গ্লাসগোর ডায়েরি-১
২৭ সেপ্টেম্বর গ্লাসগোতে পা রেখেই বুঝতে পারলাম এখানকার বড় প্রতিপক্ষ আসলে বিচিত্র আবহাওয়া। এই বৃষ্টি তো এই রোদ, মাঝে মাঝে দমকা বাতাস, আকাশের মন খারাপ হয়ে যাওয়া। দুবাই বিমানবন্দরেই শীতের কাপড় গায়ে দিতে হয়েছিল, কিন্তু গ্লাসগো ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে নেমে তা যথেষ্ট মনে হচ্ছিল না। ঝকঝকে সাদা বড় ট্যাক্সি আর টাই পরা সাদা চামড়ার ভদ্রলোক দেখে বুঝতে পারিনি এর কল্যাণেই সোজা বাসায় পৌঁছাতে পারব।
রাস্তাঘাটে হর্ন বাজে না বললেই চলে। সিগন্যাল মেনে সবাই গাড়ি চালাচ্ছে, পথচারীরা বোতাম টিপে সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকে। ট্রাফিক পুলিশ? সেটা আবার কী?
টাইমস হায়ার এডুকেশনের তালিকায় (২০২২) বিশ্বের ৮৬তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো। অ্যাডাম স্মিথ আর জেমস ওয়াটের আশীর্বাদপুষ্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা পঞ্চাদশ শতাব্দীতে। পোস্টগ্র্যাজুয়েশন পর্যায়ে সব স্টাডি রিসোর্স, রুটিন-টাইমটেবল, রুম বুকিং ফর গ্রুপ স্টাডি/ডিসকাশন, যেকোনো প্রকারের যোগাযোগ ও সাবমিশন অনলাইনে হয়ে থাকে। নো পেপার এক্সাম। ভিন্ন ও বহুমাত্রিক সংস্কৃতির মানুষ, কেউ কারও দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। গ্লাসগোর রাস্তায় তামাক, ওয়াইন, বিয়ার, কফি আর পারফিউমের তীব্র ঘ্রাণ বিবমিষা লাগে। বয়সকালে আসায় ভালোই হয়েছে, পথ হারানোর ভয় নেই! তবে আমার ভীষণ মন খারাপ হয় ওদের একসেস টু এডুকেশন দেখে, অনেকটা দরিদ্র পরিবারের সন্তানের বড়লোকের বাড়ি পরিদর্শন করতে এলে যেমন হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েও এ রকম সুযোগ-সুবিধা কখনো কল্পনাতেও আসেনি। খুব বেশি মনে পড়ে আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাই ‘আলটামেটার’-তুমি এখন কেমন আছ?
ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন; এশিয়া-আফ্রিকা, ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে তুমুল হইচই। ইনফ্লেশনের চাপে পিষ্ট অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করা বা এনার্জি/ইউটিলিটি বিলের লাগাম টেনে ধরার নিমিত্তে যখন সব রাষ্ট্রযন্ত্র হিমশিম খাচ্ছে, তখন হামেশাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রাইক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে টিচার্স ইউনিয়ন স্ট্রাইক, স্কটরেলের (কর্মচারীদের) স্ট্রাইক যেন এখানকার জনজীবনে নিত্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবু ভালো, কোথাও কোনো শোরগোল নেই, ডিজিটাল দুনিয়ার নিয়তি যেন—আ সিস্টেম ফেইলস, বিকজ ইট ডাজন্ট ওয়ার্ক—এই করেই কয়েকটি মাস কেটে গেল।
ওয়ার্কিং ডে-তে শিক্ষকদের ধর্মঘট থাকলে কর্মজীবী পেরেন্টস/কেয়ার গিভাররা বেশ বিপাকে পড়েন। সন্তানকে ওই দিনের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারে পাঠাতে তাদের গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয়, সামষ্টিকভাবে যার অঙ্কটা নেহাত কম নয়। একটি রিসার্চ আর্টিকেলে পড়লাম ৩০% স্কুলগামী শিশু সিঙ্গেল পেরেন্টিং/কেয়ার গিভারের অধীন লালিত-পালিত হচ্ছে ; বাকি শিশুদের মধ্যে প্রায় ৪০% শিশু হামকে (এ অঞ্চলে হোমের অপভ্রংশ!) নিরাপদ মনে করছে না। এত বিচ্ছেদ হয় কী করে, কোন বিবাদবিসংবাদ এর টিকিটাও কোথাও দেখতে পাই না। আমার স্ত্রী বলল, সব এয়ারটাইট বাসাবাড়ি, দেখাশোনার সুযোগ থাকলে তো!
Home is a place when you go there, there must be someone to take you in...
মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্টের কোন একটি কবিতায় এ রকম অভিব্যক্তি পড়ে আপ্লুত হয়েছিলাম।
নির্মলেন্দু গুণদার কবিতায়ও (আমরা একই স্কুলের ছাত্র কি না!) এ রকম অভিলাষের অনুরণন (আমার স্মৃতি খুবই দুর্বল):
আমি চাই ভিতর থেকে কেউ দরজাটা খুলে দিক
বাহির থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি ক্লান্ত
মান্না দের কণ্ঠে মনে হয় শুনেছি:
সোনালি রং মেখে, পাখিরা যায় নিড়ে
তাই দেখে মনে হয়, আসো তুমি ফিরে
নিরানন্দ ধরণির একমাত্র আস্বাদন যেন সঙ্গসুখ, জীবনানন্দের কল্পনায়:
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতোন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
সব পাখি ঘরে আসে -- সব নদী- ফুরায় এ জীবনের
সব লেনদেন
থাকে শুধু অন্ধকার; মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন
পাশ্চাত্যের এই যে গতিময় মানুষগুলো যখন নিড়ে ফিরে যায়...আমি জানি না তাদের জন্য কেউ অপেক্ষা/প্রতীক্ষা করে কি না।
দেশি এক বড় ভাইয়ের অফিস। তার অনুরোধে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সস্ত্রীক (তিনি একাকী অলস দিন গুজার করতে করতে ক্লান্ত বিধায়) ভিজিট করতে গেলাম। তার বসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, ভদ্রলোককে বেশ অমায়িক ও দিলখোলা মনে হলো। অফিস থেকে বেরিয়ে কফিশপে কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে দেশি ভাই বললেন আমার ম্যানেজারকে কেমন লাগল। আমি কিছু বলার আগেই আমার স্ত্রী নির্দ্বিধায় জানাল ভদ্রলোককে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু পরের বাক্যালাপে জানা গেল ম্যানেজার সাহেবের মন ভালো নেই, কারণ কিছুদিন আগে তার প্রিয় মানুষটি, যার সঙ্গে সে সংসার করত, দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আমার স্ত্রীর চোখে রাজ্যের অন্ধকার। এই সব কথাবার্তা শেষে যখন বিকেলে বাসায় ফিরে আসি, তখন স্ত্রী জানাল অনেক কষ্টে সে চেপে রেখেছে!
কী চেপে রেখেছে? কষ্ট, কান্না নাকি অন্য কিছু?
একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতা পরিচালনার মোটামুটি সব ইনস্ট্রুমেন্ট পশ্চিমাদের হাতে, কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা সভ্যতার দান (অভিশাপ?) হোমোসেক্সচুয়ালিটি।
আর এইডস মানব সভ্যতাকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বলতে পারবে। এমন কোনো জিনিস নেই, যা নিয়ে ওরা গবেষণা করে না। মজার বিষয় হলো প্রথম সারির গবেষক ও তাত্ত্বিকদের মধ্যেও অনেক গে/সমকামী রয়েছে। তো প্রকৃতিবিরোধী (অনেকের মতে) এই জীবনাচরণ সম্পর্কে তাদের গবেষণা কী বলে, আমার জানতে ইচ্ছা করে। ও, আচ্ছা, ম্যানেজার ভদ্রলোক তাহলে একজন গে (এই যন্ত্র কিন্তু ‘গে’ শব্দটি কবুল করতে চাচ্ছে না)! চেপে রাখা বস্তুটির আদ্যাক্ষর তাহলে ‘ব’ হলেও হতে পারে!
