ক্যানকুন: নীল সমুদ্র, লুকানো মায়ান সভ্যতা ও চিচেন ইৎজা
দিন যায়, বছর যায়, তবু কিছু স্মৃতি হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে থাকে যে চোখ বন্ধ করলেই আবার যেন সেগুলো জীবন্ত হয়ে ওঠে। আমাদের ২০২৩ সালের ক্যানকুন ভ্রমণ—ঠিক তেমন এক স্মৃতি। মেয়ে রিনভির দীর্ঘদিনের অনুরোধে ঠিক করা হয়েছিল এই সফর। তখন সে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণায় ব্যস্ত, আর ছেলে রাকিন ছিল ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস এট আরবানা-শ্যাম্পেইনের আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্র। প্লেনের টিকিট অনেক আগেই কাটা ছিল; কিন্তু মনটা ভারী হয়ে ছিল এক কারণে—রাকিন আসতে পারল না। ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওকে ক্যাম্পাসে থেকেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তবু রিনভির জন্য, আর আমাদের নিজেদের জন্যও, সিদ্ধান্ত নিলাম—জীবনের ব্যস্ততা ভুলে এই ভ্রমণকে আমরা আনন্দে ভরিয়ে তুলব।
সকালে বোস্টন বিমানবন্দরের দিকে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে রিনভির মুখে উচ্ছ্বাস, আর সাথীর চোখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেখলাম। প্লেন আকাশে উঠতে না উঠতেই জানালার ওপারে ভেসে উঠল সাদা তুলার মতো মেঘ আর নীলের গভীরতা। বোস্টন টু ক্যানকুন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্লেন যাত্রা শেষে যখন ক্যানকুনের আকাশে প্রবেশ করলাম, সমুদ্রের রং দেখে চোখ আটকে গেল—নীল আর সবুজের মায়াবী সম্মিলন। মনে হলো, স্বপ্নের মতো এক জগৎ আমাদের ডাকছে।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে। নীল সমুদ্র। পথে ডাউনটাউনের সারি সারি রেস্টুরেন্ট দেখে মনে হচ্ছিল যেন বাংলাদেশের মতোই প্রাণচাঞ্চল্য। খাবারও দারুণ, বিশেষ করে মাছ—মাছে–ভাতে বাঙালি। দাম এতো সাশ্রয়ী যে বিস্মিত হলাম।
মেক্সিকোর ক্যানকুন শহরের সৌন্দর্যের গল্প তো বহু আগে থেকেই শুনেছি—বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ আসে এখানে। এপ্রিল মাসে স্প্রিং ব্রেকের কারণে ভিড় থাকে তুঙ্গে। হোটেল, রিসোর্ট, বিলাসবহুল অট্টালিকা—সবই ভিজিটরদের জন্য সাজানো। শহরের অধিকাংশ অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই পর্যটকদের খরচের ওপর।
বিমানবন্দরে নেমে মেক্সিকোর খাবারের স্বাদও প্রথমবারেই নিলাম—রিনভির স্প্যানিশ ভাষা জানা থাকায় অর্ডার দিতে কষ্ট হয়নি। এরপর ডলার বদলে নিলাম পেসোতে। মেক্সিকোর মুদ্রার নাম পেসো।
সাত দিনের ভ্রমণে গাড়ি থাকার মানে স্বাধীনতা—যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাওয়া, যখন ইচ্ছা থামা। আগে থেকেই একটি প্রাইভেট কার বুক করা ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরে সেই পিকআপ গাড়ি খুঁজে পাওয়া যেন গোয়েন্দা অভিযানের মতো! ইনফরমেশন ডেস্কে গেলে এক কর্মকর্তা অন্যজনের কাছে পাঠান; তিনি আবার আরেকজনের কাছে—এক অদ্ভুত চক্র! এর মধ্যেই ধরা পড়ল আসল সমস্যা—একদল লোক ট্যুরিস্টদের বিভ্রান্ত করে আগের বুকিং ক্যানসেল করিয়ে নিজেদের ‘সস্তা প্যাকেজ’-এ সাইন করাতে উৎসাহ দেয়। ভিজিটরদের বোকা বানানোর এই কৌশল দেখে সতর্ক হলাম। ভাগ্যিস, ফাঁদে পড়িনি—বুদ্ধি খাটিয়ে বেরিয়ে গেলাম রেন্টাল সেন্টারে। সেখানে গিয়ে বুঝলাম—এ দেশ আমেরিকা নয়! যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫–২০ মিনিটেই কার হাতে পাওয়া যায়, এখানে লেগে গেল প্রায় দেড় ঘণ্টা। তবু অবশেষে গাড়ি নিয়ে বের হলাম হোটেলের পথে।
মেক্সিকোর সিনোটেগুলো ছিল আরেক বিস্ময়। পাহাড়ের গহিনে, চুনাপাথরের নিচে তৈরি এসব ভূগর্ভস্থ জলাধার যেন প্রকৃতির নিজস্ব সৃষ্টি। মায়াদের কাছে এগুলো ছিল দেবতাদের দরজা। পানির ঠান্ডা স্পর্শ, ভেতরের নীরবতা আর আলো-ছায়ার নাচ। রিনভি বলেই ফেলল, ‘এটা তো পুরো অন্য একটা পৃথিবী, বাবা!’
