পরবাসে রমজান–১: কানাডা
বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় আসা মুসলিমদের ইফতার ও সাহ্রিতে আছে বৈচিত্র্য
১৮৭১ সালে কানাডায় প্রথম আদমশুমারি হয়। সেই আদমশুমারিতে ১৭ জন মানুষকে মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যাঁদের সবাই ইউরোপ থেকে কানাডায় এসে বসবাস শুরু করেছিলেন। মূলত সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপিয়ানদের হাতেই কানাডায় ইসলাম ধর্মের গোড়াপত্তন। তারপর পার হয়ে গিয়েছে ১৫৪ বছর। এই দীর্ঘ সময় ইউরোপিয়ানদের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিমরা কানাডায় বসবাস শুরু করেন। ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কানাডার মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ মুসলিম, অর্থাৎ দেশটিতে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৫ জন মুসলিম বসবাস করেন।
কানাডা সবচেয়ে বড় শহর টরন্টোয় মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। অন্যদিকে মন্ট্রিয়ল শহরের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ মুসলিম। ইসলাম ধর্ম এই মুহূর্তে কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মাহে রমজান। মাসটি কানাডায় ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়।
ইফতারের পছন্দ
পৃথিবীর বিভন্ন দেশ থেকে কানাডায় এসে বসবাস করার ফলে মুসলমানদের খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পোশাক–পরিচ্ছেদসহ সবকিছুতেই ভিন্নতা রয়েছে। এই ভিন্নতা আরও ফুটে ওঠে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার ও সাহ্রিতে। বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দিয়ে ইফতার করেন। তবে খেজুরসহ অন্যান্য ফল ও শরবত–জাতীয় পানীয় কানাডায় আসা সব দেশের মানুষের ইফতারে প্রচলিত খাবার। বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিমরা ইফতারে খেজুর, পিয়াজু, বেগুনি, ছোলা, মুড়ি, খিচুড়ি ও জিলাপি খেতে পছন্দ করেন। আর এসব খাবার কানাডার গ্রোসারিগুলোয় কিনতে পাওয়া যায়; এর পাশাপাশি বিরিয়ানি তো রয়েছেই। এখন কানাডার সব বড় শহরে বাংলাদেশি শর্ষের তেল, মুড়ি, চিড়া, গুড় ও মাছ কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো এখন হাতের কাছে থাকায় পবিত্র রমজান আরও জমজমাট হয়েছে মানুষের কাছে। আরব সম্প্রদায়ের ইফতারে সাধারণত খেজুর, লাবাং, সাম্বুসাক (একধরনের পেস্ট্রি), গ্রিলড মাংস ও স্যুপ থাকে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের মধ্যে শমুচা, পাকোড়া, হালিম ও শাহি তন্দুরি জনপ্রিয়।
সাহ্রির পছন্দ
সাহ্রিতে বাংলাদেশি পরিবারগুলো ভাত, ডাল, ভর্তা ও মাংস খেতে ভালোবাসে। অনেকে আবার খিচুড়িও খান। পাকিস্তানি ও ভারতীয়দের মধ্যে পরোটা, ডাল, দই, চা ও মাংসের জনপ্রিয়তা বেশি। আরবরা সাধারণত রুটি, দই, ফল ও মাংস খান।
কানাডার ইফতারির বাজার
কানাডার ইফতারির বাজারও জমজমাট থাকে। বিশেষ করে টরন্টোর ইফতারির বাজার অন্য শহরের চেয়ে খুবই জমজমাট। দুপুরের পর থেকেই রেস্তোরাঁগুলোয় ভিড় শুরু হয় মানুষের। বিকেলের দিকে তা আরও জমজমাট হয়। বাংলাদেশি দোকানগুলোয় বুট, ছোলা, পিয়াজু ছাড়াও বিরিয়ানি বিক্রি হয়। তা ছাড়া সেট মেনুও বিক্রি হয়। বিরিয়ানিসহ অন্য ছোলা, পিয়াজুও থাকে। সেগুলোর দাম ১১ থেকে ৩৫ ডলারের মধ্যে।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সাহ্রির সময় দোকানগুলোর ব্যবসা জমজমাট থাকলেও কানাডায় তেমন একটা দেখা যায় না মানুষকে বাইরে সাহ্রি করতে। তবে কানাডা এখন প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুসলিম শিক্ষার্থী থাকার কারণে তাঁদের জন্য সাহ্রিতে বেশ কিছু খাওয়ার দোকান রাতে খোলা থাকে।
বিভিন্ন মসজিদে প্রতিদিন বিনা মূল্যে ইফতারি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কানাডার বহু সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে ইফতারি বিতরণ করা হয়। মসজিদগুলোয় ইফতারের ক্ষেত্রে নামাজের আগে খেজুর, অন্যান্য ফল ও পানীয় দেওয়া হয় এবং নামাজের পরে বিরিয়ানি বিতরণ করা হয়।