কে এই ওসমান বে? কেন আজও এত জনপ্রিয়: একাদশ পর্ব

ছবি: সংগৃহীত

দশম পর্বের শেষে বলা হয়েছিল, কোনো বড় শক্তিধর সাম্রাজ্যের আনুগত্য না করায় ওসমানের রাষ্ট্রকেই আনাতোলিয়ার প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা হয়েছিল। এ জন্য ওসমানের রাষ্ট্রে শুরুর দিকে অন্য তুর্কি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ব্যবসা হয়নি। জার্মিয়ান জোটে থাকা হামিদ ও এশরেফিদ রাষ্ট্র জার্মিয়ান জোট থেকে সরে যায়। জার্মিয়ান নেতা ইয়াকুপ বে এ দুটি রাষ্ট্রে আক্রমণ করে দখল করেন ও সেই অঞ্চলগুলো নিজের রাষ্ট্রের অধীন নিয়ে আসেন। অন্যদিকে ১৩০৯ সালে জান্দার বের মৃত্যু হলে তাঁর রাষ্ট্রে হামলা করে একসময় সেই রাষ্ট্রের অঞ্চল শাসন করেন চোবানিদ নেতা ইয়াভলাক আরসলানের পুত্র মাহমুদ বে। মাহমুদ বে কাস্তামনু ও জান্দার রাষ্ট্রের অঞ্চল নিজের আয়ত্তে নিয়ে চোবানিদ বেইলিকের পুনরায় আবির্ভাব ঘটান।

আরও পড়ুন

একটু মনে করিয়ে দিই, ১২৯২ সালে জান্দার বে মঙ্গোলদের সহায়তায় চোবানিদ নেতা ইয়াভলাক আরসলানকে হত্যা করে সুলতান মাসুদকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং সুলতান মাসুদ কাস্তামনু ও এর আশপাশের অঞ্চলের দায়িত্ব কমান্ডার জান্দারকে পুরস্কারস্বরূপ প্রদান করেছিলেন। আর জান্দার বের মৃত্যুর পর মাহমুদ বের এমন আগ্রাসন চোবানিদ বেইলিক (ক্ষুদ্র রাষ্ট্র) যেমন ফিরিয়ে এনেছিল, তেমনি পার্শ্ববর্তী তুর্কি রাষ্ট্রগুলোতে হইচই ফেলে দিয়েছিল। তবে মাহমুদ বের শাসন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই জান্দার বের ছেলে সুলেইমান জান্দার অভিযান পরিচালনা করে কাস্তামনু ও আশপাশের অঞ্চল পুনর্দখল করেন এবং মাহমুদ বেকে হত্যা করেন। ফলে জান্দার রাষ্ট্র নিজেদের স্থান ফিরিয়ে নেয়। উল্লেখ্য যে জান্দার বের সময়ে ইয়াভলাক আরসলানের পুত্ররা মাহমুদ বে ও আলী বে উভয়েই নির্বাসিত হওয়ায় ওসমান বে তাঁদের আশ্রয় দিতেন এবং বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন।

ইয়াকুপ বেরও আনুগত্য চাভদাররা মেনে নেয় ১৪ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ইয়াকুপ বেও চাভদার গোত্রকে সঙ্গে নিয়ে ওসমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
আরও পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত

আলী বেকে ওসমান রোমান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রোমান শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ প্রতিরোধ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তা ছাড়া ওসমানের সঙ্গে আলী বেও রোমানবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিতেন। তবে কিছুদিন পরে রোমান গভর্নরদের সঙ্গে চুক্তি করেন আলী বে, যা চোবানিদ বেইলিককে আরও দুর্বল করে দিয়েছিল। ওসমান নিজের অঞ্চল থেকে আলী বেকে নির্বাসন দেন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদ বের মৃত্যুর পর আলী বে ও চোবানিদ বেইলিকের উত্তরসূরিদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সুলেইমান জান্দার ক্ষমতায় বসলে জান্দার রাষ্ট্র একসময় ওসমানীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করে। এমনকি জার্মিয়ান জোটে থাকা কারেসিদ রাষ্ট্রও ওসমানীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে একসময় ব্যবসা শুরু করে। জার্মিয়ান নেতা ইয়াকুপ বে এ অবস্থার মধ্যেই ওসমানীয় রাষ্ট্রের সীমান্তে থাকা চাভদার তুর্কি গোত্রের সঙ্গে চুক্তি করেন। চাভদার গোত্র ছিল তুর্কিদের গোত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় একটি গোত্র। আনাতোলিয়ার পশ্চিমের রোমান সীমান্তে ১৩ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে কায়ীদের মতো এরাও বসবাস করত। অনেকে এদের তাতার তুর্কি বলে থাকে। তবে প্রতিবেশী কায়ীরা নিজেদের রাষ্ট্র বানিয়ে ফেললেও এদের তেমন কোনো ইতিহাস নেই বললেই চলে। যদিও কিছু সূত্র অনুযায়ী, চাভদারের তাতার তুর্কি নেতারা শুরু থেকেই মঙ্গোলদের আনুগত্য করে আনাতোলিয়ায় বিভিন্ন তুর্কি গোত্রকেও জোর করত মঙ্গোলদের অনুগত হতে।

‘নাগরিক সংবাদ’-এ নানা সমস্যা, জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ইয়াকুপ বেরও আনুগত্য চাভদাররা মেনে নেয় ১৪ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ইয়াকুপ বেও চাভদার গোত্রকে সঙ্গে নিয়ে ওসমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। চাভদার গোত্রের সৈন্যদের দিয়ে কায়ী বসতি ও সোগুতে হামলা করলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি দেখা দেয়। অতঃপর ওসমান বে প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে চাভদার বসতির সৈন্যদের সীমান্ত থেকে বিতাড়িত করতে কায়ী সৈন্যবাহিনীর একটি দল পাঠান এবং কায়ী সেনারা চাভদার গোত্রের সেনাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে চাভদার গোত্র আর কখনো ওসমানীয় রাষ্ট্রে আক্রমণ করার সাহস করেনি।

আরও পড়ুন
ছবি: সংগৃহীত

ওসমান রোমান ব্যবসায়ীদের নিজের সোগুত ও ইয়েনিসেহির শহরের বাজারে আমন্ত্রণ জানান। বেশ কিছু রোমান ব্যবসায়ীর আগমন ঘটতে থাকে। ওসমানও অন্যদিকে রোমান সম্রাটকে ব্যবসায়িক চুক্তির প্রস্তাব দেন। বুরসা ও নিকিয়া শহরের কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো ওসমানের অধীন চলে আসায় রোমান সম্রাটকেও তাঁর সাম্রাজ্যের ব্যবসায়ীদের পণ্য নিরাপদে পরিবহনের জন্য একটি চুক্তি করতে হয়েছিল ওসমানের সঙ্গে। এ চুক্তি অনুযায়ী, ওসমান নিরাপদে রোমান ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহনের প্রতিশ্রুতি সাপেক্ষে কিছু পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা কর পেতেন রোমান সম্রাটের কাছ থেকে। তা ছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অসহায় তুর্কি বণিকদের ওসমান কর প্রদান ছাড়াই ব্যবসার অনুমতি দিয়েছিলেন। ওসমানের অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের জন্য করের বোঝাও ছিল বেশ কম। ফলে দেশি-বিদেশি বণিকেরা তাঁর অঞ্চলে শান্তিতে ব্যবসা করতেন। ধীরে ধীরে ওসমানের রাষ্ট্রে বেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে। চলবে....

*লেখক: তাওহীদ জানান অভিক, শিক্ষার্থী, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন