নিঃশব্দ ডানা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মৌমাছি, তুমি তো কবি—ফুলের কবি, রসের কবি।

বনে বনে ঘোরো, অমৃত খোঁজো—ফুলের ঠোঁটে চুমু খাও,

লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে!

বাহ্‌, শুধু নয়নে নয়, ঘ্রাণেও তুমি প্রেমিক!

সূর্য ওঠার আগেই ঘর ছাড়ো,

তুমি শব্দহীন এক ঘূর্ণমান—জীবনবাহী।

তুমি জানো, কোথায় কোন ফুল ফুটেছে—

যেন মা জানে সন্তানের কান্নার ভাষা।

তোমার শরীরে সোনালি লোম,

ছোট্ট পাতলা পাখায় আকাশ কাঁপে।

মাথা নিচু করে করো কাজ, চিৎকার করে নয়,

নীরবে কবিতা লেখো।

তুমি এক যৌথ সংসার,

রানির জন্য দিনরাত মজুরি।

তুমি সেকেলে—তোমার ভেতর গণতন্ত্র নেই,

আছে শৃঙ্খলার একধরনের অগ্নিপ্রতিশ্রুতি।

শ্রমই প্রেম, শুল্কহীন উৎসর্গ—

মৌচাকের প্রতিটি কক্ষেই তুমি অনবরত তোমার

ইতিহাস লিখে চলেছ—হয়তো তুমি নিজেই জানো না।

তোমার বিষ, লুকানো প্রেমের মতো,

দংশনে মৃত্যু, কিন্তু নিজেও তো মরো।

কী এক আত্মঘাতী শ্রদ্ধা তোমার দেহ-মনে!

তোমার জীবন যেন কাজের এক অবিকল মানচিত্র।

আরও পড়ুন

তুমি রীতিমতো এক রহস্য—কানে কানে গুনগুনিয়ে কথা বলো।

কে কোন দিকে যাবে, কোন বনে—নৃত্যের তালে তালে কোন ফুলে

মধু খাবে, সবই তোমার নিয়মের কুঠুরিতে ছন্দোবদ্ধ।

তুমি সেকালের যন্ত্র নও, একালের রোবট নও—

তুমি একটি সংগঠিত মহাবিশ্ব, পাথরের ভেতর থেকে ফুটে ওঠা গোলাপ।

তুমি মধুর কারিগর,

ফুলের মজ্জা থেকে বানাও স্বর্ণরস।

মানুষ তোমাকে ভালোবাসে,

তোমার মধু খায়—কিন্তু তোমার চুম্বন চায় না,

কারণ তোমার চুম্বনে সুরের বাঁশি বাজে না,

কেবলই বাজে অসুরের বিষের কান্নাধ্বনি।

ও মৌমাছি,

তুমি কি জানো, মানুষ তোমার মতো হতে চেয়েছিল একদিন?

কিন্তু পারল না।

সে হারিয়ে ফেলল ফুলের দিকে যাওয়ার পথ,

হারালো গানের ভাষা, জীবনের সব আশা-ভরসা।

রানীর পায়ে-রাখা কষ্টভরা পাখা—

সবই ভুলে গেল।

তুমি এখনো আছ,

ভোরের রৌদ্রের নিচে— নতুন ফুলের খোঁজে,

আর আমরা, অনেক দূরে— ইটপাথরের শহরে,

দিনে দিনে অল্প অল্প করে মধুর গন্ধ হারিয়ে ফেলেছি,

আর তাই তোমার মতো কবিতা লিখতে পারি না।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]