বিপদে আছি-২য় পর্ব
একটু আগে রাতের খাওয়া শেষ করলাম। এখন আমি চোখ বন্ধ করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি। না, আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি না। আমি আসলে নিপার জন্য অপেক্ষা করছি, আর আজ রাত কতটা রোমান্টিক হবে, তা নিয়ে মনে মনে স্বপ্নের জাল বুনছি। নিপা এ মুহূর্তে ড্রইংরুমে বাসার অন্যদের সাথে চুটিয়ে গল্প করছে। এই মেয়েটার মতো আমার পরিবারের সদস্যগুলোরও কাণ্ডজ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
না হলে এক দিন আগে যে ছেলের বিয়ে হয়েছে, তার বউয়ের সাথে কেউ এভাবে গল্প জুড়ে দিতে পারে? বুঝলাম না, এটা কোন ধরনের পাগলামি। একটু পর ভাবি এসে রুমে ঢুকেই বলল,
-চলো, তোমার বউ তোমাকে ডাকছে।
-কেন?
-আমরা এখন সবাই মিলে ড্রইংরুমে চিত্রাহার খেলব।
-এটা আবার কি জিনিস?
-আরে এটা মজার এক খেলা। প্রথমে আমরা সবাই গোল হয়ে বসব। এরপর একে একে গান গাওয়া শুরু করব। ধরো তুমি একটা গানের কয়েকটি লাইন গাইবে। তুমি গানটি যেখানে শেষ করবে, সেই শব্দের শেষ অক্ষর দিয়ে তোমার পাশের জনকে একটা গান গাইতে হবে। সে যদি তা না পারে, তো সে খেলা থেকে আউট। এভাবে খেলাটি চলতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকবে, সেই চ্যাম্পিয়ন। বলতে পারো এ এক মজার সংগীত অনুষ্ঠান।
-ভাবি আমাকে একটা কথা বলো তো। এই ফালতু খেলাটা কার মাথা থেকে বের হয়েছে?
-কার আবার? তোমার বউয়ের। সে–ই তো সবাইকে উৎসাহ দিয়ে জড়ো করেছে।
-ভাবি বুঝলাম না, আমি বিয়ে করে ঘরে বউ এনেছি, নাকি ‘যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো মন্ত্রীকে এনেছি? এই মেয়ে তো দেখি এ বাসাকে ক্রীড়া আর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বানিয়ে ছাড়বে।
আমার কথা শুনেই ভাবি হো হো করে হেসে উঠল।
-ভাবি, বোকার মতো হাসবে না। এটা কোনো হাসির বিষয় না। গতকাল পুরো রাত আমি লুডু খেলে কাটাইছি। আজ আমি খেলব চিত্রাহার। ফাজলামির একটা সীমা থাকা উচিত।
-শোনো, তোমার কষ্টটা আমি বুঝতেছি। কিন্তু আমরা কি করতে পারি বলো? নতুন বউয়ের আবদার তো আমাদের একটু রাখতে হবে, তাই না? চলো তো, রাগ করে থেকো না। দেখবে চিত্রাহারে অনেক মজা পাবে।
–না, আমি চিত্রাহার খেলায় কোনো মজা পাইনি। এটা একটা ফালতু খেলা। তার ওপর আমি প্রথমবারেই আউট। প্রায় রাত একটা পর্যন্ত সবাই চিত্রাহার খেলল। আর আমি বোকার মতো বসে বসে এই যন্ত্রণা সহ্য করলাম। এই ফালতু খেলায় আমার বাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ওনার যে বাংলা সিনেমার এত গান মুখস্থ, আজকের আগে সেটা আমরা কেউ জানতাম না। আমার পুরো পরিবার এই চিত্রাহার প্রতিযোগিতায় সেই রকম আনন্দ করেছে। এমন ফালতু খেলায় আমার পরিবারের এত আনন্দ দেখে আমি আমার নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, আমার পরিবার যে একটা পাগল পরিবার, সেটা আমি কেন এত দিন বুঝতে পারিনি?
