নাগরিক সংবাদে প্রকাশের পরই আর্থিক সহায়তা পেলেন সেই আসমা
এক বছরের বেশি হতে চলল করোনা মহামারির সময়। মানসিকভাবেই মানুষ একরকম মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে, এই করোনাভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে রুগ্ণ পৃথিবীর বুকে। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান। প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়ছে, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি, বহু পরিবার চোখের সামনে হারাচ্ছে প্রিয় স্বজনদের। বিপর্যস্ত টালমাটাল অর্থনীতি, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ দীর্ঘদিন ধরে থেমে থেমে চলতে থাকা বিধিনিষেধে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের কর্মজীবীরা।
বিশেষ করে শ্রমজীবীরা, যাঁরা দিন আনেন দিন খান। করোনার এই দুর্যোগ সময়ে অসহায়-দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসছে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীটা যতই অমানবিক হোক, একটা মানবিক পৃথিবী গড়ার সংকল্প নিয়ে একদল নির্ভীক সাহসী মানুষের পথচলা থাকবে আজন্মই। সেই সব মানবিক মানুষ সব সময় মানবতায় এগিয়ে আসেন নিজের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা–ই দিয়ে। আর তাই তো প্রতিবন্ধী আসমা বেগমের পরিবারটির জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীর আরেকজন মানবিক মানুষ।
গতকাল সোমবার (২৬ জুলাই) প্রথম আলোর অনলাইনে নাগরিক সংবাদের পাতায় ‘হাঁটুতে ভর করে চলছে জীবনের নিরানন্দ গল্পটা’ শিরোনামে একটি ফিচার প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ফিচারটি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই প্রতিবেদনটি পড়ে অসহায় হতদরিদ্র এবং চরম মানবেতর জীবন যাপন করা প্রতিবন্ধী নারী আসমা বেগমের পরিবারকে ঢাকায় চাকরিরত দিপঙ্কর কুমার সাহা নামের একজন আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই ব্যক্তির আর্থিক সহায়তার (৩ হাজার) টাকা ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়ের মহিষেরচালা গ্রামে গিয়ে পরিবারটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। টাকা হাতে পেয়ে আসমার পরিবারের সদস্যের মুখে হাসি ফুটে ওঠে মুহূর্তেই। এ সময় আসমা বেগম সহায়তার টাকা হাতে পেয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।
আসমা বেগম জানান, ‘ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করার, কিন্তু টাকাপয়সার লাইগা লেখাপড়াটা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর গার্মেন্টসে চইলা যাই। যত দিন কাজ করতে পারছিলাম, নিজের টাকায় চলছি, এখন একটু হাঁটলেই পাও দুইটা ফুইলা যায়, ব্যাথা করে, কাজ করতে পারি না। ৫ বছর ধরে গ্রামে ফিরে আসছি। চক্ষুলজ্জার কারণে ভিক্ষা করতে পারি না মিয়াভাই। থাকার ঘর নাই, এদিকে লকডাউনের কারণে রাজমিস্ত্রি হেলপার স্বামী কামে যাইতে পারে না, সংসারটা খুব খারাপভাবে চলতাছিল। এমন সময় প্রথম আলো আমার মতো প্রতিবন্ধী আসমার জীবনকাহিনি তুলে ধরছে, সেইটা পইড়া ঢাকার দীপঙ্কর দাদা নামের একজন মানুষ আমার পরিবারের জন্য ৩ হাজার টাকা পাঠাইছেন। আমি প্রথম আলোরে ধন্যবাদ জানাই আর দীপঙ্কর দাদার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। দেশের মানুষের কাছে আমি অনুনয়-বিনয় করে একটা জিনিস চাই, তা হলো আমার থাকার একটা ঘর, সবাই যদি সহযোগিতা করে আমার একটা থাকার ঘর তুলে দিত, ছোট ছোট পোলাপান নিয়া থাকতে পারতাম।’
আসমা বেগমকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা দীপঙ্কর কুমার সাহা জানান, ‘প্রথম আলোর অনলাইনে আসমার জীবনসংগ্রামের গল্পটা পড়ে খুব খারাপ লাগে আমার। আমার যতটুকু সামর্থ্য ছিল, আমি প্রতিবন্ধী এই বোনটিকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।
আমি মনে করি, অল্প কিছু মানুষ যদি আসমার মতো এই প্রতিবন্ধী বোনটিকে একটু সহযোগিতা করে, তাহলে হয়তো আসমার স্বপ্নটা পূরণ হবে তাড়াতাড়ি। তা ছাড়া বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অসহায় হতদরিদ্র মানুষের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে রেখেছে, তা যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সঠিকভাবে বণ্টন করেন, তবে আজ আসমার মতো অনেক অসহায় মানুষের উপকার হবে। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ, তারা বরাবরই এমন মানবিক আবেদনগুলো সামনে তুলে ধরে।’
উল্লেখ্য, শারীরিক অসুস্থতার কারণে পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে আরেকজনের আশ্রয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছে পরিবারটি। আসমাসহ তাঁর পরিবার বসবাস করছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে মহিষেরচালা গ্রামে।
গ্রামে ফিরে আসার পর তাঁর দিনমজুর স্বামী ইবরাহীম রাজমিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করে সংসারটকে কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে চালতে পারলেও করোনা মহামারির থাবায় সংসারটি আজ পথে বসার উপক্রম। বাইরে কাজ না থাকায় অনেকটা অর্ধাহারে-অনাহারে থাকছে পরিবারটি। এদিকে আশ্রয়হীনতার আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা।