কানাডার চাকরিবৃত্তান্ত-দশম পর্ব

গার্ড মির সেচ্ছাসেবক দলে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

(নবম পর্বের ধারাবাহিকতায়)
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম, সেখানে এসেই থমকে আছি।

তখন বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে গেছি। কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিলাম। কোনোটা ফোনে, আবার কোনোটা স্টোরে। পরে এক সুপারশপে চাকরির খবর পেলাম। কিন্তু তখন বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছিলাম। সব জায়গার কাজের অভিজ্ঞতা ইন্টারভিউয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করেছে। এমনকি ইউনিভার্সিটিতে সেচ্ছাসেবক হিসেবে যখন ‘গার্ড মি’–তে কর্মরত ছিলাম তখনকার অনেক মানুষের সঙ্গে সংস্পর্শে আসার কারণে বিচিত্র যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম সেগুলোর অধিকাংশই উপস্থিত বুদ্ধির কারবারিতে।

কোনো না কোনো জায়গা থেকে কল আসত। এমনও হয়েছিল যে বাসে এক জায়গায় যাচ্ছি কাজের খোঁজে। মুঠোফোনের অপর পাশ থেকে কর্মকর্তা বিভিন্ন আনুষঙ্গিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন। একপর্যায়ে জানতে চাইলেন, আমি এখানকার স্থায়ী বসবাসকারী কি না? স্বাভাবিকভাবেই যা সত্যি, তা-ই উত্তর দিলাম। তখন উনি জানালেন, কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী জব অফার করা সম্ভব হচ্ছে না; কারণ, ওরা স্থায়ী অভিবাসনকারী বা নাগরিকদেরই চাকরিতে বহাল রাখে। ব্যস! লেঠা চুকে গেল।

অফিসে আসা-যাওয়ার পথে
ছবি: লেখক

চাকরির খোঁজ পাওয়া যত কঠিন, এর জন্য হাতড়ে বেড়ানোও উলু বনে মুক্তা ছড়ানোর মতো। যখন হওয়ার কথা, তখন বিনা শ্রমেই হয়ে যাবে। যদি আপনি একবার এর চোরাবালিতে ফেঁসে যান, মনে রাখবেন এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ একটু ডুবো ডুবোই হবে! নিজের ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হয়েছে। সুপারশপে জয়েন করার জন্য ব্যাংকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হলাম। ওদের জমা দিয়ে এলাম ব্যাংকের ডিরেক্ট ডিপোসিট ফর্ম আর অফিশিয়াল ফর্ম। এ দিকে একই সঙ্গে কল পেলাম স্কসিয়া ব্যাংকে ইন্টারভিউয়ের। তখনো সুপারশপে জবের আরও কিছু কাজ বাকি ছিল। স্কসিয়াতে প্রথমে ফোন ইন্টারভিউ ছিল নিয়োগকারী কর্মকর্তার সঙ্গে, এর পরেরটা ম্যানেজারদের সঙ্গে। প্রথম মুঠোফোনে কলে পরিচিতি পর্ব সারার পর কিছু প্রশ্ন করল—

যেমন: কেন এখানে আবেদন করেছি? আগের অভিজ্ঞতার আলোকে এ চাকরি কী কী কাজে আসবে?
এমন কোনো পরিস্থিতির উদাহরণ দাও, যেখানে তোমাকে নিজের সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কাজ করতে হয়েছিল?
কোথায়, কীভাবে করেছিলে?
কোনো কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলে আর কীভাবে এর সমাধান করলে?
কোনো কাস্টমার কাজ করতে পারছিলেন না প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তখন তুমি কীভাবে সামাল দিয়েছ?
কোনো অভিজ্ঞতা যার মধ্য দিয়ে আগে কখনো তোমাকে যেতে হয়নি, কেমন ছিল, সেটা আর তুমি কী করেছিলে?

স্কসিয়া ব্যাংকের ট্রেনিং সেন্টার
ছবি: লেখক

ফিরতি ই–মেইলের মাধ্যমে জানতে পারি পরবর্তী মুঠোফোনের সাক্ষাৎকারে কথা হবে দুজন ম্যানেজারের। তাঁদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঠিক সময়ে ফোনের অপেক্ষায় আছি। যতটুকু জানা যায়, তাঁদের কাজ সম্পর্কে ওয়েবসাইট থেকে পড়েছি, লিখেছি। প্রস্তুতি যতটুকু নেওয়া যায়, নিলাম। তাঁরা ই–মেইলে একটা কাগজে কিছু নিদের্শনাসহ প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন, যেগুলোর ওপর আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। বলা হয়েছিল এখান থেকে কিছু প্রশ্ন করা হবে। ফোনে তাঁদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখন একটা জিনিস লক্ষ করছিলাম, তাঁদের প্রশ্নগুলো কিছুটা অন্য রকম, সচরাচর ছকে বাঁধাধরা যেসব প্রশ্ন আমরা ইউটিউবে বা জব ওয়েবসাইটে দেখে থাকি, অমন নয়! কেমন যেন জট পাকানো।

স্কসিয়া ব্যাংকের স্বাগত বার্তা
ছবি: লেখক

যেমন: ম্যানেজার তোমার কোনো কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছেন, এরপর তুমি কী করেছিলে, পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য?

বাকি প্রশ্নগুলোর কিছু ওই ই–মেইল সম্পর্কে করেছিল, যেটা ওরা আমাকে পাঠিয়েছিল।

তবে অন্যান্য অনেক প্রশ্ন পড়তে পড়তে একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল, কীভাবে তাঁদের জটিল প্রশ্নগুলোর উত্তর দেব। তাই ইন্টারভিউ শেষ হওয়ার পর মনে হয়েছিল বোধ হয় চাকরিটা হয়ে যাবে!

হলোও তা–ই... দু-তিন দিনের মাথায় ওদের কাজে জয়েন করার ই–মেইল পেলাম।

ভাবলাম, যাক অবশেষে পায়ের তলায় মাটি পেলাম...কিন্তু জলের স্বচ্ছ পানিও মাঝেমধ্যে আমাদের চোখকে ধোঁকা দিতে পারে! ওপর থেকে সচরাচর দেখতে পাওয়া নুড়ি পাথরও অনেক সময় এমন সুচালো হয় যে নিমিষেই পায়ের তলায় আসতেই বড়সড় দুর্ঘটনার কারণ হয়। চলবে...


***দূর পরবাসে লেখা পাঠাতে পারবেন আপনিও। ঠিকানা: [email protected]

আরও পড়ুন