হোটেল উইন্দেম গার্ডেনে পৌঁছাতে প্রায় ২৫ মিনিট লাগল। চেকইনে কোনো ঝামেলা ছিল না; রিসেপশনিস্ট নিজ হাতে লাগেজ এগিয়ে দিলেন—সৌজন্য হৃদয় ছুঁয়ে গেল। রুমে ঢুকেই মনে হলো—যাত্রার ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর! দুটি আরামদায়ক বেড, ডিম লাইট, পরিপাটি বাথরুম, ধবধবে তোয়ালে, ছোট ফ্রিজ, খাবারের মেন্যু, জিম, সুইমিংপুল—এককথায় নিখুঁত। হোটেল ছিল মাল্টিস্টোরি।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে। নীল সমুদ্র। পথে ডাউনটাউনের সারি সারি রেস্টুরেন্ট দেখে মনে হচ্ছিল যেন বাংলাদেশের মতোই প্রাণচাঞ্চল্য। খাবারও দারুণ, বিশেষ করে মাছ—মাছে–ভাতে বাঙালি। আর দাম এতটাই সাশ্রয়ী যে বিস্মিত হলাম।
প্রথম দিনটির লক্ষ্যই ছিল সানসেট দেখা। সাগরপাড়ে পৌঁছে মনে হলো, স্বপ্নের পোস্টকার্ডের ভেতরে ঢুকে গেছি। নীলের এত রং! সৈকতের পাশে ফ্রি পার্কিং, আর সামনে সাগরের ধারে ভিড়—হাজারো মানুষ সানসেটের অপেক্ষায়। ক্যানকুন সাইনবোর্ডের সামনে ছবি তুলে আমরা সাগরের ধারে গিয়ে বসলাম। সূর্য ধীরে ধীরে লাল আভা ছড়িয়ে সমুদ্রের বুকে ডুব দিল—রিনভি তার আইক্লাউড স্টোরেজ বাড়িয়ে রাখায় আমরা দেদারসে ছবি তুললাম।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সেদিন রাতে ইরানি রেস্টুরেন্টে হালাল খাবার খেলাম—রিনভির ভেজিটেরিয়ান আইটেম, সাথীর চিকেন, আমার বিফ স্টেক আর সেই মুগ্ধ করা ইরানি মিষ্টান্ন বা ডেজার্ট। খাবার শেষে চোখ জড়িয়ে এল—মনে পড়ল বাংলার সেই বিখ্যাত গান, ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা…’
পরদিন ছিল আমাদের প্রথম বড় অ্যাডভেঞ্চার—স্নরকেলিং (Snorkeling)। প্রায় ৪৫ মিনিটের সেই অভিজ্ঞতা ভ্রমণের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি হয়ে আছে এখনো। সাগরপাড় থেকে স্পিডবোটে করে যখন সাগরের গভীর অংশে নেওয়া হচ্ছিল, সাথী আমাদের বলল, ‘তোমরা যাও, আমি স্পিডবোটেই থাকব।’
সে সব সময় নিরাপদে থাকা মানুষ, ভীষণ ভয় পেয়েছিল; আমরা যতই উৎসাহ দিই, ভয় কাটেনি। তাই রিনভি আর আমি ঝাঁপ দিলাম সাগরের মাঝখানে পানিতে, সাথী নৌকায় বসে দূর থেকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে রইল।
সমুদ্রের নিচের জগৎ যেন অন্য কোনো পৃথিবী। আলো স্বচ্ছ পানিতে নেমে এসে নীলের ভেতর সবুজের রহস্য জ্বেলে দিচ্ছিল। আমাদের পাশ দিয়ে ভেসে গেল বিশাল আকারের সি টারটল (কচ্ছপ)—শত বছর হয়তো তার বয়স—আমরা সাঁতার কাটতে কাটতে তার কাছে পৌঁছে হাত বুলিয়ে দিলাম খোলসে। চারপাশে রঙিন মাছের দল এবং Stingray। মাঝেমধ্যে রিনভি অনেক দূর সাঁতরে যাচ্ছিল, তারপর ফিরে এসে বলত, ‘বাবা, এটা অবিশ্বাস্য!’ তার চোখে সেই শিশুসুলভ বিস্ময় আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেল। এখানে শুধু আমরাই নই, আমাদের সঙ্গে ৪৫-৫০ জনের একদল যাত্রী আছেন, যাঁরা সবাই সাগরে ডুবে সাগরের বিশাল সাইজের কচ্ছপ ও নানা কিসিমের মাছের সঙ্গে এক অপরিসীম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে।
