এবং বইপড়া কর্মসূচি
আলোকিত মানুষ চাই!
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্লোগানটি বাংলা মিডিয়ামের জন্য হয়তো চেনা, কিন্তু আমরা যাঁরা ইংরেজির মানুষ, তাঁরা?
স্কুলজীবনে কয়েকটি প্রিয় বিষয়ের সঙ্গে একটি বাড়তি প্রিয় ক্লাস ছিল আমার। ইসিএ বা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস, যা ছিল প্রতি বৃহস্পতিবার, সব ক্লাসের পর।
আঁকার ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব আর সম্ভবত চ্যারিটি ক্লাবের সদস্য ছিলাম—সপ্তাহে এক দিন, ভালোই কাটত দিন!
আবার কেবল এ বৃহস্পতিবারেই, তিনখানা রিকশা করে তিনজন আপু-ভাইয়া আসতেন স্কুলগেটে হাতভর্তি অজস্র বই নিয়ে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্কুলপর্যায়ের বইপড়া কর্মসূচির কর্মী ছিলেন তাঁরা।
বইগুলো কেমন চুম্বকের মতো টানত আমাকে, বই ছাড়া বাঁচি না যে!
‘আরণ্যক’, ‘আরব্য রজনী’, ‘পথের পাঁচালী’, ‘লা মিজারেবল’, ‘রিপ ভ্যান উইংকল’সহ আরও কিছু বই পড়েছিলাম সেই কর্মসূচির অংশ হয়ে।
তো নিয়ম ছিল, কার্যক্রমের শেষ সপ্তাহে পঠিত বইয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে, লিখিত।
কিন্তু আমার ওপরে হয়তো বিধাতা চটেছিলেন সেই পরীক্ষার দিন। আমি সেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম ঠিকই, তবে শরীরে ১০২ ডিগ্রি তাপ নিয়ে।
আর পরীক্ষার ঠিক ২০ মিনিট আগে তাপসী মিস ক্লাসে ঢুকে ‘এই ক্লাস সিক্স! কে কে পরীক্ষা দেবে তোমরা?’
৩০ জন ছাত্রছাত্রীর কেউ রাজি হচ্ছে না দেখে আমিও হাত তুলতে গিয়ে নামিয়ে নিলাম। মিস দেখি আড়চোখে আমার দিকেই তাকাচ্ছেন বারবার।
বাচ্চা বয়সে সমস্যা দেখে সেটা থেকে দৌড়ে পালানোর একটা বাজে প্রবণতা ছিল আমার।
আমি আগেই বলে বসলাম:
‘যাব না, পারব না লিখতে! কেউ যাচ্ছে না মিস দেখেন, তবে আমি কেন?’
বাপ রে বাপ, পারব না বলতে উনি দিলেন এক বিশাল বকুনি, ‘ক্লাস সেভেন থেকে টেন পর্যন্ত প্রতি ক্লাসের একজন অন্তত আছে, আর তুমি চেষ্টা করার আগেই পারব না? চেষ্টা না করে হার মানতে নেই।’
আমার স্বভাবের একটা বিষয় হলো, যার প্রতি আমার মনে ভালোবাসা কাজ করে, সে আচমকা ধমক দিলে দুটি জিনিস তৈরি হয় মনে—তীব্র অভিমান আর এক প্রকার ইতিবাচক রাগ। যে বিষয়ে বকুনি শুনলাম, সেটি আমার ঠিকমতো করতেই হবে!
আর মানুষটাকে যে শ্রদ্ধার পাশাপাশি অনেক ভালোবাসি, সেটা তো আগের একটা লেখায় সরাসরি প্রকাশিত, বলার অপেক্ষা রাখে না!
অতএব সেই অভিমান থেকেই বলে গেলাম, ‘মিস আপনি পচা, আপনি বকুনি দেন খালি!’ গেলাম পরীক্ষা দিতে, একটা না একটা প্রাইজ আমি আনবই আল্লাহ যদি চান!
দারুণ একটা বই ছিল প্রাইজ আমার, অনেক ভাইয়া-আপুর মধ্যে ছিলাম এক পিস পিচ্চি, অন্য একজন টিচারের (নার্গিস আরিফ) হাত থেকে নিয়েছিলাম বইটা।
না মানে মিস, এখনো মাঝেমধ্যে ঝিমিয়ে পড়লে দুই-একটা বকুনি দিয়ে যাবেন কিন্তু মনে করে। আপনার আদর-ধমক দুটিই আমার ওপর জাদুর মতো কাজ করে তো।