চাই চাই চাই অনেক কিছু চাই
চাই চাই চাই। অনেক, অনেক কিছুই তো চাই। চাওয়ার শেষ নাই। কিন্তু কতটুকু তার পাই? তরুণ প্রজন্ম সংস্কার চায়। তাই পুরোনোকে পেছনে ফেলে তরুণদের সংস্কার চাওয়ার তালিকা যদি এমন অনেক বড় হয়, তাহলে কি রাষ্ট্রের কোথাও কোনো সমস্যা থাকার কথা? থাকার কথা নয়। যেমন সংস্কারের জন্য বড় বড় চাওয়ার লিস্টটি যদি এমন হতো—
১.
একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাই। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ বিলুপ্তি চাই।
২.
একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা চাই। উঁচু-নিচুভেদে নয়, সকলের জন্য ন্যায়বিচার চাই।
৩.
একটি নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাই। রাষ্ট্র ক্ষমতার টার্ম শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে একটি স্বাভাবিক পাওয়ার ট্রান্সফারের গ্যারান্টি চাই।
৪.
একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন চাই। কর ফাঁকি দেওয়াদের এবং রাষ্ট্রের সম্পদ তসরুপকারীদের বা অর্থপাচারকারীদের দুর্নীতি ও আইনের আওতায় আনা দেখতে চাই।
৫.
রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষম শিক্ষার পরিবেশ চাই। শুধু জিপিএ–৫ নয়, বরং গুণগত ও মানোন্নয়ন শিক্ষাব্যবস্থা চাই।
৬.
নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ নদী চাই। সড়ক দুর্ঘটনা, লঞ্চ দুর্ঘটনাগুলো আর নয়। বরং স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
৭.
মানুষের নাভিশ্বাসে উঠা দ্রব্যমূল্য হ্রাস চাই। মানুষের আয় ও উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি সুষম বাজার ব্যবস্থা চাই।
৮.
নৈতিক শিক্ষারব্যবস্থা চাই। ভক্তি ও শ্রদ্ধাযুক্ত এবং মানবিক মানুষ গড়ার বাংলাদেশ চাই।
৯.
একটি সুন্দর স্থায়ী বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ ব্যবস্থা চাই। কাছের ও দূরের দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুসুলভ ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক পররাষ্ট্রনীতি চাই।
১০.
সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে কোনো ভেদাভেদ নয়, বরং হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশে চাই।
১১. সর্বাধিক দুবারের জন্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, মেয়র, চেয়ারম্যান, সদস্য (মেম্বার), কমিশনার চাই। দুবারের বেশি নয়।
আবার সব চাওয়াই যে বড় হতে হবে এমন নয়। ছোট ছোট চাওয়াগুলোও সমাজে অনেক বড় বড় প্রভাব ও অবদান ফেলতে পারে। ছোট ছোট চাওয়ার তালিকাটি যদি এমন হতো—
১.
মেধাভিত্তিক পদোন্নয়ন চাই।
২.
পোস্টারমুক্ত, লেখামুক্ত পরিষ্কার দেয়াল দেখতে চাই (কারেও দেয়ালে কেউ লিখতে বা পোস্টার লাগাতে পারবে না)।
৩.
আবর্জনামুক্ত ও মশামুক্ত বাংলাদেশ চাই।
৪.
দালালমুক্ত সাংবাদিক চাই। সুস্থ চিন্তার সংবাদ চাই।
৫.
দেশ গড়ার কারিগর হচ্ছে শিক্ষক। তাই নির্দলীয় শিক্ষক চাই।
৬.
টেকসই উন্নয়নে পেশাদার ঠিকাদার চাই।
৭.
ক্যাডারমুক্ত (অস্ত্রধারী) মুক্ত বাংলাদেশ চাই।
৮.
যেকোনো পেশায় চামচাগিরি বন্ধ চাই।
৯.
সুচিকিৎসার জন্য মানবিক ডাক্তার চাই।
১০.
নাগরিকের বন্ধু হিসাবে মানবিক পুলিশ চাই।
এতকিছু পেতে হলে সবকিছুর আগে নিজেদের পরিশুদ্ধি চাই। হিংসুক বা বিদ্বেষী মানুষ নয়, বরং আগে মানবিক মানুষ হতে চাই। শ্রদ্ধাশীল হতে শিখি। একাত্তরে যারা সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল, দেশ ছিনে এনেছিল, জীবন দিয়েছিল এবং ’৭১ থেকে ’২৪ পর্যন্ত যারা গণতন্ত্র ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিল, তাঁদের আর অপমান এবং অশ্রদ্ধা নয়, বরং দলীয় চিন্তা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তাঁদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সন্মান দিতে শিখি। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমরা একটি সহনশীল ও আধুনিক বাংলাদেশে বিনির্মাণ করতে পারি।
লেখক: মো. রওশন আলম, বোস্টন, আমেরিকা
দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]