রাত একটার দিকে আমরা ড্রইংরুম থেকে আমাদের রুমে চলে এলাম। রুমে ঢুকতেই আমার মনে কেমন জানি একটা খুশির জোয়ার উঠল। ভাবলাম, এবার হয়তো ভালোবাসা হবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে নিপা বলল,
-তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমি এখন বাবা-মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলব।
নিপার কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম, এই মেয়ে বলে কি? কিন্তু মুখে নরম সুরে বললাম,
-সকালে বললে হয় না? ওনারা হয়তো এত রাতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ওনাদের এখন ডেকে তোলাটা ঠিক হবে না। যদি চাও কাল সকালে নাহয় আমরা ওনাদের সাথে গিয়ে দেখা করে আসব। এসো আমরা শুয়ে পড়ি।
-ভাই রে, তোমার ঘুমের দরকার হলে তুমি শুয়ে পড়ো। তুমি কেন আমাকে ডাকছ? আমি তো এখন ঘুমাব না।
-কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমি ঘুমাই কীভাবে?
-এত দিন যেভাবে ঘুমিয়েছ, সেভাবে ঘুমাবে।
-তা তুমি কতক্ষণ ফোনে কথা বলবে?
-সেটা তো বলতে পারছি না। সম্ভবত সারা রাত।
এ কথা বলে নিপা ফোন হাতে বাথরুমে ঢুকে গেল। বুঝলাম ঘুম নষ্ট করে এ পাগলের জন্য অপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই। মন খারাপ করেই ঘুমিয়ে পড়লাম। খুব ভোরবেলা নিপা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে উঠাল। আমি চোখ খুলতেই বলল,
-রেডি হও, এখন তুমি পার্কে যাবে।
-মানে কি! সাতসকালে কেন আমি পার্কে যাব?
-সকালে ব্যায়াম করা ভালো। এতে শরীর ঠিক থাকে।
আমাকে এক প্রকার জোর করে সে পার্কে পাঠাল। পার্ক গিয়ে আমি একটুও ব্যায়াম করিনি। আমি পার্কের একটা বেঞ্চে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ঢুকতেই নিপা আমাকে এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিল। আমি শরবত মুখে দিয়েই ওয়াক থু বলে ফেলে দিলাম। ডাকাত মেয়ে আমাকে শরবতের বদলে তিতা কী জানি দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে নিপাকে প্রশ্ন করলাম,
-এটা কী?
-চিরতার রস। আমি আসার সময় লাগেজ ভর্তি করে তোমার জন্য চিরতা নিয়ে এসেছি। এখন থেকে প্রতিদিন সকালে এটা তোমাকে খেতে হবে। এতে পেট ভালো থাকবে।
-আমি কি তোমাকে একবারও বলেছি, আমার পেট খারাপ?
-না, তা বলোনি। তবে স্ত্রী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
-চিরতার পানি খাওয়ানো স্ত্রীর দায়িত্ব? স্ত্রীর আর কোনো দায়িত্ব নাই? দুনিয়ায় স্ত্রীর এত এত দায়িত্ব থাকতে তুমি স্বামীকে চিরতার তিতা পানি খাওয়ানোর দায়িত্বটা বেছে নিলা?
-আরে রাগ করো কেন? চিরতার পানি শুধু পেট না শরীরের অন্যান্য উপকারও করে। এমনকি রক্তশূন্যতাও কমায়।
-আমি কি বলেছি, আমার শরীরে রক্তের অভাব আছে? শোনো, আমার শরীর ভরা রক্ত আর রক্ত। তোমার রক্ত লাগবে? যাও বঁটি নিয়ে আসো, আমি রক্ত দিতেছি। যত রক্ত লাগবে নাও। তবু তিতা ওই রস আমারে দিও না।
বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আমি আসলে বুঝে গেছি আমার জীবন শেষ। ভেবেছিলাম বিয়ের পর জীবনটা অনেক সুন্দর হবে, আনন্দময় হবে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে, এই পাগল আমার জীবন খতম করে দেবে। না, এভাবে চলতে পারে না। নিপার সাথে এ ব্যাপারে একটা বোঝাপড়া করতে হবে।
সেদিন রাতে আমি নিপার সাথে এক কঠিন আলোচনায় বসলাম।
-নিপা শোনো, আমি কাল থেকে আর পার্কে হাঁটতে যাব না।
-কেন যাবে না শুনি?
