বিয়েভীতি-৩য় পর্ব

একটু আগে তুলির মামার বাসায় একটা ঝড় বয়ে গেছে। এ ঝড় তুলেছে তুলি। তুলি শপিং শেষে বাসায় ঢুকেই আমার খোঁজ করল। মামা যখন বললেন, উনি আমাকে রুমের মধ্যে আটকিয়ে রেখেছেন, তখনই আগুন লাগল। রাগে তুলি একপ্রকার পাগল হয়ে গেল। আমি তুলিকে কখনো এতটা রাগতে দেখিনি। তুলির চিৎকারে মামাসহ বাসার সবাই ভয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেল। মামা নিশ্চুপ হওয়ার আগে শুধু একটি লাইন বলার সুযোগ পেয়েছিলেন:
-মা শোন, আমি ওকে আটকিয়ে না রাখলে ও পালিয়ে যেত।

-গেলে যেত। তাতে আপনার কী? আপনি আমার স্বামীকে এভাবে রুমের মধ্যে আটকিয়ে রাখতে পারেন না। আপনার বাসায় এসে উঠেছি বলে আপনি যা ইচ্ছা তা-ই করবেন? ও কি রাস্তার ছেলে? ও কি চোর যে আপনি ওকে রুমে বন্দী করে রাখবেন? ও আমার স্বামী, ও তুলি খানের স্বামী। মামা, আপনি কাজটা ভালো করেননি?

বলেই তুলি কান্না শুরু করল। আমি তুলির কান্না দেখে কিছুটা লজ্জিত হয়ে গেলাম। নিজেকে এখন খুব ছোট মনে হচ্ছে। মেয়েটি আমার জন্য এভাবে কাঁদছে, আর আমি কিনা সেই মেয়েকে বাসররাতে একা রেখে পালানোর চেষ্টা করছিলাম! ছি টারজান, ছি।
তুলি যখন মামাকে বকছিল, মামা তখন অসহায় করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমার মনে হলো, মামা তাঁর চোখের ভাষায় আমায় বলছেন, ‘পাগলের বংশ, তোর জন্য আজ আমার এ অবস্থা।’ আমি মামার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। টুক করে একটা চোখে টিপ দিলাম। আমিও চোখের ভাষায় মামাকে বললাম, ব্যাটা বুইড়া, দেখ এখন কেমন লাগে। বললাম চল বান্দরবান যাই, গেলি না।

আমি আর তুলি এখন বাসরঘরে। পুরোটা রুম ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। তুলি লাল বেনারসি আর আমি লাল পাঞ্জাবি পরেছি। তুলি এমনিতেই অনেক সুন্দর। আজ বউয়ের সাজে তুলিকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। তুলি লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। এ মেয়েকে আমি ভালো করেই চিনি। আমি শিওর, ও ঘোমটার নিচ থেকে আমার গতিবিধি ঠিকই নজর রাখছে। অবশ্য তা রাখুক, এটা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না, আমার কী করা উচিত। টেনশনে আমি রীতিমতো ঘামছি আর পায়চারি করছি। তুলি বেশ অনেকক্ষণ আমার এই অযথা পায়চারি দেখল অথবা সহ্য করল। কিছুক্ষণ পর ওর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমাকে ধমক দিয়ে বলল,
-ওই ব্যাটা টারজান, তোর ওই আজাইরা হাঁটাহাঁটি বন্ধ করবি?
আমি হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে গেলাম।
-এবার আমার কাছে এসে বস।
আমি ধীরে ধীরে তুলির কাছে গিয়ে বিছানার কিনারে বসলাম। তুলি আমাকে নির্দেশের সুরে বলল,
-এবার আমার ঘোমটা খোল।
আমি রোবটের মতো তুলির নির্দেশ পালন করছি। আমি ঘোমটা খুললাম।
-এবার মাশা আল্লাহ, সুবহান আল্লাহ বল।

আমি মাশা আল্লাহ, সুবহান আল্লাহ বললাম। তুলি বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। আমি ভাবলাম, বোধ হয় আমাকে সালাম করবে। কিন্তু এ মেয়ে যে কখন কী করবে, এটা কারও পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। না, তুলি আমাকে সালাম করার চেষ্টাই করল না। ও বিছানা থেকে নেমেই ওর শাড়ি খোলা শুরু করল। আমি তাড়াতাড়ি তুলির হাত ধরে বললাম,
-এই, তুই কী করছিস?
-কেন, শাড়ি খুলছি।
-কিন্তু কেন খুলছিস?
-মানে কী? আজ আমার বাসররাত।
-আজ আমাদের বাসররাত, ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে এখনই ওটা করতে হবে কেন?

