আলুটিলা ও হর্টিকালচার পার্ক ভ্রমণ

ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের মূল আর্কষণ ছিল সুড়ঙ্গপথ। তবে বর্তমানে ঝুলন্ত সেতু, গোলচত্বর, নয়নাভিরাম হাঁটাপথ আর পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরি করা সিঁড়ি যোগ হয়েছে। এ যেন পাহাড়ের বুকে একটুকরো স্বস্তির জায়গা। চারপাশে পাহাড়, সবুজের সমারোহ আর মাঝখানে আলুটিলার এসব নানন্দিক আর্কষণীয় জিনিস।

এখন আলুটিলা ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা সুড়ঙ্গপথের পাশাপাশি শান্ত সমাহিত পাহাড়ের রূপও উপভোগ করতে পারবেন। উঁচু পাহাড়ের বেদিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরের বিস্তার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে অবস্থিত খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এ পর্যটনকেন্দ্রটি।

আলুটিলা পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই সেই স্বপ্নীল সুড়ঙ্গমুখ। প্রায় ২৮২ ফুট দৈর্ঘ্যের আলুটিলা সুড়ঙ্গ যেন বিধাতার অনন্য সৃষ্টি। অনবদ্য রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গের ভেতরটা দেখলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হবে যে কাউকেই। এ গুহায় প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতায় আপনিও হতে পারবেন দুঃসাহসিক এক অভিযাত্রী।

একই সঙ্গে খাগড়াছড়ির বিখ্যাত আরেকটি জায়গা হর্টিকালচার পার্কও ভ্রমণ করা যায়। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব কাছাকাছি ২২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা ‘জেলা পরিষদ পার্ক’ বা হর্টিকালচার পার্ক। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এ পার্কের বিশেষ আকর্ষণ রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে তৈরি ‘ঝুলন্ত সেতু’, যার মধ্যে সব বয়সের মানুষ উঠে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এ পার্কে গিয়ে ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে আমি, বন্ধু নয়ন, নাঈম, জাহিদ মিলে পাহাড়ি বিশেষ ধরনের চা খেলাম। যেটি পাহাড়ি জুমের রোজেলা চা নামে সেখানে পরিচিত। তবে এ চায়ের আরেকটি কথা হলো, এটি সাধারণত কেউ একবার খেলে আর খাওয়ার মন চাইবে না। কোন ধরনের স্বাদ এই চায়ে, তা আমরা নিজেরাও বুঝতে পারিনি।

খাগড়াছড়ির প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে গিয়েছিলেন ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য দেখে তো ঘরে বসে থাকা যায় না। সে জন্য ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৮১ সদস্যের একটি ভ্রমণকারী দল চলে গেল আলুটিলা এবং হর্টিকালচার পার্কে। দীর্ঘ সময় পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ির এসব অপরূপ সৌন্দর্যের জায়গা নির্বাচন করেন ফেনী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাবিব স্যার, আবদুল্লাহ স্যার, বিভাগীয় প্রধান স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২৩ সালের শিক্ষাসফর সফল হলো।

আরও পড়ুন

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায় ফেনী থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভ্রমণকারীরা। আলুটিলা পাহাড়ে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর ১২টা বেজে যায়। এরপর প্রবেশপথের টিকেট কেটে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রবেশ করেন আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে। সেখানে ভ্রমণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। বিশেষ করে সুড়ঙ্গপথের ভেতরে শীতল অন্ধকার জায়গায় মুঠোফোনের লাইট দিয়ে হাঁটার অনুভূতিটা এখনো মনে পড়ে। এরপর আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরের পুরোটা এক ফ্রেমে বন্দী করে দেখার অনুভূতি ভোলার মতো নয়। এভাবে আলুটিলা ভ্রমণ শেষে দুপুরের খাবারের বিরতি দিয়ে পরবর্তী স্থান হর্টিকালচার পার্কের উদ্দেশে রওনা দেয় দলটি। হর্টিকালচার পার্কে পৌঁছে পার্কের সৌন্দর্য উপভোগ করেন সবাই। তবে সবচেয়ে আনন্দদায়ক বিষয় হলো যাওয়ার সময় বাসে লটারির কুপন বিতরণ করা হয়েছে সবার মধ্যে। হর্টিকালচারে গিয়ে লটারি ড্র করা হলো। এতে অনেকে পুরস্কার পেলেন, যা অন্যতম এক আকর্ষণ ছিল। অবশেষে বিকেল ৫টায় সবাই আবার ফেনীর উদ্দেশে রওনা দেন। আর এভাবে সমাপ্ত হয় ২০২৩ সালের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষাসফর।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা ফেনী থেকে সহজেই বাসে করে যাওয়া যায় খাগড়াছড়িতে। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ প্রভৃতি স্থানেও আছে খাগড়াছড়ির বাসের কাউন্টার। আবার ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের অক্সিজেন বাস টার্মিনাল থেকে খাগড়াছড়ির বাস ছেড়ে আসে। সেখান থেকেও সরাসরি আলুটিলা ও হর্টিকালচার পার্কে চলে আসা যায়।

খাগড়াছড়িতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

খাওয়া

সাধারণত আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র বা হর্টিকালচার পার্কের আশপাশে উন্নত মানের রেস্তোরাঁ নেই। সে ক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি শহরে যেতে হবে। শহরে খুবই উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। নিজের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো খাবার অর্ডার দিতে পারবেন।

*লেখক: মাজহারুল ইসলাম শামীম, শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ

**নাগরিক সংবাদে, ভ্রমণ, বিভিন্ন লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন**

[email protected]