-ঘুম নষ্ট করে, এত কষ্ট আমি করতে পারব না।
-আরে বোকা, এতে তো শরীরে এনার্জি পাবে?
-ভাই রে, আমি এই এনার্জি দিয়ে কী করব? কোথায় এই এনার্জি ব্যবহার করব? তুমি তো আমার কাছেই আসছ না। আবার আমি যে নিজের থেকে তোমার কাছে যাব, সেটাও পারছি না। কারণ, কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তুমি আমাকে ধর্ষক বলে গালি দিচ্ছ।
-ও এই তাহলে মূল সমস্যা? আমি এখন তোমার রাগের কারণ বুঝতে পারছি। নারী নিয়ে ফুর্তি করতে না পারার জন্য তোমার এত রাগ, তাই না?
-শোনো বারবার ফুর্তি ফুর্তি বলে আমাকে অপমান করবে না। আর একটা কথা, তুমি অন্য কোনো নারী নও, তুমি আমার স্ত্রী। স্ত্রীর সাথে যেটা হয়, সেটা ফুর্তি না ভালোবাসা।
-শোনো, ওই সব সাহিত্যের কথা তোমার মুখে মানায় না। তুমি আসলে একটা চরিত্রহীন। তাই ফুর্তি করার জন্য পাগল হয়ে গেছ। ঠিক আছে আমি তোমার ফুর্তির ব্যবস্থা করছি। তবে তার আগে কাল সকালে আমি তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।
-কেন?
-তোমার পুরো বডি চেকআপ করাব।
-আমার বডি কেন চেকআপ করাবে? আমার কী হয়েছে?
-কিছু হয়েছে কি না, সেটা জানার জন্যই চেকআপ করাব। আমি তোমার ব্লাড, হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, করোনা, এইডস সব টেস্টই করাব। যদি সব ঠিক থাকে, তবেই তুমি কাছে আসার সুযোগ পাবে। তুমি চাইলে আমার সব টেস্টের রেজাল্ট দেখতে পার। আমি কিছুদিন আগেই সব করিয়েছি। ডাক্তার আমার শরীরে কোনো সমস্যা খুঁজে পায়নি।
নিপার কথা শুনে মনে মনে বললাম, ডাক্তার তোর শরীরে সমস্যা পাবে কীভাবে? তোর সমস্যা তো শরীরে না, তোর সব সমস্যা তো মাথায়। কিন্তু কথাটি মুখে বলার সাহস হলো না। মুখে বললাম,
-এসব কথা তুমি বিয়ের আগে বলোনি কেন? তাহলে তো আমি বিয়ের আগেই সব টেস্ট করে রাখতে পারতাম।
-আমি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মা বলতে দেয়নি। কারণ, এর আগে যে পাত্রকেই টেস্ট করার কথা বলেছি, সে পাত্রই বিয়েতে অমত করেছে। আমি বুঝলাম না, এটা তো সাধারণ একটা সতর্কতা। এটা করার কথা বললে ছেলেদের আত্মসম্মানে লাগে কেন? এই তোমারও কি সেরকম লাগছে?
-না, তা লাগছে না। তবে বিয়ের আগে পরীক্ষা না করে, এখন করার বিষয়টিকে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।
-কেন?
-ধরো, আমার এখন কোনো জটিল রোগ ধরা পড়ল। তুমি তখন কি করবে? তুমি কি আমাকে তালাক দেবে?
