শুভ জন্মদিন প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি: সংগৃহীত

এই করোনাকালে দেখতে দেখতেই আরও একটি বছর কেটে গেল কীভাবে, তা হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এরই মধ্যে আবারও ও চলে এল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। বলতে গেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) আমার পরিচয়, অস্তিত্ব, অহংকার। আমার স্বপ্নপূরণের স্থান। শুধু আমার একার না, আমার মতো এমন হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের স্থায়ী ঠিকানা। ৮ জুলাই বশেমুরবিপ্রবি দিবস। শুভ জন্মদিন প্রাণের ক্যাম্পাস।

এ বছর ২১তম বর্ষে পদার্পণ করছে ভালোবাসার বিদ্যাপীঠটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নাম হলো বশেমুরবিপ্রবি। আমার দেওয়ার মতো তেমন কোনো পরিচয় নেই কিন্তু তারপরও কেউ প্রশ্ন করলে তাকে উত্তরে যখন বলি, আমি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তখন অনেক ভালো লাগে। অন্যদের কাছ থেকে অসম্ভব রকম সমীহ পাই। আমি তোমার পরিচয়ে পরিচিত বশেমুরবিপ্রবি। জাতির জনকের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। ২০০১ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এরপর বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে ২০১১ সাল থেকে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আর ২০১২ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ৮ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫৫ একর আয়তনের ফাঁকা ক্যাম্পাসে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি বিভাগের মোট ১৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বিদ্যাপীঠটি। বর্তমানে অনেক পরিবর্তন এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস। চারদিকে গাছপালা, ভবন, খেলার মাঠ, মনোরম পরিবেশ, বিভিন্ন চত্বর, লেকপাড় সব মিলে চমৎকার লাগে প্রিয় ক্যাম্পাসটি। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। রয়েছে ৩৪টি বিভাগ, ৭টি অনুষদ ও ৩টি ইনস্টিটিউট। বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ছাত্রদের জন্য ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য ২টি হল, যা শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম। রয়েছে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি লাইব্রেরি ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, মন্দির এবং প্রধান ফটক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দিত কেন্দ্রীয় মসজিদ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস। কিন্তু আজ শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাস। প্রায় ১৬ মাস হতে চলল বন্ধের, কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে সবাই এখন নিজ বাসগৃহে অবস্থান করছে।

ছবি: সংগৃহীত

সত্যি বলতে ভর্তি পরীক্ষা মূলত একটি যুদ্ধক্ষেত্র আর পরীক্ষার্থীরা হলো সৈনিক। এত যুদ্ধ করে যখন চান্স পাওয়া হয়, তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা তো থাকবেই। বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান বিকাশের জায়গা। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ক্যাম্পাসে তিন মাসেরও কম সময় অতিবাহিত করতে পেরেছি। কারণ হঠাৎ করেই শিক্ষার শুরুতে করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে আর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে কয়েক মাসে অনেক স্মৃতি তৈরি হয়েছিল, তাই স্বপ্নের এই ক্যাম্পাসের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বদৌলতে আমার অনেক কিছু দেখার কিংবা শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আর কোভিড-১৯-এর কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে, তাই অনুভব করছি ক্যাম্পাসের শূন্যতা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কিছুই আমাদের মুগ্ধ করে তোলে, তা হলো সবার বন্ধুসুলভ আচরণ। সেখানে কেউ কোনো বিপদে পড়লে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে আসে। শিক্ষক, সিনিয়র ভাইয়া-আপু থেকে শুরু করে ক্লাসমেট, নন-ডিপার্টমেন্ট—সবাই এগিয়ে আসে, তা সত্যিই কতটা ভালো লাগার, তা বোঝাতে পারব না। এ প্রতিষ্ঠান আমাকে দিয়েছে বন্ধুসুলভ শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটা প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু করোনাকালে সব থমকে গেছে। করোনাকালের জন্য এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হয়তো আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হবে না। কারণ পরিস্থিতি তা হতে দেবে না। প্রাণহীন এই ক্যাম্পাস দ্রুত প্রাণ ফিরে পাক, সেই অপেক্ষায় দিন গোনা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আবাসন-সংকট নিরসনসহ বিভাগের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা করবে প্রশাসন, এই কামনা। আমরা চাই একটি সুস্থ, নিরাপদ ক্যাম্পাস। সাফল্য ও সগৌরবে এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণের এই বিদ্যাপীঠ। হয়তো আমরা একদিন থাকব না বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু স্মৃতি ঠিকই রয়ে যাবে আনাচ-কানাচে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একসময় সেরা বিদ্যাপীঠ হয়ে উঠবে। ২১তম বর্ষে পদার্পণে এই প্রত্যাশা। শুভ জন্মদিন বশেমুরবিপ্রবি।

লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।