প্রেমের শহর ভেরোনা
ইতালির উত্তরাঞ্চলের ভেনেটো প্রদেশের ঐতিহাসিক শহর ভেরোনা। রোমান যুগের স্থাপত্য, মধ্যযুগীয় দুর্গ আর নদীর ধারে সাজানো সৌন্দর্যের জন্য ভেরোনার খ্যাতি কম নয়। তবে এই শহরকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে বিশেষভাবে আলাদা করে চেনে মানুষ এক অমর কাহিনির জন্য। সেই কাহিনি শেক্সপিয়ারের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’। ৪০০ বছরের বেশি আগে লেখা এই নাটক ভেরোনাকে আজও করে রেখেছে প্রেমের শহর।
শহরের মূল কেন্দ্রে প্রবেশের পর সরু গলি পেরিয়ে পৌঁছানো যায় ‘কাসা দ্য জুলিয়েত্তা’তে। এটি মূলত ত্রয়োদশ শতকের এক প্রাচীন বাড়ি, যা পরে জুলিয়েটের আবাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাড়ির উঠানে ঢুকলেই চোখে পড়ে বিখ্যাত সেই বারান্দা। শত শত ভ্রমণকারী এখানে দাঁড়িয়ে কল্পনায় ফিরিয়ে নেন শেক্সপিয়ারের দৃশ্য—জুলিয়েট বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাকছেন তাঁর রোমিওকে।
দুপুরের আলোয় কিংবা সন্ধ্যার আলো–ছায়ায় সেই বারান্দার দিকে তাকালে মনে হয়, সময় থমকে গেছে। চারপাশের ভিড়ের মধ্যেও এখানে দাঁড়িয়ে এক অদ্ভুত নীরবতায় ধরা দেয় প্রেমের গভীরতা।
আঙিনার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ব্রোঞ্জের জুলিয়েটের ভাস্কর্য। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণকারীরা এখানে ছবি তোলেন, হাত রেখে সৌভাগ্য কামনা করেন। প্রচলিত আছে—জুলিয়েটের ভাস্কর্যের ডান কাঁধে হাত রাখলে প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়। হয়তো কুসংস্কার, কিন্তু হাজার মানুষের ছোঁয়ায় আজ সেই অংশ ঝকমক করছে।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
বাড়ির দেয়ালে আর প্রবেশপথে চোখ রাখলেই দেখা যায় অগণিত লেখা, চিরকুট আর ভালোবাসার বার্তা। কেউ লিখে গেছেন প্রিয়জনের নাম, কেউ অক্ষরে অক্ষরে ধরে রেখেছেন একান্ত অনুভূতি। অটুট ভালোবাসার প্রতীক হয়ে রেলিংয়ে ঝুলছে নানা রঙের ছোট ছোট তালা।
রোমিও–জুলিয়েটের গল্প ছাড়াও ভেরোনায় দেখার আছে অনেক কিছু। রোমান আমলের বিখ্যাত অ্যারেনা দ্য ভেরোনা এখনো কনসার্ট আর অপেরার জন্য ব্যবহৃত হয়। শহরের আদি সেতু পোন্তে পিয়েত্রা পেরিয়ে গেলে নদীর ওপর ভেসে আসে শতাব্দীর ইতিহাস। পিয়াজা দেলে এরবে স্কয়ারে বসে কফি চুমুক দিলে মনে হবে যেন আপনি জীবন্ত কোনো সিনেমার ভেতরে আছেন।
ভেরোনার রাস্তা, প্রাচীন প্রাসাদ, সেতু আর চত্বরগুলো এক অদ্ভুত রোমান্টিক আবহ তৈরি করে। গোধূলির আলোয় শহরকে দেখতে গেলে বোঝা যায়—এখানে প্রেম কেবল গল্প নয়, এটি জীবনের এক স্থায়ী রং।
ভেরোনায় ভ্রমণ শেষে মনে হয়, ভালোবাসা কোনো ভৌগোলিক সীমানা মানে না। এটি যুগ পেরিয়ে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। রোমিও–জুলিয়েটের কাহিনি হয়তো কল্পনার, কিন্তু ভেরোনা তাকে দিয়েছে বাস্তবের আবহ।
আজও পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে প্রেমিকযুগল এখানে আসে নিজেদের ভালোবাসাকে চিরন্তন রূপ দিতে। জুলিয়েটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যে কারও মনে হয়—ভালোবাসাই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে সুন্দর ভাষা, আর ভেরোনা সেই ভাষার রাজধানী।