গাজার শিশুদের মৃত্যু দেখে কি করে ঘুমাও মানুষ!

ফাইল ছবি

রাত গভীর হতে না হতেই গাজার আকাশজুড়ে শুরু হলো বোমাবর্ষণ। চারদিকে শুধু আগুন, ধ্বংসস্তূপ আর মানুষের আর্তনাদ। এক মা তাঁর শিশুকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলেন, যেন কোনোভাবে আগুনের বলয় থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু যুদ্ধ কি মায়ের বুক চেনে? ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে যখন তাদের উদ্ধার করা হলো, তখনো মা শক্ত করে ধরে রেখেছেন তাঁর শিশুকে। তবে দুজনের কেউই আর বেঁচে নেই। শিশুটির গায়ে এখনো তার মায়ের শাড়ির টুকরা জড়িয়ে আছে, কিন্তু নিশ্বাস নেই। এই পৃথিবী কি এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে গেছে যে একটি শিশু মায়ের বুকে ঘুমিয়েও নিরাপদ নয়?

গাজার আকাশে আবারও ধোঁয়ার কুণ্ডলী, বাতাসে বারুদের গন্ধ, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের আর্তনাদ। গত মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অবিরাম বিমান হামলায় এক রাতেই প্রাণ গেছে ৩৩০ জন ফিলিস্তিনির, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক মানুষ, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

তাদের অপরাধ কী ছিল? তারা কি যুদ্ধ করছিল? তারা কি কারও ক্ষতি করেছিল?
না, তারা শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইসরায়েলে বাহিনীর কাছে গাজার শিশুদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাই তো হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থীশিবির—কোথাও নিরাপদ নয় তারা। রাতের আঁধারে ঘুমিয়ে থাকা শিশুদের ওপরও নেমে আসে আগ্রাসনের ভয়াবহতা। মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান এই হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শহরের প্রায় সব অবকাঠামো। কেউ আর জানে না, পরবর্তী মুহূর্তে কোথায় বোমা পড়বে, কার পরিবার শেষ হয়ে যাবে। ওই হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস, রাফা—সব জায়গায় বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। রাস্তায় পড়ে আছে মৃতদেহ, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে গোটা পরিবার। হাসপাতালগুলোয় জায়গা নেই, ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই—শুধু আহত মানুষের ব্যথা আর কান্না আছে।

ফাইল ছবি

‘মা, আমি কি বেঁচে আছি?’

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হওয়া এক শিশুর মুখে রক্ত জমে গেছে, চোখে ধুলো লেগে আছে। আহত অবস্থায় কাঁপতে কাঁপতে সে শুধু জিজ্ঞেস করল, ‘মা, আমি কি বেঁচে আছি?’

এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? তার মা কি বেঁচে আছে? তার পরিবার কি আছে? এই শিশুর ভবিষ্যৎ কি শুধু ধ্বংসের মধ্যেই হারিয়ে যাবে?

আরও পড়ুন

বিশ্বের নীরবতা

মানবতার লজ্জা বিশ্ব তখনো নীরব। বড় রাষ্ট্রনেতারা মানবাধিকারের বুলি আওড়াচ্ছেন, কিন্তু কেউই এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে উদ্যোগী নন। কোথায় সেই ন্যায়বিচার, যে ন্যায়বিচারের কথা বলা হয় সভা-সম্মেলনে? কোথায় সেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো, যারা শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করার দাবিদার? ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ‘হামলা যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ চলবে।’ তাহলে কি গাজায় আর কোনো শিশু বেঁচে থাকবে না? ঘুম ভাঙবে কবে? এই নৃশংসতার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা কি চুপ করে থাকব? গাজার শিশুদের নিথর দেহের ছবি দেখেও কি আমরা ঘুমিয়ে থাকব?

লেখক: হাসিবুর রহমান