সামাজিক অবস্থা যেমন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাও তেমন।
স্কুলের সব ফরমে পিতা/মাতা/কেয়ারগিভার এভাবে লেখা থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং অফিশিয়াল ডকুমেন্টসে জেন্ডার গোপন রাখার অপশনও দেওয়া আছে! মাঝেসাঝে নাম আর কাম কোনো কিছুতে লিঙ্গ নির্ণয় করা যায় না। চাল-চলন-বলন, পোশাক-আশাক ও তথৈবচ। নাকফোড়া, কানফাড়া, চুড়িধারী-চুলধারীমাত্রই কিন্তু জন্মগতভাবে নারী নয়! অফিশীয়াল মেইলে নামের সঙ্গে (he/she) এরূপ লেখা থাকে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আমার সেক্সুয়াল অরিজিন জানতে চাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলাম, ভাগ্য ভালো অনলাইন ফরমের ফরম্যাটটি এমসিকিউ ছিল! এ দেশের আদালত জেন্ডার পরিবর্তনকেও (অন্তত ১৬ বছর বয়স হলে) অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
গ্লাসগোর জনপদে রোজই একাকী অশীতিপর বৃদ্ধ মানুষের দেখা মেলে। কোথায় আছে তাদের পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রী, প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী এমন বংশধরেরা। আমার শতবর্ষী নানিশাশুড়িকে (আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন) দেখেছি কিশোর প্রপৌত্রের মাথা ছুঁয়ে বলছেন, অয়নের বউডারে যদি দেইখ্যা যাইতে পারতাম! আর আমার বড় ভায়রাকে (আল্লাহ তাঁকে নেক হায়াত কামিয়াব করুন) দেখেছি নানিশাশুড়ি গুড় পছন্দ করেন, মাঘ মাসের শীতে আম খেতে ইচ্ছে হয়, তাই ডাক্তারি পেশার ব্যস্ততার মধ্যেও খুঁজে খুঁজে গুড়, আম নিয়ে হাজির হন নানিশাশুড়ির দরজায়।
দুপুর রাতে আইব্রক্স স্টেডিয়ামে রেঞ্জার্স বনাম কেলটিক (বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শিক্ষকদের কাছ থেকে এ রকমই শুনেছি, যেমন celtic culture কিন্তু এখন দেখি ওরা সেলটিক উচ্চারণ করে)–এর ধুন্ধুমার ফুটবল ম্যাচ দেখে ফিরতি পথে বাস স্টপেজে দেখা পেলাম এক দাদিবুড়ির। তাপমাত্রা মাইনাসে, সাথে ধমকা বাতাস। আমাদের দেশের জন্য রীতিমতো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। বৃদ্ধা প্রাণপণে সিগারেটে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বারবার ব্যর্থ হওয়ায় আমি উপযাচক হয়ে সাহায্য করাতে বললেন:
মে আই নো হয়ার ইউ আর ফ্রম?
: ব্যাংলাদেশ? গ্রেট, আই সি ইউ আর এ নাইস গাই!
(মনে পড়ল আমাদের এলাকায় গাভিকে গাই বলে!)
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের এই উর্বর ভূমিতে তাহলে সামাজিক মেলামেশা আর আনন্দ-উৎসব কীভাবে উদ্যাপন করা হয়? বার, ক্লাব, স্টেডিয়াম, আর বিশাল পার্টি সেন্টার তো আছে। গাড়ি হাঁকিয়ে মুহূর্তেই হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ। গ্যালন গ্যালন তরল ওয়াইন, বেয়ার, হুইস্কি গলাধঃকরণ হয়। একটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের বয়সের রেঞ্জ (যেমন ১৮-৬০), পানীয় গ্রহণের মাত্রা (যেমন লিমিটেড/মিডিয়াম), ক্লাস্টার (কাপল/গ্রুপ), ঝুঁকির প্রবণতা (লো/হাই), যেকোনো দুর্ঘটনায় অকুস্থলের এক্সিট পয়েন্টসহ বিস্তারিত ম্যাপ আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। পানীয়তে মাত্রা ঠিক থাকলে সমস্যা নেই, কিন্তু তামাক বাদে সব ধোঁয়া জাতীয় জিনিসে ও অন্যান্য ড্রাগের ব্যাপারে আইন খুব কঠোর। সবচেয়ে কম দামি একটি সিগারেট বাংলাদেশি টাকায় ৭০ টাকা! তবে প্যাকেটের গায়ে বিধিবদ্ধ সতর্কতা ছাড়াও বোনাস হিসেবে ধূমপান থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দেওয়া আছে! ধূমপানের কসরত (বিশেষ করে নারী জাতির) আর সুখটান দেখলে আমার দেশের কিশোর বয়সী ধূমপ্রত্যাশীরা ব্যাপক উৎসাহ পাবে! হলে ঢোকার আগে ও বের হওয়ার পরে বুড়ো খোকা-খুকিদের লম্পজম্প (লাম্পট্য নয় কিন্তুক!) চোখে পড়ে। পেটে মাল থাকা অবস্থায় কাউকে আবার ভিনদেশিদের সাথে ভাব জমিয়ে কথা বলতে দেখা যায়, উপহাস করার নিমিত্তেও হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে নারীদের স্মার্টার মনে হয় (এই রায় আমার না কিন্তু, নারী কর্তৃক সাব্যস্ত!)। আমাদের দেশের শহুরে তরুণ-তরুণীদের মতো (বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া) প্রেমাবেগের ঘনঘটা নেই। তবে চলতে–ফিরতে কোথাও চার ঠোঁটের প্রকাশ্য অবিমিশ্র সংযোগ দেখলে বুঝতে হবে ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে...।’
সভ্যতার কী ভবিতব্যতা! অথবা প্যারাডক্স?
