বেশি বাজায় টিকিট কাটা গেল না, ভেতরেও ঢোকা হলো না। ভালোই হয়েছে। ঘাটের পয়সা খরচ করে বিদেশে মরা মানুষের কবর দেখে কী লাভ? তবু ইতিহাসের পরশ পেতে ছেলেকে নিয়ে তিন পাশ হেঁটে এসেছি। পাশের রাস্তা ক্রস করলেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, যার এক পাশের চূড়ায় ঝুলে আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গৌরব বিগ বেন। পার্লামেন্ট ভবনের প্রতিটি পিলারে ও খিলানে নিখুঁতভাবে খোদাই করা আছে নানা মানব মূর্তি। হয়তো কীর্তিমানদের গৌরব গাঁথা তুলে ধরার প্রয়াস। আমরা বাঙালি জাতি বহুত্ববাদে (প্লুরালিজম) আর অন্তর্ভুক্তিকরণে (ইনক্লুশন) এখনো বিশ্বাসী হতে পারলাম না; রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতিগত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম না।

এই প্রাসাদোপম সুউচ্চ বিরাট ভবন ঘেঁষে ধীরলয়ে বয়ে গেছে লন্ডনের নোলক ও নগরবাসীর শাশ্বত প্রেম আর কল্পনার হেম-টেমস। কত সাহিত্য, গল্প কবিতায়, নাটক নভেলে টেমসের বর্ণনা পড়ে কতরূপে কল্পনা করেছি তারে, তার ইয়ত্তা নেই। পুরো লন্ডন শহরজুড়ে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে এই টেমস। টেমস নদীর ওপর লন্ডনে মোট কতটি ব্রিজ আছে, তার হিসাব জানতে পারলাম না। লন্ডন ব্রিজ ইজ ফলিং ডাউন/লন্ডন ব্রিজটা পড়ছে ভেঙে...এই রাইম/গান না শুনিয়ে তিন বছর বয়স নাগাদ আইমানকে কিছু খাওয়ানো যেত না। সে স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ায় ছেলের সলাজ হাসি।

আস্তে আস্তে আমরা ব্রিজ পাড়ি দিয়ে লন্ডন আইয়ের কাছে হাজির হলাম। আমাদের চর্মচক্ষুকে ফাঁকি(!) দিয়ে লন্ডন আই সারা দিনই যে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে অবিরাম ঘুরে গেছে, তা দূর থেকে বিলকুল বুঝতে পারিনি। আবার প্রায় বিশ হাজার টাকার টিকিট কেটে প্রায় এক ঘণ্টা যাবৎ কিউতে থেকে প্রায় অর্ধ ঘণ্টার জন্য শূন্যে ঝুলে লন্ডন পরিবীক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। অভিজ্ঞতা মন্দ নয়।

আই থেকে নেমে ঘড়িতে আই রেখে আইজোড়া ছানাবড়া। ইফতারির সময় হয় হয়। পাতালে করে এবার সোজা মাহিন ভাইয়ের বাসা। ইতিমধ্যে তিনি অনেকবার ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছেন, তাঁর দাওয়াত মিস করার দুঃসাহস নেই। তবে সারা দিনের মধ্যে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল তাঁর বাসাতেই। ঘরে প্রবেশ করা মাত্র তাঁর কন্যা একগুচ্ছ ফুল আর একটি হাতে-বানানো কেক আমাদের সম্মানে উন্মোচন করলেন—ওয়েলকাম টু রত্না খালামণি অ্যান্ড হার ফ্যামিলি টু লন্ডন! লন্ডনের মাটিতে এমত স্বাগতম, আপ্যায়ন আর ভালোবাসা আমি কল্পনাও করিনি। ইফতার, গল্পগুজব, খানাপিনা। রাজকীয় আয়োজন, বিস্তারিত বললে ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে।