সারা রাত তো পড়ে আছে। আয় আমরা আগে কিছুক্ষণ কথা বলি, গল্প করি। তারপর নাহয়?
-ওই, তোর সঙ্গে আর কী কথা বলব? গত পাঁচ-সাত বছর কি কম কথা বলছি? তোর এমন কোনো কথা আছে, যেটা আমি জানি না বা আমার এমন কোনো কথা আছে, যেটা তুই জানিস না?
-না, তা অবশ্য নেই।

-তাহলে কথা বলে সময় নষ্ট না করে যেটা জানি না, সেটা আগে জেনে নিই। তুই টারজান কি না, এটা জানা খুবই জরুরি।
-নাউজুবিল্লাহ। তুই এসব কী বলিস? তোর মুখে কি কিছুই আটকায় না? শোন, এটা এখন করা ঠিক হবে না।

-ঠিক হবে না কেন? আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী।
-শোন, আমরা স্বামী-স্ত্রী, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে একটা ছোট্ট সমস্যা আছে।
-আবার কী সমস্যা?
-শোন, আমি তো জানতাম না হুট করে আমাকে বিয়ে করতে হবে, আর হুট করে বাসররাত করতে হবে। যার কারণে আমার তো প্রস্তুতি নেই।

-মানে কী! ওই, তুই কি ক্রিকেটার? আর বাসররাত কি ক্রিকেট ম্যাচ যে তোর আগে থেকে নেট প্র্যাকটিস করতে হবে?
-আরে গাধা, আমি প্র্যাকটিসের কথা বলিনি। আসলে তোরে যে কীভাবে বলি। শোন, আসলে আমার তো জিনিস নেই।

-ওই, তোর জিনিস নেই মানে কী! ওই, তুই কি...? ও মাই গড! তাই তো বলি, এই ব্যাটা বিয়ে করতে ভয় পায় কেন? হে আল্লাহ, এখন আমার কী হবে?

-এই খবরদার, উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।
-হারামজাদা, আমি উল্টাপাল্টা কথা বলছি? তুই তো এইমাত্র বললি, তোর জিনিস নেই।
-আরে আমি কি তোরে বলছি, কোন জিনিস নেই? আগে তো শুনবি।
আমি তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললাম কোন জিনিস নেই। তুলি আমার কথা শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,
-যাক, আল্লাহ রক্ষা করছে। আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
-তুই তো সব সময় বেশি বুঝিছ।
-শোন, ওই জিনিসের আমার কোনো দরকার নেই। ওই জিনিস দিয়ে আমি কী করব? আমি দ্রুত মা হতে চাই।

-বোকার মতো কথা বলিস না। শোন, আমাদের বিয়েটা ধর্মীয় ও আইনগতভাবে হয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে এখনো হয়নি। আমাদের বিয়ের কথা মামা-মামি এবং আমার মা–বাবা ছাড়া দুই পরিবারের কেউ জানে না। কোনো আত্মীয়স্বজন জানে না। কবে জানাতে পারব, তাও জানি না। এখন সবাই জানার আগেই যদি তুই প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়িছ, তাহলে মানুষ কী ভাববে? ভাববে আমাদের বেবিটা...। আচ্ছা, তুই কি চাস তোর সন্তানের দিকে কেউ আঙুল তুলুক?
-খুন করে ফেলব।
-কাকে খুন করবি?

-আঙুল তোলা তো দূরের কথা, যে আমার সন্তানের দিকে আঙুল তোলার কথা ভাববে, আমি তাকেই খুন করে ফেলব।
-গুড। তাহলে আজ রাতে ওইটা বাদ। ঠিক আছে?