-তালাক দেব কেন? আমি তোমার চিকিৎসা করাব। আমার জানা থাকল, আমার স্বামীর কী কী সমস্যা আছে। এখন কথা বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমাও। সকালে ডাকামাত্র উঠে পড়বে। নাহলে খবর আছে।
-শোনো, আমি অলরেডি তোমাকে বলে দিয়েছি, প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম নষ্ট করে আমি পার্কে যাব না। আর তোমার ওই সব তিতা জিনিস আমি খাব না।
-তুমি যাব না, খাব না বললেই তো আর হবে না। আমি তোমার স্ত্রী। আমার কথা তোমার শুনতে হবে। ও তোমাকে আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। এখন থেকে তোমার ডায়েট কন্ট্রোল করে চলতে হবে। আচ্ছা তুমি সকালে নাশতায় সাধারণত কী খাও?
-পরোটা, গরুর মাংস, ডিম এসব।
-এগুলো আর চলবে না। আমি অলরেডি তোমার খাবারের মেনু ঠিক করে মাকে দিয়েছি। যেমন সকালে তুমি খাবে চিড়া-কলা, দুপুরে সালাদ আর রাতে তোমার জন্য শুধু সাদা ভাত, পেঁপের তরকারি আর ছোট মাছ।
-তুমি কি ফাজলামি পাইছ? আমি কি রোগী? আমার কি পেট গরম হইছে যে তুমি আমারে চিড়া-কলা, আর পেঁপের তরকারি খাওয়ায়ে পেট ঠান্ডা করবা? শোনো, আমি গরুর মাংস ছাড়া ভাত খেতে পারি না।
-সব ভুলে যাও। কোরবানির সময় ছাড়া সারা বছর বাসায় কোনো গরুর মাংস রান্না হবে না।
আমি অবাক হয়ে নিপার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এই মেয়ে এগুলো কী বলে? না, এই মহিলার সাথে তর্ক করে লাভ নেই। ঠিক করলাম শ্বশুরের বাসায় গিয়ে নিপার বিষয়ে কড়া অভিযোগ জানাতে হবে। এভাবে বাঁচা যাবে না।
পরদিন একাই শ্বশুরের বাসায় এলাম। আমাকে একা দেখে শ্বশুর-শাশুড়ি দুজনেই অবাক। শাশুড়ি মধুর স্বরে বললেন,
-তা বাবা, হঠাৎ করে না জানিয়ে একা এলে, কোনো সমস্যা? ভালো আছ তো?
-ভালো থাকি কীভাবে? ভালো থাকার মতো জিনিস তো আপনারা আমাকে দেননি।
-মানে কী?
-আম্মা আপনারা আমার ওপর এভাবে জুলুম করতে পারলেন?
-তোমার কথা তো কিছুই বুঝলাম না, বাবা। আমরা আবার কোথায় জুলুম করলাম?
-এটা জুলুম না তো কী? আপনারা জেনেশুনে কীভাবে আপনাদের পাগল মেয়েকে আমার ঘাড়ে তুলে দিলেন?
-না বাবা, আমার মেয়ে পাগল না, আসলে ও একটু বদরাগী।
-মা, কোনটা রাগ আর কোনটা পাগলামি, সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। রাগ কোনো সমস্যা না। কারণ, স্ত্রী বিভিন্ন কারণে স্বামীর ওপর রাগ করতেই পারে। কিন্তু ওর সমস্যা তো মাথায়। ওর মাথা তো পুরোই খারাপ।
-ওর মাথা পুরো খারাপ, সেটা তুমি বলতে পারো না। তুমি বলতে পারো কিঞ্চিৎ খারাপ।
-কিঞ্চিৎ খারাপ হোক বা পুরো, সেটা বিয়ের আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল।
-হ, আমাগোরে তুমি বোকা পাইছ। তোমারে জানাইলে তুমি কী আর ওরে বিয়ে করতা? করতা না। এর আগে যে পাত্রকেই ওর এসব বিষয়ে বলছি, তারাই পালাইছে।
-তাই বলে এভাবে জালিয়াতি করবেন?
-জালিয়াতি কোথায় করলাম? তোমাকে তো বিয়ের আগে ওর সাথে এক দিন কথা বলার সুযোগ দিয়েছিলাম। বলো, দেইনি?
