কানাডিয়ান টায়ারে আসাটা বেশ ভালো লাগছে, ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে নতুন শুরু

জাস্টিন ট্রুডোফাইল ছবি: রয়টার্স

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাস্টিন ট্রুডো একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যা তাঁর আগে শেয়ার করা অনেক সরকারি কাজের ছবির থেকে একেবারেই আলাদা। ছবিতে দেখা যায়, তিনি একটি কানাডিয়ান টায়ার স্টোরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সামনে একটি শপিং কার্টে বেশ কয়েকটি রান্নার সরঞ্জাম রাখা। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘সোমবার সকালে কানাডিয়ান টায়ারে আসাটা বেশ ভালো লাগছে।’

প্রায় ১০ বছর ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর অবশেষে ট্রুডো তাঁর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বই নয়, তিনি রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতা ছাড়ার কিছুদিন আগে। তাঁর জায়গা নিয়েছেন মার্ক কার্নি, যিনি সম্প্রতি কানাডার লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

ট্রুডোর প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান মানে শুধু ক্ষমতা থেকে বিদায় নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও এক নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে তাঁর জন্য। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ২৪ সাসেক্স ড্রাইভ ছেড়ে তাঁকে এখন নতুন বাসায় উঠতে হবে। কয়েক বছর ধরে তাঁর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডোর সঙ্গে আলাদা থাকছেন ট্রুডো। ফলে পারিবারিক জীবনের নতুন বাস্তবতাও তাঁকে মেনে নিতে হবে।

ট্রুডোর ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা

প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর ট্রুডো এখন কী করবেন, তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে। রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকেই মনে করছেন, ট্রুডো তাঁর পুরোনো পেশায় ফিরে যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ট্রুডো ছিলেন একজন শিক্ষক।

১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর কিলারনি সেকেন্ডারি স্কুল এবং ওয়েস্ট পয়েন্ট গ্রে একাডেমিতে ফরাসি ও গণিতের শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ও জনপ্রিয়তা তখনই স্পষ্ট হয়েছিল। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তিনি হয়তো আবার শিক্ষাক্ষেত্রে ফিরতে পারেন। তবে তাঁর মতো অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তি শুধু শিক্ষকতায় সীমাবদ্ধ থাকবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

আরও পড়ুন

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা

ট্রুডোর আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং কূটনৈতিক দক্ষতা বিবেচনায় তাঁকে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। কানাডার বহির্বিশ্বে ট্রুডোর ভাবমূর্তি বরাবরই ইতিবাচক। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসননীতি এবং মানবাধিকার ইস্যুতে তাঁর অবস্থান বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। ফলে এসব খাতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তিনি আহ্বান পেতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন।

বই লেখা এবং বক্তৃতা দেওয়া

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ট্রুডো এর আগে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে ‘Common Ground’ নামে একটি আত্মজীবনী লিখেছিলেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। এবার হয়তো তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন এবং রাজনীতির উত্থান-পতন নিয়ে নতুন একটি বই লিখতে পারেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বক্তৃতার জন্যও তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

করপোরেট দুনিয়ায় যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রুডো বড় কোনো আন্তর্জাতিক করপোরেশনের বোর্ড সদস্য বা কৌশলগত পরামর্শক হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং নেতৃত্বগুণ করপোরেট জগতে তাঁকে উচ্চ পদে বসানোর জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে তুলবে।

ফিরে আসবেন রাজনীতিতে?

অনেকে মনে করছেন, ট্রুডো হয়তো সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে সরে গেলেও ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসতে পারেন। কানাডার ইতিহাসে অনেক নেতা অবসরের পর রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। তবে ট্রুডোর সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং মনোভাব থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপাতত তিনি রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতে চান।

নতুন নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি

ট্রুডোর জায়গায় এখন দায়িত্ব নিয়েছেন মার্ক কার্নি। কার্নি একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ এবং কূটনীতিক। তাঁর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি কি নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে এবং জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

ট্রুডোর বিদায়ের মাধ্যমে কানাডার রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তন এল। ট্রুডো এবার কোথায় পথ খুঁজবেন—শিক্ষকতায় ফিরে যাবেন, নাকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন—তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষায়।