স্নরকেলিংয়ের পরই ছিল প্যারাসেইলিং (Parasailing)। আকাশে ঝুলে থাকা ছোট আসনে বসে ধীরে ধীরে ওপরে ওঠার অভিজ্ঞতা সত্যিই শ্বাসরুদ্ধকর। নিচে সমুদ্র ক্ষুদ্র হয়ে আসছে; ঢেউগুলো যেন নীল-সবুজের নকশা। দূরের হোটেলগুলো ছোট ছোট বাক্সের মতো দেখাচ্ছে। রিনভি আমাদের মাঝখানে বসে হাত শক্ত করে ধরে আছে—সাথী একদিকে, আমি অন্যদিকে। আমরা তিনজন মিলে আকাশে ভাসছি। মেঘের ভেলা কখনো মুখে লাগে, কখনো হাতের পাশ দিয়ে ছুটে যায়। মনে হচ্ছিল, পৃথিবী আসলে এতটাই সুন্দর।
পরদিনই জেট স্কি (Jet ski)। সাথী ভয় পেয়ে উঠল না—বরাবরের মতোই নিরাপদ আসনে সাগরতীরে বসে রইল। জেট স্কি ঘণ্টায় দামাদামি করে প্রায় ৭০ ডলারে ঠিক করলাম। রিনভি ছিল আমার পেছনে, দুহাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে। সাগরের ওপরে সেই গতির ঝাঁপটা, ঢেউয়ের আঘাত, আর চারপাশে নীল পানির বিস্তার—এ যেন স্বাধীনতার অন্য রকম স্বাদ। সাগরের ভেতরে যত দূরে যাই, থামতে নাহি চায় মন। আমরা অনেক মাইল দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম। একসময় মনে হচ্ছিল, সমুদ্রের দৌড়ে ঢেউয়ের সঙ্গে আমরা বাবা-মেয়ে দুজনই যেন অংশগ্রহণ করেছি। রিনভির হাসি আর আনন্দ, চিৎকারে ভরাট হয়ে যাচ্ছিল চারপাশ।
এরপর এল সাবমেরিন ট্যুর—মোট দুই ঘণ্টার যাত্রাপথ। এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথমে ছোট ফেরিতে করে সমুদ্রের গভীর দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। ঢেউ দুলছে, এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল। ফেরি যেদিক দিয়ে সাগরের বুকে যাচ্ছিল, তার দুপাশে নানা রকমের সামুদ্রিক গাছের সমারোহ। ঢেউয়ের তালে সেগুলোও দুলছিল। ফেরি থেকে একসময় সাবমেরিনে উঠলাম। ভেতরে সিটবেল্ট বেঁধে বসতেই সাবমেরিন ধীরে ধীরে ডুবে গেল নিচে। জানালার ওপারে দেখা গেল জলের নিচে হারিয়ে যাওয়া কোনো শহরের মতো দৃশ্য—পাথরের কাঠামো, সামুদ্রিক গাছ, রঙিন মাছের সারি। অন্ধকারের গভীরতায় তাদের আলোকোজ্জ্বল শরীর আরও রহস্যময় মনে হয়। সেই নীরবতা—যেন সমুদ্র নিজেই আমাদের গল্প বলছিল।
আরেকদিন গাড়ি চালিয়ে যাত্রা করলাম তুলুমে। ক্যানকুনের পাশের শহর তুলুম (Tulum)। পথে দুই পাশে তালগাছের সারি, উষ্ণমণ্ডলীয় জঙ্গল, আর হালকা বাতাস। রাস্তায় গাছ থেকে সদ্য পাড়া নারিকেল বিক্রি করছে এক বেচারা। গাড়ি থামিয়ে আমরা সবাই ডাবের পানি খেয়ে কচি শাঁসটি সঙ্গে করে নিয়ে খেতে খেতে রওনা হলাম। কিছুদূর যেতেই পথে দেখলাম যে আরেকজন আম বিক্রি করছেন। মেক্সিকান ম্যাঙ্গো। সাথী ও আমি আমের ভক্ত। গাড়ি থামিয়ে মন ভরে শান্তিমতো আম খেলাম। এবার তুলুমে পৌঁছে মনে হলো, সময় থেমে গেছে। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া সভ্যতার (Mayan civilization) ধ্বংসাবশেষগুলো যেন আজও তাদের ইতিহাস নিজের বুকে ধারণ করে রেখেছে। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যেও যেন কোনো অচেনা কণ্ঠ প্রশ্ন করছে, ‘তোমরা আমাদের এখানে কী দেখতে এসেছ?’ মায়া সভ্যতার সেই প্রত্নতাত্ত্বিক সৌন্দর্য যেন সময়কে আরেকবার নতুন করে চিনিয়ে দিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। আমরা একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে মেক্সিকান ফুডে মধ্যাহ্নভোজ সারলাম।
