ইতালির ভিচেঞ্জায় মি.টো. ফেস্ট, উৎসবের রঙে মাতল পুরো শহর

বাংলাদেশ কমিউনিটির দোকানছবি: লেখকের পাঠানো

ইতালির ভিচেঞ্জা শহরের কোয়াড্রিলাতেরো এলাকা দিনভর মুখর ছিল উৎসবের রঙে। শহরের বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতির মানুষকে এক মঞ্চে নিয়ে আয়োজন করা হয় ‘মি.টো. ফেস্ট’—যেখানে একসঙ্গে মিশে যায় খাবার, সংগীত, শিল্প আর সহাবস্থানের আনন্দ।

১১ অক্টোবর ভিয়া তোরিনো থেকে ভিয়া ফিয়েরেঞ্জে পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে বসে রঙিন হাট। কোথাও বাংলাদেশি তরুণ বিক্রি করছেন হাতে বানানো জুটের ব্যাগ, কোথাও মরোক্কান পরিবার সাজিয়েছে মিষ্টি ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল। পাশে এক ইতালীয় দম্পতি বিক্রি করছেন ভিনটেজ পোশাক ও পুরোনো সামগ্রী, আবার এক ইতালীয় যুবক ট্যারট কার্ড পড়ে দিচ্ছেন আগ্রহীদের জন্য। শিশুদের জন্য ছিল ট্রেজার হান্ট প্রতিযোগিতা, যাতে অংশ নেয় স্থানীয় স্কুলের ছোট্ট শিক্ষার্থীরা।

মেলায় অংশ নেওয়া মরোক্কান হেয়ারড্রেসার আতিয়া আবদেলফেত্তাহ বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে এ এলাকায় আছি। আগে ভয় লাগত, এখন অনেক বদলে গেছে। পুলিশি নজরদারি বেড়েছে।’

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com

ভিচেঞ্জা চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে ও পৌরসভার সহযোগিতায় আয়োজিত এই ফেস্টিভ্যালের মূল উদ্দেশ্য ছিল শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা। আয়োজক কমিটির সদস্য ভ্যালেরিও জানেল্লা বলেন, ‘মি.টো. ফেস্ট কেবল একটি উৎসব নয়, বরং এটি একধরনের সামাজিক বার্তা—ভিন্ন সংস্কৃতি একসঙ্গে বাস করতে পারে, একসঙ্গে আনন্দ করতে পারে।’

এ সময় মেলায় অংশগ্রহণ করেন, উপ-মেয়র ইসাবেলা সাললা, কাউন্সিলর সারা বালদিনাতো, কাউন্সিলর ক্রিস্টিনা বালবি, সিটি কাউন্সিলের সদস্য মাত্তিয়া পিলান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারিয়েলা চিবিনেল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম ডি আফিল উদ্দিন, মুহাম্মদ তারেক আহমেদ, হাজী আব্দুল হালিম, তাবাসসুম, অপিয়া।

সারি সারি দোকান
ছবি: লেখকের পাঠানো

উৎসবে বাংলাদেশি তরুণ প্রিন্সের অংশগ্রহণ নজর কাড়ে। ভিচেঞ্জাতেই জন্ম নেওয়া প্রিন্স কাজ করেন স্থানীয় একটি পাস্তা ফ্যাক্টরিতে। তিনি বলেন, ‘আমি ট্যাক্স দিই, ভাড়া দিই, আমার সন্তানেরা এখানেই স্কুলে পড়ে। আমি ভিচেঞ্জায় জন্মেছি।’

উৎসবের মধ্যেই দুপুরে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ধীরে এলাকা অতিক্রম করে—যা মনে করিয়ে দেয়, কোয়াড্রিলাতেরো একসময় ছিল শহরের ‘ব্রঙ্কস’। তবে স্থানীয়দের ভাষায়, এখন বদল আসছে, মানুষ একে নতুনভাবে দেখছে। আর্জেন্টাইন নাগরিক নোরা রদ্রিগেজ বলেন, ‘এই আয়োজন শুধু উৎসব নয়, এটি পরিবর্তনের প্রতীক। যারা ভিন্নতাকে ভয় পায়, তারা উন্নতির পথে হাঁটতে পারে না।’

ইতালির ভিচেঞ্জা শহরের কোয়াড্রিলাতেরো এলাকা দিনভর মুখর ছিল উৎসবের রঙে
ছবি: লেখকের পাঠানো

উৎসবে অংশ নেওয়া স্থানীয় তরুণী এলেনা বলেন, ‘আমি ছোটবেলায় এই পাড়ায় বড় হয়েছি। আমার দাদি ভিক্টোরিয়ার একটা বার চালাতেন এখানেই। আজ আমি তাঁর স্মৃতিতেই এসেছি।’ মালিয়ান তরুণী ফাতিমা বলেন, ‘ভিচেঞ্জা খুব সুন্দর শহর, কিন্তু আরও নিরাপদ হলে ভালো হয়। ছোটবেলায় আমরা কাম্পো মার্জোতে পিকনিক করতাম, এখন আর সেটা করা যায় না।’

দিনভর উৎসবে ছিল রঙিন ব্যস্ততা, সংগীত আর খাবারের ঘ্রাণে ভরা আনন্দঘন পরিবেশ। স্থানীয় ইতালীয় পরিবার থেকে শুরু করে বাংলাদেশি, মরোক্কান, মালিয়ান—সবাই মিলে উপভোগ করেছে ভিচেঞ্জার এই বৈচিত্র্যময় উৎসব।

আরও পড়ুন