এক দিনেই হর্টিকালচার পার্ক ভ্রমণ

সবুজে ঘেরা, চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। এমনি এক জেলা খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত সবুজবেষ্টনীতে ঘেরা মনোরম সুন্দর পরিবেশে হর্টিকালচার হেরিটেজ পার্ক শহরের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় এ পার্ক ২২ একর জায়গাজুড়ে জেলা শহরের জিরোমাইল এলাকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজ ও পানির ফোয়ারা।

বিনোদনের নানা উপকরণ দিয়ে সাজানো গোছানো পার্কটিতে বন্ধুবান্ধব, পরিবারসহ ঘুরে আসা যায়। আছে পিকনিকের ব্যবস্থাও। শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে কিডস জোন। কৃত্রিম হ্রদ, পিকনিক স্পট, গেস্টহাউস, হলরুম, বার্ডস পার্ক ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে। টয় ট্রেনে চড়ে চারপাশে প্রাকৃতিক দৃশ্যও দেখার সুযোগ আছে। রয়েছে ওপেন স্টেজে নানা প্রোগ্রাম উপভোগের সুযোগ। ফুড জোনে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নানা খাবারের স্বাদ গ্রহণের সুযোগও। এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকে শান্ত জলের হ্রদ, নদী বয়ে চলে তার আপন মনে। সীমানার ওপাড়ে নীল আকাশ মিতালি করে হ্রদের সঙ্গে, চুমু খায় পাহাড়ের বুকে। এখানে চলে পাহাড়, নদী আর হ্রদের এক অপূর্ব মিলনমেলা, প্রকৃতি কথা বলে কবিতার ভাষায়। নদীর বাঁকে বাঁকে বাতাস সুর তোলে আপন মনে, গায় সুন্দরের গান। চারপাশ যেন আঁকা কোনো জল রঙের ছবি। এখানে হাজার রঙের প্রজাপতি খেলা করে সবুজের মাঝে, রাতের আঁধারে দীপ জ্বেলে যায় লাখো কোটি জোনাকির দল। এখানকার প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা এক ভূবন, যেখান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। এ জেলার বৈচিত্র্যময় জীবনধারা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে।
হর্টিকালচার পার্ক ভ্রমণ

হর্টিকালচার পার্কের রিভিউ দেখার পর ভ্রমণের জন্য চিহ্নিত করি। এ জন্য আমরা তিন বন্ধু পরিকল্পনা করে ফেনীর মহিপাল থেকে খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার পার্কের উদ্দেশে রওনা দিলাম। এ পার্ক খাগড়াছড়ি শহরের একদম প্রবেশপথে অবস্থিত। তাই আমাদের আর শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়নি। আমরা পার্কের সামনে নেমে যাই। পার্কের প্রবেশের টিকিটমূল্য ২০ টাকা জনপ্রতি। আমরা টিকিট কেটে পার্কের ভেতরে ঢুকেই দেখি, সৌন্দর্যে এক মনোমুগ্ধকর পার্ক। যেটি আসলে দূর থেকে কল্পনা করা যায় না। পার্কের মধ্যে লেক, পাহাড়, ঝুলন্ত সেতু, সবুজবেষ্টনী ও কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে। যেগুলো দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। আমরা এসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে পার্কের যেন রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যাই। পার্কের মধ্যে বেশ কিছু গাছ রয়েছে। যেগুলোর নিচে শীতল বাতাসে মন জুড়ে যায়। আমরা একে একে সব কিছু পার্কের উপভোগ করলাম। সত্যিই মনে রাখার এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এই পার্কের। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করার পর আমাদের হর্টিকালচার পার্ক ভ্রমণ অধ্যায় শেষ হলো।

কীভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি সদর বাজার থেকে গঞ্জপাড়া রোড দিয়ে অটোরিকশায় ১০ টাকা (জনপ্রতি) ও রিকশায় ২৫ টাকা (জনপ্রতি) ভাড়া। খাগড়াছড়ি সদর বাজার থেকে মেইন রোড দিয়ে অটোরিকশায় ২০ টাকা (জনপ্রতি), রিকশায় ৩৫ টাকা (জনপ্রতি)। এ ছাড়া মোটরসাইকেলসহ সব যানবাহনে খুব সহজে যাওয়া যায় হর্টিকালচার পার্কে।

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি শহরের আশপাশে বা শহরে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেকোনো মূল্যের খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই শহরের পৌঁছালে খাবারের রেস্তোরাঁর অভাব হবে না। যেকোনো রেস্তোরাঁয় ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা হওয়ায় শহর ছাড়া বাইরের হোটেলগুলোয় থাকা উচিত নয়। শহরের কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। খুবই ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে থাকার জন্য খাগড়াছড়ি শহরে। চাইলে কেউ শহরকেন্দ্রিক যেকোনো হোটেলে বিশ্রাম নিতে পারেন।

অবশেষে পর্যটনকেন্দ্রগুলো ভ্রমণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন, আমাদের দ্বারা অন্যের ভ্রমণের সৌন্দর্য উপভোগের ক্ষতি না হয়। খাবারের উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে না ফেলা, প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতি না করা, কোনো বন্য প্রাণীকে আঘাত না করা, আইনবহির্ভূত কোনো কাজ না করা। নিজে উপভোগ করুন, অন্যকেও উপভোগ করার সুযোগ করে দিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