-শোন, আমার সঙ্গে চালাকি করে কোনো লাভ হবে না। ওটা বাদ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। বাচ্চার কথা বলে আমাকে ইমোশনাল করে তুই আমাকে ফাঁকি দিতে পারবি না। তুই যা, এই এলাকায় অনেক ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি আছে। ওখান থেকে কিনে নিয়ে আয়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে বের হতে হলো। যদিও এটা পালানোর একটা সুযোগ, কিন্তু এখন আর পালাতে ইচ্ছা করছে না। কারণ, অসাধারণ এই মেয়েকে কষ্ট দেওয়া বা অপমান করার কোনো অধিকার আমার নেই।

ফার্মেসি থেকে জিনিস কিনে রিকশায় করে ফিরছি। এ সময় দেখলাম রাস্তার মধ্যে টহল পুলিশের গাড়ি। কেন জানি সব সময় পুলিশ দেখলেই আমার ভয় করে। আমি আর্মি ভয় পাই না, কিন্তু পুলিশ ভয় পাই। কারণ, এরা উরাধুরা লাঠি চালায়। কোথায় যে মারে, তা এরা নিজেও জানে না। পুলিশ হাত তুলে আমার রিকশাকে থামার নির্দেশ দিল। পুলিশের হাত দেখামাত্রই আমি রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌড় দিলাম। পুলিশও আমার পেছন পেছন দৌড় দিল। আমার মাথায় ঢোকে না, পুলিশ এত সব পোশাক পরে, হাতে বন্দুক নিয়ে এত জোরে দৌড়ায় কীভাবে? পুলিশ আমাকে মাত্র ৪০ সেকেন্ডেই ধরে ফেলল। ছি, টারজান ছি! আমার তো বিষ খাওয়া উচিত।

পুলিশ আমাকে ধরে ফেলার আগেই আমি আমার হাতের প্যাকেটটা পাশের বাসার প্রাচীরের ওপর দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলাম। একজন পুলিশ আমার ছুড়ে ফেলা প্যাকেটটা খুঁজে নিয়ে এল। তারপর তারা আমাকে ধরে পুলিশের গাড়ির সামনে নিয়ে গেল। পুলিশের এসআই বারেক সাহেব কিছুক্ষণ আমাকে দেখলেন। তারপর কনস্টেবলকে বললেন আমাকে সার্চ করতে। পুলিশ কনস্টেবল রফিক সাহেব আমাকে সার্চ করলেন।

বিয়ে শেষ, কাজে ফিরেছেন ক্যাটরিনা কাইফ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

কিন্তু কিছুই পেলেন না। এবার কনস্টেবল রফিক সাহেব আমার ছুড়ে ফেলা প্যাকেটটা খুললেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এল অনেকগুলো প্যাকেট। এতগুলো প্যাকেট একসঙ্গে দেখে এসআই বারেক সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন,
-কী নাম?
-রানা।
-আপনি কি সন্ত্রাসী?
-না।
-ছিনতাইকারী?
-না।
-মাদকসেবী বা মাদক ব্যবসায়ী?
-না।
-তাহলে আপনি দৌড় দিলেন কেন?
-ভয়ে। পুলিশ দেখলেই আমার ভয় করে। কারণ, আপনারা এমন সব জায়গায় মারেন, সেটা কাউকে দেখানো যায় না, মলম লাগানোও যায় না।
-তাই? তা, রাত দুইটার সময় আপনি বাইরে কেন?

-ওগুলো কিনতে এসেছিলাম। আজ আমার বাসররাত। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, ওগুলো কেনা হয়নি। আমার অবশ্য কিনতে আসার ইচ্ছা ছিল না। স্ত্রীকে বললাম, আজ রাত ওইটা বাদ থাকুক। আস আমরা রাতটা গল্প করেই কাটিয়ে দিই। কিন্তু সে খামাখা গল্প করতে রাজি নয়। সেই আমাকে ওই প্যাকেট কিনতে জোর করে পাঠাল। এ যুগের মেয়েরা স্যার, খুবই ফাস্ট।

-বুঝলাম। তা এতগুলো কিনলেন কেন?
-কী যে বলেন, স্যার।
-আপনি কী আমার সঙ্গে ফাজলামি করছেন?
-জি না, স্যার। পুলিশের সঙ্গে মশকরা করব, আমি সেই ধরনের লোকই না।

