চা–বাগান থেকে সমুদ্র, বাঁশখালীর রঙিন যাত্রা
‘সোমবার ঘুরতে যাব। কই যাওয়া যায়?’ শাফায়েতের ফোনের পর ভেবেচিন্তে দেখলাম, আশপাশে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরার মতো জায়গায় মোটামুটি ঘোরা শেষ। বললাম, ‘চল বাঁশখালী যাই।’ এর আগে শুধু শাফায়েত বাঁশখালী ঘুরতে গেলেও অন্য কারও যাওয়া হয়নি দেখে আর কেউ দ্বিমত করেনি। যদিও সোমবারে সকাল সকাল বের হওয়ার কথা, ব্যবসায়ী জামশেদের ব্যবসা ম্যানেজ করে বের হতে হতে সকাল আটটা পার হয়ে যায়।
একদম কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া শুধু কয়েকটা জায়গার নাম মাথায় রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটতে থাকি বাঁশখালীর দিকে। প্রথমেই বিপত্তি ঘটায় গুগল, চা–বাগানের এত এত রাস্তা দেখাচ্ছিল, দ্বিধান্বিত হয়ে শুধু আমরা ছুটতেই ছিলাম এদিক–সেদিক, চা–বাগান আর খুঁজে পাই না।
বাঁশখালীর মানুষজনের কাছ থেকে সহায়তা নিতে চাইলে তাঁরা আরও এক ধাপ এগিয়ে ভুল পথ দেখিয়ে দেন। পরে যে পাশ দিয়ে চা–বাগানে ঢুকি সেটা নতুন এলাকা, চা–বাগানের মূল গেট দিয়ে ঢুকতে পারিনি। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বৃষ্টি আসি আসি অবস্থায় চা–বাগান থেকে বের হয়ে ইকোপার্কের দিকে চলতে থাকি। পথিমধ্যে ছোটখাটো দুটি দুর্ঘটনা এর মধ্যে ঘটে যায়। তবে আল্লাহর রহমতে বড় কোনো সমস্যা হয়নি।
বাঁশখালীর যেটা সবচেয়ে খারাপ, সেটি রাস্তাঘাট। ইকোপার্কের রোড এত খারাপ, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইকোপার্কে গিয়ে মোটরসাইকেল ও মাথাপিছু ৭০ টাকা করে দিয়ে ছোটখাটো আরেকটি মারা খেলাম এই ট্যুরে। ভেতরে স্থানীয় সব টিকটকারের ভিড়, আর আহামরি কিছুই নেই।
আমি ট্যুরে গেলে কম খরচে শেষ করে আসতে চাই সব সময়। সকাল থেকে এত সব ঝুট–ঝামেলার পর আজমের অনুরোধ, ‘বন্ধু, যেমন–তেমন দোকানে খাওয়াইস না, ভালো দোকানে খাওয়াইস।’ তার অনুরোধ রাখতেই রেস্তোরাঁয় খেতে হয়েছে। জীবনে অবশ্য প্রথম ট্যুরে গিয়ে রেস্তোরাঁয় খাওয়া।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
খাওয়াদাওয়া শেষ করে মালকা বানু ও বখশী হামিদ মসজিদ দেখব, এমন পরিকল্পনা করে আবারও ছুটতে থাকি। আবারও সেই ভাঙা রাস্তা, আবারও যারা ড্রাইভ করছিল, তাদের একরাশ বিরক্তি। মালকা বানুর মসজিদে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের অবশ্য খুবই আন্তরিকতা পেয়েছি। পুরো মসজিদ ও সব সুন্দরভাবে দেখার ব্যবস্থা করে দিলেন তাঁরা।
পরে সময় স্বল্পতার কারণে বখশী হামিদ মসজিদ না দেখে আমরা সমুদ্রসৈকতের উদ্দেশে পথ চলতে থাকি। ইলশা গ্রাম হয়ে বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত বাঁধ থেকে সৌন্দর্যটা ছিল অপার্থিব। চোখে লাগার মতো। দিনের সব প্যারার অর্ধেক কমে যায় এই রাস্তার যাত্রাতে। লবণ মাঠ, গ্রামীণ পরিবেশ, রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছের মধ্য দিয়ে বাইকে আসতে স্বর্গীয় সুখ অনুভব হচ্ছিল।
সমুদ্রসৈকতে আসার পর আবারও কপালে হাত। ভাটার সময় পানি কম হলেও দুই থেকে চার কিলোমিটার দূরে। কী আর করা। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে যখন সন্ধ্যা নামল, তখন মনে হলো ফিরতে হবে, ফিরতে হবে বাড়ি। কয়েকজনের প্রিয়তমারা ঘরে অপেক্ষা করছেন।
অনেক সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পরও দিন শেষে আমরা যখন একসঙ্গে থাকি, ওটাই মনে হয় সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত, ‘রাফি, আমরা চাই না এ রকম দিনগুলোয় কেউ ফ্রেম থেকে বাদ যাক। আমাকে যারা লিমিটলেস গালি শুনিয়েছিস, তোদের ধন্যবাদ। শিখতে হবে অনেক কিছু। দেখতে হবে অনেকটুকু পথ।’