সিডনিতে জমে উঠেছে বাংলাদেশিদের ঈদবাজার

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ঈদের কেনাকাটায় আনন্দঘন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ঈদ মানে যেমন আনন্দ, ঈদের আনন্দ মানে তেমন ঈদের কেনাকাটা। বাংলাদেশে ঢাকার বসুন্ধরা, যমুনা, নিউমার্কেটসহ দেশের সব প্রান্তেই এখন ক্রেতাদের ভিড় ঈদবাজারে। একই দৃশ্যের দেখা মিলছে সিডনির বিভিন্ন এলাকায় ঈদকে সামনে রেখে আয়োজিত বাংলাদেশিদের ঈদবাজারগুলোয়। আর এরপর চাঁদরাত ঘিরে চলবে বাংলাদেশিদের ঘরোয়া ও কমিউনিটিভিত্তিক নানান আয়োজন।

সিডনিতে বেশির ভাগ ঈদবাজার বসে বাঙালি–অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বায়। তবে লাকেম্বাসহ সিডনির ক্যাম্বেলটাউন, লিভারপুল, ইঙ্গেলবার্ন, রকডেল, মিন্টো, মাউন্ট ড্রুইট, ব্ল্যাকটাউন, ইস্টলেকসহ বিভিন্ন এলাকাতেও স্থানীয় বাংলাদেশি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বসে ঈদবাজার। পবিত্র রমজান মাসজুড়েই বিভিন্ন এলাকায় ঈদবাজার বসে। দেশটির সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রোববারেই ঈদমেলার আয়োজন হয়ে থাকে বেশি। সিডনির প্রায় প্রতিটি ঈদবাজারই বড় পরিসরে আয়োজিত হয়। একই ছাদের নিচে বিভিন্ন সামগ্রীর স্টল নিয়ে বসেন স্থানীয় বাংলাদেশিরাই। এ ছাড়া নির্দিষ্ট দোকান ও কিছু কিছু বিক্রেতার বাড়িতে ওয়্যারহাউসও রয়েছে।

আরও পড়ুন

ঈদের কেনাকাটায় বাংলাদেশের মতো এখানেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঈদের নতুন জামাকাপড় কেনায় ব্যস্ত থাকেন। আর সিডনির বাংলাদেশিরা ঈদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি কিনতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। তবে গয়নাও কম বিক্রি হয় না। ঈদবাজারে বাংলাদেশ থেকে আনা জামার পাশাপাশি ভারতীয় ও পাকিস্তানি জামারও চাহিদা রয়েছে। আয়োজনস্থল ঘুরে দেখা গেল, বেশির ভাগ কাপড়ই বিক্রেতাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন পরিসরে বাংলাদেশে থেকে আনানো। তা ছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও অনলাইনে ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক কেনার এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর সুযোগ গ্রহণ করে সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আনিয়ে নিচ্ছেন পছন্দের নতুন জামাকাপড় থেকে ঈদের জন্য খুঁটিনাটি জিনিসপত্র।

সিডনির ঈদ বাজারগুলোয় জামাকাপড়ের স্টলের পর মেয়েদের মেহেদির স্টল এবং বাংলাদেশি ঈদের রান্নার আয়োজন, যেমন সেমাই, বিভিন্ন রকমারি পিঠা ইত্যাদির স্টলে ভিড় বেশি হতেও দেখা গেল। মেহেদির স্টলে কেউ অল্প করে, কেউ আবার হাতভর্তি মেহেদি দিচ্ছেন। নকশার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ নারীই মেহেদিশিল্পীর ওপর ভরসা করছেন, তবে কেউ কেউ নিজস্ব কোনো নকশা দেখালেও তা–ও হুবহু এঁকে দিচ্ছেন মেহেদিশিল্পীরা। এ ছাড়া অলংকার, ব্যাগ, জুতা, ঈদের চুলের ফ্যাশন ও রূপসজ্জার বিভিন্ন পণ্যের স্টলও ছিল। ঈদের মেলায় কমসংখ্যক হলেও বাংলাদেশের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশি পিঠার প্রতি ঝোঁক রয়েছে বাংলাদেশিদের। ঈদের দিন মেহমান আপ্যায়নে বাংলাদেশি প্রচলিত খাবার, যেমন সেমাই, পিঠা, ফুচকা-চটপটি ইত্যাদি খাবারের রসদেরও প্রচুর বিক্রি রয়েছে ঈদবাজারে।