-রফিক সাহেব, বিশ্বাস করেন, আমি মনেপ্রাণে টারজান। বর্তমানে দৌড়ের গতি একটু কম। তবে ভবিষ্যতে সেটা ঠিক হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
-ওই, তুই চুপ থাক। আর একটা কথাও বলবি না।
রফিক সাহেব আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। এরপর উনি এসআই বারেক সাহেবকে বললেন,

-স্যার আমি শিওর, এ নারী ব্যবসায়ী। এ প্যাকেটগুলো সে তার কাস্টমারের জন্য কিনছে। স্যার, এদের জন্যই আমাদের দেশের নারীরা বিপদে পড়ে। আমাদের নারীসমাজের কষ্টের মূল হোতা এরা। স্যার, ওকে ধরে ডিম থেরাপি দিলেই দেখবেন সব স্বীকার করছে। স্যার, একে থানায় নিয়ে চলেন। ডিমের ব্যবস্থা আমি করব। বলে টারজান!

আমি এখন গুলশান থানায়। তুলিকে ফোন করা উচিত, কিন্তু ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফোনটি এনেছিলাম কি না, সেটা এখন মনে নেই। নাকি দৌড় দেওয়ার সময় পড়ে গেছে, তাও বলতে পারছি না। এসআই বারেক সাহেবকে অনুরোধ করে তাঁর ফোনটা নিয়ে তুলিকে ফোন দিলাম। তুলি ‘হ্যালো’ বলতেই সুর করে বললাম,
-তুলি, কেমন আছিস? একটা কবিতা শুনবি?

-তোর কবিতার গুষ্টি কিলাই। হারামজাদা তুই কই? তুই কি পালাইছিস?
-আরে না, পালাব কেন?
-তাহলে এতক্ষণ কী করিস? আর তুই তোর ফোন রেখে গেছিস কেন? আমি এদিকে চিন্তায় মারা যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
-সরি। আজ রাতে বোধ হয় আর বাসায় আসা হবে না।
-মানে কী? তার মানে তুই পালাচ্ছিস!

-না, পালাচ্ছি না। আসলে আমি এখন গুলশান থানায়। পুলিশ আমাকে ধরে এনেছে।
-পুলিশ? কেন? তুই কী করছিস?
-আমি কিছু করিনি। আমি শুধু পুলিশকে দেখে দৌড় দিয়েছিলাম। দৌড় দেওয়ায় ওরা মনে করেছে আমি সন্ত্রাসী।
-কিন্তু তুই দৌড় দিয়েছিলি কেন?

-ভয়ে। পুলিশ আমার রিকশাকে থামার জন্য হাত তুলল। ঠিক সে সময় কে যেন আমার ভেতর থেকে বলে উঠল, ‘রানা, দৌড় দে, না হলে তোর খবর আছে।’ আমি রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমেই দিলাম দৌড়। কিন্তু অবাক করা ঘটনা কি জানিস? পুলিশগুলো কীভাবে যেন আমাকে ৪০ সেকেন্ডেই ধরে ফেলল। বিষয়টা আজব না?
-এই, তুই না টারজান? টারজানকে ৪০ সেকেন্ডে ধরে ফেলল! বলদের বলদ। ভুয়া টারজান।

-ছি, স্বামীকে গালি দিস না। পাপ হবে।
-চুপ থাক, বলদ। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, দৌড় দেওয়ার জন্য তো তোরে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা না।

-আসলে ওরা আমাকে সার্চ করে ওই প্যাকেটগুলো পেয়ে থানায় ধরে নিয়ে আসছে।
-ওই প্যাকেট কি বেআইনি যে তোকে থানায় নিয়ে যাবে?

-আসলে তা না। আমি অনেকগুলো প্যাকেট কিনেছিলাম। পুলিশ এতগুলো প্যাকেট দেখে আমাকে সন্দেহ করছে। ওদের ধারণা, আমি একজন নারী ব্যবসায়ী। না হলে আমি এতগুলো প্যাকেট কেন কিনলাম।
-তুই কয়টি প্যাকেট কিনেছিস?
-বেশি না। মাত্র ৩৬টি।
-মাই গড!

