কে এই ওসমান বে? কেন আজও এত জনপ্রিয়: চতুর্দশ পর্ব
আজকের পর্বে আমরা জানব, ওসমান গাজির চরিত্র এবং তাঁর পরিবার সম্পর্কে।
ওসমান গাজি ছিলেন দক্ষ রণকুশলী, বিচক্ষণ ও প্রজাবৎসল শাসক। এভারসেলে বলেন, ‘একটি নতুন রাষ্ট্র এবং একটি স্বতন্ত্র জাতির অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রে ওসমানই মূলত পথিকৃৎ ছিলেন।’
আনাতোলিয়ায় ওসমান সেলজুক সাম্রাজ্যের পতনের উপক্রম দেখে প্রথম মোঙ্গল ও রোমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বড় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যা পরবর্তী সময়ে তাঁর স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেয়। কিছু পশ্চিমা ঐতিহাসিক ওসমানকে ডাকাত-লুটেরা আখ্যায়িত করলেও প্রকৃতপক্ষে ওসমান ছিলেন বেশ সৎ শাসক। এর প্রমাণ দেখা যেত, ওসমান যখন বিভিন্ন অভিযানে সফল হয়ে গনিমত লাভের পর তা নিজের সৈন্য ও প্রজাদের প্রতি দান করতেন। ওসমান উদারতা পছন্দ করতেন। গরিব জনগণকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দান-সদকা করতেন। ওসমানের চরিত্রে কঠোরতা ও কোমলতার অপূর্ব সমাবেশ দেখা যেত, তবু তাকে নিষ্ঠুর বলা যাবে না। ওসমান নিজের স্বাধীন ‘ওসমানীয় রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার পরও নিজেকে সুলতান পরিচয় দেওয়ার চেয়ে ‘আমির’ বলতে বেশি পছন্দ করতেন। যদিও অনেকেই তাঁকে ‘সুলতান ওসমান’ বলে ডাকতেন।
ওসমানের প্রথম স্ত্রী ছিলেন মালহুন হাতুন আর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন বালা হাতুন। মালহুন ও ওসমানের প্রথম সন্তান ছিলেন ওরহান গাজি, যিনি ওসমানের পর ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান হয়েছিলেন। বালা হাতুন ও ওসমানের সন্তান ছিলেন আলাউদ্দিন বে, যিনি পরবর্তী সময়ে তাঁর বড় ভাই সুলতান ওরহানের আমলে প্রধান উজির হয়েছিলেন। ওসমানের আরও কয়েকজন ছেলে ছিলেন। তাঁরা হলেন চোবান বে, পাজারলি বে, হামিদ বে, মেলিক বে ও সাভচি বে। তাঁরা সবাই ওরহান ও আলাউদ্দিনের পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে ওসমানের এ ছেলেদের ইতিহাস সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের তেমন কোনো কথা পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁদের সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রও দুর্বল। অবশ্য ধারণা করা হয়, ওরহানের পাশাপাশি তাঁরাও মালহুন হাতুনের গর্ভজাত সন্তান ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ হয়তো জন্মের পর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ জন্য তাঁদের ইতিহাস নেই বললেই চলে। আবার কেউ কেউ হয়তো ওরহান বা আলাউদ্দিনের মতো খ্যাতি লাভ করেননি, তাই তাঁদের ইতিহাস নেই—এমনটাই দাবি করে কিছু ঐতিহাসিক সূত্র। তা ছাড়া ওসমান ও মালহুনের একজন কন্যাসন্তান ছিল, যাঁর নাম ছিল ফাতিমা হাতুন।
এ ছাড়া ওসমানের বড় ভাই গুন্দুজ বে যেমন ওসমানীয় সাম্রাজ্য গঠনে অবদান রেখেছিলেন, তেমনি গুন্দুজের দুই ছেলে আকতেমুর বে এবং আয়দোগদু বে–ও বেশ অবদান রেখেছিলেন। আয়দোগদু বে তরুণ অবস্থায় রোমান সৈন্যদের বিরুদ্ধে ডিম্বোসের যুদ্ধে শহীদ হন। আবার ওসমানের মেজ ভাই সাভচি বের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। সাভচি বে ও তাঁর ছেলে বায়হোচা বে দুজনেই রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক যুদ্ধে শহীদ হন। সাভচি বের বেঁচে যাওয়া আরেকজন ছেলে ছিলেন সুলেমান বে। চাচা ওসমানের রাষ্ট্রগঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন সুলেমান বে।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
মালহুন হাতুন ওসমানের মৃত্যুর কয়েক দিন পর ১৩২৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। আর বালা হাতুন এর আগে ১৩২৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন। বালা হাতুন তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছরে তাঁর বাবা শাইখ এদেবালির সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। শাইখ এদেবালি ছিলেন তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের একজন বিখ্যাত সুফি দরবেশ, যাঁর ১৩-১৪ শতাব্দীতে ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি ছিল। তিনি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম বিচারপতি ছিলেন। ওসমানের শিক্ষক ও পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি সব সময় পাশে থাকতেন। নিজের মেয়ে বালা হাতুনকে ওসমানের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া তাঁর অনেক অনুসারী সুফি, দরবেশ ও আলেম ওসমানের রাষ্ট্রে এসেছিলেন। শাইখ এদেবালি ১৩২৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। চলবে....
লেখক: তাওহীদ জানান অভিক, শিক্ষার্থী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়