তৃতীয় বিশ্ব বা প্রাচ্যের অনেক দেশকে নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতা করুণাবিগলিত কণ্ঠে কথা বলতে চায়। দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন, শিক্ষা, মানবাধিকার, জেন্ডার ও অন্যান্য কতশত ব্যাপারে প্রতিনিয়ত তাদের কত সবক পাই। পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ইস্যুতে যে তাদেরও নতুন বা বিকল্প পাঠ নেওয়ার মতো কিছু থাকতে পারে, এই ডিসকোর্সের অবতারণা কে করবে? মগজধোলাইয়ের বদৌলতে আর রুটি-রুজির ধান্দায় সব বেশুমার থেকে যাচ্ছে।
চলমান ইউরোপিয়ান ইন্টেলেজেন্সিয়া কমিউনিজম/লেপ্টিজম/মার্ক্সবাদকে স্বীকার করার পাশাপাশি কলোনিয়ালিজম-নিউকলোনিয়ালিজম, ইম্পেরিয়ালইজম-নিউইম্পেরিয়ালইজমকে অন্তত বাহ্যিকভাবে খুবই গুরুত্ব প্রদান করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রেসিজম–এর বিরুদ্ধে যারপরনাই সোচ্চার, এথনিক ও কালচারাল ডাইভারসিটিকে বলতে গেলে মোটো হিসেবে বিবেচনা করে। অন্তরালে যে মজ্জাগত বাণিজ্য অভিপ্রায় কিছুটা নেই, তাই–বা বলি কী করে! নতুবা একজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টের বার্ষিক টিউশন ফি (যেমন আমার) ২৭ লাখ টাকা দিতে হবে কেন? মান যত ভালোই হোক সময়, এক্সেস ও রিসোর্স পারসন নিয়োগে ওদের ব্যয় যৎসামান্যই হবে।
গ্লাসগো রীতিমতো একটি ইন্টারন্যাশনাল সিটি। রাস্তাঘাটে পাবলিক টয়লেট না থাকলেও এ দেশে কোনো পুরুষ/ছেলে কে রাস্তার চিপায়-চাপায় মূত্রপাতের সূত্রপাত করতে দেখা যায় না। ভালো কথা। একবার রাস্তার ধারে হোটেল রিসেপশনিস্ট মেয়েকে বলে কার্য সম্পন্ন করে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে বলে ধন্যবাদ দেওয়ায় বেশ আমোদ পেয়েছিল। একটি বিশেষ ধন্যবাদ আমার ফেলোশিপ প্রোগ্রামের সহযাত্রী শরীফ ভাইকে (সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, টাঙ্গাইল)। কয়েক দিন আগে আসায় তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ভাই, আর কিছু না আনেন, একখানা বদনা আনতে ভুল করবেন না। আক্ষরিক অর্থেই ওদের টয়লেটে পানি খরচ করার কোনো বন্দোবস্ত নেই, নো হ্যান্ডওয়াশ, নো বদনা, নো হাঙ্কিপাঙ্কি এবং ওরা এই স্থানটিকে ওয়াশরুমও বলে না, বলে ‘টোয়াইলাইট’! বিস্তর টিস্যু আছে। মেয়েদের পিরিয়ডকালীন প্যাড সাজানো থাকে।
অনেক কথা বলার ছিল, কিন্তু লেখার সময় কই? প্রথম সেমিস্টার শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে গেল। ব্যস্ততার কারণে মন আগের থেকে শক্ত হয়েছে, কিন্তু স্থূল বুদ্ধির মানুষ হওয়ায় বাস্তববাদী চিন্তাভাবনা করতে পারি না। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের অনেক মিস করি। আমি আমার স্বল্প মেধা ও অত্যল্প প্রযুক্তি দক্ষতাকে পুঁজি করে নিবিড়ভাবে আধুনিক শিক্ষার অন্ধিসন্ধি তালাশ করছি; সরকার বাহাদুর যে উদ্দেশ্যে আমাকে পাঠিয়েছে, আমি সম্পূর্ণ সজাগ আছি। প্রতিটি কোর্সের শিক্ষক আমাকে বলেছেন-ইউ খাম ইন পিএইচডি! সে সুযোগ বা সম্ভাবনা আমার নেই। কিন্তু হতাশা কাজ করে এই জন্য যে এই কষ্টার্জিত সামান্য বিদ্যাটুকুও হয়তো কাজে লাগানোর সুযোগ পাব না!
বাসার ছোট্ট গৃহকোণটিকে প্রচণ্ড মিস করি
ক্লাসরুম আর বিভাগের ডেস্কটি মিস করি
মিস করি বিশ্বমানচিত্রের ছোট্ট সবুজ ঘাসফুলটিকে...
*লেখক: মো. তোবারক হোসেন মোল্লা, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এবং ফরেন মাস্টার্স ফেলো, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com