গাছের সরাইখানা
পোষা প্রাণী বলতে আমার আছে একটা ছোট্ট মাছ। বেটা ফিশ বা বেটা মাছ। বাড়িতে থাকলে এর যত্নে কোনোই অসুবিধা হয় না। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে তিন–চার দানা খাবার দিয়ে যাই, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে আবার খাবার দিই, আর রাতে একবার। আর সপ্তাহান্তে ট্যাংকটা পরিষ্কার করতে চেষ্টা করি। অসুবিধায় পড়ি, যখন বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকার প্রয়োজন হয় তখন। অগত্যা কি আর করা? মাছটাও আমাদের সঙ্গী হয় নায়রি যেতে। ‘বেটা’ যেহেতু অগভীর জলের মাছ, বয়ামে পুরে নিরাপদে গাড়িতে বসিয়ে আমরা রওনা দিই ভ্রমণে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর আমাদের পাশাপাশি সেও পায় সমান আপ্যায়ন। আমিও নিশ্চিন্ত থাকি, মাছটা বাসায় একাকী পড়ে নেই। খাবারও পাচ্ছে সময়মতো।
কিছুদিন আগে দেশে গিয়েছিলাম। একে আগেভাগেই পৌঁছে দিতে হয়েছিল নিকটাত্মীয়ের বাসায়।
এখানে অনেকেই আছেন, যাঁরা পোষা প্রাণী নয়, ভালোবাসেন গাছপালাকে। গাছ চলতে–ফিরতে না পারলেও, গাছের যেহেতু প্রাণ আছে, দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজনে গাছপ্রেমীরাও স্বভাবত পড়েন বিপাকে। গাছে পানি দেবে কে? যত্নআত্তি করবে কে? বাঙালির মতো তাঁদের নিকটাত্মীয়েরা তো আর এত সহজে, কথায় কথায় অনুরোধে ঢেঁকি গেলেন না। আর তার রীতিও নেই এ সমাজব্যবস্থায়। কাজের জন্য বা নিছক ভ্রমণের জন্য যাঁরা প্রায়ই ঘরের বাইরে যান, প্রিয় গাছের দেখভাল নিয়ে তাঁরা পড়েন চিন্তায়।
সংকট থেকে পরিত্রাণ হিসেবে চমৎকার একটি সমাধানক্ষেত্র পরিদর্শনের সুযোগ হয় কিছুদিন আগে!
ক্ষেত্রটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে একটি পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ যেন গাছ, বিশেষ করে অর্কিডপ্রেমীদের এক তীর্থস্থান! অর্কিডের অনন্য এ সমারোহ যেকোনো মানুষকেই মুগ্ধ করার যোগ্যতা রাখে। গেলেই মনটা ভালো হয়ে যায়! যেমনটা আপনি কল্পনা করবেন, তার চেয়েও সুন্দর, সারি সারি অর্কিডের রংবাহারি গাছ, ফুলের বিভিন্ন বিন্যাস আর প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সুন্দর ব্যবহারের কারণে।
অর্কিডের পাশাপাশি পাতা বা কাণ্ডে পানি জমিয়ে রাখা ‘সাকুলেন্ট’জাতীয় গাছও তাদের নিজস্ব ধরন ও গড়নের অন্য রকম সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় আছে, কখন দাম পরিশোধ করে আপনি ঘরে তুলবেন অমূল্য এসব সম্পদ।
তবে এখানে গিয়ে নতুন যে ব্যাপারটা জানলাম, তা হলো, গাছ বিক্রি ছাড়াও যৎসামান্য খরচের বিনিময়ে অর্কিডদের, ‘রুম অ্যান্ড বোর্ড’ অর্থাৎ ‘থাকা-খাওয়ার’ ব্যবস্থা তাঁরা করেন। আপনাকে কয়েক দিনের জন্য বাইরে যেতে হবে? নিয়ে আসুন আপনার প্রিয় ফুলগাছটি। কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিশ্চিন্তে আধারসহ গাছটি তাঁদের হাতে তুলে দিন, আপনার কাজ শেষে আগের চেয়েও ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে নিন গাছটি। অর্কিডজাতীয় গাছ সাধারণত একপর্যায়ে সব ফুল হারিয়ে ‘সুপ্ত চক্র’ বা ডরমেন্ট অবস্থায় প্রবেশ করে।
এ সময়ে অনেকটা নাজুক এসব গাছের দেখভালও করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। নার্সারির বড় অংশ জুড়ে আছে এ রকম ভাড়া করে থাকা গাছের সরাইখানা। ক্যাল প্যাসিফিক অর্কিড ফার্মটি এনসিনিটাস ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।
লেখক: শবনম চৌধুরী, এলিমেন্টারি স্কুল টিচার, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
**দূর পরবাস-এ লেখা, ভ্রমণ, গল্প পাঠাতে পারবেন প্রবাসের পাঠকেরা। মেইল অ্যাড্রেস [email protected]