সিডনির ঈদবাজারে সবাই কেনাকাটা করতেই আসেন। তবে কেউ কেউ আসনে শুধু বাংলাদেশি আঙ্গিকে ঈদবাজারের আনন্দ নিতে। ঈদবাজার প্রাঙ্গণে অনেককে সবান্ধব খোশগল্পেও মাততে দেখা যায়। এ ছাড়া মেলাস্থলে বিভিন্ন দেশীয় খাবারের দোকানেও ভিড় করছিলেন ভোজনরসিক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। যদিও বেশির ভাগই মেলায় ঘুরতে এসে কেনাকাটা করতে করতে সেখানেই ইফতার করেন।

সিডনির ঈদবাজারে কেনাকাটা করতে এসে পরিবারকেও সময় দেওয়া যায় বলে মনে করেন প্রবাসীরা। সিডনির লাকেম্বায় আয়োজিত একটি ঈদবাজারে এসে সিডনির ডেনহাম কোর্টের স্থানীয় বাসিন্দা বাংলাদেশি বোরহান লিমন বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রী এবং ভাইবোনদের সঙ্গে এসেছি। প্রবাসের কর্মব্যস্ত রুটিনে দৌড়ঝাঁপে দিন চলে যায় আমাদের। বাংলাদেশি আঙ্গিকে ঈদবাজারগুলোয় সবাইকে নিয়ে আসি, যাতে কেনাকাটার পাশাপাশি সবাই মিলে সময়ও কাটাতে পারি। আমাদের সবারই খুব ভালো লাগছে।’

সদ্য যাঁরা বাংলাদেশ থেকে সিডনি এসেছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে ঈদবাজারগুলোয় বলে মনে করেন নতুন প্রবাসীরা। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে আসা সিডনির নতুন বাসিন্দা সোহানুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকতে জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়ায় ঈদ পানসে লাগে, প্রথম ঈদ করতে কষ্ট হয়। সিডনিতে নতুন এসে তা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি যে বাংলাদেশের মতোই উৎসবের কোনো কমতি নেই এখানে। বাংলাদেশি ঈদবাজারের বাংলাদেশিদের মাঝখানে এসে মনেই হয় না বাংলাদেশের বাইরে আছি। বিশেষ করে লাকেম্বা এলে তো কোনো কথাই নেই। কী নেই এখানে! বাংলাদেশে যা আছে, তার সবই আছে। হ্যাঁ, তবে মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনের অভাব কোনোভাবেই পূরণ করা যায় না।’

ব্যবসা শুধু লাভ করার উদ্দেশ্যে নয় বলে জানান ঈদবাজারের বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। সিডনির বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ফকরুল রিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশে থেকে যেকোনো মাধ্যমেই পণ্য আনার খরচ যোগ করলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। সেটাসহ চাইলে অনেক মুনাফা করা যায়। তবে আমরা কেউই তো আসলে পুরাদস্তুর ব্যবসায়ী নই। সবার সঙ্গে দেখা হলো, সারা দিন আড্ডা হলো, এতটুকুর জন্যই স্টল নিই, দামাদামি করি, আবার খুব কাছের কেউ এলে উপহারও দিয়ে দিই।’

সব মিলে সিডনিতে বাংলাদেশিদের ঈদবাজার জমে উঠেছে। অন্যান্য কাজকর্মের মাঝখানেও ঈদের কেনাকাটা করতে এ–দোকান থেকে সে–দোকানে ছোটাছুটি করছেন সিডনিপ্রবাসী হাজারো বাংলাদেশি। তারপর ঈদের জামাকাপড়, গয়না, মেহমান আপ্যায়নের খাবার নিয়ে ঘরে ফিরছেন তাঁরা।