-শোন, আমারে থানায় আনছে কনস্টেবল রফিক সাহেবের জন্য। ব্যাটা বেশি মাতব্বর। সে–ই এসআইকে বলল থানায় আনতে। এখন ওই ব্যাটা গেছে আমার জন্য গরম ডিম আনতে। ডিম নিয়ে খুব ভয়ে আছি। বিরাট সমস্যা।
-ডিমে সমস্যা কী? তোরে ডিম দিলে তুই নিবি, লবণ দিয়ে খেয়ে ফেলবি।

-আরে আমাকে ডিম দেবে, সেটা সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে ডিম তো খেতে দেবে না।
-তাহলে?
-আসলে ওরা ঠিক করেছে, ওরা আমাকে ডিম থেরাপি দেবে। এখন বুঝছিস?
-বলিস কী!

-আচ্ছা, তুই কি একটু আসবি? আমার না খুব ভয় করছে। গরম ডিম...বিষয়টা তুই চিন্তা করেছিস? কী ভয়াবহ!

আমার কথা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে তুলির কান্নার আওয়াজ পেলাম। মেয়েরা জানি কেমন। এরা যে কখন বকা দেবে, আবার কখন কাঁদবে, বোঝা মুশকিল। আমি তুলিকে কিছু বলতে যাব, তার আগেই এসআই বারেক সাহেব ফোন কেড়ে নিলেন।

আমি আশপাশে তাকিয়ে কনস্টেবল রফিক সাহেবকে খুঁজলাম। কারণ, দেখা পেলে একটু কথা বলে দেখতাম, হয়তো আমার প্রতি তাঁর মায়া জাগতেও পারে। কিন্তু তাঁকে আশপাশে কোথাও দেখলাম না। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। আমি এসআই বারেক সাহেবকে বললাম,
-স্যার, রফিক সাহেব কই?
-আপনার জন্য গরম ডিম আনতে গেছে। রফিক সাহেব কিন্তু ক্রেজি মানুষ।
-স্যার, ডিম কি আসলেই দেবেন?

-আপনার কী মনে হয়? আপনার কি মনে হয় পুলিশ খামাখা ভয় দেখায়?
-না, স্যার। আমি কনফিডেন্ট, আপনারা ডিম দেবেনই। তা স্যার আপনাদের যখন খায়েশ হয়েছে দেন, সমস্যা নেই। স্যার, শুধু একটা অনুরোধ, ডিমটা কি একটু ঠান্ডা করে দেওয়া যায়?
-কেন?
-আসলে আমার একটু mango hope হয়েছে তো, তাই বলছিলাম।
-সেটা আবার কী!

-mango মানে আম, আর hope মানে আশা। তার মানে আমার ‘আমআশা’ হইছে। এইটা আমাদের গ্রামের ভাষা। শুদ্ধ ভাষায় এটাকে বলে আমাশয়। এখন আপনিই বলেন, এ অবস্থায় গরম ডিম দেওয়াটা কি ঠিক হবে? দেখা যাবে হয়তো আপনার এই রুমটাই নষ্ট করে ফেললাম। স্যার, আমি কিন্তু রুম পরিষ্কার করতে পারব না। আমাকে ক্রসফায়ার দিলেও পারব না। খুবই দুর্গন্ধ।

আমার কথা শুনে বারেক সাহেবের চোখ-মুখ কুঁচকে গেল। চেহারা দেখে মনে হলো, যেকোনো সময় উনি বমি করে দেবেন। উনি কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকালেন। তারপর আমার প্যান্টের দিকে তাকালেন। হঠাৎ কী হলো বুঝলাম না। উনি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলেন। বাথরুম থেকে ভেসে আসা আওয়াজে বুঝলাম, বেচারা বমি করছেন।

চলবে...
বি. দ্র.
এটি একটি রম্য লেখা। এ গল্পে শিক্ষণীয় কিছুই নেই। আপনি যদি শিক্ষণীয় কিছু খোঁজার জন্য এখানে এসে থাকেন, তাহলে বলব, ‘সরি, এ গল্প আপনার জন্য নয়।’
* [email protected]

আরও পড়ুন