আমরা আরেও একটা পুরো দিন রেখেছিলাম চিচেন ইৎজা (Chichen Itza) এবং মেক্সিকোর সিনোটেগুলো (Cenotes) ঘুরে দেখার জন্য। তারপর সেই দিন এল, চিচেন ইৎজা—পৃথিবীর নতুন সাত আশ্চর্যের একটি, মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ বিস্ময়। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ‘এল কাস্তিয়ো’ পিরামিড দেখে শিহরিত হয়ে উঠেছিলাম। সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী সাপের ছায়া দেখা যায়—কী অসাধারণ স্থাপত্যবিজ্ঞান! পবিত্র খেলার জায়গা, ধর্মীয় কূপ, জ্যোতির্বিদ্যার চিহ্ন—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, আমরা যেন অতীতের এক জীবন্ত শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
মেক্সিকোর সিনোটেগুলো ছিল আরেক বিস্ময়। পাহাড়ের গহিনে, চুনাপাথরের নিচে তৈরি এসব ভূগর্ভস্থ জলাধার যেন প্রকৃতির নিজস্ব সৃষ্টি। মায়াদের কাছে এগুলো ছিল দেবতাদের দরজা। পানির ঠান্ডা স্পর্শ, ভেতরের নীরবতা, আর আলো-ছায়ার নাচ। রিনভি বলেই ফেলল, ‘এটা তো পুরো অন্য একটা পৃথিবী, বাবা!’
আমিও মনে মনে ভাবলাম—ঠিক বলেছে। ওই এলাকায় শত শত সিনোটে। আমরা নামকরা কয়েকটি সিনোটে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। সেগুলোর কোনো কোনোটিতে আমরা বাবা-মেয়ে উঁচু থেকে জলে ঝাঁপ দিলাম, সাঁতারও কাটলাম—শুভ্র জলের ভেতর সময়ও যেন খানিকটা থেমে গিয়েছিল।
এক সন্ধ্যায় গেলাম ক্যানকুন ডাউনটাউন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, প্রাণবন্ত এলাকা। রাস্তায় সংগীত, নাচ, স্থানীয় উৎসবের আলোর ঝলক। ছোট ছোট পরিবার তাদের বাচ্চাসহ এসেছে, আর সবাই মিলেমিশে এক সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে। খাবার? অসাধারণ! টাকো, গ্রিলড ফিশ, সি–ফুড—সবই এত সুস্বাদু যে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। দাম এত কম যে বিশ্বাসই করা কঠিন। মানুষের হাসি, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সহজ জীবনধারা—আমাদের এমনভাবে আপন করে নিয়েছিল যে মনে হচ্ছিল, আমরা যেন তাদেরই অংশ।
সাত দিনের ভ্রমণ শেষে ক্যানকুন আমাদের জীবনে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে রইল। রাকিনের অভাব প্রতিদিনই অনুভব করেছি; তবু মনে হয়েছে, সে যেন ভিডিও কলে, কথায়, হাসিতে আমাদের সঙ্গেই ছিল। রিনভির জন্য আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি দিনকে সুন্দর করে তুলতে—আর সত্যিই, প্রতিটি মুহূর্ত যেন পরিবারের ভালোবাসায় রাঙানো।
দুই বছর পেরিয়ে গেছে। তবু কখনো চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় ক্যারিবীয় ঢেউ এখনো ডাকছে, ‘ফিরে এসো… তোমাদের গল্প এখনো শেষ হয়নি।’
লেখক: প্রাইম মেডিসিন, কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, ইউএসএ। [email protected]