রাতে মাহিন ভাই নিয়ে গেলেন বাংলা টাউনের একটি কাউন্সিল অফিসে। আমার সৌভাগ্য একের ভেতর দুই নয়, তিন নয়...বহু, অসংখ্য পেয়ে গেলাম আমি। কাউন্সিলরদের একটি নিয়মিত সভা ছিল, অকস্মাৎ সেখানে হাজির হলেন টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র মি. লুৎফর রহমান। আফনে কতদিন থাকতা...? বললাম আমি আছি অল্প কিছুদিন। আমরারে কিতা বালা লাগের নানি! অন্যরা তার সঙ্গে ছবি তুলছিল। নিজ থেকে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে পোজ দিলেন। চমৎকার অভিজ্ঞতা হলো। কীভাবে এখানকার বাঙালিরা সম্মিলিত প্রয়াসে এগিয়ে যাচ্ছে, তা প্রত্যক্ষ করলাম। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই বাংলাদেশি এই মন্ত্রে দীক্ষিত।

দ্বিতীয় দিনের সফর শেষ করে যখন নিজ ডেরা ইন্ডিগো মিউজে ফিরছি, তখন আদিবা গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সবার চোখ ঢুলুঢুলু। মুষ্টিবদ্ধ করে কুঁচকিয়ে দেখি আমার রোমানসন ঘড়ির তিনটি কাঁটাই একবিন্দুতে মিশে গিয়ে রাতদুপুর ঘোষণা করছে। ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু।

ইস্ট লন্ডন সেন্ট্রাল মসজিদ
ছবি: লেখকের পাঠানো

লন্ডন ট্যুর, তৃতীয় দিন: ৪ এপ্রিল ২০২৩

উড ইউ প্লিজ কাম বাই ইলেভেন। মাদাম তুসোর সিকিউরিটি স্টুয়ার্ড ডিজিটাল টিকিট ট্যাপ করে বললেন। সাততাড়াতাড়ি গুগল করে স্ত্রী জানালেন নিকটেই সফরের তালিকায় থাকা একটি পার্ক রয়েছে। মিনিট দশেক হেঁটে ঢোকা গেল। লন্ডনের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই এলাকাটি মধ্যযুগে শিকার ও ফার্মিংয়ের কাজে ব্যবহার হতো। এখন অবশ্য নানা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন জু বিখ্যাত। নয়নাভিরাম লেকের জলে জলকেলিতে মগ্ন নাম না জানা পাখিরা। বালিহাঁসের মতো কিছু দেখলাম উড়ে যাচ্ছে। পাখিদের ভয় নেই, ছানাপোনা নিয়ে আমাদের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের খাওয়ানো মানা, কিন্তু একটি জাপানি পরিবারকে দেখলাম সারা দিন ওদের খাইয়েই পার করে দিচ্ছে। আইমানকে নিয়ে একটা চক্কর দিয়ে এলাম, আদিবা হারিয়ে গেল ওর আম্মুর সঙ্গে। সময়াভাবে লন্ডন জুতে উঁকি দিতে পারলাম না।

বাইর থেকে মনে হয়েছিল এতগুলো টাকা গচ্চা যাবে বুঝি। ভেতরে ঢুকে মনে হলো ওদের বহির্মুখী সৌন্দর্যের চেয়ে অভ্যন্তরীণ সৌকর্যের দিকে মনোযোগ বেশি। প্রথমেই মাদাম তুসোর গ্রাউন্ড ফ্লোরে রাজপরিবার আমাদের অভ্যর্থনা জানাল। ফরাসি ভদ্রমহিলা তুসো শখের বসে মোমের মূর্তি গড়তেন। তাঁর রেখে যাওয়া সঞ্চয় থেকে কালক্রমে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বিচিত্র জাদুঘর। বাচ্চারা এন্তার ছবি তুলল। আয়রনম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, স্পাইডারম্যান, ক্যাপ্টেন মার্বেলে, হাল্ক–বাল্ক আরও কত কী। গুণীজনের সঙ্গে দেখা হলো। বারাক ওবামা, মোহাম্মদ আলী ক্লে, পাশের দেশের শাহরুখ খানের সঙ্গে পোজ দিতে হলো।

