কুয়ালালামপুরের আলো-আঁধারির সেরা সৌন্দর্য দেখে ফেলুন এক রাতেই

জালান আলোর স্ট্রিট ফুড মার্কেট রাতের ব্যস্ততা উপভোগ করছেন পর্যটকেরা।ছবি: লেখকের পাঠানো

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর, শুধু দিনের বেলা নয়—রাতেও নিজের আলাদা এক রূপে ধরা দেয়। আলোঝলমলে রাস্তাঘাট, ব্যস্ত স্ট্রিট ফুড মার্কেট আর পুরোনো ঐতিহ্য মিশে তৈরি হয়েছে এক অনন্য শহুরে অভিজ্ঞতা। আর সেই অভিজ্ঞতারই গল্প নিয়ে ‘এক রাতের কুয়ালালামপুর’ ঘোরা হয়।

জালান আলোর—

ভ্রমণ শুরু হয় বুকিত বিনতাং এলাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ‘জালান আলোর’ স্ট্রিট ফুড মার্কেট থেকে। সন্ধ্যার পরপরই পুরো রাস্তা যেন এক উৎসবে পরিণত হয়। খাবারের ঘ্রাণ, বারবিকিউর ধোঁয়া, আর রঙিন বাতিতে তৈরি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ। মালয়, চায়নিজ, থাই, ভিয়েতনামিজ—প্রতিটি খাবার যেন একেকটি সংস্কৃতির গল্প বলে। পথচলতি মানুষজনের চোখেমুখে থাকে আনন্দের ছাপ, কেউ খাচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে, কেউবা লাইভ মিউজিকের তালে দুলছে। খাবার আর পরিবেশ মিলিয়ে জালান আলোর যেন রাতে ঘুরে দেখার এক আবশ্যিক গন্তব্য।

রাতে সালোমা ব্রিজ ও টুইন টাওয়ারের ঝলক
ছবি: লেখকের পাঠানো

বুকিত বিনতাং—

এরপর পা পড়ে বুকিত বিনতাং এর প্রাণবন্ত রাস্তায়। শহরের সবচেয়ে ‘হাই-ভাইব’ জায়গা হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় রয়েছে শপিং মল, স্ট্রিট পারফর্মার, লাইভ মিউজিক আর রোডসাইড ক্যাফে। কেউ কেউ একে কুয়ালালামপুরের ‘টাইমস স্কয়ার’ বলেও ডেকে থাকেন।

রাতে এখানে দাঁড়ালে মনে হয় পুরো শহরের প্রাণ এই একটা মোড়েই জমে উঠেছে। আলোর ঝলকানি, মানুষজনের কোলাহল আর ক্যামেরার ফ্ল্যাশ—সব মিলিয়ে এখানে রাত মানেই জীবনবোধের উচ্ছ্বাস।

মার্দেকা স্কয়ার—

এরপর গন্তব্য মার্দেকা স্কয়ার। এটি কেবল একটি খোলা মাঠ নয়, এটি মালয়েশিয়ার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট এই মাঠেই প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন মালয়েশিয়ার পতাকা।

চারপাশে ছড়িয়ে থাকা পুরোনো ভবন আর ঘড়ির টাওয়ার যেন সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও। রাতেও এখানে হাঁটলে একধরনের শান্তি আর গর্বের অনুভব হয়—যেন ইতিহাসের সঙ্গে একান্ত কিছু মুহূর্ত কাটিয়ে ফেরা।

দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সন্ধ্যায় মার্দেকা স্কয়ারের পর্যটকের ভিড়
ছবি: লেখকের পাঠানো

সালোমা ব্রিজ ও টুইন টাওয়ার—

শেষে যাওয়া হয় সালোমা ব্রিজ ও পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার এলাকায়। ঐতিহ্যবাহী পানের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত এই আধুনিক ফুটব্রিজ রাতের বেলা আলোয় ঝলমল করে ওঠে। এক পাশে পুরোনো ক্যাম্পুং বারু, আরেক পাশে আধুনিক KLCC—এই দুই বিপরীত দুনিয়াকে একত্র করেছে এই চলমান সেতু।

আর টুইন টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে যত বড়ই ভিড় থাকুক, মনটা চুপচাপ হয়ে যায়। আলোকিত টাওয়ারজোড়া যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে, আর পর্যটকেরা থেমে যায় ছবির ফ্রেমে মুহূর্ত ধরে রাখতে।

মালয়েশিয়ার জালান আলোর স্ট্রিট ফুড মার্কেটে সন্ধ্যা নামতেই জমে ভিড়
ছবি: লেখকের পাঠানো

শেষ কথায় কুয়ালালামপুরের রাত—

এক রাতের মধ্যেই কুয়ালালামপুর দেখিয়েছে, কীভাবে এক শহরে আধুনিকতা আর ঐতিহ্য পাশাপাশি বেঁচে থাকতে পারে। প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি কোণ, প্রতিটি আলো যেন আলাদা গল্প বলে।

যদি কখনো মালয়েশিয়া আসেন, তাহলে দিনে শুধু নয়—একবার কুয়ালালামপুরকে রাতেও ঘুরে দেখুন। কারণ, এই শহরের আসল রং তার রাতেই সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

লেখক: মোস্তাকিম জনি, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া

আরও পড়ুন