-তা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই এক ঘণ্টা কথা বলে আমি তো ওর মাথার সমস্যা ধরতে পারিনি।
-সেটা তো তোমার সমস্যা। তোমার অক্ষমতা। এখন আমাদের দোষ দিচ্ছ কেন?
-না মা, এভাবে উল্টাপাল্টা যুক্তি দিয়ে আমারে বুঝ দিয়েন না। ওর সমস্যা আমার কাছে গোপন করে আপনারা অন্যায় করেছেন।
-বাবা শোনো, বিয়েশাদি আল্লাহর হাতে। আল্লাহ তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রাখছে, তাই বিয়ে হইছে। এখন আর কিছুই করার নাই।
-কিছুই করার নাই? তার মানে সারা জীবন এই পাগল নিয়ে আমাকে চলতে হবে?
-কী আর করবা। একটু কষ্ট করো। গত ২০ বছর এই আপদ আমরা সামলাইছি। এবার তুমি সামলাও।
-তাই বলে ওকে আপনারা কিছুই বলবেন না? অ্যাটলিস্ট ওকে একটু শাসন করে দেন।
-বাবা রে, ওরে কিছু বলার সাহস আমাদের নাই। ওর রাগ সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণাই নাই। তুমি যে বিচার দিতে আসছ, এটা জানলেও তো তোমার খবর আছে। তুমি কি নিপাকে বলে আসছ?
-না, বলে আসিনি।
-ভালো করেছ। শোনো, তোমারে একটা পরামর্শ দিই। সংসারে শান্তি চাইলে আমার মেয়ে যা বলে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলবা। কোনো টুঁ শব্দ করবা না।
শাশুড়ির কথা শুনে, আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আমার অবাক করা চোখ দেখে বললেন,
-আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না? ঠিক আছে, তুমি তোমার শ্বশুরের কাছে শোনো, সে কীভাবে শান্তিতে আছে। আমি এই সুযোগে তোমার জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করি।
শাশুড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি আমার শ্বশুরের দিকে তাকালাম। বেচারা ঢোক গিলে বললেন,
-তোমার শাশুড়ি ঠিক কথাই বলেছেন। বাবা, এটাই একমাত্র সমাধান। নাহলে কিন্তু বউয়ের হাতে মাইর খাইবা। আমার বংশের মেয়েরা কিন্তু স্বামী পেটায়।
আমি শ্বশুরের কথায় পুরোই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমি শ্বশুরকে ফিসফিস করে বললাম,
-আব্বা, আসলেই কি আপনার মেয়ে আমাকে মারবে?
-প্রয়োজন হলে অবশ্যই মারবে। তোমাকে বললাম না, এই বংশের মেয়েরা একটু এদিক-ওদিক হলেই স্বামী পেটায়।
আমি শ্বশুরের কথায় ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ার্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বললাম,
-আব্বা, একটা ধারণা দিন তো, মাইরের ক্ষেত্রে সাধারণত কী কী জিনিস ব্যবহার করতে পারে।
-সেটা নির্ভর করে হাতের কাছে কী পায় তার ওপর। তোমাকে একটা পরামর্শ দিই। বাসার সব ঝাড়ু, স্যান্ডেল, লাঠি সব সময় সরায়ে রাখবে।
-আব্বা, আপনাকে আম্মা কী কী দিয়ে পেটায়?
-বেয়াদবের মতো প্রশ্ন করো কেন? তুমি আমার মেয়ের জামাই। এসব কথা আমি তোমাকে বলব কেন?
এ কথা বলেই উনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। চলবে...
বি.দ্রষ্টব্য :
এটি একটি রম্য লেখা।এই গল্পে শিক্ষণীয় কিছুই নেই। সে জন্য সরি। অবশ্য সবকিছু থেকেই শিখতে হবে, এর তো কোনো মানে নেই, তাই না?
*লেখক: ইমদাদ বাবু, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। [email protected]