গদিনশিন রাজা চার্লস তাঁর স্ত্রীকে (দ্বিতীয়) নিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে পোজ দিতে প্রস্তুত। এমন সময় স্টাফ এসে ২০ পাউন্ডের রিসিট ধরিয়ে দিল। পাশেই চেরি ফুলের নিচে স্মিতহাস্যে দণ্ডায়মান ডায়ানা। আমি তাঁকেই সই মনে করে বিনা পয়সায় সান্নিধ্য দান করে ধন্য করলাম। আমাদের নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের নকল একাধিক ভূতের বাড়ি আবিষ্কার করলাম। রগরগে থ্রিলারকেও হার মানাবে। দোয়াদুরুদ পড়ে চোখ বন্ধ করে অনেক শ্বাপৎসংকুল পথ পরিক্রমণ করতে হয়েছে আমাদের। আদিবা, চোখ বন্ধ করে ফেলো; আইমান পেছনে তাকাইও না। বাবা আসে না কেন? তবে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত ব্রিটেনের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের যে ডিজিটাল উপস্থাপনা—একটি ১০ মিনিটের মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে উপভোগ করলাম, সেটি মনে থাকবে দীর্ঘদিন। ৯ ডি মুভিও দেখা হলো। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির চমৎকার ব্যবহার দেখলাম। সৌরজগৎ, নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ করে এলাম। বেরিয়ে আসার পর রানি এলিজাবেথের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যর্থ ভদ্র মহিলার প্রশ্ন—পয়সা উসুল হয়েছে?

পাতাল ট্রেন চেপে হাইড পার্কে পৌঁছাতেই বেলা ৩টা বেজে গেল। বিশাল আকার লন্ডন নগরীর বিশাল হৃদয় হাইড পার্ক। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কতটুকু দেখতে পারব? আবার ছেলেকে নিয়ে টক্কর দিয়ে চক্কর দেওয়ার চেষ্টা। নারী জাতি অভিযানে অনগ্রসর—প্রমাণ পাওয়া গেল। যেকোনো বিশাল-সুন্দরের কাছে গেলে আমার মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায়। যেমন পাহাড়, বন, সমুদ্দুর। বোধ করি সবারই কমবেশি হয়। হয়তো নিজের ক্ষুদ্রতা উপলব্ধি হেতু। কিন্তু পার্কের ধারে এসে মন খারাপ!  পাগল হলাম নাকি! ১৫৩৬ সালে রাজা অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটি ১৬৩৭ সাল থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। এটি জীববৈচিত্র্যের পাকৃতিক অভয়ারণ্যও বটে। দিগন্ত প্রসারিত খোলা মাঠ পার্কের ভেতরেই আছে। আমাদের সদ্যপ্রয়াত বীর সন্তান জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই পার্কেরই কোনো এক অংশে পাকিস্তানি পাসপোর্ট টুকরা টুকরা করেছিলেন। পার্কের শেষ মাথায় লেকের পানিতে ভাসমান বোট দেখে ধর্মসাগরের কথা মনে পড়ে গেল।

রাজহংসীদের ডাক শুনে কাছে যাই। ছুঁতে যেয়েও ছুঁই না। পাছে কে কী বলে ফেলে! পাশেই কেনিসিংটন প্রাসাদ, যেখানে একসময় প্রিন্সেস অব অয়েলস ডায়ানা বিরহ বেদনায় নিশিযাপন করতেন। মূল প্রবেশপথেই রয়েছে বাক্‌স্বাধীনতার প্রতীক—ফ্রিডম অব স্পিচ, স্পিকার কর্নার। এখানে দাঁড়িয়ে নাকি যে কেউ যেকোনো বক্তৃতা করতে পারে। পার্কের ভেতরের এক একটি রাস্তা যেন রাজপথ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। সাইক্লিং করছে নানা কিসিমের নারী–পুরুষ। অসংখ্য ফুল, চলছে পরিচর্যা। প্রেমের চেয়ে ফুল বেশি, আত্মার জাগরণের চেয়ে দেহ সম্ভোগের আয়োজন বেশি। কৃত্রিম ঝরনা দেখলাম, ফুলের পরশ পেলাম। চলে যেতে মন চাইছে নাতো।

আদিবা নাকি কোনো এক সুদূর অতীতে এ রকম একটি পার্ক স্বপ্নে দেখেছিল। সে গল্প শুনতে শুনতে আমরা বাড়ি যাচ্ছি। চলবে...