দুর্ভিক্ষের উপক্রম দেখে বুরসার জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল

১৩১০ সালের দিকে ওসমান বুরসা শহরকে নিজের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ৫০০ সৈন্য নিয়ে প্রথমে বুরসার নিকটবর্তী রোমান দুর্গ কেস্টেলে হামলা করেন। সেই দুর্গের সৈন্যরা ওসমানের সৈন্যদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। ফলে এ দুর্গ ওসমানের অধীনে এসে পড়ে। কেস্টেলের পরই ওসমান আরেকটি রোমান দুর্গ আদ্রানোসে হামলা করেন। এ দুর্গের সৈন্যরা ওসমানের কায়ি সৈন্যদের কাছে পরাজিত হয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। ওসমান আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের কখনো অত্যাচার করতেন না, বরং তাঁদের বেশ যত্ন নিতেন বলে কয়েকটি সূত্রে জানা যায়।

ওসমান নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে বিথিনিয়াতে সাকারিয়া নদীর আশপাশের অঞ্চলে অভিযান চালান এবং এ নদীর আশপাশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে নিয়ে আসেন। এরপরই ওসমান নিজের সেনাপ্রধান কনুর আল্পকে পাঠিয়ে মর্মর সাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নিজের সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পরই ওসমান নিজের সৈন্যবাহিনীর কয়েকটি দল বড় বড় নৌকায় পাঠিয়ে বসফরাস প্রণালি ও মর্মর সাগরের মধ্যবর্তী কালোলিমনি দ্বীপটি দখল করে নেন। দ্বীপটি ছিল বুরসা ও কনস্টান্টিনোপলের মধ্যবর্তী সবচেয়ে ব্যবহৃত গমনপথ ও যোগাযোগের মাধ্যম। ১৩১০ থেকে ১৩১৬ সাল পর্যন্ত ওসমান এভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন।

নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ঐতিহাসিক বুরসা অভিযানের প্রেক্ষাপট

১৩১৭ সালের দিকে ওসমান বুরসা অভিযানের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। বুরসা শহর ছিল রোমান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় বড় শহর। এ শহর বেশ বড় হওয়ায় অভিযান করাও ছিল অনেক কঠিন। তাই ওসমানকে কয়েক বছর ধরে বুরসার আশপাশের কিছু অঞ্চলে অভিযান চালাতে হয়েছিল, যাতে অবরোধ করতে সুবিধা হয়। ১৩১৭ সালে ওসমান প্রায় সাত হাজার সৈন্য নিয়ে প্রথমবারের মতো বুরসা অবরোধ করেন। বিপরীতে বুরসায় রোমান সৈন্য ছিল প্রায় চার হাজারের মতো। ওই অবরোধে বুরসাকে কনস্টান্টিনোপলসহ আনাতোলিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এ সময় বেশ কিছু খণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছিল ওসমানের সৈন্য ও রোমান সৈন্যদের মধ্যে।

আরও পড়ুন

ওসমান ও তার নিজের কমান্ডাররা তখন কয়েকটি বুরসার নিকটবর্তী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুর্গে আক্রমণ চালান। কিছুদিনের মধ্যেই অধিকাংশ দুর্গগুলো ওসমানের অধীনে এসে পড়ে। এসব দুর্গের কোনো কোনো রোমান গভর্নর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওসমানের বাহিনীতে অংশ নিয়েছিলেন। ওসমান গোউত নামে বুরসার কাছাকাছি এক জায়গায় নিজের সৈন্যদের নিয়ে এক খণ্ড যুদ্ধে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ রকম বেশ কিছু খণ্ড যুদ্ধ চলছিল দুই থেকে তিন বছর ধরে। তাই এ অভিযান বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছিল।

আরও পড়ুন

ওসমান বে ১৩২০ সালের দিকে নিজের রাজধানী ইয়েনিসেহিরে ফিরে আসেন এবং চলমান বুরসা অভিযানের দায়িত্ব ছেলে ওরহানকে প্রদান করেন। ওরহানও নিজের বাবার মতোই কঠোরভাবে অবরোধ করে রেখেছিলেন। ওরহান কোনো যুদ্ধ ছাড়াই অবরোধ চলমান রাখেন।

কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সৈন্যদের নিয়ে মুদানিয়া দুর্গ দখল করে নেন, যা বুরসার সঙ্গে সাগরে যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেয়। এর কিছুদিন পরই ওরহান প্রানেতোস নামের এক ছোট রোমান শহর জয় করে ফেলেন, যা উপকূলবর্তী ছিল। এভাবে বুরসার সঙ্গে অন্য সব অঞ্চলের যোগাযোগের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষও বেশ বিরক্ত হয়ে উঠছিল। তা ছাড়া কয়েকটি বছরের এমন অবরোধে দুর্ভিক্ষের উপক্রম দেখে বুরসার সাধারণ জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠছিল। চলবে...

  • লেখক: তাওহীদ জানান অভিক, শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন